২৪ অক্টোবর ২০২৫, শুক্রবার, ৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কেরলের নার্সের মৃত্যু আটকাতে নিরুপায় আমরা : সুপ্রিম কোর্ট

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ১৪ জুলাই ২০২৫, সোমবার
  • / 169

নয়াদিল্লি, ১৪ জুলাই : কেরলের নার্স নিমিশা প্রিয়াকে ইয়েমেন সরকার সামনের ১৬ জুলাই ফাঁসিকাঠে ঝোলাচ্ছে। তার আগে নিমিশার প্রাণ বাঁচাতে ওর পরিবার নানা মহলে কথা বলে সুপ্রিম কোর্টে পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছে। গড়ে উঠেছে সেভ নিমিশা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকশন কাউন্সিল।

 

আরও পড়ুন: ইয়েমেনে কি ভারতীয় নার্স প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড বাতিল হয়েছে?

সেই কাউন্সিলের করা আবেদনের শুনানিতে সোমবার কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে অ্যাটর্নি জেনারেল আর বেঙ্কটরামানি বললেন, সরকারের দিক থেকে যা চেষ্টা করার সেই চূড়ান্ত পর্যায়ে চেষ্টা করা হয়ে গিয়েছে। আর কিছু করার নেই। বিচারপতি বিক্রম নাথ এবং সন্দীপ মেহতার বেঞ্চের কাছে এদিন ওই কাউন্সিলের আইনজীবী আর বসন্ত বলেন, নিমিশাকে বাঁচানোর জন্য আমার মক্কেল অর্থ দিতেও রাজি।

আরও পড়ুন: সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্রমশ জটিল হচ্ছে নিমিশা মামলা, সংযমের আর্জি মায়ের

 

আরও পড়ুন: ইয়েমেনে বন্দি নিমিশার ফাঁসি রুখতে এগিয়ে এলেন ভারতের গ্র্যান্ড মুফতি, সাময়িক স্বস্তি ভারতীয় নার্সের পরিবারে

যার সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের কারণে শরিয়ত বিধিমতে নিমিশার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা হয়েছে, শরিয়ত বিধিতেই ওই ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণের অর্থ দিলে দণ্ড থেকে রেহাই পাওয়া যায়। ভারতীয় মুদ্রায় ৮ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা ধার্য হয়েছে ক্ষতিপূরণের মূল্য। তাকেই বলা হয় ব্লাড মানি। কাউন্সিলের লোকজন কথা বলে ওই অর্থদণ্ডের হার কমানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। তাই কেন্দ্র যে বলছে ‘আর কিছু করার নেই’ এটা ঠিক নয়।

 

এখনও কূটনৈতিক পর্যায়ে কথা বলে সরকার কাউন্সিলের লোকজনকে সাহায্য করতে পারে। আমরা কিন্তু সরকারের থেকে ওই ক্ষতিপূরণের টাকা চাইনি। কাউন্সিলই চাঁদা তুলে জোগাড় করছে টাকা। তখন অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ইয়েমেনের সঙ্গে ভারতের তেমন সম্পর্ক নেই। সেখানে ভারতের কোনও দূতাবাস নেই।

 

নিমিশা প্রিয়া হুথি নিয়ন্ত্রিত সানার কারাগারে বন্দি না থেকে যদি ইয়েমেনেরই যে অংশকে সারা বিশ্ব স্বীকৃতি দিয়েছে, সেই অ্যাডেন এ বন্দি থাকতেন তাহলে কোনও সমস্যাই হত না। তা সত্ত্বেও কেরলের ওই নার্সকে বাঁচাতে সরকার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। ইয়েমেনের সরকারি কৌঁসুলিকেও ভারত সরকারের পক্ষ থেকে চিঠি লেখা হয়েছে। ক্ষতিপূরণের অর্থ দেওয়ার বিষয়টি ব্যক্তিগত পর্যায়ে চলে। এখানে সরকারের কোনও ভূমিকা থাকে না। এমন কী আরব দেশগুলিতে খুব প্রভাব রয়েছে এমন কয়েকজন শেখ এর সঙ্গেও সরকারের তরফে কথা বলা হয়েছে, যাতে তাঁরা হুথি সরকারকে রাজি করাতে পারেন।

