রিজিয়া সুলতানার পাশে দাঁড়াল সংখ্যালঘু দফতর

- আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২১, শনিবার
- / 47
আবদুল ওদুদ: করোনা পরিস্থিতির কারণে গত দেড় বছরের কিছু বেশি সময় ধরে বন্ধ ছিল স্কুল– কলেজ এবং মাদ্রাসা। মু্খ্যমন্ত্রীর ঘোঘণার পর গত ১৬ নভেম্বর খুলছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে শুরু হয়েছে এই পঠন পাঠন। প্রত্যেক ছাত্র ছাত্রীর সঙ্গে আগ্রহের সঙ্গে দেব কুন্ডু হাই মাদ্রাসায় আসে বিশেষভাবে সক্ষম রিজিয়া সুলতানা। কিন্তু তাঁর স্কুলে আসাটা আর পাঁচ জনের মতো নয়– সে এসেছিল মায়ের কাঁধে চড়ে। এই ছবি সামনে আসতেই এখন মুর্শিদাবাদ জেলায় দেবকুন্ডু গ্রামের রিজিয়া সুলতানাকে নিয়ে জোরচর্চা হয়েছে। প্রতিবন্ধী হওয়ায় চলাফেরা করতে অন্যের সাহায্য নিতে হয়। দেড় বছর পর মাদ্রাসা খুলতেই মায়ের কাঁধে চড়ে স্কুলে আসে।
বর্তমানে রিজিয়া সুলতানাকে সহযোগিতা করতে অনেকেই এগিয়ে এসেছেন। রাজ্যের সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাসা শিক্ষা দফতর (এমএএমই দফতর) থেকে শুরু করে জেলার বহু এনজিও এগিয়ে এসেছে। দেবকুন্ডু হাইমাদ্রাসার প্রধান শিক্ষিকা মুর্শিদা খাতুন জানান রিজিয়াকে বছর কয়েক আগে সর্বশিক্ষা মিশন থেকে এবং মাদ্রাসার পক্ষ থেকে ট্রাই সাইকেল দেওয়া হয়। কিন্তু গত দেড় বছর করোনা আবহে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে গেছে।
কিন্তু ১৬ নভেম্বর মায়ের কাঁধে চড়ে স্কুলে আসার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে জেলা থেকে সরকারি এভং বেসরকারিভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়।

তিনি জানান, সংখ্যালঘু বিষয়ক এবং মাদ্রাসা শিক্ষা দফতর থেকেও উদ্যোগ নেওয়া হয়। ডিএমই আবিদ হোসেন তৎক্ষনাৎ নির্দেশ দেন একটি ট্রাই সাইকেল কিনে দেওয়ার জন্য। দেবকুন্ডু মাদ্রাসার পক্ষ থেকে এডিমই নির্দেশে ট্রাইসাইকেল কিনে দেওয়া হয়। জেলার ক্ষুদিরাম পাঠাগারের পক্ষ থেকেও আরও একটি ট্রাইসাইকেল দেওয়া হয়।
প্রধান শিক্ষিকা বোর্ড প্রেসিডেন্ট আবু তাহের কমরুদ্দিনের কাছেও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বোর্ড প্রেসিডেন্ট ব্যক্তিগত ফান্ড থেকে ওই ট্রাইসাইকেল কিনে দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ডিএমই পাশে দাঁড়ানোর জন্য ধন্যবাদ জানান।
বর্তমানে প্রতিবন্ধী রিজিয়া সুলতানার পাশে দাঁড়িয়েছেন, জেলাশাসক থেকে শুরু করে ডোমা অফিসার এবং জেলার বিভিন্ন এনজিও। রিজিয়ার পিতা নেই। মায়ের সঙ্গে থাকেন। সঙ্গে রয়েছে আরও একটি বোন। তার পড়াশুনার যাবতীয় খরচ নিতে চলেছে জেলা প্রশাসন। আগামী দিনে পড়াশুনার যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, তার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি ড. আবু তাহের কমরুদ্দিন বলেন, রিজিয়া সুলতানার মনের জোরকে শ্রদ্ধা জানাই। সে একজন প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও বিদ্যালয়ে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করে মায়ের কাধে চেপে এসেছে। আগামী দিনে পর্ষদ তার পাশে থাকবে। উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য সমস্ত রকম সহযোগিতা করবে। রিজিয়াও আগামী দিনের রোল মডেল বলে উল্লেখ করেন।
রিজিয়া সুলতানার মনের সাহসকে কুর্নিশ জানিয়েছেন বিশিষ্ট শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, তাঁর মতো বহু প্রতিবন্ধী জেলায় রয়েছে তাদের জন্য আগামী দিনের অনুপ্রেরণা রিজিয়া। তিনি বলেন, আমরা হয়তো জানিনা, রিজিয়ার মতো অনেক প্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রী জেলায় রয়েছে। তাদের পাশে ও আমাদের দাঁড়ানো উচিত। তবেই মুল্যায়ন সার্বিক সঠিক হবে। আমরা অনেকরই খবর রাখি না, তাঁদের খুজে বের করার দায়িত্ব আমাদেরই নিতে হবে।