০৫ নভেম্বর ২০২৫, বুধবার, ১৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মাগফিরাতের দশ দিন: ক্ষমা লাভের শ্রেষ্ঠ সময়

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ১১ এপ্রিল ২০২৩, মঙ্গলবার
  • / 44

মুফতি আমিন ইকবাল: রমযান মাসের প্রথম ১০ দিন রহমতের। দ্বিতীয় ১০ দিন মাগফিরাত বা ক্ষমা লাভের। আর তৃতীয় ১০ দিন নাজাত বা জাহান্নাম থেকে মুক্তি প্রাপ্তির। ইতিমধ্যে রহমতের দশক বিদায় নিয়েছে। চলছে মাগফিরাতের দশক। ‘মাগফিরাত’ আরবি শব্দ। অর্থ  হল ‘ক্ষমা’। ১১ রমযানের প্রথম প্রহর থেকে ২০ রমযানের সূর্যাস্ত পর্যন্ত এই দশকের সময়। আল্লাহ্তায়ালা রমযানের দ্বিতীয় দশকে তাঁর বান্দাহ্দের ক্ষমা করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। আল্লাহর একটি সিফাতি বা গুণবাচক নাম ‘ক্ষমাশীল’। তিনি ক্ষমা করা পছন্দ  করেন। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘তিনিই (আল্লাহ্) তাঁর বান্দাহদের তাওবা কবুল করেন   এবং পাপগুলো ক্ষমা করে দেন।’ (সূরা শূরা, আয়াত : ১৫)

মানুষ সারা বছর জানা-অজানা অনেক গুনাহে লিপ্ত হয়। সেসব গুনাহ থেকে ক্ষমা পাওয়ার অনন্য সময় রমযান মাস। রমযান মাসে মুমিন-মুসলমান নিজেকে আল্লাহর দরবারে সঁপে  দেন। প্রথম দশকে সব ধরনে অন্যায় থেকে নিজেকে মুক্ত করে আল্লাহর রহমত কামনায়  অতিবাহিত করে। তারা আল্লাহর দয়া, করুণা ও অনুগ্রহ লাভে ধন্য হয়। তারপর দ্বিতীয় দশক  শুরু করে অতীত গুনাহ থেকে ক্ষমা লাভের আবেদন নিয়ে। একপর্যায়ে গুনাহ থেকেও মুক্তি হয়। আল্লাহ্ রহমতপ্রাপ্তদের অপরাধ ক্ষমা করে দেন। তারপর আসে নাজাত বা মুক্তির দশক। বান্দাহ্ যখন রহমতের চাদরে মুড়িয়ে গুনাহমুক্ত জীবন নিয়ে আল্লাহ্র দরবারে হাজির হয়, তখন তিনি বান্দাহ্কে নাজাত দেন। জাহান্নমের শাস্তির বদলে তার জন্য নির্ধারণ করেন চির সুখের জান্নাত।

হযরত সালমান ফারসি রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূল সা. শাবান মাসের শেষ তারিখের এক বক্তৃতায় আমাদের বললেন, ‘হে লোক সকল! তোমাদের প্রতি ছায়া বিস্তার  করেছে একটি মহান মাস যা হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। যে ব্যক্তি এই মাসে আল্লাহ্র  নৈকট্য লাভের জন্য একটি নফল কাজ করল, সে ওই ব্যক্তির সমান হবে যে অন্য মাসের একটি ফরজ আদায় করল। আর যে ব্যক্তি এই মাসে একটি ফরয কাজ করল, সে ওই ব্যক্তির সমান হল যে অন্য মাসে ৭০টি ফরয আদায় করল। এটা ধৈর্যের মাস আর ধৈর্যের প্রতিদান হল জান্নাত। এটা সহানুভূতি প্রদর্শনের মাস, এটা সেই মাস যাতে মুমিনের রিযিক বৃদ্ধি করা হয়। যে এই মাসে কোনও রোযাদারকে ইফতার করাবে— সেটা তার জন্য পাপরাশির ক্ষমাস্বরূপ হবে এবং দোজখের আগুন হতে মুক্তির কারণ হবে। এটা এমন মাস যার প্রথম ১০ দিন রহমত, মধ্যম ১০ দিন মাগফিরাত আর শেষ ১০ দিন জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাস। আর যে এই মাসে নিজ দাসদাসীর প্রতি কার্যভার কমাবে আল্লাহ্তায়ালা তাকে ক্ষমা করে দেবেন এবং তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে দেবেন।’ (মিশকাত)

