০২ ডিসেম্বর ২০২৫, মঙ্গলবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইসলামোফোবিয়া দূর করতে ১৫ মার্চ থেকে আন্তর্জাতিক দিবস ঘোষণা

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ১৭ মার্চ ২০২২, বৃহস্পতিবার
  • / 103

প্রতীকী ছবি

পুবের কলম ওয়েবডদেস্কঃ অনেকদিন ধরেই জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রস্তাব দিয়ে আসছিল পাকিস্তান। তাদের দাবি ছিল ইসলামোফোবিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে একটি আন্তর্জাতিক দিবস ঘোষণা করা হোক। অবশেষে ইমরান খানের দেশের সেই প্রস্তাবটি গৃহীত হল। ইসলামোফোবিয়া-র বিরুদ্ধে লড়তে মঙ্গলবার জাতিসংঘে ঘোষণা করা হল একটি আন্তর্জাতিক দিবস। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ১৫ মার্চকে ইসলামোফোবিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। মঙ্গলবার সংস্থাটির সাধারণ পরিষদ সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত একটি প্রস্তাবে এমনটাই ঘোষণা করেছে।প্রস্তাবে ধর্ম বা বিশ্বাসের ভিত্তিতে ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সহিংসতার সমস্ত কাজের নিন্দা করা হয়।

অরগানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন বা ওআইসির পক্ষ থেকে পাকিস্তান প্রস্তাবটি পেশ করেছিল। যেদিনে একবন্দুকধারী নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ৫১ জনকে হত্যা করেছিল, সেই দিনটিকেই ইসলামোফোবিয়ার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক দিবস ঘোষণা করা হয়।মঙ্গলবার ১৯৩ -সদস্যের আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং ৫৫ টি প্রধান মুসলিম দেশের সহ-স্পন্সরদের ঐক্যমতে গৃহীত এই রেজোলিউশনে ধর্ম ও বিশ্বাসের স্বাধীনতার অধিকারের উপর জোর দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: টরন্টো বিমানবন্দরে মুসলিম মহিলাকে হিজাব খুলতে বাধ্য, বিতর্কে কানাডার এয়ারলাইন্স

তবে মোদির ভারত মোটেই এই প্রস্তাবকে ভাল চোখে দেখছে না।কেবল ভারত নয়। ফ্রান্সসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের একাধিক সদস্য এই আন্তর্জাতিক দিবসে আপত্তি জানিয়েছে। এদিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এই প্রস্তাবটি জাতিসংঘে গৃহীত হওয়ার জন্য মুসলিম উম্মাহকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। পাশাপাশি জাতিসংঘে স্থায়ী পাক প্রতিনিধি মুনির আক্রম বলেন, ‘ইসলামোফোবিয়া এ মুহূর্তে একটি কঠোর বাস্তব।’তিনি আরও বলেন, ইসলামোফোবিয়া এবং মুসলিমবিরোধী বিদ্বেষ সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সচেতনতা বাড়াতে হবে। এছাড়া বিশ্বের সমস্ত ধরনের বর্ণবাদ, জাতিগত বৈষম্য, লিঙ্গ বৈষম্য এবং নেতিবাচক প্রথার বিরুদ্ধে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া। একই সঙ্গে সব ধর্ম, বর্ণ ও জাতির মধ্যে সহনশীলতা, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং আন্তঃধর্ম ও সাংস্কৃতিক সম্প্রীতির বার্তা প্রচার করাই এই আন্তর্জাতিক দিবসের উদ্দেশ্য।

আরও পড়ুন: ইসলামোফোবিয়া রুখতে রাষ্ট্রসংঘে বিশেষ প্রতিনিধি নিয়োগের আহ্বান তুরস্কের

মুনির আরও বলেন, ৯/১১ সন্ত্রাসী মহালার পর থেকে প্রাতিষ্ঠানিক সন্দেহ, মুসলমানদের প্রতি অবিশ্বাস ও ভয় মহামারির আকারে বেড়েছে। এর ফলে মুসলিমরা প্রায়শই নেতিবাচক অনুভূতি বহন করতে থাকে। অফলাইন ও অনলাইন উভয় ক্ষেত্রেই মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইসলামোফোবিয়ার লিঙ্গগত দিকটিও প্রাধান্য পাচ্ছে, মুসলিম নারীরা তাদের পোশাকের কারণে নিপীড়িত হচ্ছে। কিছু দেশে অভিবাসনবিরোধী ও শরণার্থীবিরোধী বক্তব্য একটি মুসলিম বিরোধিতায় রুপ নিয়েছে।

