২০ অগাস্ট ২০২৫, বুধবার, ৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দেশে ফিরতে চান রোহিঙ্গারা, নিচ্ছেন লড়াইয়ের প্রস্তুতি: বিবিসি রিপোর্টে চাঞ্চল্যকর তথ্য

চামেলি দাস
  • আপডেট : ২৭ জুন ২০২৫, শুক্রবার
  • / 154

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে ফের নিজ দেশে ফেরার আকাঙ্ক্ষা আবারও প্রবল হয়ে উঠেছে। তবে এবার সেই প্রত্যাবর্তনের স্বপ্নে যুক্ত হয়েছে সশস্ত্র লড়াইয়ের প্রস্তুতি। বিবিসির এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, কক্সবাজারের বিভিন্ন রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে তরুণরা যুদ্ধের জন্য মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রস্তুত হচ্ছে। কেউ কেউ সরাসরি বলছেন, প্রয়োজনে অস্ত্র হাতে নিয়েই মিয়ানমারে ফিরে স্বাধীনতার জন্য লড়বেন।

উখিয়া ও টেকনাফের ক্যাম্পে ঘুরে রোহিঙ্গা তরুণদের সঙ্গে কথা বলে বিবিসি জানিয়েছে, অনেকেই স্বাধীন আরাকান গঠনের স্বপ্ন দেখছে। এক তরুণ রোহিঙ্গা বলেন, “আমরা আর বাংলাদেশে থাকতে চাই না। আমাদের দেশ মিয়ানমার। প্রয়োজন হলে যুদ্ধ করেই সেটা ফিরে নেব।” আরেকজন বলেন, “সবাইকে জিহাদের জন্য প্রস্তুত হতে বলা হচ্ছে। আরসা, আরএসও একসাথে কাজ করছে।”

আরও পড়ুন: কেন্দ্রের রোহিঙ্গা-বিতাড়ন নিয়ে সরব জামায়াত

ক্যাম্পে অন্তত চারটি সংগঠন সক্রিয় রয়েছে বলে জানা গেছে—আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা), রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও), ইসলামিক মাহাজ ও আরাকান রোহিঙ্গা আর্মি (এআরএ)। তারা ক্যাম্পে নিয়মিত ঘরোয়া বৈঠক করছে, যেখানে ‘জিহাদ’, ‘স্বাধীনতা’ এবং মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়।

আরও পড়ুন: নৌকায় চেপে ইন্দোনেশিয়ায় ১০০ রোহিঙ্গা

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (ICG) সম্প্রতি এক রিপোর্টে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো নতুন করে সংঘাতে জড়াতে পারে। রিপোর্টের লেখক টমাস কেইন বলেন, “ক্যাম্পে সংঘবদ্ধভাবে যুদ্ধের প্রস্তুতি চলছে এবং সদস্য সংগ্রহ ও শারীরিক প্রশিক্ষণ জোরদার হয়েছে।” তাঁর মতে, “এই বিদ্রোহ সফল হবে না বরং বাংলাদেশ, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এবং আরাকান আর্মি—সব পক্ষের জন্যই তা বিপর্যয় ডেকে আনবে।”

আরও পড়ুন: অবশেষে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যার কথা স্বীকার করল আমেরিকা

রিপোর্টে বলা হয়েছে, ক্যাম্পের ভেতরে অস্ত্র প্রশিক্ষণ না হলেও অনেক রোহিঙ্গা তরুণ সীমান্ত পেরিয়ে মায়ানমারের ভেতর গিয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। একজন রোহিঙ্গা বলেন, “বাংলাদেশে নয়, ওরা মায়ানমারে গিয়ে এক-দুই বছর থেকে ট্রেনিং নিয়ে আসে।”

রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে স্থানীয় বাংলাদেশিরাও উদ্বিগ্ন। স্থানীয় অধিকার কর্মী রবিউল হোছাইন জানান, “কারাতে ও শারীরিক প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব গোষ্ঠীর কার্যক্রমও লক্ষণীয়।” তাঁর দাবি, কিছু রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে মিয়ানমারে গিয়ে যুদ্ধেও অংশ নিচ্ছেন।

বাংলাদেশ সরকার বলছে, দেশের মাটিতে কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠীর তৎপরতা সহ্য করা হবে না। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, “এই সংগঠনগুলো বাংলাদেশের তৈরি নয়। বাংলাদেশ কোনোভাবেই এসব গোষ্ঠীর অস্তিত্ব স্বীকার করে না।” তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ সম্প্রতি আরসা ও আরএসও’র শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার করেছে, যা প্রমাণ করে যে সরকার কোনো সহানুভূতিশীল ভূমিকা নিচ্ছে না।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) কর্মকর্তা প্রলয় সিসিন বলেন, “সশস্ত্র গোষ্ঠীর কার্যক্রম ঠেকাতে আমরা ২৪ ঘণ্টা কাজ করছি। অস্ত্র উদ্ধার ও অপরাধীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।” ICG জানিয়েছে, আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ এবং তাদের শিবিরগুলোর ভেতরের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত। মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা গোষ্ঠীকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে চাইছে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, রোহিঙ্গা গোষ্ঠীগুলোর এই উত্তেজনাকর প্রস্তুতি উত্তর রাখাইনের স্থিতিশীলতাকে আরও ভঙ্গুর করে তুলবে। সংঘাত বাড়লে বাংলাদেশকেই আবারও নতুন করে রোহিঙ্গা ঢলের মুখে পড়তে হতে পারে।

