২৭ জুলাই ২০২৫, রবিবার, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আগেই উদ্বোধন হয়েছে ক্যানসার হাসপাতালের, প্রধানমন্ত্রীকে আর কি কি শোনালেন মমতা

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: ভোট বড় বালাই। সামনেই উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব-সহ বেশ কিছু রাজ্যের ভোট। আর তাই তার আগে উত্তরপ্রদেশে গদি টিকিয়ে রাখতে কোমর

থমকে যাওয়া রেল পথ সম্প্রসারনের কাজ দ্রুত শেষ করার দাবি সুন্দরবনবাসীর, বরাদ্দ ১ টাকা!

উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়, সুন্দরবন: সুন্দরবনের যোগাযোগের সুবিধার কথা মাথায় রেখে তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সুন্দরবনের রেলপথ সম্প্রসারণের কথা ঘোষণা করেন। সেইমত কাজও শুরু হয়। পর্যটন মানচিত্রে সুন্দরবনের আলাদা একটা ভূমিকা আছে আর তাই সুন্দরবনের প্রবেশ দ্বার ক্যানিং থেকে ঝড়খালি পর্যন্ত প্রায় ৪১ কিমি রেলপথ সম্প্রসারনের কথা তিনি তখন ঘোষণা করেন। আর সুন্দরবনের রেল পথ সম্প্রসারণের জন্য ক্যানিংয়ের মাতলা নদীর ওপর রেল সেতুর কাজ শুরু হয়। এর জন্য মাতলা নদীর ওপর বেশ কয়েকটি পিলার তৈরি করা হয়। তারপরে এখনো পর্যন্ত ওই পিলারের মাথার উপর দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। কিন্তু পিলারের উপর থেকে আর কাজ এগোয়নি। থমকে গেছে এই কাজ।   রেল দফতর সুত্রে জানা গেল, ক্যানিং থেকে বাসন্তী ঝড়খালি পর্যন্ত রেলপথ সম্প্রসারণের সার্ভের কাজ ইতিপূর্বে শেষ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু জমি অধিগ্রহণ না হওয়ার ফলে এই বৃহৎ প্রকল্পের কাজ আটকে গিয়েছে। এই প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের দায়িত্ব দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনকে দেওয়া হয়েছে বলে রেল দফতর সূত্রে জানা গেল। তবে রেলের তরফ থেকে এরকম কোন নির্দেশিকা জেলা পরিষদে আসেনি বলে জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে। ২০০৭ সালের ৩০ ডিসেমবর বাসন্তীর কুলতলিতে তৎকালীন সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদের সদস্য লোকমান মোল্লার আয়োজনে সুন্দরবন কৃষটি মেলায় আগত তৎকালীন ভারতের  লোকসভার অধ্যক্ষ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের হাতে  সুন্দরবনের রেলপথ সম্প্রসারণের জন্য সুন্দরবনবাসীর পক্ষ থেকে আবেদন পত্র তুলে দেন লোকমান মোল্লা।  ২০০৮ সালের ২ জানুয়ারী তৎকালীন ভারতের রেলমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদবের কাছে এ বিষয়ে অবগত করেন সোমনাথবাবু। তাঁর পরে ২০০৯ সালের ১৪ নভেম্বর তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সুন্দরবনের মানুষের আবেদনে সাড়া দিয়ে ১ ম পর্যায়ে ক্যানিং থেকে ভাঙনখালি ও তাঁরপরে ২য় পর্যায়ে বাসন্তীর ঝড়খালি পর্যন্ত রেল পথ সম্প্রসারণের শিলান্যাস করেন। তিনি এর জন্য পরবর্তী রেল বাজেটে অর্থ বরাদ্দও করেন। তারপরে মাতলা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের কাজ শুরুও হয়।  এই কাজের জন্য প্রায়  ১৫৬ কোটি টাকা অনুমোদন পায়। তবে মাতলা নদীর উপর শুধুমাত্র ২২ টি পিলারের খুঁটি তৈরি ছাড়া গত ১২ বছরের আর কোন কাজে অগ্রগতি হয়নি। যদিও ২০১৮  সালের ১৮ জুলাই  রেল দপ্তরের তরফ থেকে এ বিষয়ে চিঠি দিয়ে জানানো হয় মাতলা নদীর উপরে রেল সেতুর  কাজ সম্পন্ন হয়েছে।  বাসন্তীর বর্তমান বিধায়ক তথা প্রাক্তন সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী শ্যামল মন্ডল বলেন, কেন্দ্রের গাফিলতিতেই বঞ্চিত হচ্ছে বাংলা, বঞ্চিত হচ্ছে সুন্দরবন। এই রেল সেতু প্রকল্পের জন্য মাত্র এক টাকা ধার্য করা হয়েছে যাতে করে এই প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যায় সেই চেষ্টায় কেন্দ্র সরকার করছে। রাজ্যের উন্নয়ন তাঁরা চায় না।  এই রেল পথ নিয়ে সবচেয়ে বেশি যিনি কাজ করছেন তিনি হলেন সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদের প্রাক্তন সদস্য তথা সুন্দরবনের ভূমিপূএ লোকমান মোল্লা। তিনি বলেন, এই রেলপথ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে রেল দপ্তরের সাথে যোগাযোগ করে আসছি। কিন্তু ২০১৮ সালের পর থেকে কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। আমি এ নিয়ে রেল দপ্তরে যোগাযোগ করেছিলাম। আবার আমি এ নিয়ে রেল মন্ত্রীর সাথে দেখা করব। 

