চোর সন্দেহে যুবককে পিটিয়ে খুন, সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়ল নৃশংসতা, আটক ১

- আপডেট : ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, মঙ্গলবার
- / 102
কুতুব উদ্দিন মোল্লা, ক্যানিং : দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ের তালদিতে মঙ্গলবার ভোরবেলায় ঘটে চাঞ্চল্যকর ঘটনা। চোর সন্দেহে এক যুবককে স্থানীয়রা বেধড়ক মারধর করে খুন করে বলে অভিযোগ উঠেছে। সাতসকালে ঘটে যাওয়া এমন নৃশংস ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে গোটা এলাকায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার ভোরে তালদির একাধিক বাড়ির সামনে ঘোরাঘুরি করছিল বছর আঠাশের এক যুবক। তখনই কয়েকজন তাকে চোর সন্দেহে ধরে ফেলে। এরপর শুরু হয় গণপিটুনি। অভিযোগ, লাঠি,বাঁশ দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়। রক্তাক্ত অবস্থায় ওই যুবক মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
অভিযুক্তরা তার পায়ে দড়ি বেঁধেে টানতে টানতে নিয়ে যায়। ঘটনার খবর পায় ক্যানিং থানার পুলিশ। আক্রান্ত যুবককে উদ্ধার করে। চিকিৎসার জন্য তড়িঘড়ি ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।ঘটনার পরই এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায়। ইতিমধ্যেই পুলিশের হাতে এসেছে নিকটবর্তী একটি দোকান ও বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজ। সেখানে স্পষ্ট দেখা গিয়েছে, কয়েকজন ব্যক্তি মিলে ওই যুবককে বেধড়ক মারধর করছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত যুবকের পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি, সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে অভিযুক্তদের শনাক্ত করা হচ্ছে।ইতিমধ্যে একজনকে আটক করে জিঞ্জাসাবাদ চলছে।এছাড়াও তদন্তকারী পুলিশ অফিসারদের প্রাথমিক অনুমান, যুবক সত্যিই চুরি করতে এসেছিল কিনা, নাকি মিথ্যা সন্দেহে তার প্রাণ কেড়ে নেওয়া হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হবে।
এদিকে, একাংশ স্থানীয় বাসিন্দার দাবি, এলাকায় প্রায়ই চুরির ঘটনা ঘটে। তাই সন্দেহ হওয়ায় এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। তবে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়াকে কোনওভাবেই সমর্থন করছে না পুলিশ ও স্থানীয় একাংশের।
পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “আইন নিজের হাতে তোলা দণ্ডনীয় অপরাধ। আমরা সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করছি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” বর্তমানে গোটা এলাকায় টহলদারি জোরদার করা হয়েছে। ঘটনার জেরে এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ও ক্ষোভ—দু’ধরনেরই প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে জানা গিয়েছে মৃত যুবকের নাম জামির সেখ(২৮)। পেশায় গাড়ি চালক। তার বাড়ি ঘুটিয়ারীশরীফের রবীন্দ্র নগর এলাকায়।
মৃত যুবকের স্ত্রী সাহিন সেখ জানিয়েছেন, ‘আমার স্বামী চোর হতে পারে না। ও গাড়ি চালায়।সোমবার গভীর রাতে একটি ফোন আসে আমার কাছে। বলা হয় থানা থেকে বলছি। পরে দেখলাম থানার নম্বর নয়। মঙ্গলবার সকালে খবর পাই। তবে যে বা যারা এমন মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমার স্বামীকে খুন করেছে তাদের যেন উপযুক্ত শাস্তি হয়। পুলিশকে ঘটনার বিয়ষয় জানিয়ে অভিযোগ করেছি। ’ স্থানীয় সমাজসেবী সাবির সেখ জানিয়েছে, ‘সাত সকালে সন্দেহের বশে যে বর্বরত ও নৃশংস কান্ড ঘটেছে তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। পুলিশ ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করুক।’
অন্যদিকে স্থানীয় বাসিন্দা গোরা ওরফে অরিজিত বিশ্বাস জানিয়েছেন, ‘সাতসকালে নৃশংস ঘটনার কথা জানতে পারি। পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে নিয়ে গিয়েছে। একজন কে আটক করেছে। তবে এমন ঘটনা কোনমতেই কাম্য নয়। আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে যে জঘন্য অপরাধ করেছে অভিযুক্তরা,তাতে করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন।’ ক্যানিং থানার পুলিশ মৃতদেহটি ময়না তদন্তে পাঠিয়ে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।