ইতিমধ্যেই রহমতের ১০ দিন আমাদের থেকে বিদায় নিয়েছে। কিন্তু আমরা কি রহমতের চাদর গায়ে মোড়াতে পেরেছি? পূর্ণ হক আদায় করে রোযা পালন করতে পেরেছি? পেরেছি কি নবীজি সা.-এর দেখানো পথে রমযানের প্রথম ১০ দিন অতিবাহিত করতে? আমি পারি বা না পারি, দশক কিন্তু ঠিকই বিদায় নিয়েছে। নতুন করে এসেছে মাগফিরাতের দশক। দেখতে দেখতে এই দশকও শেষ হবে।

কিন্তু আমরা কি এবারও গাফেল থাকব? এবারও কি লুটে পড়ব না প্রভুর ইবাদাতে— ক্ষমা প্রার্থনার আর্জি নিয়ে?

আসুন, এই দশকটা অন্তত কাজে লাগাই। রোযা, তারাবিহ্, পবিত্র কুরআন পাঠসহ নফল ইবাদাতের পাশাপাশি অতীত পাপের কথা স্মরণে এনে ক্ষমাপ্রার্থনা করি আর কায়োমানবাক্যে বলি,  ‘হে আল্লাহ্! তুমি দয়াময়, পরম করুণাময়। আমি ভুল করে অন্যায়  করেছি, আবার তোমার কাছেই ফিরে এসেছি। তুমি আমায় ক্ষমা করো। তুমি ছাড়া তো ক্ষমা চাওয়ার আর কোনও জায়গা নেই। তুমিই আমার মালিক, তোমার কাছেই আমার শেষ আশ্রয়।’

প্রতিবেদক

ইমামা খাতুন

২০২২ সাল থেকে সংবাদ জগতের সঙ্গে যুক্ত। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতাতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছে। ডিজিটাল প্লাটফর্মে রিপোর্টার হিসেবে হাতেখড়ি। ২০২২ সালের শেষান্তে পুবের কলম-এর সঙ্গে যুক্ত হয়। ইমামার ভাষ্যে, The First Law of Journalism: to confirm existing prejudice, rather than contradict it.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

মাগফিরাতের দশ দিন: ক্ষমা লাভের শ্রেষ্ঠ সময়

আপডেট : ১১ এপ্রিল ২০২৩, মঙ্গলবার

মুফতি আমিন ইকবাল: রমযান মাসের প্রথম ১০ দিন রহমতের। দ্বিতীয় ১০ দিন মাগফিরাত বা ক্ষমা লাভের। আর তৃতীয় ১০ দিন নাজাত বা জাহান্নাম থেকে মুক্তি প্রাপ্তির। ইতিমধ্যে রহমতের দশক বিদায় নিয়েছে। চলছে মাগফিরাতের দশক। ‘মাগফিরাত’ আরবি শব্দ। অর্থ  হল ‘ক্ষমা’। ১১ রমযানের প্রথম প্রহর থেকে ২০ রমযানের সূর্যাস্ত পর্যন্ত এই দশকের সময়। আল্লাহ্তায়ালা রমযানের দ্বিতীয় দশকে তাঁর বান্দাহ্দের ক্ষমা করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। আল্লাহর একটি সিফাতি বা গুণবাচক নাম ‘ক্ষমাশীল’। তিনি ক্ষমা করা পছন্দ  করেন। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘তিনিই (আল্লাহ্) তাঁর বান্দাহদের তাওবা কবুল করেন   এবং পাপগুলো ক্ষমা করে দেন।’ (সূরা শূরা, আয়াত : ১৫)

