ঘৃণা ভাষণ ও বিদ্বেষ কড়া হাতে দমন করুন: সুপ্রিম কোর্ট

- আপডেট : ৯ মে ২০২৫, শুক্রবার
- / 284
নয়াদিল্লি: দেশজুড়ে যেভাবে ঘৃণা ও বিদ্বেষের চাষ করা হচ্ছে, তা নিয়ে একাধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এবার দেশে ক্রমবর্ধমান হিংসা ও ঘৃণা নিয়ে কড়া বার্তা দিল দেশের শীর্ষ আদালত। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, কোনওরকম ঘৃণা ভাষণ এবং সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ বরদাস্ত করা হবে না। এধরনের ঘটনা অবশ্যই শক্ত হাতে দমন করতে হবে।
এদিন সুপ্রিম কোর্ট সাফ জানিয়েছে, “আমরা এটা স্পষ্ট করে দিতে চাই যে, সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ এবং ঘৃণা ভাষণ ছাড়ানোর যে কোনও প্রচেষ্টা অবশ্যই শক্ত হাতে মোকাবিলা করতে হবে। সভ্য সমাজে ঘৃণাত্মক বক্তব্য সহ্য করা যায় না। কারণ যাঁদের টার্গেট করে এধরনের ঘৃণা ভাষণ দেওয়া হয়, তাতে গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের মর্যাদা এবং সামাজিক মূল্যবোধকে নষ্ট করে। তাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে এবং সহনশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলে। সংবিধানে যে ‘সমতা’র ধারণার রয়েছে তা নষ্ট করে। আমাদের দেশে ভিন্ন জাতি, মানুষ ও সংস্কৃতির রয়েছে, তা রক্ষা করা সমাজের জন্য আবশ্যক।” একইসঙ্গে আদালত বলেছে, যে গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়কে টার্গেট করে অপমান করার যে কোনও প্রচেষ্টা একটি ফৌজদারি অপরাধ। আইনি পথ অবলম্বন করে এর মোকাবিলা করা উচিত।
ওয়াকফ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে জমা পড়েছিল শতাধিক মামলা। এই আবহে শীর্ষ আদালতে শুনানিও হয়। দেশের শীর্ষ আদালত বেশ কিছু ‘নেতিবাচক’ পর্যবেক্ষণ করে। ওয়াকফ শুনানিতে নয়া সংশোধনী আইনের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছিল দেশের শীর্ষ আদালত। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ হয় বিজেপি। আদালতের এই নির্দেশের ওপর বিচারব্যবস্থাকে নিশানা করেন দেশের উপরাষ্ট্রপতি থেকে বিজেপির বেশ কয়েকজন সাংসদ। সুপ্রিম কোর্টের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। বৃহস্পতিবার তাঁর এই মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এবং পিভি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ বলেছে, দুবের মন্তব্য জনগণের চোখে আদালতের আস্থা এবং বিশ্বাসযোগ্যতাকে নাড়িয়ে দিয়েছে। বিচার ব্যবস্থাকে দুর্বল করার এবং আইনি ব্যবস্থার উপর জনগণের আস্থা নষ্ট করার চেষ্টা গভীর উদ্বেগের বিষয়।
তাঁর এই দায়িত্ব জ্ঞানহীন মন্তব্য নিয়ে মামলা দায়ের হয় আদালতে। আইনজীবী বিশাল তিওয়ারি আদালতের দ্বারস্থ হয়ে বলেন, বিচারবিভাগ ও সুপ্রিম কোর্টের প্রতি অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন বিজেপি সাংসদ। দুবের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আইনজীবীর কথায়, “বিদ্বেষমূলক এবং উস্কানিমূলক মন্তব্যের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল এবং নেতারা বিচার বিভাগ এবং বিচারকদের রেয়াত করছেন না। এই ধরনের কাজ ভারতীয় ন্যায় সংহিতা এবং আদালত অবমাননা আইন, ১৯৭১-এর ১৫ নম্বর ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।” বিশাল তিওয়ারি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে দুবের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা শুরু করার আর্জি জানান।
আইনজীবীর এই আর্জির পরই আদালত পর্যবেক্ষণে জানিয়েছে,”আদালত ফুলের মতো ভঙ্গুর নয় যে এই ধরনের হাস্যকর বক্তব্যের জন্য শুকিয়ে যাবে।” প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ বলেছে, “আমরা বিশ্বাস করি না যে জনগণের চোখে আদালতের আস্থা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা এই ধরনের উদ্ভট বক্তব্যের দ্বারা নড়বড়ে হবে। তবে এটি সহজেই অনুমেয় যে, তিনি (বিজেপি সাংসদ) ইচ্ছাকৃত ভাবেই এই মন্তব্য করেছে। আদালত অবমাননার কার্যক্রম শুরু করাটা বিবেচনার বিষয়, আবেগের নয়।”
উল্লেখ্য, বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে আদালতকে নিশানা করে বলেছিলেন, দেশের সমস্ত গৃহযুদ্ধের জন্য প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না দায়ী। গোড্ডার বিজেপি সাংসদের এই মন্তব্য নিয়ে প্রধান বিচারপতি বেঞ্চ বলেছে, “নিঃসন্দেহে এই মন্তব্য ভারতের সুপ্রিম কোর্টের কর্তৃত্বকে কলঙ্কিত করেছে।”