তিনটি বিয়ে ৭ টি সন্তান, চারপাশে ঘিরে থাকত মহিলারা! জেনে নিন পেলের অন্য এক জীবনের কাহিনী

- আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২২, শুক্রবার
- / 12
পুবের কলম ওয়েব ডেস্কঃ সর্বকালের সেরা ফুটবলার কে? পেলে না মারাদোনা? তা নিয়ে বিতর্কের অন্ত নেই। তবে ফুটবলের সম্রাট কে, তা নিয়ে কোনও দ্বন্দ্ব নেই। কালো মানিক খ্যাত ব্রাজিলের পেলে’কে বলা হয় ফুটবলের সম্রাট। ১৯৪০ সালের ২৩ অক্টোবর ব্রাজিলের ত্রেস কোরাকোয়েস শহরের এক বস্তিতে জন্মেছিলেন পেলে। তাঁর পুরো নাম ‘এডসন অ্যারানটিস দো নাসিমেন্ট’। পর্তুগীজ উচ্চারণে এডিসনকে তাঁরা বলতেন এডসন।
‘এডসন অ্যারানটিস দো নাসিমেন্ট’ নামটা যে কী করে পেলে হয়ে গেল, তিনি নিজেও সেটা বলতে পারেন না। বস্তির বন্ধুরা পেলেকে চিনতো ‘ডিকো’ নামে। দরিদ্র কৃষ্ণাঙ্গ পরিবারের প্রথম সন্তান হিসেবে পরিবারের অভাব অনটন মেটানোর জন্য ছেলেবেলাতে তাঁকে চায়ের দোকানে কাজ করতে হয়েছিল। এছাড়া রেল স্টেশন ঝাড়ু দেওয়ার পাশাপাশি বেশ কয়েক দিন জুতা পরিষ্কারের কাজও করতে হয়েছিল ছোট্ট পেলেকে। ছোটবেলা থেকেই ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন ছিল পেলের। একদিন সেই স্বপ্ন সত্যি হলো। ফুটবল খেলে বিশ্বজয় করল ছেলেটি।
তবে কিংবদন্তীর আড়ালে বেশ রঙিন ছিল পেলের জীবনী। বর্ণময় গতিশীল জীবনে তিনটি বিয়ে করেছিলেন। এছাড়াও একাধিক প্রেমিকার প্রেমিক হয়ে কাটিয়ে ছিলেন লম্বা সময়।
ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্সের একটি ওয়েব সিরিজে নিজের মুখে একাধিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া এবং অসংখ্য সন্তানের পিতৃত্বের বিষয়টি স্বীকার করেছিলেন পেলে। ফুটবল কেরিয়ারের সফল সময়ে একাধিক মহিলা ফ্যানের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কেও জড়িয়েছিলেন তিনি। নিজের মুখে পেলে স্বীকার করেছিলেন, ‘ফুটবল জীবনে বেশ কয়েকটি সম্পর্ক জড়িয়েছি। যাদের থেকে সন্তানও হয়েছিল। যা আমি পরে জানতে পেরেছিলাম। আমার প্রথম স্ত্রী সব জানত। তাকে আমি কোনওদিন মিথ্যা বলিনি৷’
১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ব্রাজিলের ফুটবল কিংবদন্তি পেলের প্রথম বিয়ে হয়েছিল রোজমেরি ডস রেসি চোলবি-র সঙ্গে৷ পেলের দাবি, সেই সময় তিনি খুব ছোট ছিলেন। তাঁর দুই মেয়ে এবং একটি পুত্র সন্তান আছে৷ তাঁর দুই কন্যার নাম কেলি এবং জেনিফার। একমাত্র ছেলের নাম এডিনহো। যদিও শেষ পর্যন্ত পেলের প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে সেই সম্পর্ক টেকেনি। ১৯৮২ সালে তাদের ডিভোর্স হয়ে যায়৷
প্রথম বিয়েতে থাকার সময় (১৯৬৪ সালে) বাড়ির কাজের মেয়ের সঙ্গেও প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন পেলে। তাঁদের একটি কন্যা সন্তান ছিল। যার নাম সান্দ্রা মাচাদো৷ পরবর্তীতে সেই সন্তানকে মান্যতা দিতে চাননি পেলে৷ সান্দ্রা বহু বছর আইনি লড়াই চালান। ডিএনএ টেস্টের মুখোমুখি হওয়ার জন্য পেলেকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু পেলে নাকি নিজের ডিএনএ স্যাম্পেল দিতে রাজি হননি। সান্দ্রা নিজের এই লড়াইয়ের কথা তার লেখা বই-এ লিখেছিলেন। সেই বইটির নাম , ‘দ্য ডটার পেলে নেভার ওয়ানটেড৷’ ১৯৯৩ সালে ডিএনএ এভিডেন্সের ভিত্তিতে প্রমাণ হয় সান্দ্রা পেলেরই মেয়ে৷ তা সত্ত্বেও সান্দ্রাকে নিজের মেয়ে বলে মেনে নেননি পেলে৷
সান্দ্রার মতো ফ্লাভিয়া কুর্ৎজও দাবি করেন, তিনিও পেলের মেয়ে। তার মা লেনিতা কুর্ৎজ। যিনি পেশায় সাংবাদিক ছিলেন। পেলের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে লেনিতা কুর্ৎজ জন্ম দেন ফ্লাভিয়াকে। পেলে এই ফ্লাভিয়াকেও নিজের সন্তান বলে মেনে নেননি। এর মাঝে ১৯৯৪ সালে আসিরিয়া লেমোস সেয়িকাসকে বিয়ে করেন পেলে। তিনি একজন সাইকোলজিস্ট এবং গায়িকাও ছিলেন৷ তার যমজ সন্তান জোসুয়া এবং সেলেস্তে৷ যদিও পেলের এই বিয়ে টেকেনি। ২০০৮ সালে তাদের ডিভোর্স হয়।
এর মাঝে মারসিয়া আওকির সঙ্গে দেখা হয় পেলের। প্রথম দেখায় ভালোবেসে ফেলেন। যদিও এর আগেও এই মারসিয়াকে ১৯৮০ সালে একটি পাটিতে দেখেছিলেন তিনি। কেউ কেউ জানিয়েছেন, সেই ৮০ সাল থেকে পেলে ডুবে ডুবে জল খেয়ে এই সম্পর্ক অন্দরে টিকিয়ে রেখেছিলেন। পেলে জানিয়েছিলেন, ২০০৮ সালে তিনি আবার মারসিয়া আওকিকে নিউ ইয়র্কে দেখেন। ২০১০ সাল থেকে তারা ডেট করা শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত ৭৫ বছর বয়সে ২০১৬ সালে এই জাপানি মহিলাকে বিয়ে করেন তিনি।
জানা গিয়েছে, পেলের তৃতীয় স্ত্রী তার থেকে ৩২ বছরের ছোট ছিলেন৷ যদিও কিংবদন্তি ফুটবলারের জাপানি বউ নাকি একজন সফল ব্যবসায়ী ছিলেন। তাদের অবশ্য কোনও সন্তান নেই। আগের দুই স্ত্রী এবং কয়েকটি বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক থেকে মোট সাতটি সন্তানকে রেখে না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন রঙিন মনের সদা প্রেমিক এই বিশ্বকাপজয়ী ফুটবলারটি।