৬৫ বছরের পুরোনো মাদ্রাসাকে গুঁড়িয়ে দিল যোগীর বুলডোজার

- আপডেট : ২০ জুন ২০২৫, শুক্রবার
- / 3
পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: সুপ্রিম নির্দেশকে উপেক্ষা করেই লাগাতার চলছে যোগীর বুলডোজার। ফের উত্তরপ্রদেশের ফতেপুর বাঙ্গাই গ্রামের ৬৫ বছরের পুরনো ইসলামিয়া আরাবিয়া আনোয়ারুল উলুম মাদ্রাসায় বুলডোজার চালাল যোগী সরকার। কয়েক দশক ধরে চলে আসা ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের শ্রাবস্তী জেলায় দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে সরকারী জমিতে অবৈধ নির্মাণের অভিযোগ তুলে বুলডোজার চালানো হয়েছে। এখনও জারি রয়েছে সেই অভিযান। যোগী প্রশাসনের এই বুলডোজার পদক্ষেপ নিয়ে স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভ ও ভয়ের জন্ম দিয়েছে।
সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) স্থানীয় তহশিলদার যমুনার নির্দেশে গ্রামসভার জমিতে সরকারি অনুমতি ছাড়াই মাদ্রাসাটি নির্মাণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন। কর্মকর্তারা বলেছে, মাদ্রাসা বুলডোজার চালানোর আগে একাধিক নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। যথাযথ জবাব না মেলায় বুলডোজার চালিয়ে তা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তবে স্থানীয় বাসিন্দা ও মুসলিম নেতারা প্রশাসনের এই দাবির বিরোধিতা করে বলছেন, ১৯৬০ সাল থেকে মাদ্রাসাটি এই সম্প্রদায়ের মূল ভিত্তি। এই মাদ্রাসাটি ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে আমাদের সন্তানদের শিক্ষিত করে আসছে এবং আমাদের ধর্মীয় মূল্যবোধ সংরক্ষণ করে আসছে। মাদ্রাসাকে ধ্বংস করা কেবল সম্পত্তির ক্ষতি নয়, বরং আমাদের বিশ্বাস এবং ধর্মীয় পরিচয়ে আঘাত।
প্রসঙ্গত, শুধুমাত্র এ মাসেই জেলার ২০টিরও বেশি মাদ্রাসায় একইভাবে বুলডোজার চালানো হয়েছে। যা মুসলিম সম্প্রদায়কে তাদের ধর্মীয় শিক্ষার ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। শ্রাবস্তীর ২৯৭টি মাদ্রাসার মধ্যে মাত্র ১০৫টি উত্তরপ্রদেশ মাদ্রাসা বোর্ড সরকারিভাবে স্বীকৃত। প্রশাসন বাকিগুলিকে অবৈধ হিসাবে চিহ্নিত করেছে এবং অবৈধভাবে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে। ৬৫ বছরের পুরনো মাদ্রাসা ভাঙার দিনই হরদাত নগর গিরান্ট থানার অন্তর্গত বেগমপুর গ্রামে সরকারি জমিতে নির্মিত আরও দুটি মাদ্রাসা ভেঙে ফেলা হয়। বুলডোজার অভিযানের সাথে প্রচুর পুলিশ বাহিনীর এই অভিযানকে ঘিরে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয়।
স্থানীয় প্রশাসনের আধিকারিকরা তাঁদের কর্মকাণ্ডের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেন, ক্ষ্মসরকারি জমি দখল বরদাস্ত করা হবে না। তা সে যেই জড়িত থাকুক না কেন। অনেকেই বলছে, ভূমি আইন প্রয়োগের নামে মুসলিম ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে ফেলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বুলডোজার অভিযান চালিয়ে মুসলিম সম্প্রদায়কে লক্ষ্যবস্তু বানানো হচ্ছে। প্রতিনিয়ত বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে মসজিদ, মাদ্রাসা, ঈদগাহ এবং কবরস্থানগুলিকে টার্গেট করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রশাসনের একতরফা পদক্ষেপ মুসলমানদের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি করেছে।
শ্রাবস্তীর মৌলানা ইমরান কুরেশি প্রশাসনের সমালোচনা করে বলেছেন, ক্ষ্মসরকারের বুলডোজার নীতি মুসলিম সম্প্রদায়কে অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে প্রভাবিত করছে। এই মাদ্রাসাগুলি শিক্ষা ও শান্তির কেন্দ্র। সেগুলিকে টার্গেট করে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে মুসলিমদের ভয়ের বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের অনেকগুলোই কোনো অভিযোগ ছাড়াই কয়েক দশক ধরে শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে।
এদিকে সমাজকর্মী ফয়জান আহমেদ বলেন, আইনশৃঙ্খলার বিরোধী নই। কিন্তু শুধু মুসলিম প্রতিষ্ঠানগুলোকে কেন টার্গেট করা হচ্ছে? ন্যায়বিচার ও ন্যায়বিচার থাকতে হবে। যেসব মাদ্রাসা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে জনগণের সেবা করে আসছে, সেগুলোকে বিকল্প ছাড়া ভেঙে না দিয়ে তাদের নিয়মিত করার বিষয়টি সরকারের বিবেচনা করা উচিত। রাজনৈতিক চাপে শতাধী প্রাচীন মাদ্রাসাগুলো বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া মুসলিমদের আত্মপরিচয়ের ওপর হামলা।