২৫ জুন ২০২৫, বুধবার, ১০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

১ লা মহররমে পরিবর্তন হবে কাবার কিসওয়া

চামেলি দাস
  • আপডেট : ২৫ জুন ২০২৫, বুধবার
  • / 17

 

 

মক্কার পবিত্র মসজিদুল হারামে অবস্থিত কাবা শরীফের গায়ে পরানো ‘কিসওয়া’ বা ‘গিলাফ-এ-কাবা’ আগামী ১ লা মহররম ১৪৪৭ হিজরি, অর্থাৎ ২৫ জুন ২০২৫, বুধবার এশার নামাযের পর আনুষ্ঠানিকভাবে পরিবর্তন করা হবে।

এই ঐতিহ্যবাহী ও ধর্মীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি সম্পন্ন করবেন ১৫৯ জন প্রশিক্ষিত টেকনিশিয়ান ও কারিগর। পুরো প্রক্রিয়াটি পরিচালনা করবেন পবিত্র মসজিদ ও নববী বিষয়ক প্রধান, শায়খ আবদুর রহমান আস-সুদাইস।

মক্কায় অবস্থিত কিং আধুল আজিজ ‘কমপ্লেক্স ফর হলি কাবা কিসওয়া’-তে এই গিলাফ প্রস্তুত করেছেন ২০০-র বেশি দক্ষ সউদি কারিগর ও প্রশাসনিক কর্মচারী। পুরো কিসওয়া তৈরি করা হয়েছে ৫৬টি হস্তনির্মিত খণ্ডে। প্রতিটি অংশে সূচিকর্মে সময় লেগেছে গড়ে ৬০ থেকে ১২০ দিন।

এই গিলাফটি ৬৫৮ বর্গমিটার আয়তনের এবং এতে ব্যবহৃত হয়েছে ৬৭০ কেজি কালো রেশম। পুরো গিলাফ সেলাই করা হয়েছে ৪৭টি কাপড়ের খণ্ড দিয়ে। বিশ্বের দীর্ঘতম, ১৬ মিটার দৈর্ঘ্যের সেলাই মেশিনে এই কাজ করা হয়। তবে সূক্ষ্ম নকশা ও কারুকার্যের অনেক কাজ এখনও হাতে করা হয়।

কাপড়ের পাঁচটি আলাদা অংশ একত্রে সেলাই করে তামার রিং দিয়ে গোড়ায় স্থির করা হয়। এতে আল্লাহর গুণবাচক নাম ও পবিত্র কুরআনের আয়াত লিখতে ব্যবহার করা হয়েছে ২১ ক্যারেট মানের ১২০ কেজি সোনা ও ১০০ কেজি রুপো।

পুরো গিলাফ প্রস্তুত করতে সময় লাগে ছয় থেকে আট মাস। সব মিলিয়ে এর ওজন প্রায় ৮৫০ কেজি। ব্যয় হয় প্রায় ২৫ মিলিয়ন সউদি রিয়াল বা সাড়ে ৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ কারণেই এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল কাপড় হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

ইসলামি ঐতিহ্য অনুযায়ী, কাবার গায়ে প্রতিবছর নতুন কিসওয়া পরানো হয়, যা পবিত্রতা ও মর্যাদার প্রতীক। আগে এই পরিবর্তন হত যিলহজ্জ মাসের ৯ বা ১০ তারিখে, হজের সময়। তবে ২০২২ সাল থেকে এই অনুষ্ঠানটি মহররমের প্রথম দিনে সরিয়ে আনা হয়।

পুরানো কিসওয়া সরানোর পর সেটি কেটে ছোট ছোট খণ্ডে ভাগ করা হয়। এগুলো উপহার হিসেবে পাঠানো হয় বিদেশি মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধান, বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ও ইসলামি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে। পূর্বে এই পুরানো কিসওয়া কেবল ‘হাশেমি পরিবার’ বা কিসওয়া ধারকদের মধ্যেই বিতরণ করা হত । পরে সউদি সরকার সিদ্ধান্ত নেয় এটি আন্তর্জাতিক মুসলিম প্রতিনিধিদেরও উপহার দেওয়া হবে।

গিলাফে লেখা থাকে আল্লাহর গুণবাচক নাম ও জিকিরের বাক্য, যেমন:‘ইয়া আল্লাহ’, ‘ইয়া মান্নান’, ‘ইয়া দাইয়ান’, ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আজিম’।

কাবার দরজার ওপর থাকে বিশেষভাবে অলংকৃত পাঁচটি পর্দা। এসব পর্দায় লেখা থাকে তিনটি পূর্ণ সূরা;সূরা আল-ফাতিহা, সূরা আল-ফালাক, সূরা আন-নাস;এ ছাড়া থাকে সূরা কুরাইশ এবং অন্যান্য আয়াত।

