১৮ জুন ২০২৫, বুধবার, ৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে দেশের মধ্যে নজির গড়ছে এসএসকেএম

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ২৯ মার্চ ২০২২, মঙ্গলবার
  • / 22

পুবের কলম প্রতিবেদক: রাজ্য সরকার হাসপাতালের পরিষেবার উপর জোর দিয়েছে, এসএসকেএম হাসপাতালে এসেছে অত্যাধুনিক যন্ত্র। এর ফলে সহজে রোগীদের আরোগ্য লাভের ব্যবস্থা হচ্ছে। আর এতেই আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে দেশের মধ্যে নজির গড়ছে এসএসকেএম হাসপাতাল

গত পাঁচ বছর ধরে ক্রনিক-কিডনির সমস্যায় ভুগছিল তিতাস দাস। কিডনির রোগ সারাতে তাকে নিতে হত স্টেরয়েড। আর তাতেই দেখা দিয়েছে বিপত্তি। দুটি হিপ জয়েন্টের-বলয়ে গিয়েছে তার।

আরও পড়ুন: অপারেশন ডেভিল হান্ট: বাংলাদেশে গ্রেফতার ১৩০৮

গত দু’বছর ধরে প্রায় হাঁটতে পারতো না তিতাস।  লকডাউনে স্কুলে যাওয়া হয়নি। তবে এবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা হবে অফলাইনে। বন্ধুদের সঙ্গে পরীক্ষা দেওয়ার স্বপ্ন যে বাস্তবায়িত হতে চলেছে, তাতে খুশি তিতাস।

আরও পড়ুন: প্রতুল মুখোপাধ্যায়কে দেখতে হাসপাতালে মুখ্যমন্ত্রী, শিল্পীর কেবিনে বসে সময় কাটালেন মমতা

এসএসকেএম হাসপাতালের স্কুল অফ ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগে (পিএমআর) কোনও সার্জারি ছাড়াই চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়ার পর এখন স্বাভাবিক ভাবেই চলাফেরা করতে পারছে তিতাস।

আরও পড়ুন: জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের পিছু পিছু এসএসকেএম-এ পৌঁছল ইডি-ও

তিতাসের বক্তব্য, এসএসকেএম-এর চিকিৎসকদের সহায়তা না পেলে হয়তো বসে পরীক্ষা দিতে পারতাম না। আমার নেফ্রোলজির সমস্যাও আসছিল।

বয়স কম হওয়ার কারণে তিতাসের বোণ-রিপ্লেসমেন্ট করেননি চিকিৎসকরা। রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ওয়েব দিয়ে অবটিউরেটর নার্ভকে নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। এই বিশেষ পদ্ধতির ফলে এখন অস্ত্রোপচার ছাড়াই হাটতে পারছে তিতাস।

এসএসকেএম হাসপাতালের পিএমআর বিভাগের প্রধান ডা. রাজেশ প্রামানিক বলেন, প্রথমে মেয়েটিকে ভর্তি করা হয়। আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির ফলে অবটিউরেটর নার্ভকে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে ব্রেইন-এর পেইন-সেন্স ওই নার্ভ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ জন্য ব্যাথা চলে গিয়েছে। আগামী  ৮ বছর পর্যন্ত এই ব্যাথা থাকবে না বলে দাবি চিকিৎসকের।

অন্যদিকে, হাওড়ার লিলুয়ার বাসিন্দা যমুনা দাস (৫৬) দীর্ঘ ৬ বছর ধরে মেরুদন্ডের সমস্যায় ভুগছিলেন। এসএসকেএম-এর পিএমআর বিভাগে চিকিৎসায় পুরোপুরি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেন যমুনা। তাঁর আড়াই লক্ষ্য টাকা ‘রচের চিকিৎসার সমাধান হল বিনামূল্যেই।

রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আব্লেশন (আর) পদ্ধতি প্রয়োগ করে সারিয়ে তোলা হয়েছে ওই গৃহবধূকে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এই পদ্ধতির প্রয়োগ শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গের সরকারি হাসপাতালে প্রথম নয়, সারা দেশের সরকারি হাসপাতালে এই প্রথম এই পদ্ধতির প্রয়োগ হল।