এইসব শুনে বিচারপতি মেহতা বলেন, সত্যিই এই বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর এবং দু:খেরও। সবচেয়ে বড় উদ্বেগের কারণ, ওই মহিলার অবস্থান, যেভাবে ঘটনা ঘটেছে, তারপরও যদি ওর প্রাণ যায় তা হবে বেদনাদায়ক। তখন অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমরা যতদূর জানি, ওই মহিলার পরিবারের সঙ্গে যাদের ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়ার কথা ছিল সেই কথাবার্তাতেও জট দেখা দিয়েছে। কাউন্সিলের কৌঁসুলি বসন্ত বলেন, ‘ মৃত্যুদণ্ড যাতে কার্যকর না হয় দেখুন’। তখন বিচারপতি মেহতা বলেন, একটা বিদেশি রাষ্ট্র সম্পর্কে আমরা কী বলব? আমরা কোনও নির্দেশ দিলে তা সেই দেশ মানবে কেন? শুক্রবার পর্যন্ত এই মামলার শুনানি মুলতবি রাখা হয়।

অভিযোগ, ইয়েমেনের এক নাগরিককে ওই মহিলা খুন করে। সেই নাগরিক প্রিয়াকে শারীরিক নির্যাতন করত বলে জানিয়েছে সে। ওই নাগরিক, যার নাম ছিল, তালাল আবদো মেহদি, প্রিয়ার ব্যবসায়িক অংশীদার ছিল। অভিযোগ, সে প্রিয়ার পাসপোর্ট হাতিয়ে নেয় এবং জাল নথি তৈরি করে প্রিয়াকে তার স্ত্রী হিসেবে জাহির করত। প্রিয়া ওই ব্যক্তিকে মোটেই পছন্দ করত না।

শেষপর্যন্ত ওই ব্যক্তিকে ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়ে অচৈতন্য করে রেখে প্রিয়া দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসার পরিকল্পনা করে। কিন্তু ইঞ্জেকশন এর ডোজ বেশি হয়ে যাওয়ায় ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়। এটা ২০১৭ সালের ঘটনা। প্রিয়াকে গ্রেফতার করে বিচার হয় এবং পরের বছরই তার মৃত্যুদণ্ড দেয় শরিয়ত আদালত।

প্রতিবেদক

ইমামা খাতুন

২০২২ সাল থেকে সংবাদ জগতের সঙ্গে যুক্ত। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতাতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছে। ডিজিটাল প্লাটফর্মে রিপোর্টার হিসেবে হাতেখড়ি। ২০২২ সালের শেষান্তে পুবের কলম-এর সঙ্গে যুক্ত হয়। ইমামার ভাষ্যে, The First Law of Journalism: to confirm existing prejudice, rather than contradict it.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

কেরলের নার্সের মৃত্যু আটকাতে নিরুপায় আমরা : সুপ্রিম কোর্ট

আপডেট : ১৪ জুলাই ২০২৫, সোমবার

নয়াদিল্লি, ১৪ জুলাই : কেরলের নার্স নিমিশা প্রিয়াকে ইয়েমেন সরকার সামনের ১৬ জুলাই ফাঁসিকাঠে ঝোলাচ্ছে। তার আগে নিমিশার প্রাণ বাঁচাতে ওর পরিবার নানা মহলে কথা বলে সুপ্রিম কোর্টে পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছে। গড়ে উঠেছে সেভ নিমিশা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকশন কাউন্সিল।

 

আরও পড়ুন: ইয়েমেনে কি ভারতীয় নার্স প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড বাতিল হয়েছে?

সেই কাউন্সিলের করা আবেদনের শুনানিতে সোমবার কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে অ্যাটর্নি জেনারেল আর বেঙ্কটরামানি বললেন, সরকারের দিক থেকে যা চেষ্টা করার সেই চূড়ান্ত পর্যায়ে চেষ্টা করা হয়ে গিয়েছে। আর কিছু করার নেই। বিচারপতি বিক্রম নাথ এবং সন্দীপ মেহতার বেঞ্চের কাছে এদিন ওই কাউন্সিলের আইনজীবী আর বসন্ত বলেন, নিমিশাকে বাঁচানোর জন্য আমার মক্কেল অর্থ দিতেও রাজি।

আরও পড়ুন: সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্রমশ জটিল হচ্ছে নিমিশা মামলা, সংযমের আর্জি মায়ের

 

আরও পড়ুন: ইয়েমেনে বন্দি নিমিশার ফাঁসি রুখতে এগিয়ে এলেন ভারতের গ্র্যান্ড মুফতি, সাময়িক স্বস্তি ভারতীয় নার্সের পরিবারে

