‘ভোটবন্দি’! বিহার ভোটের আগে নির্বাচন কমিশনের পদক্ষেপকে তীব্র আক্রমণ বিরোধীদের

- আপডেট : ৩ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার
- / 39
পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: বিহারে বিধানসভা নির্বাচন আসন্ন। তার আগেই নির্বাচন কমিশনের বিশেষ সংশোধন প্রক্রিয়া চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভোটার তালিকায় স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশন (এসআইআর) বা বিশেষ সংশোধন নিয়ে বিতর্ক ও বিরোধিতা বাড়ছে বিহারের রাজনৈতিক মহলে। বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিহারে সবার আগে এই বিশেষ পদক্ষেপ শুরু করেছে কমিশন। আরজেডি, কংগ্রেস, সিপিআই, সিপিআই (এম), সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন সহ একাধিক বিরোধী দল নির্বাচন কমিশনের পদক্ষেপকে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের ওপর সরাসরি আঘাত বলে অভিহিত করেছে। বুধবার বিহারের একাধিক বিরোধী রাজনৈতিক দল একযোগে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল এসআইআর নিয়ে। তাঁদের দাবি, এই প্রক্রিয়া আসলে ভোটবন্দি করার চেষ্টা।
বুধবার কমিশনের পক্ষ থেকে নির্দেশিকা জারি করে জানানো হয়েছে, বিহার নির্বাচনের এসআইআর নিয়ে অনুমোদনহীন কোনও ব্যক্তিকে ভোটার তালিকা নিয়ে আলোচনার জন্য কমিশনের তরফ থেকে সময় দেওয়া হবে না। রাজনৈতিক দলগুলির শীর্ষ নেতা তথা দলের সভাপতি এ বিষয়ে আলোচনার জন্য সময় চাইলেই কমিশন তা দেবে। সভাপতি না আসতে পারলে তাঁর মনোনীত দু’জনকে সেই সুযোগ দেওয়া হবে।
আরজেডি সাংসদ মনোজ ঝা সরাসরি প্রশ্ন তোলেন, “যদি ২০ বছর ধরে এই কাজ হয়নি, তবে হঠাৎ এখন ভোটের মুখে এই সিদ্ধান্ত কেন? জুনের শেষে এসে এত বড় প্রক্রিয়া শুরু করার অর্থ কী?”
তিনি আরও বলেন, “পৌনে ৮ কোটি ভোটারের তথ্য যাচাই এক মাসে সম্ভব নয়। তারপর আপত্তি ও সংশোধন, তাও বর্ষার মধ্যে! এটা তো গরিব, সংখ্যালঘু ও প্রান্তিক মানুষদের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র। যাঁদের কাছে জন্মসনদ নেই, যাঁরা প্রতি বছর বন্যায় নথিপত্র হারান, তাঁদের কী হবে?”
তিনি আরও জানান, বিহারের প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ রাজ্যের বাইরে থাকেন জীবিকার কারণে। তাদের উদ্দেশ্য করেই ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার ফাঁদ পাতা
সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, “এটি একপ্রকার ভোটবন্দি। যেভাবে নোটবন্দি করে গরিবের পেটে লাথি মারা হয়েছিল, ঠিক সেভাবেই গরিবের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আধার, ভোটার কার্ড, জব কার্ড— এসব নথি থাকা সত্ত্বেও কমিশন এগুলো মানতে রাজি নয়।”
তাঁর মতে, ‘এই পরিকল্পনার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। এক শ্রেণির মানুষকে, বিশেষ করে সংখ্যালঘু ও দরিদ্র সম্প্রদায়কে পরিকল্পিতভাবে তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা চলছে’।
এই পদক্ষেপের বিরোধিতায় এদিন মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন কংগ্রেস, সিপিআই, সিপিআই (এম), সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন, আরজেডি, সমাজবাদী পার্টি, এনসিপি-এসপি সহ বিহারের আরও কিছু দল। বিরোধীদের দাবি, অবিলম্বে এই “ভোটবন্দি” পরিকল্পনা প্রত্যাহার করতে হবে এবং সর্বজনীন নথিকে বৈধতা দিতে হবে।
নির্বাচন কমিশনের তরফে এই প্রসঙ্গে কোনও প্রতিক্রিয়া না এলেও, গোটা বিহারজুড়ে জনসাধারণের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। সাধারণ মানুষের একাংশ মনে করছেন, ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার এই উদ্যোগ রোখা না গেলে, তা আগামী দিনে দেশের গণতন্ত্রের জন্য ভয়ঙ্কর নজির হয়ে থাকবে।