০৫ নভেম্বর ২০২৫, বুধবার, ১৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পবিত্র কুরআন: ইতিহাসের কিছু কথা

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ১৪ এপ্রিল ২০২৩, শুক্রবার
  • / 100

পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: রমযান হল কুরআনের মাস। পবিত্র কুরআন পড়া প্রত্যেক মুসলমান ভাইবোনের জন্য অপরিহার্য, আমরা কুরআন শুধু তেলাওয়াতই করব না বরং তা বুঝব এবং সেইসঙ্গে নিজেদের জীবনে প্রয়োগ করব। রাব্বুল আলামিন এই কুরআনে ইহকালে মানুষের দৈনন্দিন পথ চলার এবং পরকালের আমল সঙ্গে নেওয়ার সার্বিক পথ সুনির্দিষ্টভাবে বাতলে দিয়েছেন। এখানে মহাগ্রন্থ আল-কুরআন সম্পর্ক কিছু তথ্য উপস্থাপন করা হল-

প্রথম ওহী

‘পড়ো তোমার মালিকের নামে যিনি সব কিছু পয়দা করেছেন।’ (সূরা আলাক, আয়াত ১-৫)

সর্বশেষ ওহী

‘সেদিনকে ভয় করো যেদিন তোমাদের সবাইকে আল্লাহর কাছে ফিরিয়ে নেওয়া হবে।’ (সূরা বাকারা, আয়াত ২৮১)। কুরআন নাযিলের মোট সময় প্রায় ২২ বছর ৫ মাস।

কুরআন নাযিলের শুরুত্ব

কুরআন নাযিলের ছয় মাস আগে থেকেই আল্লাহ্তায়ালা হযরত মুহাম্মদ সা.-কে স্বপ্নের মাধ্যমে এ মহান কাজের জন্যে প্রস্তুত করে নিচ্ছিলেন। ইতিহাসের প্রমাণ অনুযায়ী প্রথম ওহী এসেছিল রমযান মাসের ২১ তারিখ সোমবার রাতে। হযরত মুহাম্মদ সা.-এর বয়স ছিল তখন ৪০ বছর ৬ মাস ১২ দিন।

হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত আছে, প্রিয় নবী সা.-এর ওপর ওহী নাযিলের সূচনা হয়েছিল স্বপ্নের মাধ্যমে। তিনি যে স্বপ্ন দেখতেন তা দিনের আলোর মতো তাঁর জীবনে প্রতিভাত হত। এক টুকরো দৃশ্যমান নূর তাঁর অন্তরে সদা ভাস্বর হয়ে থাকত। জিবরাঈল আ.-এর মাধ্যমে ওহীপ্রাপ্তির আগে আস্তে আস্তে তিনি নির্জনতাপ্রিয় হয়ে ওঠেন, হেরা গুহায়। নিভৃতে আল্লাহ্তায়ালার ধ্যানে তিনি মশগুল হয়ে পড়েন এবং বিশাল সৃষ্টি ও তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে গভীর চিন্তা-ভাবনা করতে থাকেন। এভাবেই হেরা গুহায় তাঁর রাত আর দিন কাটে। খাবার ও পানি শেষ হয়ে গেলে আবার সেসব নেওয়ার জন্যেই তিনি শুধু বাড়িতে ফেরেন। মাঝে মাঝে প্রিয় স্ত্রী খাদিজাও হেরা গুহায় তাঁকে খাবার দিয়ে আসেন। এমনি করে একদিন আল্লাহর ফেরেশতা হযরত জিবরাঈল আ. এসে গম্ভীর কণ্ঠে তাঁকে বললেন, ‘ইকরা’- পড়ুন। মুহাম্মদ সা. বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলেন। উদ্বেলিত কণ্ঠে তিনি বললেন ‘আমি তো পড়তে জানি না’। ফেরেশতা তাঁকে বুকে চেপে ধরে আবার বললেন, পড়ুন। তিনি পুনরায় বললেন, আমি তো পড়তে জানি না। ফেরেশতা আবার তাঁকে বুকে জড়িয়ে চেপে ধরলেন এবং বললেন, পড়ুন। তৃতীয় বার যখন ফেরেশতা তাঁকে বুকে আলিঙ্গন করে ছেড়ে দিয়ে। বললেন, পড়ুন, এবার মুহাম্মদ সা. ওহীর প্রথম পাঁচটি আয়াত পড়লেন। অতপর তিনি ঘরে ফিরলেন। প্রিয়তমা স্ত্রীকে বললেন, ‘আমাকে চাদর দিয়ে ঢেকে দাও। আমাকে চাদর দিয়ে ঢেকে দাও’। হযরত খাদিজা রা. প্রিয় নবীকে চাদর দিয়ে জড়িয়ে দিলেন। এরপর তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, কী হয়েছে আপনার? আপনি এমন কাঁপছেন কেন?

