৩১ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রোযাদার গফফরের হাত ধরে পুণে থেকে বীরভূমে ফিরল হিন্দু পরিযায়ী শ্রমিকের ছেলের দেহ

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০২৩, বৃহস্পতিবার
  • / 46

পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: সাম্প্রদায়িক হিংসার খবরে যখন দেশের চারিদিকে উষ্ণ বাতাবরণ তৈরি হয়েছে, ঠিক সেই সময় আব্দুল গফফর নিঃসন্দেহে এক ব্যতিক্রমী চরিত্র। ১৮ বছরের ছেলেকে চিরতরে হারিয়ে এক হতভাগ্য বাবার বক্তব্য, গফফর না থাকলে হয়তো ছেলের দেহ নিজের গ্রামে ফিরিয়ে আনতে পারতাম না।

আব্দুল গফফর একজন ঠিকাদার। বিগত কয়েক দশক ধরে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় তিনি শ্রমিকদের কাজে পাঠিয়ে থাকেন। সেই রকমই বীরভূমের কুরুমগ্রামের বাসিন্দা হালধর ও তার ছেলে রুদ্র নির্মাণ শ্রমিকের কাজে পুণেতে গিয়েছিলেন। গত শুক্রবার রুদ্রর পুণের ট্রেনে ওঠার পরেই পেটে ব্যথা শুরু হয়। রবিবার মহারাষ্ট্র শহরে পৌঁছানোর পরে তাকে রেলস্টেশনের কাছে একটি হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হওয়ার কয়েক ঘন্টার তার মৃত্যু হয়।

আরও পড়ুন: বন দফতরের আপত্তিতে বসন্ত উৎসব নিষিদ্ধ বোলপুরের সোনাঝুরিতে

পুণে থেকে বীরভূমের বাড়িতে ছেলের দেহ ফিরিয়ে আনা সহজ ছিল না হালধরের কাছে। বন্ধু-বান্ধব থেকে শুরু করে সকলের কাছে হাত পেতেও কোনও সুরাহা হয়নি। এতখানি রাস্তার পরিবহন খরচ ও দেহ পচন ধরে যাওয়ার ভয় ছিল। ঠিক সেই সময় এগিয়ে আসেন আব্দুল গফফর।
কলকাতা থেকে ২৪০ কিলোমিটার দূরে নলহাটির কুরুমগ্রামের অভিবাসী শ্রমিক হালধর জানান, ৮০ হাজার টাকায় অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে মঙ্গলবার দেহ গ্রামে ফিরিয়ে আনেন গফফর। বুধবার ভোরে রুদ্রকে দাহ করা হয়।

আরও পড়ুন: বীরভূমের হজ যাত্রীদের বিশেষ প্রশিক্ষণ শিবির অনুষ্ঠিত হল সিউড়িতে

৫৪ বছরের গফফর জানান, আমি রোজাদার। একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান হিসেবে এই দুর্দশার সময়ে হালধরকে সাহায্য করা আমার কর্তব্য বলে মনে করেছিলাম।

আরও পড়ুন: মারাঠা সংরক্ষণ নিয়ে সরব সমাজকর্মী পাতিল

কুরুমগ্রামের একজন সমাজকর্মী সঞ্জীব সিনহা বলেন, গোটা গ্রাম গফফরের কাছে কৃতজ্ঞ। হালধর তার বেতন থেকে কিছু করে গফফরকে কিছু করে টাকা দেওয়ার কথা বলেছিলেন, কিন্তু গফফর সাফ মানা করে দিয়েছেন।

হালধর জানান, গফফরের অধীনে তিনি এর আগেও রাজস্থান এবং অন্ধ্র প্রদেশে কাজ করেছেন। এবার তিনি পুনেতে একটি রিয়েল এস্টেট প্রকল্পে ৮০০ টাকা দৈনিক মজুরি এবং বাসস্থানের সুযোগ নিয়ে সেখানে গিয়েছিলেন।

অভিবাসী শ্রমিকদের কল্যাণে কাজ করে এমন একটি সংগঠনের সভাপতি শমিরুল ইসলাম জানান, খুব সাধারণভাবেই জীবন যাপন করেন আব্দুল গফফর। মানুষের ধারণা আছে, পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যের বাইরে পাঠিয়ে শোষণ করেন ঠিকাদাররা, সেখানে আব্দুল গফফর একজন ব্যতিক্রমী চরিত্র।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

