জেনে নিন আত্মপ্রকাশের সম্ভাব্য দিনক্ষণ!
ভারতে আসছে ইলন মাস্কের স্টারলিঙ্ক, পেল স্পেকট্রাম অনুমোদন…..

- আপডেট : ৩০ অগাস্ট ২০২৫, শনিবার
- / 283
পুবের কলম, ওয়েব ডেস্ক: খুব শীঘ্রই ভরতের বাজারে পা রাখতে চলেছে মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্কের ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা ‘স্টারলিঙ্ক’। ইতিমধ্যেই স্টারলিঙ্ক’কে ছাড়পত্র দিয়েছে ভারত সরকার। দীর্ঘ অপেক্ষার পর ভারতে বাণিজ্য করার লাইসেন্স পেয়েছে এই সংস্থা। ২০২৫ সালের মে মাসের শুরুতেই ভারতের সরকারের কাছ থেকে এই পরিষেবার জন্য সরকারি অনুমোদন পেয়েছে স্টারলিঙ্ক। বর্তমানে বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে উপলব্ধ এই ইন্টারনেট পরিষেবা। শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও লো লেটেন্সিতে হাই-স্পিড ইন্টারনেট সরবরাহ করে চলেছে স্টার লিংক। জানা গেছে,
টেলিযোগাযোগ বিভাগ (Department of Telecommunications (DoT)) স্টারলিঙ্ককে একটি অস্থায়ী স্পেকট্রাম বরাদ্দ দিয়েছে। যার ফলে কোম্পানিটি তার নেটওয়ার্ক পরীক্ষা করতে এবং ভারতের প্রযুক্তিগত এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়াদি পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে পর্যালোচনা করতে পারবে।
অনুমোদনের অর্থ কী?
স্টারলিঙ্ক ভারতে অস্থায়ী স্পেকট্রাম বরাদ্দ পেয়েছে। টেলিকমিউনিকেশন বিভাগ (DoT) এই মাসের শুরুতে অস্থায়ী স্পেকট্রাম বরাদ্দ মঞ্জুর করেছে। যা স্টারলিঙ্ককে বাণিজ্যিক পরিষেবা চালুর আগে প্রযুক্তিগত ও সুরক্ষা মান পরীক্ষা করার সুযোগ দেবে। এই বরাদ্দটি ছয় মাস পর্যন্ত বৈধ থাকবে।
উল্লেখ্য, ভারতের বাজারে নিজের মাটি পোক্ত করতে ইতিমধ্যেই ভারতী এয়ারটেল ও রিলায়েন্স জিও’র সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে স্টারলিঙ্ক। ১১ মার্চ মাস্কের সংস্থা ‘স্টারলিঙ্ক’-এর সঙ্গে চুক্তি চূড়ান্ত করার কথা জানায় এয়ারটেল । ঠিক পরের দিন একই ঘোষণা রিল্যায়েন্স জিয়ো’র ।
DoT-এর কঠোর নিয়ম
স্টারলিংকের মতো কোম্পানিগুলির জন্য DoT কঠোর প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণ করেছে:
১) নেটওয়ার্কগুলিকে অবশ্যই বিচ্ছিন্ন, সুরক্ষিত এবং দুর্বলতামুক্ত রাখতে হবে ।
২) অননুমোদিত হাতে যাতে না পড়ে সেজন্য সমস্ত সরঞ্জাম সুরক্ষিত রাখতে হবে ।
৩) যদি স্টারলিঙ্কের পরীক্ষামূলক সংকেত বিদ্যমান টেলিকম নেটওয়ার্কগুলিতে হস্তক্ষেপ করে , তাহলে সমস্যা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কোম্পানিকে অবিলম্বে কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে।
ভারতে স্টারলিঙ্ক কখন চালু হবে?
