বিজেপির আসল চেহারা ফুঁটে উঠেছে: তোপ সপার
মুসলিম দোকানদারদের ‘গুলি’ করার হুমকি পদ্ম বিধায়কের

- আপডেট : ১ জুন ২০২৫, রবিবার
- / 65
পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: ক’দিন বাদেই দেশজুড়ে পালিত হবে পবিত্র ঈদ-উল-আজহা। তার আগেই মুসলিমদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে ‘গুলি’ করার হুমকি দিলেন এক বিজেপি নেতা। উত্তরপ্রদেশের লোনির বিজেপি বিধায়ক নন্দ কিশোর গুর্জর পবিত্র ঈদকে সামনে রেখে এলাকার মাংসের দোকানগুলি পরিদর্শন শুরু করেছেন। তাঁর এই পরিদর্শনকে সামনে রেখেই মুসলিমদের কার্যত খুনের হুমকি দিয়েছেন গেরুয়া নেতা। গুর্জরের হুমকি, মুসলিম দোকানদাররা যদি তার পরিদর্শন এড়ানোর চেষ্টা করে তবে তাদের ‘গুলি’ করা হবে।
গেরুয়া নেতার উস্কানিমূলক ও ঘৃণাত্মক বক্তব্যের পর রাজ্যজুড়ে বির্তকের সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। ইতিমধ্যে ঘৃণা ভাষণ দেওয়ার অভিযোগে গুর্জরের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছে সমাজবাদী পার্টি। একইসঙ্গে গেরুয়া নেতার বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে অখিলেশের দল।
ঈদ-উল আজহাকে সামনে রেখে প্রস্তুতি চলছে দেশজুড়ে। অনেকেই কোরবানির পশু কিনতে উত্তরপ্রদেশ জুড়ে পশু হাট গুলিতে ভিড় জমাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে গেরুয়া নেতার হিংসাত্মক বক্তব্য মুসলিমদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। তাদের ভয়, নির্বিঘ্নে ঈদ উৎযাপন করতে পারবে তো তারা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, শুক্রবার কর্মী-সমর্থক ও পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে মাংসের দোকানগুলিতে গিয়েছিলেন গুর্জর। একটি দোকানের বাইরে মুরগির খাঁচা দেখে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে দোকানদারকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এরপরই তিনি হুমকি দেন, “ও পালিয়ে গেলে গুলি করো।” গেরুয়া নেতার এই হিংসাত্মক বক্তব্যের ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক মাধ্যমে। ব্যাপক সমালোচনা ও নিন্দাস ঝড় ওঠে সর্বত্র। রাজ্য-রাজ্যনীতিতেও বির্তকের সৃষ্টি হয়। আয়েশা খান নামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘এ ধরনের হিংসাত্মক বক্তব্য আমাদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করেছে। আমরা আমাদের ঈমানের কারণে টার্গেট হচ্ছি। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ঈদ উদযাপন করতে চাই।”
অভিযোগ, এলাকার মাংসের দোকান পরিদর্শনের সময় রীতিমতো দাদাগিরি করেন পদ্ম বিধায়ক। দোকানদের অকথ্য ভাষায় গালাগালি এবং সরাসরি হুমকি দেন তিনি। এক দোকানদের লাইসেন্স লঙ্ঘনের অভিযোগে তাকে জোর করে টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেন গেরুয়া নেতা। ফারুখনগরের একটি মাংসের দোকানি আব্দুর রহমান বলেন, “আমরা সবসময় আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং সময়মত কর পরিশোধ করি। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসবের আগে অপরাধীর মতো হুমকি দেওয়া ক্ষতিকর ও অন্যায়। এটা শুধু একজন মানুষের কথা নয়; এই রাজ্যে মুসলিমদের সঙ্গে কী আচরণ করা হচ্ছে, তা নিয়েই এই ঘটনা। আমরা ভয়ের মধ্যে রয়েছি।” তার কথায়, খোদ বিধায়কই যদি এভাবে হুমকি দেন, তাহলে তার দলের নেতা-কর্মীরা তো আমাদের ওপর হামলা চালাতে বিন্দুমাত্র ভাববে না।
গুর্জরের হুমকি ও হিংসাত্মক বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে সমাজবাদী পার্টি (এসপি) বলেছে, মুসলিম সম্প্রদায়কে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে হিংসাত্মক বক্তব্য নির্লজ্জতার পরিচয়। দলের মুখপাত্র ভানু ভাস্কর জোশী বলেন, “বিধায়কের এলাকার দোকানে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু দোকানদার পালিয়ে গেলে তাকে গুলি করা উচিত। কোন আইন এই ধরনের কাজ করার অনুমতি দেয়? এটা মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বিজেপির অসহিষ্ণুতার প্রতিফলন।” গুর্জরের বিরুদ্ধে সহিংসতায় উস্কানি এবং শান্তি বজায় রাখতে প্রশাসনের ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করেছেন জোশী। তিনি বলেন, বিধায়কের পরিদর্শনে পুলিশ প্রশাসন ছিল। তাদের উপস্থিতিতে কাউকে ‘গুলি কর’ এধরণের হুমকি কিভাবে দিলেন গুর্জর। এই ঘটনা উত্তরপ্রদেশে বিজেপি এবং ঠুঁটোজগন্নাথ প্রশাসনের আসল চেহারা ফুঁটে উঠেছে। কৃষক আন্দোলনের সময়ও পেশিশক্তি ব্যবহার করে তাদের ওপর দমন নিপীড়ন চালিয়েছিলেন গুর্জর। সেই কথা মনিয়ে করিয়ে সপা নেতা বলেছেন, “কৃষকদের আন্দোলনে এই বিধায়ক পেশিশক্তি ব্যবহার করে তাদের ওপর দমন নিপীড়ন চালিয়েছিলেন। এখন তিনি প্রকাশ্যে মুসলিম দোকানদারদের হুমকি দিচ্ছেন। আমরা মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে অনুরোধ করছি, যিনি প্রায়শই আইনশৃঙ্খলা নিয়ে বড়াই করেন, এই মন্তব্যগুলির নিন্দা করুন এবং কঠোর ব্যবস্থা নিন।”
প্রসঙ্গত, এই ঘটনা নতুন বা প্রথম নয়। বিগত দিন গুলিতে সংখ্যালঘু মুসলিমদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে একাধিক ঘৃণা ও উস্কানিমূলক ভাষণ দেওয়া হয়েছে। যোগী রাজ্যে প্রতিনিয়ত মুসলিমদের টার্গেট করে চলছে হামলা, নির্যাতন ও আক্রমণের ঘটনা। কখনো মুসলিমদের ধর্মীয় স্থান মসজিদ, আবার কখনো ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মাদ্রাসায় বেআইনিভাবে বুলডোজার চালিয়ে তা গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গত দু’দিন আগেই দীর্ঘ ১৫ বছরের একটি মুসলিম কবরস্থান গুড়িয়ে দিয়েছে যোগী পুলিশ। স্বাভাবিক ভাবেই, যোগী রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোন জায়গায় তা স্পষ্ট। রাজনৈতিক বিশ্লেষক রবিশঙ্কর বলেন, ‘নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের এ ধরনের বিদ্বেষমূলক বক্তব্য সামাজিক সম্প্রীতির জন্য হুমকিস্বরূপ এবং আইনের শাসনকে ক্ষুণ্ন করে। দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া এবং ধর্ম নির্বিশেষে সব নাগরিকের সুরক্ষা দেওয়া সরকারের দায়িত্ব।”