০২ ডিসেম্বর ২০২৫, মঙ্গলবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বুলবুলির পিঠে আন্দামান জেল থেকে বাইরে আসতেন সাভারকর

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ২৮ অগাস্ট ২০২২, রবিবার
  • / 110

পুবের কলম ওয়েব ডেস্কঃ ইতিহাসকে নতুন করে লিখছে বিজেপি।  স্বয়ং অমিত শাহ হিন্দুত্বের বীরগাথা শোনাতে চেয়েছেন গেরুয়া ভক্তদের। গাথা কখনও ইতিহাস হতে পারে না। ফলে বিজেপি শাসনে নানা কল্প কাহিনী ঢুকে পড়ছে ইতিহাসের পাতায়। কর্নাটকে সাভারকারকে নিয়ে তৈরি এক বায়বীয় গেরুয়া কল্পনাকে বিজেপি ঢুকিয়ে দিয়েছে কর্ণাটকের সরকারি স্কুলের পাঠ্য বইতে।

 

আরও পড়ুন: সাভারকর মুসলিমদের বিশ্বাসঘাতক হিসেবে দেখতেন: মানহানির মামলায় দাবি রাহুলের

অষ্টম শ্রেণির এই পাঠ্য বইতে লেখা হয়েছে, বুলবুলি পাখির পিঠে  চেপে নিত্য আন্দামানের সেলুলার জেল থেকে বেরিয়ে পড়তেন সাভারকর। দেখে আসতেন নিজের জন্মভূমিকে। এই ঘটনার পর ফের রাজ্যের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগে সরব হয়েছে বিরোধীরা।

আরও পড়ুন: ফের নাম-বদল, মহারাষ্ট্রে দুটি সমুদ্র লিঙ্কের নাম সাভারকর ও অটল বিহারীর নামে!

 

আরও পড়ুন: ফিল্মফেয়ারে পাওয়া উপহার বাথরুমের হাতল হিসেবে ব্যবহার করি: নাসিরুদ্দিন শাহ

কন্নড় পাঠ্যবইয়ে লেখা হয়েছে, ‘সাভারকরকে যে সেলে রাখা হয়েছিল তাতে একটি চাবি ঢোকানোর মতো ফুটোও ছিল না। কিন্তু সেই সেলে প্রতি দিনই আসত বুলবুলি পাখিরা ।

 

সাভারকর তাদের পিঠে চেপে জেল থেকে বেরিয়ে প্রতি দিন মাতৃভূমি ঘুরে দেখতে আসতেন।’ ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সাভারকরের ভূমিকা নিয়ে বারবার কটাক্ষ করেছে কংগ্রেস সহ বিরোধীরা। তিনি যে আন্দামান জেলে থেকে ব্রিটিশদের কাছে মুচলেখা দিয়ে জেল থেকে বাইরে এসেছিলেন। ইতিহাস তার সাক্ষী।

 

ইংরেজ কর্তৃপক্ষের কাছে সাভারকরের উপর্যপুরি ক্ষমাপ্রার্থনা করে লেখা বহু  চিঠিও রয়েছে। যা নিয়ে বিরোধীরা আজও প্রশ্ন তোলেন। স্বঘোষিত এই ‘বীর’কে  নিয়ে নতুন করে ইতিহাস রচনা নিয়েই বিতর্ক দানা বেঁধেছে কর্নাটকে।

 

আসলে আরএসএস বহুকাল ধরেই চাইছে পড়ুয়াদের শৈশব ও কৈশোরেই কল্পিত ও বেমামুল অসত্য ইতিহাস শেখাতে। যাতে করে বড় হয়ে তারা বিদ্বেষের ধ্বজা উর্ধে তুলে ধরতে পারে। যোগ্য ট্রল আর্মি হতে পারে ।

 

এতদিন সভারকারকে ‘বীর’ বলে প্রচার করত আরএসএস ও তার রাজনৈতিক শিষ্য বিজেপি সহ বহু গেরুয়া দল। এবার বুঝি তারা সভারকারকে ‘সন্ত’ বানানোর ছক কষছে। আরএসএসের থিঙ্ক ট্যাঙ্করা বহুকাল ধরেই চাইছে ইতিহাস ও পুরাণকে গুলিয়ে ফেলতে।

 

কল্পকাহিনীর ডানায় ইতিহাসকে ভাসিয়ে দিতে। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে তারা ইতিহাসের চাকায় গেরুয়া রং করতে চাইছে। এই কাজে তারা রাজনৈতিক উৎসাহ পাচ্ছেন প্রবলভাবে। গেরুয়া রাজনীতির প্রবল ইচ্ছায় দেশের ধর্মনিরপেক্ষ সংস্কৃতি ধুঁকতে বসেছে।

 

দেশের প্রধানমন্ত্রী নিজে অযোধ্যার রামন্দিরের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছেন। তিনি জাতীয় প্রতীকের উদ্বোধন করেছেন পুজো দিয়ে। ফলে শীর্ষ নেতৃত্বের এই মনোভাব ও বডিল্যাংগুয়েজ ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বহু প্রতিষ্ঠানে। শিক্ষা অঙ্গনকেও এর নাগপাশ থেকে মুক্ত রাখা সত্যিই দুরহ। এমনটাই মনে করছেন অনেকে ।

