২০ অগাস্ট ২০২৫, বুধবার, ৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আরএসএসের আমন্ত্রণ নিয়ে “লড়াই” করার সময় প্রণব মুখার্জি কন্যাকে যা বলেছিলেন,বইয়ে লিখেছেন কন্যা শর্মিষ্ঠা

শফিকুল ইসলাম
  • আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার
  • / 9

পুবের কলম ওয়েব  ডেস্ক:

প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে বই লিখেছেন কন্যা তথা প্রাক্তন কংগ্রেস নেত্রী শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায়।। প্রণব মাই ফাদার: এ ডটার রিমেম্বারস। সেখানে নিজের বাবার কথা বলে দাবি করে অনেক তথ্য দিয়েছেন শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায়। সেখানে শর্মিষ্ঠা লিখেছেন, ২০১৩ সালে রাহুল গান্ধির তৎকালীন ইউপিএ সরকারের অধ্যাদেশের অনুলিপি ছিঁড়ে ফেলার ঘটনায় হতবাক হয়েছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়।পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি হওয়া ছাড়াও, প্রণব মুখোপাধ্যায় দীর্ঘদিন দেশের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছিলেন। এছাড়াও তিনি বিদেশমন্ত্রী, প্রতিরক্ষা ও বাণিজ্যমন্ত্রীর পদও সামটলেছেন। দেশের ১৩ তম রাষ্ট্রপতি ছিলেন তিনি। ২০২০-র ৩১ অগাস্ট করোনায় প্রয়াত হন তিনি।বইটি, যাতে প্রণব মুখার্জির ডায়েরি থেকে নেওয়া রেফারেন্স রয়েছে। বইয়ের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে কংগ্রেস নেতা পি চিদাম্বরম এবং বিজেপি নেতা বিজয় গোয়েল উপস্থিত ছিলেন।

প্রাক্তন আমলা পবন কে ভার্মার সঙ্গে বইটি নিয়ে কথোপকথনের সময়, তিনি তার বাবার আরএসএস এর অনুষ্ঠানে যোগদানের বিরোধিতার কথাও স্মরণ করেছেন।

“আমি বাবার সঙ্গে তার সিদ্ধান্ত নিয়ে তিন থেকে চার দিন ধরে লড়াই করেছি। একদিন তিনি বলেছিলেন যে আমি যেতে দিচ্ছি না। বাবা মনে করেছিলেন যে গণতন্ত্র মানেই সংলাপ। এটি বিরোধীদের সঙ্গে কথোপকথন।শর্মিষ্ঠা চাননি তার বাবা আরএসএসের অনুষ্ঠানে যাক।

তিনি কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি সম্পর্কে তার মূল্যায়নকেও স্পর্শ করেছিলেন, যা বইয়ের অংশ এবং এর উদ্ধৃতিগুলি একটি বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
বইয়ে শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায় লিখেছেন, একদিন খুব ভোরে রাহুল গান্ধি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। সেই সময় প্রণব মুখোপাধ্যায় মুঘল গার্ডেনে (বর্তমানে অমৃত উদ্যান) মর্নিং ওয়াক করছিলেন। সাধারণভাবে মর্নিং ওয়াক এবং পুজোর সময় কোনও ধরনের বাধা পছন্দ করতেন না। তারপরেও তিনি রাহুল গান্ধির সঙ্গে দেখা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।পরে জানা যায়, রাহুলের সঙ্গে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের দেখা করার কথা ছিল সন্ধেয়। কিন্তু রাহুলের অফিস ভুল করে তাকে জানায় বৈঠক রয়েছে সকালে। শর্মিষ্ঠা তাঁর বইয়ে জানিয়েছে, এব্যাপারে প্রণব মুখোপাধ্যায় বলেছিলেন, রাহুলের অফিস যদি এএম এবং পিএমের পার্থক্য করতে না পারে, তাহলে ভবিষ্যতে তিনি কীভাবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পরিচালনা করবেন?
নিজের বই প্রণব মাই ফাদার: এ ডটার রিমেম্বারস-এ শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায় লিখেছেন, বাবা (প্রণব) তাঁকে বলেছিলেন, রাজনীতিতে আসার সিদ্ধান্ত সম্ভবত তাঁর (রাহুল) ছিল না। ক্যারিশ্মা ছাড়াও তাঁর মধ্যে রাজনৈতিক বোধের অভাব ছিল। যা সমস্যা তৈরি করে।