Tag :

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

১ লা মহররমে পরিবর্তন হবে কাবার কিসওয়া

আপডেট : ২৫ জুন ২০২৫, বুধবার

 

 

মক্কার পবিত্র মসজিদুল হারামে অবস্থিত কাবা শরীফের গায়ে পরানো ‘কিসওয়া’ বা ‘গিলাফ-এ-কাবা’ আগামী ১ লা মহররম ১৪৪৭ হিজরি, অর্থাৎ ২৫ জুন ২০২৫, বুধবার এশার নামাযের পর আনুষ্ঠানিকভাবে পরিবর্তন করা হবে।

এই ঐতিহ্যবাহী ও ধর্মীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি সম্পন্ন করবেন ১৫৯ জন প্রশিক্ষিত টেকনিশিয়ান ও কারিগর। পুরো প্রক্রিয়াটি পরিচালনা করবেন পবিত্র মসজিদ ও নববী বিষয়ক প্রধান, শায়খ আবদুর রহমান আস-সুদাইস।

মক্কায় অবস্থিত কিং আধুল আজিজ ‘কমপ্লেক্স ফর হলি কাবা কিসওয়া’-তে এই গিলাফ প্রস্তুত করেছেন ২০০-র বেশি দক্ষ সউদি কারিগর ও প্রশাসনিক কর্মচারী। পুরো কিসওয়া তৈরি করা হয়েছে ৫৬টি হস্তনির্মিত খণ্ডে। প্রতিটি অংশে সূচিকর্মে সময় লেগেছে গড়ে ৬০ থেকে ১২০ দিন।

এই গিলাফটি ৬৫৮ বর্গমিটার আয়তনের এবং এতে ব্যবহৃত হয়েছে ৬৭০ কেজি কালো রেশম। পুরো গিলাফ সেলাই করা হয়েছে ৪৭টি কাপড়ের খণ্ড দিয়ে। বিশ্বের দীর্ঘতম, ১৬ মিটার দৈর্ঘ্যের সেলাই মেশিনে এই কাজ করা হয়। তবে সূক্ষ্ম নকশা ও কারুকার্যের অনেক কাজ এখনও হাতে করা হয়।

কাপড়ের পাঁচটি আলাদা অংশ একত্রে সেলাই করে তামার রিং দিয়ে গোড়ায় স্থির করা হয়। এতে আল্লাহর গুণবাচক নাম ও পবিত্র কুরআনের আয়াত লিখতে ব্যবহার করা হয়েছে ২১ ক্যারেট মানের ১২০ কেজি সোনা ও ১০০ কেজি রুপো।

পুরো গিলাফ প্রস্তুত করতে সময় লাগে ছয় থেকে আট মাস। সব মিলিয়ে এর ওজন প্রায় ৮৫০ কেজি। ব্যয় হয় প্রায় ২৫ মিলিয়ন সউদি রিয়াল বা সাড়ে ৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ কারণেই এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল কাপড় হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

ইসলামি ঐতিহ্য অনুযায়ী, কাবার গায়ে প্রতিবছর নতুন কিসওয়া পরানো হয়, যা পবিত্রতা ও মর্যাদার প্রতীক। আগে এই পরিবর্তন হত যিলহজ্জ মাসের ৯ বা ১০ তারিখে, হজের সময়। তবে ২০২২ সাল থেকে এই অনুষ্ঠানটি মহররমের প্রথম দিনে সরিয়ে আনা হয়।

পুরানো কিসওয়া সরানোর পর সেটি কেটে ছোট ছোট খণ্ডে ভাগ করা হয়। এগুলো উপহার হিসেবে পাঠানো হয় বিদেশি মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধান, বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ও ইসলামি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে। পূর্বে এই পুরানো কিসওয়া কেবল ‘হাশেমি পরিবার’ বা কিসওয়া ধারকদের মধ্যেই বিতরণ করা হত । পরে সউদি সরকার সিদ্ধান্ত নেয় এটি আন্তর্জাতিক মুসলিম প্রতিনিধিদেরও উপহার দেওয়া হবে।

গিলাফে লেখা থাকে আল্লাহর গুণবাচক নাম ও জিকিরের বাক্য, যেমন:‘ইয়া আল্লাহ’, ‘ইয়া মান্নান’, ‘ইয়া দাইয়ান’, ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আজিম’।

কাবার দরজার ওপর থাকে বিশেষভাবে অলংকৃত পাঁচটি পর্দা। এসব পর্দায় লেখা থাকে তিনটি পূর্ণ সূরা;সূরা আল-ফাতিহা, সূরা আল-ফালাক, সূরা আন-নাস;এ ছাড়া থাকে সূরা কুরাইশ এবং অন্যান্য আয়াত।