আরও পড়ুন: ইসলামোফোবিয়া: ২০২২ সালে জার্মানির ৩৫ মসজিদে হামলা

‘ইসলামোফোবিয়া’ নিয়ে পাল্টা তোপ ভারতের

১৫ মার্চকে ইসলামোফোবিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আন্তর্জাতিক দিবস হিসাবে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয়েছে। এই আবহে ভারত নিজেদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ভারতের বক্তব্য, ‘অন্য ধর্মের বিরুদ্ধে বিদ্বেষকে এড়িয়ে শুধু একটি ধর্মের বিরুদ্ধে বিদ্বেষকে তুলে ধরা উদ্বেগের।’ভারত নিজেদের অবস্থান ব্যক্ত করতে বলে, ‘বিশ্বের বিভিন্ন অংশে অনেক ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে বৈষম্য, অসহিষ্ণুতা এবং সহিংসতার ঘটনা বৃদ্ধিতে গভীর উদ্বেগ।’ রাষ্ট্রসংঘে নিযুক্ত ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি টিএস তিরুমূর্তি বলেন, ‘আমরা ইহুদি-বিরোধী, খ্রিস্টানফোবিয়া বা ইসলামফোবিয়া দ্বারা অনুপ্রাণিত সমস্ত কাজের নিrদা করি। তবে এই ধরনের বিদ্বেষ শুধুমাত্র আব্রাহামিক ধর্মের বিরুদ্ধে সীমাবদ্ধ নয়।’

তিরুমূর্তি জানান, হিন্দুধর্ম পালনকারী ১.২ বিলিয়নেরও বেশি মানুষ আছে বিশ্বে। বৌদ্ধধর্ম পালন করেন ৫৩৫ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ এবং শিখ ধর্ম পালন করেন ৩০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ। তিনি বলেন, ‘শুধুমাত্র একটি ধর্মকে আলাদা করার পরিবর্তে ধর্মভীতির প্রকোপকে স্বীকার করার সময় এসেছে৷ হিন্দু বিরোধী বা সিখ বিরোধী মনোভাবের কী হবে? একটি ধর্মকে উদযাপন করা এক জিনিস। এবং অন্য ধর্মকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র একটি ধর্মের বিরুদ্ধে বিদ্বেষকে স্বীকৃতি দেওয়া পুরোপুরি আলাদা জিনিস।’ আফগানিস্তানে বামিয়ান বুদ্ধ মূর্তি ধ্বংস থেকে পাকিস্তানে গুরুদ্বারে হামলা,গুরুদ্বারে শিখ তীর্থযাত্রীদের খুনের উদাহরণ তুলে ধরেন তিনি।

 

প্রতিবেদক

ইমামা খাতুন

২০২২ সাল থেকে সংবাদ জগতের সঙ্গে যুক্ত। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতাতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছে। ডিজিটাল প্লাটফর্মে রিপোর্টার হিসেবে হাতেখড়ি। ২০২২ সালের শেষান্তে পুবের কলম-এর সঙ্গে যুক্ত হয়। ইমামার ভাষ্যে, The First Law of Journalism: to confirm existing prejudice, rather than contradict it.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

ইসলামোফোবিয়া দূর করতে ১৫ মার্চ থেকে আন্তর্জাতিক দিবস ঘোষণা

আপডেট : ১৭ মার্চ ২০২২, বৃহস্পতিবার

পুবের কলম ওয়েবডদেস্কঃ অনেকদিন ধরেই জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রস্তাব দিয়ে আসছিল পাকিস্তান। তাদের দাবি ছিল ইসলামোফোবিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে একটি আন্তর্জাতিক দিবস ঘোষণা করা হোক। অবশেষে ইমরান খানের দেশের সেই প্রস্তাবটি গৃহীত হল। ইসলামোফোবিয়া-র বিরুদ্ধে লড়তে মঙ্গলবার জাতিসংঘে ঘোষণা করা হল একটি আন্তর্জাতিক দিবস। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ১৫ মার্চকে ইসলামোফোবিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। মঙ্গলবার সংস্থাটির সাধারণ পরিষদ সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত একটি প্রস্তাবে এমনটাই ঘোষণা করেছে।প্রস্তাবে ধর্ম বা বিশ্বাসের ভিত্তিতে ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সহিংসতার সমস্ত কাজের নিন্দা করা হয়।

অরগানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন বা ওআইসির পক্ষ থেকে পাকিস্তান প্রস্তাবটি পেশ করেছিল। যেদিনে একবন্দুকধারী নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ৫১ জনকে হত্যা করেছিল, সেই দিনটিকেই ইসলামোফোবিয়ার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক দিবস ঘোষণা করা হয়।মঙ্গলবার ১৯৩ -সদস্যের আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং ৫৫ টি প্রধান মুসলিম দেশের সহ-স্পন্সরদের ঐক্যমতে গৃহীত এই রেজোলিউশনে ধর্ম ও বিশ্বাসের স্বাধীনতার অধিকারের উপর জোর দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: টরন্টো বিমানবন্দরে মুসলিম মহিলাকে হিজাব খুলতে বাধ্য, বিতর্কে কানাডার এয়ারলাইন্স