প্রসঙ্গত প্রাক্তন ক্যাবিনেটমন্ত্রী অজয় মাকেন ২০১৩-র ২৭ সেপ্টেম্বর একটি সাংবাদিক সম্মেলন ডেকেছিলেন। সেখানে রাহুল গান্ধি প্রস্তাবিত সরকারি অধ্যাদেশকে সম্পূর্ণ অর্থহীন বলে অভিহিত করেছিলেন। এরপর তিনি সবাইকে হতবাক করে তার কপি ছিঁড়ে ফেলেছিলেন। যদিও শর্মিষ্ঠা দাবি করেছেন, তাঁর বাবা নিজে ওই অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে ছিলেন, এবং নীতিগতভাবে রাহুলের সঙ্গে সহমত ছিলেন। শর্মিষ্ঠা লিখেছেন, রাহুলের অধ্যাদেশ ছিঁড়ে ফেলার আচরণে বাবা খুব রেগে গিয়েছিলেন। তাঁর মুখ লাল হয়ে গিয়েছিল। তিনি (প্রণব) বলেছিলেন, তিনি (রাহুল) নিজেকে কী মনে করেন? তিনি মন্ত্রিসভার সদস্য নন। মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত প্রকাশ্যে প্রত্যাখ্যান করার তিনি কে? এছাড়াও শর্মিষ্ঠা লিখেছেন, সেই সময় প্রধানমন্ত্রী বিদেশে ছিলেন। প্রণব মুখোপাধ্যায় এব্যাপারে শর্মিষ্ঠাকে বলেছিলেন, রাহুলের আচরণের পরিণতি এবং প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের ওপরে তার প্রভাব কি সে (রাহুল) উপলব্ধি করে? প্রধানমন্ত্রীকে এইভাবে অপমান করার অধিকার কি তাঁর আছে? প্রসঙ্গত কংগ্রেসের প্রাক্তন মুখপাত্র শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায় বাবার মৃত্যুর পরে ২০২১ সালে রাজনীতি ছেড়েছেন। প্রণব মুখোপাধ্যায়ের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ১১ ডিসেম্বর তাঁর বই প্রণব মাই ফাদার: এ ডটার রিমেম্বারস প্রকাশিত হল।

Tag :

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

আরএসএসের আমন্ত্রণ নিয়ে “লড়াই” করার সময় প্রণব মুখার্জি কন্যাকে যা বলেছিলেন,বইয়ে লিখেছেন কন্যা শর্মিষ্ঠা

আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার

পুবের কলম ওয়েব  ডেস্ক:

প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে বই লিখেছেন কন্যা তথা প্রাক্তন কংগ্রেস নেত্রী শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায়।। প্রণব মাই ফাদার: এ ডটার রিমেম্বারস। সেখানে নিজের বাবার কথা বলে দাবি করে অনেক তথ্য দিয়েছেন শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায়। সেখানে শর্মিষ্ঠা লিখেছেন, ২০১৩ সালে রাহুল গান্ধির তৎকালীন ইউপিএ সরকারের অধ্যাদেশের অনুলিপি ছিঁড়ে ফেলার ঘটনায় হতবাক হয়েছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়।পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি হওয়া ছাড়াও, প্রণব মুখোপাধ্যায় দীর্ঘদিন দেশের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছিলেন। এছাড়াও তিনি বিদেশমন্ত্রী, প্রতিরক্ষা ও বাণিজ্যমন্ত্রীর পদও সামটলেছেন। দেশের ১৩ তম রাষ্ট্রপতি ছিলেন তিনি। ২০২০-র ৩১ অগাস্ট করোনায় প্রয়াত হন তিনি।বইটি, যাতে প্রণব মুখার্জির ডায়েরি থেকে নেওয়া রেফারেন্স রয়েছে। বইয়ের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে কংগ্রেস নেতা পি চিদাম্বরম এবং বিজেপি নেতা বিজয় গোয়েল উপস্থিত ছিলেন।

প্রাক্তন আমলা পবন কে ভার্মার সঙ্গে বইটি নিয়ে কথোপকথনের সময়, তিনি তার বাবার আরএসএস এর অনুষ্ঠানে যোগদানের বিরোধিতার কথাও স্মরণ করেছেন।