রাসূল সা. বললেন, একজন অভিনব ব্যক্তি আমার কাছে এসে আমাকে বললেন, পড়ুন। আমি বললাম, আমি তো পড়তে জানি না। তারপর তিনি তিন-তিনবার আমাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে চাপ দিলেন, অতপর তার সাথে আমি পড়তে শুরু করলাম। তাঁর কথা শুনে খাদিজা রা. বললেন, আপনার ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। কেননা আপনি মানুষের উপকার করেন, মানবতার সেবা করেন, এতিমদের আশ্রয় দেন, মহান আল্লাহ আপনার কি কোনও ক্ষতি করতে পারেন।

খাদিজা রা. প্রিয় নবীকে তাঁর চাচাত ভাই ওরাকা ইবনে নওফালের কাছে নিয়ে গেলেন। ওরাকা ইবনে নওফাল ছিলেন ঈসায়ী ধর্মের আলেম এবং হিব্রু ভাষার পন্ডিত ব্যক্তি। সে সময় তিনি বয়সের ভারে ক্লান্ত এবং দৃষ্টিহীন হয়ে পড়েছিলেন। হযরত খাদিজা রা. বললেন, ভাইজান, আপনার ভাতিজার কথা শুনুন। রাসূল তাকে হেরা গুহার সব ঘটনার কথা বর্ণনা করলেন। শুনে ওরাকা বললেন, তিনি সে-ই দূত জিবরাঈল, যিনি হযরত মূসা আ.-এর কাছে ওহীর বাণী নিয়ে আসতেন। হায়, আমি যদি সে সময় পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারতাম! যখন তোমার কওমের লোকেরা তোমাকে জন্মভূমি থেকে বের করে দেবে। রাসূল সা. অবাক হয়ে বললেন, কেন আমাকে তারা মাতৃভূমি থেকে বের করে দেবে? ওরাকা বললেন, তুমি যে ওহী লাভ করেছো, এ ধরনের ওহী যখনই কোনও নবী পেয়েছেন তার সাথে স্বজাতির পক্ষ থেকে এভাবেই শত্রুতা করা হয়েছে। যদি সেদিন পর্যন্ত আমি বেঁচে থাকি তাহলে অবশ্যই আমি তোমার সাহায্যে এগিয়ে আসবো।

প্রতিবেদক

ইমামা খাতুন

২০২২ সাল থেকে সংবাদ জগতের সঙ্গে যুক্ত। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতাতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছে। ডিজিটাল প্লাটফর্মে রিপোর্টার হিসেবে হাতেখড়ি। ২০২২ সালের শেষান্তে পুবের কলম-এর সঙ্গে যুক্ত হয়। ইমামার ভাষ্যে, The First Law of Journalism: to confirm existing prejudice, rather than contradict it.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

পবিত্র কুরআন: ইতিহাসের কিছু কথা

আপডেট : ১৪ এপ্রিল ২০২৩, শুক্রবার

পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: রমযান হল কুরআনের মাস। পবিত্র কুরআন পড়া প্রত্যেক মুসলমান ভাইবোনের জন্য অপরিহার্য, আমরা কুরআন শুধু তেলাওয়াতই করব না বরং তা বুঝব এবং সেইসঙ্গে নিজেদের জীবনে প্রয়োগ করব। রাব্বুল আলামিন এই কুরআনে ইহকালে মানুষের দৈনন্দিন পথ চলার এবং পরকালের আমল সঙ্গে নেওয়ার সার্বিক পথ সুনির্দিষ্টভাবে বাতলে দিয়েছেন। এখানে মহাগ্রন্থ আল-কুরআন সম্পর্ক কিছু তথ্য উপস্থাপন করা হল-

প্রথম ওহী

‘পড়ো তোমার মালিকের নামে যিনি সব কিছু পয়দা করেছেন।’ (সূরা আলাক, আয়াত ১-৫)

সর্বশেষ ওহী

‘সেদিনকে ভয় করো যেদিন তোমাদের সবাইকে আল্লাহর কাছে ফিরিয়ে নেওয়া হবে।’ (সূরা বাকারা, আয়াত ২৮১)। কুরআন নাযিলের মোট সময় প্রায় ২২ বছর ৫ মাস।

কুরআন নাযিলের শুরুত্ব

কুরআন নাযিলের ছয় মাস আগে থেকেই আল্লাহ্তায়ালা হযরত মুহাম্মদ সা.-কে স্বপ্নের মাধ্যমে এ মহান কাজের জন্যে প্রস্তুত করে নিচ্ছিলেন। ইতিহাসের প্রমাণ অনুযায়ী প্রথম ওহী এসেছিল রমযান মাসের ২১ তারিখ সোমবার রাতে। হযরত মুহাম্মদ সা.-এর বয়স ছিল তখন ৪০ বছর ৬ মাস ১২ দিন।

হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত আছে, প্রিয় নবী সা.-এর ওপর ওহী নাযিলের সূচনা হয়েছিল স্বপ্নের মাধ্যমে। তিনি যে স্বপ্ন দেখতেন তা দিনের আলোর মতো তাঁর জীবনে প্রতিভাত হত। এক টুকরো দৃশ্যমান নূর তাঁর অন্তরে সদা ভাস্বর হয়ে থাকত। জিবরাঈল আ.-এর মাধ্যমে ওহীপ্রাপ্তির আগে আস্তে আস্তে তিনি নির্জনতাপ্রিয় হয়ে ওঠেন, হেরা গুহায়। নিভৃতে আল্লাহ্তায়ালার ধ্যানে তিনি মশগুল হয়ে পড়েন এবং বিশাল সৃষ্টি ও তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে গভীর চিন্তা-ভাবনা করতে থাকেন। এভাবেই হেরা গুহায় তাঁর রাত আর দিন কাটে। খাবার ও পানি শেষ হয়ে গেলে আবার সেসব নেওয়ার জন্যেই তিনি শুধু বাড়িতে ফেরেন। মাঝে মাঝে প্রিয় স্ত্রী খাদিজাও হেরা গুহায় তাঁকে খাবার দিয়ে আসেন। এমনি করে একদিন আল্লাহর ফেরেশতা হযরত জিবরাঈল আ. এসে গম্ভীর কণ্ঠে তাঁকে বললেন, ‘ইকরা’- পড়ুন। মুহাম্মদ সা. বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলেন। উদ্বেলিত কণ্ঠে তিনি বললেন ‘আমি তো পড়তে জানি না’। ফেরেশতা তাঁকে বুকে চেপে ধরে আবার বললেন, পড়ুন। তিনি পুনরায় বললেন, আমি তো পড়তে জানি না। ফেরেশতা আবার তাঁকে বুকে জড়িয়ে চেপে ধরলেন এবং বললেন, পড়ুন। তৃতীয় বার যখন ফেরেশতা তাঁকে বুকে আলিঙ্গন করে ছেড়ে দিয়ে। বললেন, পড়ুন, এবার মুহাম্মদ সা. ওহীর প্রথম পাঁচটি আয়াত পড়লেন। অতপর তিনি ঘরে ফিরলেন। প্রিয়তমা স্ত্রীকে বললেন, ‘আমাকে চাদর দিয়ে ঢেকে দাও। আমাকে চাদর দিয়ে ঢেকে দাও’। হযরত খাদিজা রা. প্রিয় নবীকে চাদর দিয়ে জড়িয়ে দিলেন। এরপর তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, কী হয়েছে আপনার? আপনি এমন কাঁপছেন কেন?

রাসূল সা. বললেন, একজন অভিনব ব্যক্তি আমার কাছে এসে আমাকে বললেন, পড়ুন। আমি বললাম, আমি তো পড়তে জানি না। তারপর তিনি তিন-তিনবার আমাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে চাপ দিলেন, অতপর তার সাথে আমি পড়তে শুরু করলাম। তাঁর কথা শুনে খাদিজা রা. বললেন, আপনার ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। কেননা আপনি মানুষের উপকার করেন, মানবতার সেবা করেন, এতিমদের আশ্রয় দেন, মহান আল্লাহ আপনার কি কোনও ক্ষতি করতে পারেন।

খাদিজা রা. প্রিয় নবীকে তাঁর চাচাত ভাই ওরাকা ইবনে নওফালের কাছে নিয়ে গেলেন। ওরাকা ইবনে নওফাল ছিলেন ঈসায়ী ধর্মের আলেম এবং হিব্রু ভাষার পন্ডিত ব্যক্তি। সে সময় তিনি বয়সের ভারে ক্লান্ত এবং দৃষ্টিহীন হয়ে পড়েছিলেন। হযরত খাদিজা রা. বললেন, ভাইজান, আপনার ভাতিজার কথা শুনুন। রাসূল তাকে হেরা গুহার সব ঘটনার কথা বর্ণনা করলেন। শুনে ওরাকা বললেন, তিনি সে-ই দূত জিবরাঈল, যিনি হযরত মূসা আ.-এর কাছে ওহীর বাণী নিয়ে আসতেন। হায়, আমি যদি সে সময় পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারতাম! যখন তোমার কওমের লোকেরা তোমাকে জন্মভূমি থেকে বের করে দেবে। রাসূল সা. অবাক হয়ে বললেন, কেন আমাকে তারা মাতৃভূমি থেকে বের করে দেবে? ওরাকা বললেন, তুমি যে ওহী লাভ করেছো, এ ধরনের ওহী যখনই কোনও নবী পেয়েছেন তার সাথে স্বজাতির পক্ষ থেকে এভাবেই শত্রুতা করা হয়েছে। যদি সেদিন পর্যন্ত আমি বেঁচে থাকি তাহলে অবশ্যই আমি তোমার সাহায্যে এগিয়ে আসবো।