প্রতিবেদক

ইমামা খাতুন

২০২২ সাল থেকে সংবাদ জগতের সঙ্গে যুক্ত। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতাতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছে। ডিজিটাল প্লাটফর্মে রিপোর্টার হিসেবে হাতেখড়ি। ২০২২ সালের শেষান্তে পুবের কলম-এর সঙ্গে যুক্ত হয়। ইমামার ভাষ্যে, The First Law of Journalism: to confirm existing prejudice, rather than contradict it.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

বুলবুলির পিঠে আন্দামান জেল থেকে বাইরে আসতেন সাভারকর

আপডেট : ২৮ অগাস্ট ২০২২, রবিবার

পুবের কলম ওয়েব ডেস্কঃ ইতিহাসকে নতুন করে লিখছে বিজেপি।  স্বয়ং অমিত শাহ হিন্দুত্বের বীরগাথা শোনাতে চেয়েছেন গেরুয়া ভক্তদের। গাথা কখনও ইতিহাস হতে পারে না। ফলে বিজেপি শাসনে নানা কল্প কাহিনী ঢুকে পড়ছে ইতিহাসের পাতায়। কর্নাটকে সাভারকারকে নিয়ে তৈরি এক বায়বীয় গেরুয়া কল্পনাকে বিজেপি ঢুকিয়ে দিয়েছে কর্ণাটকের সরকারি স্কুলের পাঠ্য বইতে।

 

আরও পড়ুন: সাভারকর মুসলিমদের বিশ্বাসঘাতক হিসেবে দেখতেন: মানহানির মামলায় দাবি রাহুলের

অষ্টম শ্রেণির এই পাঠ্য বইতে লেখা হয়েছে, বুলবুলি পাখির পিঠে  চেপে নিত্য আন্দামানের সেলুলার জেল থেকে বেরিয়ে পড়তেন সাভারকর। দেখে আসতেন নিজের জন্মভূমিকে। এই ঘটনার পর ফের রাজ্যের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগে সরব হয়েছে বিরোধীরা।

আরও পড়ুন: ফের নাম-বদল, মহারাষ্ট্রে দুটি সমুদ্র লিঙ্কের নাম সাভারকর ও অটল বিহারীর নামে!

 

আরও পড়ুন: ফিল্মফেয়ারে পাওয়া উপহার বাথরুমের হাতল হিসেবে ব্যবহার করি: নাসিরুদ্দিন শাহ

কন্নড় পাঠ্যবইয়ে লেখা হয়েছে, ‘সাভারকরকে যে সেলে রাখা হয়েছিল তাতে একটি চাবি ঢোকানোর মতো ফুটোও ছিল না। কিন্তু সেই সেলে প্রতি দিনই আসত বুলবুলি পাখিরা ।

 

সাভারকর তাদের পিঠে চেপে জেল থেকে বেরিয়ে প্রতি দিন মাতৃভূমি ঘুরে দেখতে আসতেন।’ ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সাভারকরের ভূমিকা নিয়ে বারবার কটাক্ষ করেছে কংগ্রেস সহ বিরোধীরা। তিনি যে আন্দামান জেলে থেকে ব্রিটিশদের কাছে মুচলেখা দিয়ে জেল থেকে বাইরে এসেছিলেন। ইতিহাস তার সাক্ষী।

 

ইংরেজ কর্তৃপক্ষের কাছে সাভারকরের উপর্যপুরি ক্ষমাপ্রার্থনা করে লেখা বহু  চিঠিও রয়েছে। যা নিয়ে বিরোধীরা আজও প্রশ্ন তোলেন। স্বঘোষিত এই ‘বীর’কে  নিয়ে নতুন করে ইতিহাস রচনা নিয়েই বিতর্ক দানা বেঁধেছে কর্নাটকে।

 

আসলে আরএসএস বহুকাল ধরেই চাইছে পড়ুয়াদের শৈশব ও কৈশোরেই কল্পিত ও বেমামুল অসত্য ইতিহাস শেখাতে। যাতে করে বড় হয়ে তারা বিদ্বেষের ধ্বজা উর্ধে তুলে ধরতে পারে। যোগ্য ট্রল আর্মি হতে পারে ।

 

এতদিন সভারকারকে ‘বীর’ বলে প্রচার করত আরএসএস ও তার রাজনৈতিক শিষ্য বিজেপি সহ বহু গেরুয়া দল। এবার বুঝি তারা সভারকারকে ‘সন্ত’ বানানোর ছক কষছে। আরএসএসের থিঙ্ক ট্যাঙ্করা বহুকাল ধরেই চাইছে ইতিহাস ও পুরাণকে গুলিয়ে ফেলতে।

 

কল্পকাহিনীর ডানায় ইতিহাসকে ভাসিয়ে দিতে। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে তারা ইতিহাসের চাকায় গেরুয়া রং করতে চাইছে। এই কাজে তারা রাজনৈতিক উৎসাহ পাচ্ছেন প্রবলভাবে। গেরুয়া রাজনীতির প্রবল ইচ্ছায় দেশের ধর্মনিরপেক্ষ সংস্কৃতি ধুঁকতে বসেছে।

 

দেশের প্রধানমন্ত্রী নিজে অযোধ্যার রামন্দিরের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছেন। তিনি জাতীয় প্রতীকের উদ্বোধন করেছেন পুজো দিয়ে। ফলে শীর্ষ নেতৃত্বের এই মনোভাব ও বডিল্যাংগুয়েজ ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বহু প্রতিষ্ঠানে। শিক্ষা অঙ্গনকেও এর নাগপাশ থেকে মুক্ত রাখা সত্যিই দুরহ। এমনটাই মনে করছেন অনেকে ।