“আমি বাবার সঙ্গে তার সিদ্ধান্ত নিয়ে তিন থেকে চার দিন ধরে লড়াই করেছি। একদিন তিনি বলেছিলেন যে আমি যেতে দিচ্ছি না। বাবা মনে করেছিলেন যে গণতন্ত্র মানেই সংলাপ। এটি বিরোধীদের সঙ্গে কথোপকথন।শর্মিষ্ঠা চাননি তার বাবা আরএসএসের অনুষ্ঠানে যাক।

তিনি কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি সম্পর্কে তার মূল্যায়নকেও স্পর্শ করেছিলেন, যা বইয়ের অংশ এবং এর উদ্ধৃতিগুলি একটি বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
বইয়ে শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায় লিখেছেন, একদিন খুব ভোরে রাহুল গান্ধি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। সেই সময় প্রণব মুখোপাধ্যায় মুঘল গার্ডেনে (বর্তমানে অমৃত উদ্যান) মর্নিং ওয়াক করছিলেন। সাধারণভাবে মর্নিং ওয়াক এবং পুজোর সময় কোনও ধরনের বাধা পছন্দ করতেন না। তারপরেও তিনি রাহুল গান্ধির সঙ্গে দেখা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।পরে জানা যায়, রাহুলের সঙ্গে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের দেখা করার কথা ছিল সন্ধেয়। কিন্তু রাহুলের অফিস ভুল করে তাকে জানায় বৈঠক রয়েছে সকালে। শর্মিষ্ঠা তাঁর বইয়ে জানিয়েছে, এব্যাপারে প্রণব মুখোপাধ্যায় বলেছিলেন, রাহুলের অফিস যদি এএম এবং পিএমের পার্থক্য করতে না পারে, তাহলে ভবিষ্যতে তিনি কীভাবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পরিচালনা করবেন?
নিজের বই প্রণব মাই ফাদার: এ ডটার রিমেম্বারস-এ শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায় লিখেছেন, বাবা (প্রণব) তাঁকে বলেছিলেন, রাজনীতিতে আসার সিদ্ধান্ত সম্ভবত তাঁর (রাহুল) ছিল না। ক্যারিশ্মা ছাড়াও তাঁর মধ্যে রাজনৈতিক বোধের অভাব ছিল। যা সমস্যা তৈরি করে।

প্রসঙ্গত প্রাক্তন ক্যাবিনেটমন্ত্রী অজয় মাকেন ২০১৩-র ২৭ সেপ্টেম্বর একটি সাংবাদিক সম্মেলন ডেকেছিলেন। সেখানে রাহুল গান্ধি প্রস্তাবিত সরকারি অধ্যাদেশকে সম্পূর্ণ অর্থহীন বলে অভিহিত করেছিলেন। এরপর তিনি সবাইকে হতবাক করে তার কপি ছিঁড়ে ফেলেছিলেন। যদিও শর্মিষ্ঠা দাবি করেছেন, তাঁর বাবা নিজে ওই অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে ছিলেন, এবং নীতিগতভাবে রাহুলের সঙ্গে সহমত ছিলেন। শর্মিষ্ঠা লিখেছেন, রাহুলের অধ্যাদেশ ছিঁড়ে ফেলার আচরণে বাবা খুব রেগে গিয়েছিলেন। তাঁর মুখ লাল হয়ে গিয়েছিল। তিনি (প্রণব) বলেছিলেন, তিনি (রাহুল) নিজেকে কী মনে করেন? তিনি মন্ত্রিসভার সদস্য নন। মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত প্রকাশ্যে প্রত্যাখ্যান করার তিনি কে? এছাড়াও শর্মিষ্ঠা লিখেছেন, সেই সময় প্রধানমন্ত্রী বিদেশে ছিলেন। প্রণব মুখোপাধ্যায় এব্যাপারে শর্মিষ্ঠাকে বলেছিলেন, রাহুলের আচরণের পরিণতি এবং প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের ওপরে তার প্রভাব কি সে (রাহুল) উপলব্ধি করে? প্রধানমন্ত্রীকে এইভাবে অপমান করার অধিকার কি তাঁর আছে? প্রসঙ্গত কংগ্রেসের প্রাক্তন মুখপাত্র শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায় বাবার মৃত্যুর পরে ২০২১ সালে রাজনীতি ছেড়েছেন। প্রণব মুখোপাধ্যায়ের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ১১ ডিসেম্বর তাঁর বই প্রণব মাই ফাদার: এ ডটার রিমেম্বারস প্রকাশিত হল।