০৫ নভেম্বর ২০২৫, বুধবার, ১৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শীতে সাদকায়ে জারিয়ার সুযোগ

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার
  • / 37

আবদুল্লাহ্ শাকের: সারা রাজ্যে বইছে শীতের ঠান্ডা বাতাস। পশু-পাখিরাও আশ্রয় খুঁজছে উষ্ণ জায়গায়। বিত্তবানরা চার দেওয়ালের ভেতরে মোটামুটি উষ্ণতার পরশে সময় কাটালেও অনেক অসহায়, দুস্থ ও গরিব পাচ্ছে না শরীর ঢাকার সম্বলটুকু। ফলে অসহায়রা বঞ্চিত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবন-যাপনের সুযোগ থেকে। সুতরাং, যাদের সামর্থ্য আছে- হোক তা অল্পই, এই অসহায়দের পেছনে খরচ করা চাই। এসব প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সহযোগিতা করা ইসলামের অন্যতম শিক্ষা।

 

যে-কোনওভাবে সাহায্য-সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে পারি আমরা। সব দানেই রয়েছে বিপুল সাওয়াব। দানের মাধ্যমে আল্লাহ্তায়ালা পৃথিবীর মানুষের মধ্যে রিযিকের ভারসাম্যতা রক্ষা করেন। বিনিময়ে প্রতিদানও দিয়ে থাকেন। আল্লাহতায়ালা  বলেন- ‘যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান-সদকা করো, তবে তা কতই না উত্তম। আর যদি গোপনে ফকির-মিসকিনকে দান করে দাও, তবে আরও বেশি উত্তম। আর তিনি তোমাদের পাপগুলো ক্ষমা করে দেবেন।’ (সূরা বাকারাহ্, আয়াত ২৭১) 

 

‘সাদকা’ শব্দটি এসেছে আরবি ‘সিদকুন’ থেকে।  যার অর্থ সত্যতা, যথার্থতা। ইসলামি পরিভাষায় সাদকা বলা হয় একমাত্র আল্লাহতায়ালা সন্তুষ্টি অর্জন করার লক্ষ্যে নিজের সম্পদ ব্যয় করাকেই।  কারণ মানুষের সবচেয়ে প্রিয় বস্তু এবং জীবন-যাপনের প্রধান উপকরণ কষ্টার্জিত সম্পদ ব্যয় করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি আল্লাহতায়ালার প্রতি ভালোবাসা এবং তাঁর নির্দেশাবলির প্রতি আনুগত্যের বাস্তব  প্রমাণ দিয়ে থাকেন বলে এই ব্যয়কে ‘সাদকা’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে অত্যাবশ্যক এবং ঐচ্ছিক উভয় প্রকার দানকেই সাদকা বলা হয়েছে। তবে প্রচলিত অর্থে শুধু ঐচ্ছিক নফল দানকেই সাদকা বলা হয়ে থাকে।

 

সাদকা প্রধানত দুই প্রকার- ১. সাধারণ সদকা। ২. সদকায়ে জারিয়া। গরিব-দুঃখীকে টাকা-পয়সা দান করা, ভালো ব্যবহার করা সাধারণ সাদকার অন্তর্ভুক্ত। আর সাদকায়ে জারিয়া বলা হয় ওইসব সৎকর্ম যেগুলোর কল্যাণকারিতা স্থায়ী হয়। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সা.  বলেছেন, ‘যখন কোনও ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করে, তার  সব আমল বন্ধ হয়ে যায়, তিনটি ব্যতীত- ১. সদকায়ে জারিয়া। ২. উপকারী জ্ঞান এবং ৩. সৎকর্মশীল সন্তান, যে তার জন্য দোয়া করে।’ (মুসলিম, ১৬৩১)

 

ইমাম নববী রহ. এই হাদিসের ওপর মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, ‘সাদকায়ে জারিয়া হল ওয়াকফ বা সর্বস্বত্ব মালিকানা দান করে দেওয়া।’ (শরহে মুসলিম, ১১/৮৫)

 