ওই রোগীর কথায়, তার কোমরে সমস্যা রয়েছে প্রায় ৬ বছর ধরে। কোনও কাজ করতে পারতেন না। ভারী কিছু বহন করতে পারতেন না। তিনি লোকের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করে সংসার চালান। এই অবস্থায় অসহ্য ব্যথার কারণে তাকে সেই কাজ ছেড়ে দিতে হয়। এরপর বহু জায়গায় তিনি চিকিৎসকের দ্বারস্থ হয়েছেন। কিন্তু প্রচুর অর্থ খরচ হয়ে যাওয়ার পরে সুস্থ হননি। শেষে তিনি এসএসকেএম হাসপাতালের দ্বারস্থ হন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ওই রোগীর মেরুদন্ডের এল-৪ এবং এল-৫ ইন্টাভার্টিব্রাল ডিস্ক সরে যাওয়ার ফলে তিনি দীর্ঘদিন ধরেই যন্ত্রণা পাচ্ছিলেন। সেখানে অস্ত্রোপচার করলে হয়তো আড়াই লক্ষ টাকা খরচ লাগত।

এসএসকেএম হাসপাতালে অত্যাধুনিক এই যন্ত্রের সাহায্যে ১৭ মার্চ অস্ত্রোপচার করা হয় যমুনা দেবীর। ওই পদ্ধতির সাহায্যে এল-৪ এবং এল-৫ ডিস্ক পুড়িয়ে দেওয়া হয় বলে জানান এসএসকেএম-এর ওই বিভাগের প্রধান ডা রাজেশ প্রামাণিক। তার অধীনেই চলে অস্ত্রোপচার। সেই দিনই ছেড়ে দেওয়া হয় রোগীকে। রাজেশবাবুর কথায়, অত্যাধুনিক এই চিকিৎসা যন্ত্রের দাম প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা। সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে রাজ্য সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে তার জন্য তিনি রাজ্য সরকারকে প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। সরকারের এই উদ্যোগে প্রান্তিক পরিবারের ভুক্তভোগী রোগীদের সুস্থ করে তোলা সম্ভব হচ্ছে বলে জানান রোগী-পরিজনরা।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে দেশের মধ্যে নজির গড়ছে এসএসকেএম

আপডেট : ২৯ মার্চ ২০২২, মঙ্গলবার

পুবের কলম প্রতিবেদক: রাজ্য সরকার হাসপাতালের পরিষেবার উপর জোর দিয়েছে, এসএসকেএম হাসপাতালে এসেছে অত্যাধুনিক যন্ত্র। এর ফলে সহজে রোগীদের আরোগ্য লাভের ব্যবস্থা হচ্ছে। আর এতেই আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে দেশের মধ্যে নজির গড়ছে এসএসকেএম হাসপাতাল

গত পাঁচ বছর ধরে ক্রনিক-কিডনির সমস্যায় ভুগছিল তিতাস দাস। কিডনির রোগ সারাতে তাকে নিতে হত স্টেরয়েড। আর তাতেই দেখা দিয়েছে বিপত্তি। দুটি হিপ জয়েন্টের-বলয়ে গিয়েছে তার।

আরও পড়ুন: অপারেশন ডেভিল হান্ট: বাংলাদেশে গ্রেফতার ১৩০৮

গত দু’বছর ধরে প্রায় হাঁটতে পারতো না তিতাস।  লকডাউনে স্কুলে যাওয়া হয়নি। তবে এবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা হবে অফলাইনে। বন্ধুদের সঙ্গে পরীক্ষা দেওয়ার স্বপ্ন যে বাস্তবায়িত হতে চলেছে, তাতে খুশি তিতাস।

আরও পড়ুন: প্রতুল মুখোপাধ্যায়কে দেখতে হাসপাতালে মুখ্যমন্ত্রী, শিল্পীর কেবিনে বসে সময় কাটালেন মমতা

এসএসকেএম হাসপাতালের স্কুল অফ ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগে (পিএমআর) কোনও সার্জারি ছাড়াই চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়ার পর এখন স্বাভাবিক ভাবেই চলাফেরা করতে পারছে তিতাস।

আরও পড়ুন: জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের পিছু পিছু এসএসকেএম-এ পৌঁছল ইডি-ও