Tag :

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

দেশে ফিরতে চান রোহিঙ্গারা, নিচ্ছেন লড়াইয়ের প্রস্তুতি: বিবিসি রিপোর্টে চাঞ্চল্যকর তথ্য

আপডেট : ২৭ জুন ২০২৫, শুক্রবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে ফের নিজ দেশে ফেরার আকাঙ্ক্ষা আবারও প্রবল হয়ে উঠেছে। তবে এবার সেই প্রত্যাবর্তনের স্বপ্নে যুক্ত হয়েছে সশস্ত্র লড়াইয়ের প্রস্তুতি। বিবিসির এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, কক্সবাজারের বিভিন্ন রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে তরুণরা যুদ্ধের জন্য মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রস্তুত হচ্ছে। কেউ কেউ সরাসরি বলছেন, প্রয়োজনে অস্ত্র হাতে নিয়েই মিয়ানমারে ফিরে স্বাধীনতার জন্য লড়বেন।

উখিয়া ও টেকনাফের ক্যাম্পে ঘুরে রোহিঙ্গা তরুণদের সঙ্গে কথা বলে বিবিসি জানিয়েছে, অনেকেই স্বাধীন আরাকান গঠনের স্বপ্ন দেখছে। এক তরুণ রোহিঙ্গা বলেন, “আমরা আর বাংলাদেশে থাকতে চাই না। আমাদের দেশ মিয়ানমার। প্রয়োজন হলে যুদ্ধ করেই সেটা ফিরে নেব।” আরেকজন বলেন, “সবাইকে জিহাদের জন্য প্রস্তুত হতে বলা হচ্ছে। আরসা, আরএসও একসাথে কাজ করছে।”

আরও পড়ুন: কেন্দ্রের রোহিঙ্গা-বিতাড়ন নিয়ে সরব জামায়াত

ক্যাম্পে অন্তত চারটি সংগঠন সক্রিয় রয়েছে বলে জানা গেছে—আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা), রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও), ইসলামিক মাহাজ ও আরাকান রোহিঙ্গা আর্মি (এআরএ)। তারা ক্যাম্পে নিয়মিত ঘরোয়া বৈঠক করছে, যেখানে ‘জিহাদ’, ‘স্বাধীনতা’ এবং মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়।

আরও পড়ুন: নৌকায় চেপে ইন্দোনেশিয়ায় ১০০ রোহিঙ্গা

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (ICG) সম্প্রতি এক রিপোর্টে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো নতুন করে সংঘাতে জড়াতে পারে। রিপোর্টের লেখক টমাস কেইন বলেন, “ক্যাম্পে সংঘবদ্ধভাবে যুদ্ধের প্রস্তুতি চলছে এবং সদস্য সংগ্রহ ও শারীরিক প্রশিক্ষণ জোরদার হয়েছে।” তাঁর মতে, “এই বিদ্রোহ সফল হবে না বরং বাংলাদেশ, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এবং আরাকান আর্মি—সব পক্ষের জন্যই তা বিপর্যয় ডেকে আনবে।”

আরও পড়ুন: অবশেষে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যার কথা স্বীকার করল আমেরিকা

রিপোর্টে বলা হয়েছে, ক্যাম্পের ভেতরে অস্ত্র প্রশিক্ষণ না হলেও অনেক রোহিঙ্গা তরুণ সীমান্ত পেরিয়ে মায়ানমারের ভেতর গিয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। একজন রোহিঙ্গা বলেন, “বাংলাদেশে নয়, ওরা মায়ানমারে গিয়ে এক-দুই বছর থেকে ট্রেনিং নিয়ে আসে।”

রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে স্থানীয় বাংলাদেশিরাও উদ্বিগ্ন। স্থানীয় অধিকার কর্মী রবিউল হোছাইন জানান, “কারাতে ও শারীরিক প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব গোষ্ঠীর কার্যক্রমও লক্ষণীয়।” তাঁর দাবি, কিছু রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে মিয়ানমারে গিয়ে যুদ্ধেও অংশ নিচ্ছেন।

বাংলাদেশ সরকার বলছে, দেশের মাটিতে কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠীর তৎপরতা সহ্য করা হবে না। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, “এই সংগঠনগুলো বাংলাদেশের তৈরি নয়। বাংলাদেশ কোনোভাবেই এসব গোষ্ঠীর অস্তিত্ব স্বীকার করে না।” তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ সম্প্রতি আরসা ও আরএসও’র শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার করেছে, যা প্রমাণ করে যে সরকার কোনো সহানুভূতিশীল ভূমিকা নিচ্ছে না।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) কর্মকর্তা প্রলয় সিসিন বলেন, “সশস্ত্র গোষ্ঠীর কার্যক্রম ঠেকাতে আমরা ২৪ ঘণ্টা কাজ করছি। অস্ত্র উদ্ধার ও অপরাধীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।” ICG জানিয়েছে, আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ এবং তাদের শিবিরগুলোর ভেতরের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত। মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা গোষ্ঠীকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে চাইছে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, রোহিঙ্গা গোষ্ঠীগুলোর এই উত্তেজনাকর প্রস্তুতি উত্তর রাখাইনের স্থিতিশীলতাকে আরও ভঙ্গুর করে তুলবে। সংঘাত বাড়লে বাংলাদেশকেই আবারও নতুন করে রোহিঙ্গা ঢলের মুখে পড়তে হতে পারে।