আল্লাহ্তায়ালা বলেছেন, ‘যারা আল্লাহর রাস্তায়  নিজের ধন-সম্পদ ব্যয় করে আল্লাহর সন্তুষ্টি  অর্জনের লক্ষ্যে এবং নিজের মনকে সুদৃঢ় করার জন্য তাদের উদাহরণ টিলায় অবস্থিত বাগানের মতো, যাতে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়; অতঃপর দ্বিগুণ ফসল দান করে। যদি এমন প্রবল বৃষ্টিপাত না-ও হয়, তবে হালকা বর্ষণই যথেষ্ট। আল্লাহ্ তোমাদের কাজকর্ম যথার্থই প্রত্যক্ষ করেন।’ (সূরা বাকারাহ্, আয়াত ২৬৫)

 

অন্য আয়াতে আল্লাহ্ বলেন, ‘এবং তাদের সম্পদে নির্দিষ্ট হক রয়েছে; ভিক্ষুক এবং বঞ্চিত (অভাবী অথচ লজ্জায় কারও কাছে হাত পাতে না) সবার হক রয়েছে।’ (সূরা মায়ারিজ, আয়াত ২৪-২৫)

 

আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আল্লাহর রাস্তায়  সম্পদ ব্যয় করে তার উদাহরণ হচ্ছে সেই বীজের মতো যা থেকে সাতটি শিষ জন্মায়। আর প্রতিটি শীষে একশোটি করে দানা থাকে। আর আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা অতিরিক্ত দান করেন। আল্লাহ্ সুপ্রশস্ত সুবিজ্ঞ।’ (সূরা বাকারাহ্, আয়াত ২৬১)

 

লোকদেখানো দান-সদকা নয়, কেবল আল্লাহকে রাজি-খুশি করতেই সর্বদা অসহায় মানুষের মাঝে দানের হাত বিস্তৃত করা। বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই শীতে যারা পর্যুদস্ত হয়ে পড়েছে  তাদের সাহায্যে দান-সদকার হাত বাড়িয়ে দেওয়া কর্তব্য। এই অসহায় ও দুস্থ মানুষদের শীতের বস্ত্র ও খাবার দিয়েও সাহায্য করা জরুরি। আল্লাহ্ তওফিক দিন।

Tag :

প্রতিবেদক

ইমামা খাতুন

২০২২ সাল থেকে সংবাদ জগতের সঙ্গে যুক্ত। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতাতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছে। ডিজিটাল প্লাটফর্মে রিপোর্টার হিসেবে হাতেখড়ি। ২০২২ সালের শেষান্তে পুবের কলম-এর সঙ্গে যুক্ত হয়। ইমামার ভাষ্যে, The First Law of Journalism: to confirm existing prejudice, rather than contradict it.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

শীতে সাদকায়ে জারিয়ার সুযোগ

আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার

আবদুল্লাহ্ শাকের: সারা রাজ্যে বইছে শীতের ঠান্ডা বাতাস। পশু-পাখিরাও আশ্রয় খুঁজছে উষ্ণ জায়গায়। বিত্তবানরা চার দেওয়ালের ভেতরে মোটামুটি উষ্ণতার পরশে সময় কাটালেও অনেক অসহায়, দুস্থ ও গরিব পাচ্ছে না শরীর ঢাকার সম্বলটুকু। ফলে অসহায়রা বঞ্চিত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবন-যাপনের সুযোগ থেকে। সুতরাং, যাদের সামর্থ্য আছে- হোক তা অল্পই, এই অসহায়দের পেছনে খরচ করা চাই। এসব প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সহযোগিতা করা ইসলামের অন্যতম শিক্ষা।

 

যে-কোনওভাবে সাহায্য-সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে পারি আমরা। সব দানেই রয়েছে বিপুল সাওয়াব। দানের মাধ্যমে আল্লাহ্তায়ালা পৃথিবীর মানুষের মধ্যে রিযিকের ভারসাম্যতা রক্ষা করেন। বিনিময়ে প্রতিদানও দিয়ে থাকেন। আল্লাহতায়ালা  বলেন- ‘যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান-সদকা করো, তবে তা কতই না উত্তম। আর যদি গোপনে ফকির-মিসকিনকে দান করে দাও, তবে আরও বেশি উত্তম। আর তিনি তোমাদের পাপগুলো ক্ষমা করে দেবেন।’ (সূরা বাকারাহ্, আয়াত ২৭১) 

 

