২১ অক্টোবর ২০২৫, মঙ্গলবার, ৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ডাইনি অপবাদ, পুরুলিয়ায় কালীপুজোর রাতে আদিবাসী মহিলাকে নৃশংস হত্যা!

কিবরিয়া আনসারি
  • আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০২৫, মঙ্গলবার
  • / 59

পুবের কলম প্রতিবেদক, পুরুলিয়া: অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার ও সামাজিক বিদ্বেষ কতটা ভয়ানক হতে পারে, তার জ্বলন্ত উদাহরণ হয়ে রইল পুরুলিয়ার চাপুরি গ্রামের সাম্প্রতিক ঘটনা। আধুনিক প্রযুক্তির যুগেও গ্রামবাংলার একাংশে এখনো ‘ডাইনি’ অপবাদে নিরীহ মহিলাদের উপর নেমে আসে অমানবিক নির্যাতন, এমনকী মৃত্যুর শাস্তিও, যা শুধু অপরাধই নয়, একটি অমানবিক মানসিকতার প্রতিফলন। পুরুলিয়ার পাড়া থানার চাপুরি গ্রামে কালীপুজোর রাতে ঘটে গেল এক ভয়াবহ ঘটনা। ‘ডাইনি’ অপবাদে এক আদিবাসী গৃহবধূকে তার দেওর-সহ পরিবারের কয়েকজন সদস্য কুপিয়ে খুন করেছে বলে অভিযোগ। দীর্ঘদিন ধরে অপমান, হুমকি ও অত্যাচারের শিকার হচ্ছিলেন ওই মহিলা। অভিযোগ, সোমবার রাতে অশান্তির জেরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপানো হয় তাকে। ঘটনাস্থলেই রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকেন তিনি। খবর পেয়ে পুলিশ দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়। মৃতার দেওর-সহ কয়েকজনকে আটক করেছে পুলিশ। সন্তানদের অভিযোগ, বহুদিন ধরেই তাদের মাকে ‘ডাইনি’ অপবাদ দিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছিল। ইতিমধ্যে মৃতার দেওর-সহ পরিবারের একাধিক সদস্যদের আটক করা হয়েছে। এ ঘটনা কেবল অপরাধ নয়, সমাজের অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের নির্মম প্রতিফলন। প্রশাসনের তরফে সচেতনতা বাড়ানোর বারবার চেষ্টা হলেও এই অমানবিকতার অবসান হচ্ছে না।

উল্লেখ্য, গত বছর ডাইনি অপবাদে দুই আদিবাসী মহিলাকে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ উঠেছিল বীরভূমের ময়ূরেশ্বরে । অভিযোগ, দুই মহিলাকে ডাইনি অপবাদে বেধড়ক মারধর করে, ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়েছিল। ৩ দিন নিখোঁজ থাকার পর, রাত ১১টা নাগাদ গ্রামের মধ্যে সেচ খালে দু’জনের দেহ ভাসতে দেখেছিলেন স্থানীয়রা। এই ঘটনায় গ্রামের মোড়ল-সহ ৬ জনকে আটক করেছিল ময়ূরেশ্বর থানার পুলিশ। গ্রামে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। তবে অতীতে এর আগেও একাধিকবার এমন মর্মান্তিক ঘটনার মুখোমুখী হয়েছিল রাজ্য। ঝাড়গ্রামে ডাইনি সন্দেহে বৃদ্ধা মহিলাকে গলা কেটে খুনের ঘটনায় এক ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ডের সাজা ঘোষণা করেছিল ঝাড়গ্রাম জেলা আদালত। শেষঅবধি ‘বিচার’ পেয়েছিল নিহতের পরিবার।

আরও পড়ুন: টমেটোর দর ১ টাকা কেজি, উৎপাদন খরচও উঠছে না কৃষকদের

সচেতনার আলো তখনও পৌঁছায়নি গ্রামে। সালটা ২০১৭ সাল। ওই বছর ফেব্রুয়ারি মাসের ৯ তারিখ ঘটে গিয়েছিল এক মর্মান্তিক ঘটনা। ঝাড়গ্রামের সাঁকরাইল ব্লকের নয়াগাতে রাধাকান্ত বেরা নামে এক ব্যক্তি ডাইনি সন্দেহে পাশের বাড়ির তরুবালা বেরাকে জোর করে টানতে টানতে গ্রামের শিবমন্দিরে নিয়ে গিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে দেহ থেকে গলা আলাদা করে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। এরপরে মৃতার মেয়ে আরতি বেরার অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছিল সাঁকরাইল থানার পুলিশ। উদ্ধার করা হয়েছিল অস্ত্র।

আরও পড়ুন: পুরুলিয়ার সূঁচ দিয়ে শিশুহত্যার ঘটনায় দোষীদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ

আরও পড়ুন: নিন্দনীয় কাণ্ড পুরুলিয়ার বিজেপি নেতার, নিচে জাতীয় পতাকা রেখে উপরে তুলল দলীয় পতাকা

প্রতিবেদক

কিবরিয়া আনসারি

Kibria obtained a master's degree in journalism from Aliah University. He has been in journalism since 2018, gaining work experience in multiple organizations. Focused and sincere about his work, Kibria is currently employed at the desk of Purber Kalom.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

ডাইনি অপবাদ, পুরুলিয়ায় কালীপুজোর রাতে আদিবাসী মহিলাকে নৃশংস হত্যা!

আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০২৫, মঙ্গলবার

পুবের কলম প্রতিবেদক, পুরুলিয়া: অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার ও সামাজিক বিদ্বেষ কতটা ভয়ানক হতে পারে, তার জ্বলন্ত উদাহরণ হয়ে রইল পুরুলিয়ার চাপুরি গ্রামের সাম্প্রতিক ঘটনা। আধুনিক প্রযুক্তির যুগেও গ্রামবাংলার একাংশে এখনো ‘ডাইনি’ অপবাদে নিরীহ মহিলাদের উপর নেমে আসে অমানবিক নির্যাতন, এমনকী মৃত্যুর শাস্তিও, যা শুধু অপরাধই নয়, একটি অমানবিক মানসিকতার প্রতিফলন। পুরুলিয়ার পাড়া থানার চাপুরি গ্রামে কালীপুজোর রাতে ঘটে গেল এক ভয়াবহ ঘটনা। ‘ডাইনি’ অপবাদে এক আদিবাসী গৃহবধূকে তার দেওর-সহ পরিবারের কয়েকজন সদস্য কুপিয়ে খুন করেছে বলে অভিযোগ। দীর্ঘদিন ধরে অপমান, হুমকি ও অত্যাচারের শিকার হচ্ছিলেন ওই মহিলা। অভিযোগ, সোমবার রাতে অশান্তির জেরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপানো হয় তাকে। ঘটনাস্থলেই রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকেন তিনি। খবর পেয়ে পুলিশ দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়। মৃতার দেওর-সহ কয়েকজনকে আটক করেছে পুলিশ। সন্তানদের অভিযোগ, বহুদিন ধরেই তাদের মাকে ‘ডাইনি’ অপবাদ দিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছিল। ইতিমধ্যে মৃতার দেওর-সহ পরিবারের একাধিক সদস্যদের আটক করা হয়েছে। এ ঘটনা কেবল অপরাধ নয়, সমাজের অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের নির্মম প্রতিফলন। প্রশাসনের তরফে সচেতনতা বাড়ানোর বারবার চেষ্টা হলেও এই অমানবিকতার অবসান হচ্ছে না।

উল্লেখ্য, গত বছর ডাইনি অপবাদে দুই আদিবাসী মহিলাকে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ উঠেছিল বীরভূমের ময়ূরেশ্বরে । অভিযোগ, দুই মহিলাকে ডাইনি অপবাদে বেধড়ক মারধর করে, ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়েছিল। ৩ দিন নিখোঁজ থাকার পর, রাত ১১টা নাগাদ গ্রামের মধ্যে সেচ খালে দু’জনের দেহ ভাসতে দেখেছিলেন স্থানীয়রা। এই ঘটনায় গ্রামের মোড়ল-সহ ৬ জনকে আটক করেছিল ময়ূরেশ্বর থানার পুলিশ। গ্রামে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। তবে অতীতে এর আগেও একাধিকবার এমন মর্মান্তিক ঘটনার মুখোমুখী হয়েছিল রাজ্য। ঝাড়গ্রামে ডাইনি সন্দেহে বৃদ্ধা মহিলাকে গলা কেটে খুনের ঘটনায় এক ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ডের সাজা ঘোষণা করেছিল ঝাড়গ্রাম জেলা আদালত। শেষঅবধি ‘বিচার’ পেয়েছিল নিহতের পরিবার।

আরও পড়ুন: টমেটোর দর ১ টাকা কেজি, উৎপাদন খরচও উঠছে না কৃষকদের

সচেতনার আলো তখনও পৌঁছায়নি গ্রামে। সালটা ২০১৭ সাল। ওই বছর ফেব্রুয়ারি মাসের ৯ তারিখ ঘটে গিয়েছিল এক মর্মান্তিক ঘটনা। ঝাড়গ্রামের সাঁকরাইল ব্লকের নয়াগাতে রাধাকান্ত বেরা নামে এক ব্যক্তি ডাইনি সন্দেহে পাশের বাড়ির তরুবালা বেরাকে জোর করে টানতে টানতে গ্রামের শিবমন্দিরে নিয়ে গিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে দেহ থেকে গলা আলাদা করে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। এরপরে মৃতার মেয়ে আরতি বেরার অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছিল সাঁকরাইল থানার পুলিশ। উদ্ধার করা হয়েছিল অস্ত্র।

আরও পড়ুন: পুরুলিয়ার সূঁচ দিয়ে শিশুহত্যার ঘটনায় দোষীদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ

আরও পড়ুন: নিন্দনীয় কাণ্ড পুরুলিয়ার বিজেপি নেতার, নিচে জাতীয় পতাকা রেখে উপরে তুলল দলীয় পতাকা