মানুষ সারা বছর জানা-অজানা অনেক গুনাহে লিপ্ত হয়। সেসব গুনাহ থেকে ক্ষমা পাওয়ার অনন্য সময় রমযান মাস। রমযান মাসে মুমিন-মুসলমান নিজেকে আল্লাহর দরবারে সঁপে  দেন। প্রথম দশকে সব ধরনে অন্যায় থেকে নিজেকে মুক্ত করে আল্লাহর রহমত কামনায়  অতিবাহিত করে। তারা আল্লাহর দয়া, করুণা ও অনুগ্রহ লাভে ধন্য হয়। তারপর দ্বিতীয় দশক  শুরু করে অতীত গুনাহ থেকে ক্ষমা লাভের আবেদন নিয়ে। একপর্যায়ে গুনাহ থেকেও মুক্তি হয়। আল্লাহ্ রহমতপ্রাপ্তদের অপরাধ ক্ষমা করে দেন। তারপর আসে নাজাত বা মুক্তির দশক। বান্দাহ্ যখন রহমতের চাদরে মুড়িয়ে গুনাহমুক্ত জীবন নিয়ে আল্লাহ্র দরবারে হাজির হয়, তখন তিনি বান্দাহ্কে নাজাত দেন। জাহান্নমের শাস্তির বদলে তার জন্য নির্ধারণ করেন চির সুখের জান্নাত।

হযরত সালমান ফারসি রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূল সা. শাবান মাসের শেষ তারিখের এক বক্তৃতায় আমাদের বললেন, ‘হে লোক সকল! তোমাদের প্রতি ছায়া বিস্তার  করেছে একটি মহান মাস যা হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। যে ব্যক্তি এই মাসে আল্লাহ্র  নৈকট্য লাভের জন্য একটি নফল কাজ করল, সে ওই ব্যক্তির সমান হবে যে অন্য মাসের একটি ফরজ আদায় করল। আর যে ব্যক্তি এই মাসে একটি ফরয কাজ করল, সে ওই ব্যক্তির সমান হল যে অন্য মাসে ৭০টি ফরয আদায় করল। এটা ধৈর্যের মাস আর ধৈর্যের প্রতিদান হল জান্নাত। এটা সহানুভূতি প্রদর্শনের মাস, এটা সেই মাস যাতে মুমিনের রিযিক বৃদ্ধি করা হয়। যে এই মাসে কোনও রোযাদারকে ইফতার করাবে— সেটা তার জন্য পাপরাশির ক্ষমাস্বরূপ হবে এবং দোজখের আগুন হতে মুক্তির কারণ হবে। এটা এমন মাস যার প্রথম ১০ দিন রহমত, মধ্যম ১০ দিন মাগফিরাত আর শেষ ১০ দিন জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাস। আর যে এই মাসে নিজ দাসদাসীর প্রতি কার্যভার কমাবে আল্লাহ্তায়ালা তাকে ক্ষমা করে দেবেন এবং তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে দেবেন।’ (মিশকাত)

ইতিমধ্যেই রহমতের ১০ দিন আমাদের থেকে বিদায় নিয়েছে। কিন্তু আমরা কি রহমতের চাদর গায়ে মোড়াতে পেরেছি? পূর্ণ হক আদায় করে রোযা পালন করতে পেরেছি? পেরেছি কি নবীজি সা.-এর দেখানো পথে রমযানের প্রথম ১০ দিন অতিবাহিত করতে? আমি পারি বা না পারি, দশক কিন্তু ঠিকই বিদায় নিয়েছে। নতুন করে এসেছে মাগফিরাতের দশক। দেখতে দেখতে এই দশকও শেষ হবে।

কিন্তু আমরা কি এবারও গাফেল থাকব? এবারও কি লুটে পড়ব না প্রভুর ইবাদাতে— ক্ষমা প্রার্থনার আর্জি নিয়ে?

আসুন, এই দশকটা অন্তত কাজে লাগাই। রোযা, তারাবিহ্, পবিত্র কুরআন পাঠসহ নফল ইবাদাতের পাশাপাশি অতীত পাপের কথা স্মরণে এনে ক্ষমাপ্রার্থনা করি আর কায়োমানবাক্যে বলি,  ‘হে আল্লাহ্! তুমি দয়াময়, পরম করুণাময়। আমি ভুল করে অন্যায়  করেছি, আবার তোমার কাছেই ফিরে এসেছি। তুমি আমায় ক্ষমা করো। তুমি ছাড়া তো ক্ষমা চাওয়ার আর কোনও জায়গা নেই। তুমিই আমার মালিক, তোমার কাছেই আমার শেষ আশ্রয়।’