‘সাদকা’ শব্দটি এসেছে আরবি ‘সিদকুন’ থেকে।  যার অর্থ সত্যতা, যথার্থতা। ইসলামি পরিভাষায় সাদকা বলা হয় একমাত্র আল্লাহতায়ালা সন্তুষ্টি অর্জন করার লক্ষ্যে নিজের সম্পদ ব্যয় করাকেই।  কারণ মানুষের সবচেয়ে প্রিয় বস্তু এবং জীবন-যাপনের প্রধান উপকরণ কষ্টার্জিত সম্পদ ব্যয় করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি আল্লাহতায়ালার প্রতি ভালোবাসা এবং তাঁর নির্দেশাবলির প্রতি আনুগত্যের বাস্তব  প্রমাণ দিয়ে থাকেন বলে এই ব্যয়কে ‘সাদকা’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে অত্যাবশ্যক এবং ঐচ্ছিক উভয় প্রকার দানকেই সাদকা বলা হয়েছে। তবে প্রচলিত অর্থে শুধু ঐচ্ছিক নফল দানকেই সাদকা বলা হয়ে থাকে।

 

সাদকা প্রধানত দুই প্রকার- ১. সাধারণ সদকা। ২. সদকায়ে জারিয়া। গরিব-দুঃখীকে টাকা-পয়সা দান করা, ভালো ব্যবহার করা সাধারণ সাদকার অন্তর্ভুক্ত। আর সাদকায়ে জারিয়া বলা হয় ওইসব সৎকর্ম যেগুলোর কল্যাণকারিতা স্থায়ী হয়। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সা.  বলেছেন, ‘যখন কোনও ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করে, তার  সব আমল বন্ধ হয়ে যায়, তিনটি ব্যতীত- ১. সদকায়ে জারিয়া। ২. উপকারী জ্ঞান এবং ৩. সৎকর্মশীল সন্তান, যে তার জন্য দোয়া করে।’ (মুসলিম, ১৬৩১)

 

ইমাম নববী রহ. এই হাদিসের ওপর মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, ‘সাদকায়ে জারিয়া হল ওয়াকফ বা সর্বস্বত্ব মালিকানা দান করে দেওয়া।’ (শরহে মুসলিম, ১১/৮৫)

 

আল্লাহ্তায়ালা বলেছেন, ‘যারা আল্লাহর রাস্তায়  নিজের ধন-সম্পদ ব্যয় করে আল্লাহর সন্তুষ্টি  অর্জনের লক্ষ্যে এবং নিজের মনকে সুদৃঢ় করার জন্য তাদের উদাহরণ টিলায় অবস্থিত বাগানের মতো, যাতে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়; অতঃপর দ্বিগুণ ফসল দান করে। যদি এমন প্রবল বৃষ্টিপাত না-ও হয়, তবে হালকা বর্ষণই যথেষ্ট। আল্লাহ্ তোমাদের কাজকর্ম যথার্থই প্রত্যক্ষ করেন।’ (সূরা বাকারাহ্, আয়াত ২৬৫)

 

অন্য আয়াতে আল্লাহ্ বলেন, ‘এবং তাদের সম্পদে নির্দিষ্ট হক রয়েছে; ভিক্ষুক এবং বঞ্চিত (অভাবী অথচ লজ্জায় কারও কাছে হাত পাতে না) সবার হক রয়েছে।’ (সূরা মায়ারিজ, আয়াত ২৪-২৫)

 

আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আল্লাহর রাস্তায়  সম্পদ ব্যয় করে তার উদাহরণ হচ্ছে সেই বীজের মতো যা থেকে সাতটি শিষ জন্মায়। আর প্রতিটি শীষে একশোটি করে দানা থাকে। আর আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা অতিরিক্ত দান করেন। আল্লাহ্ সুপ্রশস্ত সুবিজ্ঞ।’ (সূরা বাকারাহ্, আয়াত ২৬১)

 

লোকদেখানো দান-সদকা নয়, কেবল আল্লাহকে রাজি-খুশি করতেই সর্বদা অসহায় মানুষের মাঝে দানের হাত বিস্তৃত করা। বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই শীতে যারা পর্যুদস্ত হয়ে পড়েছে  তাদের সাহায্যে দান-সদকার হাত বাড়িয়ে দেওয়া কর্তব্য। এই অসহায় ও দুস্থ মানুষদের শীতের বস্ত্র ও খাবার দিয়েও সাহায্য করা জরুরি। আল্লাহ্ তওফিক দিন।