স্টারলিঙ্ক এখনও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করছে, যার মধ্যে রয়েছে:
১) স্যাটকম গেটওয়ে লাইসেন্স
২) উপস্থিতির স্থান (PoPs)
৩) নেটওয়ার্কিং সরঞ্জামের জন্য স্পেকট্রাম অধিকার
একবার এই অনুমোদন পেলে, স্টারলিংক আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ভারতে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের পরিষেবা চালু করতে পারে । তবে, কোম্পানিটি এখনও চূড়ান্ত দিনক্ষণ নির্ধারণ করেনি।
ভারতে স্টারলিঙ্ক ইন্টারনেটের গতি এবং পরিকল্পনা
প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুসারে: ১) গতি : অবস্থান এবং সংযোগের উপর নির্ভর করে ২৫ Mbps থেকে ২২০ Mbps এর মধ্যে।
২) এককালীন হার্ডওয়্যার/সেটআপ খরচ : প্রায় ৩০ হাজার (স্যাটেলাইট ডিশ এবং রাউটারের জন্য)।
৩) মাসিক সাবস্ক্রিপশন প্ল্যান : প্রতি মাসে প্রায় ৩,৩০০ থেকে শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে ।
ভারতে এখন সবথেকে দ্রুতগতির ইন্টারনেট পরিষেবা হলো ব্রডব্র্যান্ড। জিও, এয়ারটেল-সহ একাধিক সার্ভিস প্রোভাইডার এই পরিষেবা দেয়। স্টারলিঙ্কের হাত ধরেই ভারতে শুরু হবে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা। এই প্রযুক্তিকে জিওস্টেশনারি অর্বিটে অবস্থিত স্যাটেলাইটের মাধ্যমে হাই স্পিড ইন্টারনেট পরিষেবা মিলবে। তাই এই ধরনের ইন্টারনেট পরিষেবার ডেটা আদান-প্রদানের গতি ব্রডব্যান্ড থেকেও বেশি। স্যালেটাইট নির্ভর ইন্টারনেট পরিষেবা হওয়ায় দুর্গম এলাকাতেও হাই স্পিড ইন্টারনেট পরিষেবা দেওয়া যাবে এর মাধ্যমে। এর জেরে হিমালয়ের দুর্গম জায়গা-সহ ভারতের প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকায় আরও দ্রুত গতির ইন্টারনেট পরিষেবা দেওয়ার কাজ সহজ হবে।
জিও এবং এয়ারটেলের সঙ্গে স্টারলিঙ্কের চুক্তি হলেও ভারতে স্টারলিঙ্কের পরিষেবা নিতে গ্রাহকদের কী রকম খরচ হতে পারে, সে ব্যাপারে এখনও কোনও অফিশিয়াল বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়নি। কিন্তু বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চালু রয়েছে স্টারলিঙ্কের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা। ভারতের প্রতিবেশী ভুটানেও স্টারলিঙ্কের ইন্টারনেট পরিষেবা রয়েছে।
তবে ভারতের আনুমানিক খরচ কি হতে পারে?
স্টারলিঙ্কের ইন্টারনেট পরিষেবা পাওয়ার জন্য স্টারলিঙ্কের ডিশ এবং রাউটারের প্রয়োজন। এর মাধ্যমেই স্যাটেলাইটের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করা হয়। এবং হাই স্পিড ইন্টারনেট পরিষেবা পাওয়া যায়। ভারতে এই হার্ডওয়্যার বসানোর খরচ হতে পারে ২৫ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। যদিও এক বারই এই খরচ করতে হবে। এর পাশাপাশি ইন্টারনেট পরিষেবার জন্য প্রতি মাসে খরচ হতে পারে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা। যদিও স্টারলিঙ্কের বিভিন্ন ধরনের প্ল্যান রয়েছে। প্ল্যান অনুযায়ী ইন্টারনেট পরিষেবার খরচের ফারাক হতে পারে।
এশিয়ার একাধিক দেশে ইতিমধ্যেই চালু হয়েছে স্টারলিঙ্ক পরিষেবা—জাপান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন্স, ভুটান ও বাংলাদেশ। সেখানে মাসিক খরচ ২,৬০০ টাকা থেকে ৬,০০০ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করে। ‘রেসিডেন্সিয়াল লাইট’ প্ল্যানগুলির খরচই ভারতের প্রস্তাবিত পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে।
ভুটানে খরচ: ভুটানে রেসিডেন্সিয়াল লাইট প্ল্যানের খরচ প্রতি মাসে ৩ হাজার টাকা। এই প্ল্যানের স্পিড ২৩ থেকে ১০০ এমবিপিএস। ভুটানে স্ট্যান্ডার্ড রেসিডেন্সিয়াল প্ল্যানের খরচ প্রতি মাসে ৪ হাজার ২০০ টাকা। এর স্পিড ২৫ থেকে ১০০ এমবিপিএস। এ ছাড়াও আরও একাধিক হাই স্পিড ইন্টারনেট কানেকশন আছে স্টারলিঙ্কের সে গুলির খরচ আরও বেশি।
ভারতের ডিজিটাল ভবিষ্যতের দিশায় স্টারলিঙ্কের পদক্ষেপ একটি বড় মাইলফলক হতে চলেছে। পরিষেবা শুরু হলে দেশের হাজার হাজার প্রত্যন্ত এলাকা ইন্টারনেট-সংযোগের আওতায় আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। আর ডিজিটাল ভারত গড়ার পথে সেটাই হতে পারে বড় বদল।