২৭ জুলাই ২০২৫, রবিবার, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘হিন্দু খতরে মে’! মুসলিম ও খ্রিস্টানদের জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে চেনা উদ্বেগ প্রকাশ করলেন ভাগবত

অর্পিতা লাহিড়ী
  • আপডেট : ১৫ অক্টোবর ২০২১, শুক্রবার
  • / 62

পুবের কলম ওয়েব ডেস্কঃ শুক্রবার মহারাষ্ট্রের নাগপুরে ছিল আরএসএস-এর প্রতিষ্ঠা দিবস পালিত হয়। সেই মঞ্চ থেকে ভাষণ দেন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত। ভাষণ দেওয়ার সময় তিনি টেনে আনেন ২০১৫ সালে আরএসএস অখিল ভারতীয় কার্যকরী মণ্ডল (এবিকেএম)-তে গৃহীত একটি প্রস্তাবের প্রসঙ্গ। ২০১১ সালের জনগণনার পরিসংখ্যান তুলে ধরে ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, ‘মূল ভারতীয় ধর্মালম্বীদের জনসংখ্যা ৮৮ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৮৩.৮ শতাংশ। অথচ মুসলিমদের জনসংখ্যার হার ৯.৮ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৪.২৩ শতাংশ।’ ভাগবত আরও বলেন, ‘এ দেশের নিজস্ব ধর্মের মানুষদের জনসংখ্যা ৮১.৩ শতাংশ থেকে কমে ৬৭ শতাংশে নেমে এসেছে গত ২০০১ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে। অন্য দিকে, ওই দশকে খ্রিস্টানদের জনসংখ্যা বেড়েছে ১৩ শতাংশ। মণিপুরে মূল ভারতীয় ধর্মের জনসংখ্যা ৮০ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশে।’
এই প্রথম নয়। এমন দাবি আরএসএস তার জন্মলগ্ন থেকেই করে আসছে। তার রাজনৈতিক শিষ্য বিজেপি রাজনৈতিকভাবে ব্যাকফুটে পৌঁছে গেলেই, এমন ইস্যুকে কৌশলে চাঙ্গা করে তোলে আরএসএস। আর সেই ইস্যু সামনে রেখে ‘বিদ্বেষ রাজনীতির টিআরপি’ বাড়িয়ে তোলে বিজেপি। এদিন সঙ্ঘ প্রধান বলেন, বিদেশি আক্রমণের জেরে ভারতে ইসলাম ও খ্রিস্টান ধর্ম এসেছে। অন্য দিকে, শরণার্থী হিসেবে ভারতে এসেছিলেন ইহুদি ও পার্সিরা। মুসলিমদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আব্দুল হামিদ কিংবা হাসান খান মেওয়াতির মতো দেশপ্রেমিকদের অনুসরণ করা উচিত তাঁদের।’
হিন্দু মন্দিরের সম্পত্তি ও তার পরিচালনা নিয়ে ভাগবত বলেন, ‘দখল হয়ে যাচ্ছে বহু হিন্দু মন্দির। শুধু তাই নয়, এখন মন্দিরের দায়িত্বও তুলে দেওয়া হচ্ছে বিধর্মীদের হাতে। দক্ষিণ ভারতে হিন্দু মন্দিরের পরিচালনার দায়িত্বে থাকে সরকার। দেশের অন্য অংশেও হয় সরকার নয় ট্রাস্টের নিয়ন্ত্রণে থাকে মন্দির। এটা ঠিক নয়। মন্দির পরিচালনার সমস্ত দায়িত্বই তুলে দেওয়া উচিত হিন্দু ভক্তদের হাতে।’
নাগপুরে বিজেপি জেলাপরিষদ নির্বাচনে হেরেছে। অনেকে মনে করছে বিজেপি নিচে তলা থেকে দুর্বল হচ্ছে। ওপরটা ভারী হয়ে হয়েছে। অর্থাৎ কিছু কর্পোরেট,শিল্পপতি, বড় ব্যবসায়ী তাদের সঙ্গে থাকলেও, নিচে তলাটা দুর্বল হয়ে পড়ছে। আর সেটাই ভাবাচ্ছে আরএসএসকে। এই নিচে তলাটা ধরে রাখে আসলে আরএসএস। তারা দেশের আম হিন্দুর মনে ‘বিভাজনের রাজনীতি’, ‘মৌলবাদী হিন্দুত্বের রাজনীতি’ ও ‘বিদ্বেষের রাজনীতি’ স্থায়ীভাবে গেঁথে দিতে চায়। বিজেপি চাপে পড়লে তাই ভাবগবতার কখনও রামমন্দির, কখনও ৩৭০ ধারা রদ, কখনও বা অভিন্ন দেওয়ানি আইনের মত বিষয়গুলিকে নতুন করে খুঁচিয়ে তোলে।এদিনও তার ব্যতিক্ৰম হয়নি।
তবে পুরনো বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের দাবি, বিজেপি তাড়াহুড়ো করে নিজেদের ইস্যুগুলো নষ্ট করে দিয়েছে। এখন ওই একই ইস্যুতে মানুষকে(হিন্দুদের) বোঝানো সহজ নয়। তাছাড়া এখন সোশ্যাল সাইটের যুগ। সর্বদা পাল্টা মত মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। তাই বিজেপি যদি তাদের ভোট ব্যাঙ্ক ধরে রাখতে চায় তাহলে পূরণ ইস্যু আঁকড়ে থেকে আর কাজ হবে না।