রোযাদার গফফরের হাত ধরে পুণে থেকে বীরভূমে ফিরল হিন্দু পরিযায়ী শ্রমিকের ছেলের দেহ

আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০২৩, বৃহস্পতিবার

পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: সাম্প্রদায়িক হিংসার খবরে যখন দেশের চারিদিকে উষ্ণ বাতাবরণ তৈরি হয়েছে, ঠিক সেই সময় আব্দুল গফফর নিঃসন্দেহে এক ব্যতিক্রমী চরিত্র। ১৮ বছরের ছেলেকে চিরতরে হারিয়ে এক হতভাগ্য বাবার বক্তব্য, গফফর না থাকলে হয়তো ছেলের দেহ নিজের গ্রামে ফিরিয়ে আনতে পারতাম না।

আব্দুল গফফর একজন ঠিকাদার। বিগত কয়েক দশক ধরে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় তিনি শ্রমিকদের কাজে পাঠিয়ে থাকেন। সেই রকমই বীরভূমের কুরুমগ্রামের বাসিন্দা হালধর ও তার ছেলে রুদ্র নির্মাণ শ্রমিকের কাজে পুণেতে গিয়েছিলেন। গত শুক্রবার রুদ্রর পুণের ট্রেনে ওঠার পরেই পেটে ব্যথা শুরু হয়। রবিবার মহারাষ্ট্র শহরে পৌঁছানোর পরে তাকে রেলস্টেশনের কাছে একটি হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হওয়ার কয়েক ঘন্টার তার মৃত্যু হয়।

আরও পড়ুন: বন দফতরের আপত্তিতে বসন্ত উৎসব নিষিদ্ধ বোলপুরের সোনাঝুরিতে

পুণে থেকে বীরভূমের বাড়িতে ছেলের দেহ ফিরিয়ে আনা সহজ ছিল না হালধরের কাছে। বন্ধু-বান্ধব থেকে শুরু করে সকলের কাছে হাত পেতেও কোনও সুরাহা হয়নি। এতখানি রাস্তার পরিবহন খরচ ও দেহ পচন ধরে যাওয়ার ভয় ছিল। ঠিক সেই সময় এগিয়ে আসেন আব্দুল গফফর।
কলকাতা থেকে ২৪০ কিলোমিটার দূরে নলহাটির কুরুমগ্রামের অভিবাসী শ্রমিক হালধর জানান, ৮০ হাজার টাকায় অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে মঙ্গলবার দেহ গ্রামে ফিরিয়ে আনেন গফফর। বুধবার ভোরে রুদ্রকে দাহ করা হয়।

আরও পড়ুন: বীরভূমের হজ যাত্রীদের বিশেষ প্রশিক্ষণ শিবির অনুষ্ঠিত হল সিউড়িতে

৫৪ বছরের গফফর জানান, আমি রোজাদার। একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান হিসেবে এই দুর্দশার সময়ে হালধরকে সাহায্য করা আমার কর্তব্য বলে মনে করেছিলাম।

আরও পড়ুন: মারাঠা সংরক্ষণ নিয়ে সরব সমাজকর্মী পাতিল

কুরুমগ্রামের একজন সমাজকর্মী সঞ্জীব সিনহা বলেন, গোটা গ্রাম গফফরের কাছে কৃতজ্ঞ। হালধর তার বেতন থেকে কিছু করে গফফরকে কিছু করে টাকা দেওয়ার কথা বলেছিলেন, কিন্তু গফফর সাফ মানা করে দিয়েছেন।

হালধর জানান, গফফরের অধীনে তিনি এর আগেও রাজস্থান এবং অন্ধ্র প্রদেশে কাজ করেছেন। এবার তিনি পুনেতে একটি রিয়েল এস্টেট প্রকল্পে ৮০০ টাকা দৈনিক মজুরি এবং বাসস্থানের সুযোগ নিয়ে সেখানে গিয়েছিলেন।

অভিবাসী শ্রমিকদের কল্যাণে কাজ করে এমন একটি সংগঠনের সভাপতি শমিরুল ইসলাম জানান, খুব সাধারণভাবেই জীবন যাপন করেন আব্দুল গফফর। মানুষের ধারণা আছে, পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যের বাইরে পাঠিয়ে শোষণ করেন ঠিকাদাররা, সেখানে আব্দুল গফফর একজন ব্যতিক্রমী চরিত্র।