তিতাসের বক্তব্য, এসএসকেএম-এর চিকিৎসকদের সহায়তা না পেলে হয়তো বসে পরীক্ষা দিতে পারতাম না। আমার নেফ্রোলজির সমস্যাও আসছিল।

বয়স কম হওয়ার কারণে তিতাসের বোণ-রিপ্লেসমেন্ট করেননি চিকিৎসকরা। রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ওয়েব দিয়ে অবটিউরেটর নার্ভকে নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। এই বিশেষ পদ্ধতির ফলে এখন অস্ত্রোপচার ছাড়াই হাটতে পারছে তিতাস।

এসএসকেএম হাসপাতালের পিএমআর বিভাগের প্রধান ডা. রাজেশ প্রামানিক বলেন, প্রথমে মেয়েটিকে ভর্তি করা হয়। আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির ফলে অবটিউরেটর নার্ভকে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে ব্রেইন-এর পেইন-সেন্স ওই নার্ভ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ জন্য ব্যাথা চলে গিয়েছে। আগামী  ৮ বছর পর্যন্ত এই ব্যাথা থাকবে না বলে দাবি চিকিৎসকের।

অন্যদিকে, হাওড়ার লিলুয়ার বাসিন্দা যমুনা দাস (৫৬) দীর্ঘ ৬ বছর ধরে মেরুদন্ডের সমস্যায় ভুগছিলেন। এসএসকেএম-এর পিএমআর বিভাগে চিকিৎসায় পুরোপুরি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেন যমুনা। তাঁর আড়াই লক্ষ্য টাকা ‘রচের চিকিৎসার সমাধান হল বিনামূল্যেই।

রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আব্লেশন (আর) পদ্ধতি প্রয়োগ করে সারিয়ে তোলা হয়েছে ওই গৃহবধূকে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এই পদ্ধতির প্রয়োগ শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গের সরকারি হাসপাতালে প্রথম নয়, সারা দেশের সরকারি হাসপাতালে এই প্রথম এই পদ্ধতির প্রয়োগ হল।

ওই রোগীর কথায়, তার কোমরে সমস্যা রয়েছে প্রায় ৬ বছর ধরে। কোনও কাজ করতে পারতেন না। ভারী কিছু বহন করতে পারতেন না। তিনি লোকের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করে সংসার চালান। এই অবস্থায় অসহ্য ব্যথার কারণে তাকে সেই কাজ ছেড়ে দিতে হয়। এরপর বহু জায়গায় তিনি চিকিৎসকের দ্বারস্থ হয়েছেন। কিন্তু প্রচুর অর্থ খরচ হয়ে যাওয়ার পরে সুস্থ হননি। শেষে তিনি এসএসকেএম হাসপাতালের দ্বারস্থ হন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ওই রোগীর মেরুদন্ডের এল-৪ এবং এল-৫ ইন্টাভার্টিব্রাল ডিস্ক সরে যাওয়ার ফলে তিনি দীর্ঘদিন ধরেই যন্ত্রণা পাচ্ছিলেন। সেখানে অস্ত্রোপচার করলে হয়তো আড়াই লক্ষ টাকা খরচ লাগত।

এসএসকেএম হাসপাতালে অত্যাধুনিক এই যন্ত্রের সাহায্যে ১৭ মার্চ অস্ত্রোপচার করা হয় যমুনা দেবীর। ওই পদ্ধতির সাহায্যে এল-৪ এবং এল-৫ ডিস্ক পুড়িয়ে দেওয়া হয় বলে জানান এসএসকেএম-এর ওই বিভাগের প্রধান ডা রাজেশ প্রামাণিক। তার অধীনেই চলে অস্ত্রোপচার। সেই দিনই ছেড়ে দেওয়া হয় রোগীকে। রাজেশবাবুর কথায়, অত্যাধুনিক এই চিকিৎসা যন্ত্রের দাম প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা। সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে রাজ্য সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে তার জন্য তিনি রাজ্য সরকারকে প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। সরকারের এই উদ্যোগে প্রান্তিক পরিবারের ভুক্তভোগী রোগীদের সুস্থ করে তোলা সম্ভব হচ্ছে বলে জানান রোগী-পরিজনরা।