নাগরিকত্ব প্রশ্নে কলকাতায় সম্মেলন: বাঙালিদের ‘ বিদেশী’ তকমা দেওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের আহ্বান

- আপডেট : ২৫ জুলাই ২০২৫, শুক্রবার
- / 90
পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: বৃহস্পতিবার কলকাতার সূর্যসেন স্ট্রিটের কৃষ্ণপদ মেমোরিয়াল হলে নাগরিকত্ব ইস্যুতে এক গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় ৫০টি সংগঠনের প্রতিনিধিত্বে আয়োজিত এই সম্মেলনের আহ্বায়ক ছিলেন বিশিষ্ট সমাজকর্মী সংগ্রামী ব্যক্তিত্ব সুকৃতি রঞ্জন বিশ্বাস। তিনি সম্মেলনের উদ্দেশ্য ও প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে বিস্তারিত বক্তব্য পেশ করেন।
সম্মেলনে বক্তারা ভোটার তালিকায় স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট জটিলতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বক্তাদের মতে, সারা দেশে বিশেষ করে বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের বাংলাদেশি বা বিদেশি আখ্যা দিয়ে ক্রমাগত হেনস্থা করা হচ্ছে। এর তীব্র নিন্দা জানানো হয়।
সম্মেলনে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটি আসামের সচিব প্রধান সাধন পুরকায়স্থ। তিনি আসামে চলমান ‘বাঙালি নির্যাতনের’ চিত্র তুলে ধরেন। তার মতে, আসামের মুখ্যমন্ত্রীর বাঙালি নিয়ে মন্তব্য একটি গভীর ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দেয়, যার মাধ্যমে বাঙালিদের বিদেশি বানিয়ে দেশছাড়া করা ও নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা চলছে।
তিনি আরও বলেন, আসামে ১০০টি ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল আছে, যেখানে বিদেশি নির্ধারণ হয় আইনি প্রক্রিয়ায়। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী বেআইনিভাবে সরকারি জমি থেকে বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের উচ্ছেদ করছেন এবং তাদেরকে অনুপ্রবেশকারী বলে অপবাদ দিচ্ছেন। এর ফলে বহু মানুষ—including নারী, শিশু ও বৃদ্ধ—রাস্তায় অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন।
এছাড়াও সভায় নাগরিকপঞ্জি (NRC)-র ১৯ লক্ষ বাদপড়া মানুষের বিষয়ে আলোকপাত করা হয়। সাধন পুরকায়স্থ জানান, তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ভারতীয় নাগরিক, যাদের মধ্যে রয়েছেন দুইবারের প্রাক্তন বিধায়ক আতাউর রহমান মাজহার ভূইয়া এবং ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ফখরুদ্দিন আলী আহমেদের পরিবারের সদস্যরাও। এই সমস্ত মানুষ আজ আধার, প্যান কার্ড সহ বিভিন্ন সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
সম্মেলনে সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. কামরুজ্জামান বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, সারা ভারতজুড়ে বাংলাভাষী শ্রমিকদের উপর অত্যাচার চলছে। কখনও মহারাষ্ট্র, গুজরাট, দিল্লি বা উড়িষ্যায়, আবার কখনও তাদের পশ্চিমবঙ্গে এনে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ‘পুশব্যাক’ করা হচ্ছে।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন মালদার শিক্ষক আরাফাত আলী, শিক্ষাবিদ জীবন সরকার প্রমুখ।
সম্মেলনের মূল বার্তা ছিল—ভারতের প্রতিটি নাগরিক, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে, যেন একটি সুবিচারপূর্ণ নাগরিকত্ব আইন দ্বারা সুরক্ষিত থাকে। বক্তারা সর্বসম্মতিক্রমে দেশব্যাপী ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।