যার সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের কারণে শরিয়ত বিধিমতে নিমিশার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা হয়েছে, শরিয়ত বিধিতেই ওই ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণের অর্থ দিলে দণ্ড থেকে রেহাই পাওয়া যায়। ভারতীয় মুদ্রায় ৮ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা ধার্য হয়েছে ক্ষতিপূরণের মূল্য। তাকেই বলা হয় ব্লাড মানি। কাউন্সিলের লোকজন কথা বলে ওই অর্থদণ্ডের হার কমানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। তাই কেন্দ্র যে বলছে ‘আর কিছু করার নেই’ এটা ঠিক নয়।

 

এখনও কূটনৈতিক পর্যায়ে কথা বলে সরকার কাউন্সিলের লোকজনকে সাহায্য করতে পারে। আমরা কিন্তু সরকারের থেকে ওই ক্ষতিপূরণের টাকা চাইনি। কাউন্সিলই চাঁদা তুলে জোগাড় করছে টাকা। তখন অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ইয়েমেনের সঙ্গে ভারতের তেমন সম্পর্ক নেই। সেখানে ভারতের কোনও দূতাবাস নেই।

 

নিমিশা প্রিয়া হুথি নিয়ন্ত্রিত সানার কারাগারে বন্দি না থেকে যদি ইয়েমেনেরই যে অংশকে সারা বিশ্ব স্বীকৃতি দিয়েছে, সেই অ্যাডেন এ বন্দি থাকতেন তাহলে কোনও সমস্যাই হত না। তা সত্ত্বেও কেরলের ওই নার্সকে বাঁচাতে সরকার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। ইয়েমেনের সরকারি কৌঁসুলিকেও ভারত সরকারের পক্ষ থেকে চিঠি লেখা হয়েছে। ক্ষতিপূরণের অর্থ দেওয়ার বিষয়টি ব্যক্তিগত পর্যায়ে চলে। এখানে সরকারের কোনও ভূমিকা থাকে না। এমন কী আরব দেশগুলিতে খুব প্রভাব রয়েছে এমন কয়েকজন শেখ এর সঙ্গেও সরকারের তরফে কথা বলা হয়েছে, যাতে তাঁরা হুথি সরকারকে রাজি করাতে পারেন।

এইসব শুনে বিচারপতি মেহতা বলেন, সত্যিই এই বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর এবং দু:খেরও। সবচেয়ে বড় উদ্বেগের কারণ, ওই মহিলার অবস্থান, যেভাবে ঘটনা ঘটেছে, তারপরও যদি ওর প্রাণ যায় তা হবে বেদনাদায়ক। তখন অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমরা যতদূর জানি, ওই মহিলার পরিবারের সঙ্গে যাদের ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়ার কথা ছিল সেই কথাবার্তাতেও জট দেখা দিয়েছে। কাউন্সিলের কৌঁসুলি বসন্ত বলেন, ‘ মৃত্যুদণ্ড যাতে কার্যকর না হয় দেখুন’। তখন বিচারপতি মেহতা বলেন, একটা বিদেশি রাষ্ট্র সম্পর্কে আমরা কী বলব? আমরা কোনও নির্দেশ দিলে তা সেই দেশ মানবে কেন? শুক্রবার পর্যন্ত এই মামলার শুনানি মুলতবি রাখা হয়।

অভিযোগ, ইয়েমেনের এক নাগরিককে ওই মহিলা খুন করে। সেই নাগরিক প্রিয়াকে শারীরিক নির্যাতন করত বলে জানিয়েছে সে। ওই নাগরিক, যার নাম ছিল, তালাল আবদো মেহদি, প্রিয়ার ব্যবসায়িক অংশীদার ছিল। অভিযোগ, সে প্রিয়ার পাসপোর্ট হাতিয়ে নেয় এবং জাল নথি তৈরি করে প্রিয়াকে তার স্ত্রী হিসেবে জাহির করত। প্রিয়া ওই ব্যক্তিকে মোটেই পছন্দ করত না।

শেষপর্যন্ত ওই ব্যক্তিকে ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়ে অচৈতন্য করে রেখে প্রিয়া দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসার পরিকল্পনা করে। কিন্তু ইঞ্জেকশন এর ডোজ বেশি হয়ে যাওয়ায় ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়। এটা ২০১৭ সালের ঘটনা। প্রিয়াকে গ্রেফতার করে বিচার হয় এবং পরের বছরই তার মৃত্যুদণ্ড দেয় শরিয়ত আদালত।