বিশিষ্ট ইয়েমেনি সুন্নি এবং সুফি ইসলামী পণ্ডিত উমর বিন হাফিজের সঙ্গে আলোচনা করছেন কাঁথাপুরম
নার্স নিমিশা প্রিয়াকে বাঁচাতে ‘ভরসার হাত’ মুসলিম ধর্মগুরু আবুবকর মুসলিয়ার

- আপডেট : ১৫ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার
- / 38
পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: হাল ছেড়ে দিয়েছিল কেন্দ্র। সোমবার নিজেদের ব্যর্থতার কথা সুপ্রিম কোর্টেও জানিয়ে দিয়েছে তারা। তবে সূত্রের খবর, তার পরেও নিমিশা প্রিয়াকে বাঁচাতে সবরকম চেষ্টা চালাচ্ছে বিদেশমন্ত্রক। যদিও ফাঁসির ২৪ ঘণ্টা আগে সাময়িক স্বস্তি দিয়ে পিছিয়ে গিয়েছে নিমিশা প্রিয়ার ফাঁসির সাজা। তবে কতদিন পর্যন্ত তা স্থগিত রাখা হয়েছে, নতুন কোনও দিন স্থির করা হয়েছে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
এই আবহে নিমিশার পরিবারের সাহায্যে এগিয়ে আসেন সুন্নি সম্প্রদায়ের মুসলিম ধর্মগুরু আবুবকর মুসলিয়ার। ইতিমধ্যেই ইয়েমেনের ধর্মীয় নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন তিনি। নিমিশাকে বাঁচানোর এটাই শেষ উপায় বলে মনে করা হচ্ছে। কাল রাত থেকেই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছে দুই দেশের প্রখ্যাত দুই আলেম।
উল্লেখ্য, ভারতের গ্র্যান্ড মুফতি উপাধিধারী কাঁথাপুরম এপি আবুবকর মুসলিয়ার একজন বিশিষ্ট সুন্নি মুসলিম নেতা। কাঁথাপুরম এপি আবুবকর মুসলিয়ার আনুষ্ঠানিকভাবে শেখ আবুবকর আহমদ নামে পরিচিত। উনি ভারতের দশম এবং বর্তমান গ্র্যান্ড মুফতি । জানা গিয়েছে, ৯৪ বছর বয়সি মুসলিয়ার ভারতের মুফতি ই আজম উপাধি ধারন করেন। সমগ্র জাতির কাছে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা বিশাল। তিনি ইয়েমেনের ইসলামি নেতৃত্বের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছেন।
যাকে খুনের অপরাধে নিমিশার মৃত্যুদণ্ড সেই তালাল আবদো মেহেদির পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ রেখেছেন। মুসলিয়ারের লক্ষ্য যে কোনও পথে মৃতের পরিবারকে ব্লাড মানি নিতে রাজি করানো। বলা বাহুল্য, যদিও শরিয়া আইন অনুযায়ী এই সব ক্ষেত্রে কিসাসের কথা বলা হয়েছে। ‘কিসাস’ অর্থ সমপরিমাণ শাস্তি। তবে অনেক ক্ষেত্রে বিকল্প অনুযায়ী দিয়াত (রক্তপণ)-এর ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। যার মাধ্যমে ভুক্তভোগীর পরিবার ‘দিয়াতের’ মাধ্যমে খুনির পরিবারকে ক্ষমা করে দিতে পারে। ‘দিয়া’ বা দিয়াত একটি আর্থিক ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা।
এই প্রেক্ষিতে আবুবকর মুসলিয়ার অফিস থেকে জানানো হয়েছে, ইয়েমেনের খ্যাতনামা সুফি পণ্ডিত শেখ হাবিব উমর সোমবার রাত থেকে এ নিয়ে মধ্যস্থতা শুরু করেন। যাঁকে খুনের দায়ে নিমিষার মৃত্যুদণ্ড হয়েছে, সেই তালাল আবদো মহদি-র ভাইকে নিয়ে আলোচনায় বসেন ইয়েমেন সরকারের এক প্রতিনিধি এবং সেখানকার সুপ্রিম কোর্টের এক বিচারক। বিশিষ্ট ইয়েমেনি সুন্নি এবং সুফি ইসলামী পণ্ডিত উমর বিন হাফিজও ভুক্তভোগীর পরিবারের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলবে বলে জানা গেছে। মঙ্গলবারই সেই আলোচনায় দ্বিতীয় মধ্যস্থকারীর ভূমিকা নেন প্রভাবশালী সুন্নি নেতা কাঁথাপুরম এপি আবুবকর মুসলিয়ার।
পিটিআই-এর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাহদির হত্যাকাণ্ড কেবল পরিবারের জন্যই নয়, বরং ধামার অঞ্চলের উপজাতি এবং বাসিন্দাদের মধ্যেও একটি আবেগঘন বিষয়। এই কারণেই আগে ভুক্তভোগীর পরিবারের সঙ্গে সেই অর্থে কোনও যোগাযোগ স্থাপন করা যায়নি। কেবলমাত্র কাঁথাপুরমের হস্তক্ষেপের মাধ্যমেই প্রথমবারের মতো পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হয়েছিল। এই যোগাযোগের মাধ্যমে ব্লাড মানির পরিবর্তে নিমিশা প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড স্থগিত রাখার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।
সূত্রের খবর, সুফি পণ্ডিত শেখ হাবিব উমর বিন হাফিজ মঙ্গলবারই ইয়েমেনের ধারমার এলাকায় মৃত তালাল আবদো মহদির পরিবারের এক সদস্যের সঙ্গে চূড়ান্ত আলোচনায় বসবেন। ওই সদস্য হুদেইদাহ স্টেট কোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং ইয়েমেনের সুরা কাউন্সিলের সদস্য। তিনি আলোচনায় যোগ দিতে ধারমারে পৌঁছেছেন। সূত্রের খবর, মৃত্যুদণ্ড নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সেই বৈঠকে হতে পারে বলে আশা করছেন সুফি পণ্ডিত শেখ হাবিব উমর।
২০১৫ সালে তাঁরা ক্লিনিক শুরুও করেন। কিন্তু খুব দ্রুত তাঁদের সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে। ক্লিনিকের অংশীদারিত্ব নিয়ে দু’জনের মধ্যে সম্পর্ক দিন দিন খারাপ হতে শুরু করে। অভিযোগ, একসময় মাহদি নিমিশার পাসপোর্ট কেড়ে নিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, লুট করে নেয় টাকাপয়সাও। পাসপোর্ট উদ্ধার করার জন্যেই একদিন মাহদিকে ঘুমের ইঞ্জেকশন দেন নিমিশা। কিন্তু ওভারডোজ়ের কারণে মাহদির মৃত্যু হয়। এই অবস্থায় অন্য একজনের সাহায্য নিয়ে মেহদির দেহ টুকরো করে জলের ট্যাঙ্কে ফেলে দেন নিমিশা। এবং ইয়েমেন থেকে পালানোর সময় ধরা পড়ে যান। এর পরেই নিমিশাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ২০১৮–এ তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে ইয়েমেনের আদালত। ২০২২ সালে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট নিমিশার ক্ষমার আর্জি খারিজ করে দেন। অবশেষে ফাঁসির দিনক্ষণ ঘোষণা হয় এদিন।