আরও পড়ুন: কলকাতায় মোহন ভাগবত, থাকবেন ১১ দিন

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

‘হিন্দু খতরে মে’! মুসলিম ও খ্রিস্টানদের জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে চেনা উদ্বেগ প্রকাশ করলেন ভাগবত

আপডেট : ১৫ অক্টোবর ২০২১, শুক্রবার

পুবের কলম ওয়েব ডেস্কঃ শুক্রবার মহারাষ্ট্রের নাগপুরে ছিল আরএসএস-এর প্রতিষ্ঠা দিবস পালিত হয়। সেই মঞ্চ থেকে ভাষণ দেন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত। ভাষণ দেওয়ার সময় তিনি টেনে আনেন ২০১৫ সালে আরএসএস অখিল ভারতীয় কার্যকরী মণ্ডল (এবিকেএম)-তে গৃহীত একটি প্রস্তাবের প্রসঙ্গ। ২০১১ সালের জনগণনার পরিসংখ্যান তুলে ধরে ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, ‘মূল ভারতীয় ধর্মালম্বীদের জনসংখ্যা ৮৮ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৮৩.৮ শতাংশ। অথচ মুসলিমদের জনসংখ্যার হার ৯.৮ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৪.২৩ শতাংশ।’ ভাগবত আরও বলেন, ‘এ দেশের নিজস্ব ধর্মের মানুষদের জনসংখ্যা ৮১.৩ শতাংশ থেকে কমে ৬৭ শতাংশে নেমে এসেছে গত ২০০১ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে। অন্য দিকে, ওই দশকে খ্রিস্টানদের জনসংখ্যা বেড়েছে ১৩ শতাংশ। মণিপুরে মূল ভারতীয় ধর্মের জনসংখ্যা ৮০ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশে।’
এই প্রথম নয়। এমন দাবি আরএসএস তার জন্মলগ্ন থেকেই করে আসছে। তার রাজনৈতিক শিষ্য বিজেপি রাজনৈতিকভাবে ব্যাকফুটে পৌঁছে গেলেই, এমন ইস্যুকে কৌশলে চাঙ্গা করে তোলে আরএসএস। আর সেই ইস্যু সামনে রেখে ‘বিদ্বেষ রাজনীতির টিআরপি’ বাড়িয়ে তোলে বিজেপি। এদিন সঙ্ঘ প্রধান বলেন, বিদেশি আক্রমণের জেরে ভারতে ইসলাম ও খ্রিস্টান ধর্ম এসেছে। অন্য দিকে, শরণার্থী হিসেবে ভারতে এসেছিলেন ইহুদি ও পার্সিরা। মুসলিমদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আব্দুল হামিদ কিংবা হাসান খান মেওয়াতির মতো দেশপ্রেমিকদের অনুসরণ করা উচিত তাঁদের।’
হিন্দু মন্দিরের সম্পত্তি ও তার পরিচালনা নিয়ে ভাগবত বলেন, ‘দখল হয়ে যাচ্ছে বহু হিন্দু মন্দির। শুধু তাই নয়, এখন মন্দিরের দায়িত্বও তুলে দেওয়া হচ্ছে বিধর্মীদের হাতে। দক্ষিণ ভারতে হিন্দু মন্দিরের পরিচালনার দায়িত্বে থাকে সরকার। দেশের অন্য অংশেও হয় সরকার নয় ট্রাস্টের নিয়ন্ত্রণে থাকে মন্দির। এটা ঠিক নয়। মন্দির পরিচালনার সমস্ত দায়িত্বই তুলে দেওয়া উচিত হিন্দু ভক্তদের হাতে।’
নাগপুরে বিজেপি জেলাপরিষদ নির্বাচনে হেরেছে। অনেকে মনে করছে বিজেপি নিচে তলা থেকে দুর্বল হচ্ছে। ওপরটা ভারী হয়ে হয়েছে। অর্থাৎ কিছু কর্পোরেট,শিল্পপতি, বড় ব্যবসায়ী তাদের সঙ্গে থাকলেও, নিচে তলাটা দুর্বল হয়ে পড়ছে। আর সেটাই ভাবাচ্ছে আরএসএসকে। এই নিচে তলাটা ধরে রাখে আসলে আরএসএস। তারা দেশের আম হিন্দুর মনে ‘বিভাজনের রাজনীতি’, ‘মৌলবাদী হিন্দুত্বের রাজনীতি’ ও ‘বিদ্বেষের রাজনীতি’ স্থায়ীভাবে গেঁথে দিতে চায়। বিজেপি চাপে পড়লে তাই ভাবগবতার কখনও রামমন্দির, কখনও ৩৭০ ধারা রদ, কখনও বা অভিন্ন দেওয়ানি আইনের মত বিষয়গুলিকে নতুন করে খুঁচিয়ে তোলে।এদিনও তার ব্যতিক্ৰম হয়নি।
তবে পুরনো বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের দাবি, বিজেপি তাড়াহুড়ো করে নিজেদের ইস্যুগুলো নষ্ট করে দিয়েছে। এখন ওই একই ইস্যুতে মানুষকে(হিন্দুদের) বোঝানো সহজ নয়। তাছাড়া এখন সোশ্যাল সাইটের যুগ। সর্বদা পাল্টা মত মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। তাই বিজেপি যদি তাদের ভোট ব্যাঙ্ক ধরে রাখতে চায় তাহলে পূরণ ইস্যু আঁকড়ে থেকে আর কাজ হবে না।

আরও পড়ুন: কলকাতায় মোহন ভাগবত, থাকবেন ১১ দিন