ধূপগুড়িতে নাবালিকা ধর্ষণকাণ্ডে চাঞ্চল্য, সালিশি ও টাকা লেনদেনের অভিযোগে উত্তাল রাজনীতি

- আপডেট : ১ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার
- / 35
পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: কসবার একটি আইন কলেজে ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার উত্তাল ধূপগুড়ি। সেখানকার একটি গ্রামে বছর এগারোর এক নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগ ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। আরও বিতর্ক ছড়িয়েছে সালিশি সভা ও ঘটনাকে টাকা দিয়ে ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ ঘিরে। এই ঘটনায় রাজনৈতিক তরজাও তুঙ্গে উঠেছে রাজ্যে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নির্যাতিতা নাবালিকা স্থানীয় এক তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যের আত্মীয়। অভিযোগ, রবিবার বিকেলে বৃষ্টির মধ্যে মাঠে পরিবারের সদস্যরা কাজ করছিলেন। সেই সময় নাবালিকাকে ছাগল বাড়ি নিয়ে আসতে বলা হয়। বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে প্রতিবেশী এক যুবক তাকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ।
এই মর্মান্তিক ঘটনার পরই নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে শাসক দলের কিছু নেতার ‘সালিশি সভা’ বসে বলে অভিযোগ। ভাইরাল হওয়া একটি ছবিতে সেই বৈঠকের দৃশ্য দেখা গিয়েছে, যদিও ছবির সত্যতা পুবের কলম যাচাই করেনি। অভিযোগ উঠেছে, সালিশির মাধ্যমে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়।
ঘটনাটি সামনে আসতেই রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে। বিজেপির পক্ষ থেকে অভিযোগ, তৃণমূল কংগ্রেস পুরো ঘটনা টাকা দিয়ে চাপা দিতে চাইছে। পাল্টা তৃণমূল দাবি করেছে, এক বিজেপি নেতা ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দেন। ভাইরাল একটি ভিডিয়োয় ওই বিজেপি নেতাকে বলতে শোনা যায়, “৫০ হাজার টাকা দিয়ে মীমাংসা করা যায় কি না… মেয়ের নামে ফিক্সড করে রাখলে পরে বিয়ের সময় কাজে লাগবে।”
এই ঘটনার পরে নির্যাতিতার পরিবার ধূপগুড়ি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। পুলিশ অভিযুক্ত প্রতিবেশী যুবককে গ্রেফতার করেছে। ধূপগুড়ির বারঘরিয়া গ্রামপঞ্চায়েতের উপপ্রধান ও তৃণমূল কংগ্রেস নেতা আবু তাহের বলেন, “একটা ঘটনা ঘটেছে। রাতেই অভিযোগ দায়ের হয় এবং একজন গ্রেফতার হয়েছে। আমি শুনেছি নাবালিকাকে নির্যাতন করা হয়েছে। তবে সালিশিতে যদি টাকা লেনদেন হয়ে থাকে, তা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
নির্যাতিতার পরিবারের এক সদস্য জানিয়েছেন, ঘটনার পরে মেয়ের মা তাকে নিয়ে দাদার বাড়ি চলে যান। সেই সময়েই গ্রামে সালিশি সভা বসানো হয়। পরবর্তীতে মেয়ের মা থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন।
ধূপগুড়ির বিজেপি কনভেনার চন্দন দত্ত বলেন, “এই ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। ভাইরাল হওয়া ভিডিওয় বিজেপি নেতার কথাবার্তা বিকৃত করা হয়েছে বলেও আমাদের দাবি।”
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে তাপ-উত্তাপ সৃষ্টি হয়েছে। একদিকে ধর্ষণ, অন্যদিকে সালিশি সভা ও রাজনৈতিক দলের ভূমিকা—সব মিলিয়ে ধূপগুড়ির এই ঘটনা রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ও রাজনৈতিক নৈতিকতা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।