তবে মোদির ভারত মোটেই এই প্রস্তাবকে ভাল চোখে দেখছে না।কেবল ভারত নয়। ফ্রান্সসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের একাধিক সদস্য এই আন্তর্জাতিক দিবসে আপত্তি জানিয়েছে। এদিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এই প্রস্তাবটি জাতিসংঘে গৃহীত হওয়ার জন্য মুসলিম উম্মাহকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। পাশাপাশি জাতিসংঘে স্থায়ী পাক প্রতিনিধি মুনির আক্রম বলেন, ‘ইসলামোফোবিয়া এ মুহূর্তে একটি কঠোর বাস্তব।’তিনি আরও বলেন, ইসলামোফোবিয়া এবং মুসলিমবিরোধী বিদ্বেষ সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সচেতনতা বাড়াতে হবে। এছাড়া বিশ্বের সমস্ত ধরনের বর্ণবাদ, জাতিগত বৈষম্য, লিঙ্গ বৈষম্য এবং নেতিবাচক প্রথার বিরুদ্ধে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া। একই সঙ্গে সব ধর্ম, বর্ণ ও জাতির মধ্যে সহনশীলতা, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং আন্তঃধর্ম ও সাংস্কৃতিক সম্প্রীতির বার্তা প্রচার করাই এই আন্তর্জাতিক দিবসের উদ্দেশ্য।

আরও পড়ুন: ইসলামোফোবিয়া রুখতে রাষ্ট্রসংঘে বিশেষ প্রতিনিধি নিয়োগের আহ্বান তুরস্কের

মুনির আরও বলেন, ৯/১১ সন্ত্রাসী মহালার পর থেকে প্রাতিষ্ঠানিক সন্দেহ, মুসলমানদের প্রতি অবিশ্বাস ও ভয় মহামারির আকারে বেড়েছে। এর ফলে মুসলিমরা প্রায়শই নেতিবাচক অনুভূতি বহন করতে থাকে। অফলাইন ও অনলাইন উভয় ক্ষেত্রেই মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইসলামোফোবিয়ার লিঙ্গগত দিকটিও প্রাধান্য পাচ্ছে, মুসলিম নারীরা তাদের পোশাকের কারণে নিপীড়িত হচ্ছে। কিছু দেশে অভিবাসনবিরোধী ও শরণার্থীবিরোধী বক্তব্য একটি মুসলিম বিরোধিতায় রুপ নিয়েছে।

আরও পড়ুন: ইসলামোফোবিয়া: ২০২২ সালে জার্মানির ৩৫ মসজিদে হামলা

‘ইসলামোফোবিয়া’ নিয়ে পাল্টা তোপ ভারতের

১৫ মার্চকে ইসলামোফোবিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আন্তর্জাতিক দিবস হিসাবে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয়েছে। এই আবহে ভারত নিজেদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ভারতের বক্তব্য, ‘অন্য ধর্মের বিরুদ্ধে বিদ্বেষকে এড়িয়ে শুধু একটি ধর্মের বিরুদ্ধে বিদ্বেষকে তুলে ধরা উদ্বেগের।’ভারত নিজেদের অবস্থান ব্যক্ত করতে বলে, ‘বিশ্বের বিভিন্ন অংশে অনেক ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে বৈষম্য, অসহিষ্ণুতা এবং সহিংসতার ঘটনা বৃদ্ধিতে গভীর উদ্বেগ।’ রাষ্ট্রসংঘে নিযুক্ত ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি টিএস তিরুমূর্তি বলেন, ‘আমরা ইহুদি-বিরোধী, খ্রিস্টানফোবিয়া বা ইসলামফোবিয়া দ্বারা অনুপ্রাণিত সমস্ত কাজের নিrদা করি। তবে এই ধরনের বিদ্বেষ শুধুমাত্র আব্রাহামিক ধর্মের বিরুদ্ধে সীমাবদ্ধ নয়।’

তিরুমূর্তি জানান, হিন্দুধর্ম পালনকারী ১.২ বিলিয়নেরও বেশি মানুষ আছে বিশ্বে। বৌদ্ধধর্ম পালন করেন ৫৩৫ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ এবং শিখ ধর্ম পালন করেন ৩০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ। তিনি বলেন, ‘শুধুমাত্র একটি ধর্মকে আলাদা করার পরিবর্তে ধর্মভীতির প্রকোপকে স্বীকার করার সময় এসেছে৷ হিন্দু বিরোধী বা সিখ বিরোধী মনোভাবের কী হবে? একটি ধর্মকে উদযাপন করা এক জিনিস। এবং অন্য ধর্মকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র একটি ধর্মের বিরুদ্ধে বিদ্বেষকে স্বীকৃতি দেওয়া পুরোপুরি আলাদা জিনিস।’ আফগানিস্তানে বামিয়ান বুদ্ধ মূর্তি ধ্বংস থেকে পাকিস্তানে গুরুদ্বারে হামলা,গুরুদ্বারে শিখ তীর্থযাত্রীদের খুনের উদাহরণ তুলে ধরেন তিনি।