কথা রাখলেন মমতা, তাজপুরের মুকুটে নতুন পালক

পুবের কলম প্রতিবেদক, পুর্ব মেদিনীপুর: তাজপুরে গ্রীনফিল্ড বন্দর তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করল রাজ্য সরকার। এক হাজার একর জমির ওপর গড়ে উঠবে তাজপুর বন্দর। তবে এর জন্য রাজ্য সরকারকে কোনরকম জমি অধিগ্রহণ করতে হবে না। সেই জমি রাজ্যের হাতেই রয়েছে। জমির চিহ্নিতকরণের কাজ ইতিমধ্যেই করে ফেলেছে রাজ্য। তাজপুর বন্দর তৈরীর জন্য সোমবার গ্লোবাল টেন্ডার ডেকেছে রাজ্য সরকার। এরফলে তাজপুরে গভীর সমুদ্রবন্দর নিয়ে আরো এক ধাপ এগোল রাজ্য সরকার। বন্দর নির্মাণের জন্য দরপত্র চেয়ে পশ্চিমবঙ্গ শিল্পোন্নয়ন নিগম বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে আবেদনপত্র জমা দেওয়া যাবে। ১৬ হাজার কোটি টাকার গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পে প্রথম পর্যায়ের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকা এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের জন্য ৬ হাজার কোটি টাকা খরচ ধরা হয়েছে। এতে প্রত্যক্ষভাবে ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। প্রথম পর্যায়ে ৬টি বার্থ ও পরের পর্যায়ে আরো ৯ টি বার্থ তৈরি হবে এই বন্দরে। ৯৯ বছরের লিজ দেওয়া হবে। এই বন্দর এর সঙ্গে নিকটতম জাতীয় সড়ক এবং রেলপথের যোগাযোগের ব্যবস্থা করবে রাজ্য সরকার। ৩৫০ মিটার প্রস্থ এবং প্রায় ১৬ মিটার নাব্যতা থাকায় তাজপুর একটি গভীর সমুদ্র বন্দর হিসেবে কাজ করতে পারবে।  ২০১৯ সালে এই বন্দর তৈরীর কথা প্রথম বলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি তাজপুর বন্দর এর সাইটের উদ্বোধন করেছিলেন। তখন ঠিক হয়েছিল কেন্দ্র এবং রাজ্য যৌথ উদ্যোগে এই বন্দর তৈরি করবে। এমনকি রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে নিজেদের অধিকাংশ শেয়ারও কেন্দ্রকে দিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের টালবাহানায় শেষ পর্যন্ত ২০২০ সালের শেষ দিকে রাজ্য নিজেই এই বন্দর তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গভীর সমুদ্রবন্দরের জন্য তাজপুর ছাড়াও আরও দুটি  প্রস্তাবিত জায়গার নাম নবান্নে পাঠানো হয়েছিল। তার মধ্যে একটি দাদনপাত্রবাড় এবং অপরটি কাঁথির শৌলা সংলগ্ন এলাকা। যদিও নবান্ন, তাজপুরের সাইটটিকে প্রস্তাবিত বন্দরের জন্য চূড়ান্ত করে। এই বন্দর আগামী দিনে উত্তর-পূর্ব ভারতের গেটওয়ে হয়ে উঠবে বলে প্রশাসনের আধিকারিকদের দাবি।  পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, পলি পড়ে যাওয়ার কারণে হলদিয়া বন্দরে বড় জাহাজ ঢুকতে পারছে না। এর জন্য মাঝ সমুদ্রে ‘শিপ টু শিপ’ ট্রান্সলোডিং করতে হচ্ছে। ফলে খরচ বাড়ছে। কিন্তু গভীর সমুদ্র বন্দর তৈরি হলে তাজপুরে সরাসরি বড় জাহাজ ঢুকে যাবে। ট্রান্সলোডিং এর হয়রানি থাকবে না। তাতে অর্থনৈতিকভাবেও সাশ্রয় হবে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা থেকে প্রতিবছর ৫-৬ হাজার কোটি টাকার মাছ ও চিংড়ি বিদেশে রপ্তানি হয়। তাজপুরে বন্দর হলে মাছ ও চিংড়ি রপ্তানিতে অনেক সুবিধা হবে। বীরভূমের পাচামি থেকে কয়লা অনায়াসে তাজপুর বন্দর দিয়ে বাইরে পাঠানো যাবে। এছাড়া আকরিক লোহা পেট্রোপণ্য প্রভৃতি নানাবিধ জিনিসপত্র তাজপুর বন্দর থেকেই নানা দেশে আমদানি-রপ্তানি করা যাবে। কলকাতা ও হলদিয়া বন্দর নাব্যতার সমস্যায় ভুগছে। তাই বড় জাহাজ গুলি ঢুকতে পারছে না।  তাজপুর বন্দর প্রকল্প টি রূপায়িত হলে ভবিষ্যতে পূর্ব মেদিনীপুরের আর্থসামাজিক চেহারাই বদলে যাবে। বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। সম্প্রতি জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি বেশ কয়েকবার তাজপুর সমুদ্র বন্দরের প্রস্তাবিত এলাকা পরিদর্শন করেন। রাজ্য থেকেও বিশেষজ্ঞ টিম গিয়ে একাধিকবার ওই এলাকা ঘুরে দেখেছে। উপকূল থেকে কয়েক কিমি গভীরে গড়ে উঠেছে বন্দর। এর মাঝে তৈরি হবে সেতু। সেখান থেকে মালপত্র সড়ক ও রেলপথে নানা প্রান্তে রওনা দেবে।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder