০১ অক্টোবর ২০২৫, বুধবার, ১৪ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম সুপারিশ করল পাকিস্তান, দেশজুড়ে উঠল তীব্র সমালোচনার ঝড়

আফিয়া‌‌ নৌশিন
  • আপডেট : ২১ জুন ২০২৫, শনিবার
  • / 320

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: ২০২৬ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম সুপারিশ করল পাকিস্তান সরকার। আর তাতেই ক্ষোভে ফুঁসছে দেশের অভ্যন্তরেই একাধিক মহল।

লেখক, সমাজকর্মী, প্রাক্তন কূটনীতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রাম্পের নাম প্রস্তাব করার বিষয়টিকে তীব্রভাবে আক্রমণ করেছেন তাঁরা।

পাকিস্তানের বিশিষ্ট সাংবাদিক ও লেখক জাহিদ হুসেন এই সিদ্ধান্তকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর বক্তব্য, “ট্রাম্প গাজায় চলতে থাকা গণহত্যার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তিনি ইরানে ইসরাইলের হামলাকে প্রশংসা করেছেন। এমন একজনের নাম কোন যুক্তিতে শান্তির পুরস্কারের জন্য সুপারিশ করা হল?”

আরও পড়ুন: Imran Khan: ইমরানের মুক্তির দাবিতে উত্তাল পাকিস্তান

জাতিসংঘে পাকিস্তানের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত মালীহা লোধি সরাসরি তোপ দেগেছেন পাক সরকারের বিরুদ্ধে। তিনি মন্তব্য করেন, “তোষামোদ করে কিছু হয় না। পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ কখনওই এই সিদ্ধান্ত সমর্থন করেন না।” পাকিস্তানের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের সদস্য আল্লামা রাজা নাসিরের মতে, “এটা শান্তির স্বার্থে নয়, বরং ভূ-রাজনৈতিক লাভের হিসাবেই করা হয়েছে।”

আরও পড়ুন: Donald Trump-Shehbaz Sharif: শাহবাজ-মুনিরের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ট্রাম্প

পাকিস্তান সরকারের তরফে একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যখন সংঘর্ষের আবহ তৈরি হয়েছিল, সেই পরিস্থিতিতে ট্রাম্প তাঁর কূটনৈতিক দক্ষতা দিয়ে সমঝোতা করিয়েছেন। যুদ্ধ এড়াতে তাঁর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। পরমাণু শক্তিধর দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ এড়ানোয় ট্রাম্পের কৃতিত্ব অনস্বীকার্য।” সেই কারণেই ইসলামাবাদ মনে করে, ২০২৬ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার তাঁরই প্রাপ্য।

আরও পড়ুন: পাকিস্তানকে তুলোধনা করল ইসরাইল

পাকিস্তান আরও দাবি করেছে, ট্রাম্পের কৌশলী হস্তক্ষেপে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে ক্রমবর্ধমান আঞ্চলিক অস্থিরতার সময় তিনি যেভাবে ভারসাম্য বজায় রেখেছেন, তা নোবেল শান্তি পুরস্কারের যোগ্য বলে মন্তব্য করেছে ইসলামাবাদ।

এই সুপারিশে যদিও বিন্দুমাত্র বিস্মিত নন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বরং তাঁর দাবি, এতদিনে তাঁর চার-পাঁচবার নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়া উচিত ছিল। হতাশার সুরে তিনি বলেন, “ওরা আমাকে নোবেল দেবে না। কারণ ওটা শুধু উদারপন্থীদের (লিবারাল) জন্য।”

উল্লেখ্য, এর আগেও ইসরায়েল ও একাধিক আরব দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ড’-এর মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেওয়ার জন্য ট্রাম্পের নাম সুপারিশ করেছিলেন তাঁর সমর্থকেরা। তবু এখনও পর্যন্ত তিনি ওই পুরস্কার পাননি। অন্যদিকে, তাঁর পূর্বসূরি বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট হওয়ার বছরেই শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদানের জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন।

প্রসঙ্গত, বিশ্বের শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিশেষ অবদান রাখার জন্য নরওয়ের নোবেল কমিটি এই পুরস্কার প্রদান করে থাকে। তবে ট্রাম্পকে সুপারিশ করার পর পাকিস্তান সরকার এখন তীব্র সমালোচনার মুখে। বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছে, শান্তির প্রতীক হতে পারে কি এমন এক ব্যক্তি যিনি যুদ্ধ ও সহিংসতাকে প্রকাশ্যে সমর্থন করেন?

এই বিতর্কে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। আন্তর্জাতিক মহলও এখন নজর রাখছে, কীভাবে এই সুপারিশ বিশ্ব রাজনীতিতে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম সুপারিশ করল পাকিস্তান, দেশজুড়ে উঠল তীব্র সমালোচনার ঝড়

আপডেট : ২১ জুন ২০২৫, শনিবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: ২০২৬ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম সুপারিশ করল পাকিস্তান সরকার। আর তাতেই ক্ষোভে ফুঁসছে দেশের অভ্যন্তরেই একাধিক মহল।

লেখক, সমাজকর্মী, প্রাক্তন কূটনীতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রাম্পের নাম প্রস্তাব করার বিষয়টিকে তীব্রভাবে আক্রমণ করেছেন তাঁরা।

পাকিস্তানের বিশিষ্ট সাংবাদিক ও লেখক জাহিদ হুসেন এই সিদ্ধান্তকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর বক্তব্য, “ট্রাম্প গাজায় চলতে থাকা গণহত্যার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তিনি ইরানে ইসরাইলের হামলাকে প্রশংসা করেছেন। এমন একজনের নাম কোন যুক্তিতে শান্তির পুরস্কারের জন্য সুপারিশ করা হল?”

আরও পড়ুন: Imran Khan: ইমরানের মুক্তির দাবিতে উত্তাল পাকিস্তান

জাতিসংঘে পাকিস্তানের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত মালীহা লোধি সরাসরি তোপ দেগেছেন পাক সরকারের বিরুদ্ধে। তিনি মন্তব্য করেন, “তোষামোদ করে কিছু হয় না। পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ কখনওই এই সিদ্ধান্ত সমর্থন করেন না।” পাকিস্তানের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের সদস্য আল্লামা রাজা নাসিরের মতে, “এটা শান্তির স্বার্থে নয়, বরং ভূ-রাজনৈতিক লাভের হিসাবেই করা হয়েছে।”

আরও পড়ুন: Donald Trump-Shehbaz Sharif: শাহবাজ-মুনিরের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ট্রাম্প

পাকিস্তান সরকারের তরফে একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যখন সংঘর্ষের আবহ তৈরি হয়েছিল, সেই পরিস্থিতিতে ট্রাম্প তাঁর কূটনৈতিক দক্ষতা দিয়ে সমঝোতা করিয়েছেন। যুদ্ধ এড়াতে তাঁর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। পরমাণু শক্তিধর দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ এড়ানোয় ট্রাম্পের কৃতিত্ব অনস্বীকার্য।” সেই কারণেই ইসলামাবাদ মনে করে, ২০২৬ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার তাঁরই প্রাপ্য।

আরও পড়ুন: পাকিস্তানকে তুলোধনা করল ইসরাইল

পাকিস্তান আরও দাবি করেছে, ট্রাম্পের কৌশলী হস্তক্ষেপে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে ক্রমবর্ধমান আঞ্চলিক অস্থিরতার সময় তিনি যেভাবে ভারসাম্য বজায় রেখেছেন, তা নোবেল শান্তি পুরস্কারের যোগ্য বলে মন্তব্য করেছে ইসলামাবাদ।

এই সুপারিশে যদিও বিন্দুমাত্র বিস্মিত নন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বরং তাঁর দাবি, এতদিনে তাঁর চার-পাঁচবার নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়া উচিত ছিল। হতাশার সুরে তিনি বলেন, “ওরা আমাকে নোবেল দেবে না। কারণ ওটা শুধু উদারপন্থীদের (লিবারাল) জন্য।”

উল্লেখ্য, এর আগেও ইসরায়েল ও একাধিক আরব দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ড’-এর মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেওয়ার জন্য ট্রাম্পের নাম সুপারিশ করেছিলেন তাঁর সমর্থকেরা। তবু এখনও পর্যন্ত তিনি ওই পুরস্কার পাননি। অন্যদিকে, তাঁর পূর্বসূরি বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট হওয়ার বছরেই শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদানের জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন।

প্রসঙ্গত, বিশ্বের শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিশেষ অবদান রাখার জন্য নরওয়ের নোবেল কমিটি এই পুরস্কার প্রদান করে থাকে। তবে ট্রাম্পকে সুপারিশ করার পর পাকিস্তান সরকার এখন তীব্র সমালোচনার মুখে। বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছে, শান্তির প্রতীক হতে পারে কি এমন এক ব্যক্তি যিনি যুদ্ধ ও সহিংসতাকে প্রকাশ্যে সমর্থন করেন?

এই বিতর্কে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। আন্তর্জাতিক মহলও এখন নজর রাখছে, কীভাবে এই সুপারিশ বিশ্ব রাজনীতিতে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।