আদানিদের বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লার জন্য ছত্তিশগড়ে ৫০০০ গাছ কেটে জঙ্গল সাফ

- আপডেট : ২৯ জুন ২০২৫, রবিবার
- / 35
পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: কয়লা উত্তোলনের জন্য ছত্তিশগড়ে রায়গড় জেলার ২৫৮৪ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এই জমির মধ্যে রয়েছে ২১৫ হেক্টর বনভূমি। আনুমানিক ৬৫৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন কয়লা পাওয়া যাবে এখানে। আর এই কয়লা ব্যবহার হবে মহারাষ্ট্রের বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি আদানিদের অধীন। মহাজেন কো-নামের এই কোম্পানির জন্য ছত্তিশগড়ে বনভূমি সাফ করার কাজ চলছে।
স্থানীয়দের তীব্র আপত্তি সত্ত্বেও বিশাল পুলিশ বাহিনী দিয়ে এলাকা ঘিরে ফেলে ২৬ জুন থেকে গাছ কাটা শুরু হয়েছে। ১৪টি গ্রাম প্রভাবিত হয়েছে এই কয়লা প্রকল্পের জন্য। মানবাধিকার সংগঠন ছত্তিশগড় অ্যাসোসিয়েশন ফর জাস্টিস অ্যান্ড ইকুয়ালিটি এক প্রেস বার্তায় জানায় ২৬ জুন প্রায় দু’হাজার পুলিশ এবং মহাজেনকোর-কর্মীরা গ্রাম ঘিরে ফেলে। যেসব পরিবেশবিদ প্রতিবাদ করছিলেন তাদের গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়।
বিবৃতি অনুসারে গ্রেফতার হওয়াদের মধ্যে রয়েছেন স্থানীয় কংগ্রেস বিধায়ক বিদ্যাবতী সিদার। প্রখ্যাত লেখিকা ও পরিবেশকর্মী রিনচিন। প্রতিবাদকারীরা জানিয়েছেন, জাতীয় গ্রিন ট্রাইব্যুনালে মামলা ঝুলে রয়েছে তা সত্ত্বেও গায়ের জোরে জঙ্গল সাফ করা হচ্ছে। স্থানীয় মানুষ বনবাসী আদিবাসী ও গ্রামীণদের কথা একটুও ভাবা হল না। ইলেকট্রিক করাত নিয়ে এসে বড় বড় গাছ কেটে সঙ্গে সঙ্গে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে।
এখানে গারে প্লাজা সেক্টর-২’এ কয়লা খাদানের জন্য বণ্টন করা হয়েছে জমি। বিভিন্ন থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্টের জন্য এখান থেকে কয়লা সরবরাহ করা হবে। ৭,৬০০ কোটি টাকার এই প্রজেক্টে ১৭০০ পরিবার গৃহহারা হয়ে পড়বে। আর সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হবে আদিবাসীদের জীবনপ্রবাহ। বনজঙ্গল ঘিরে যাদের জীবিকা ও জীবন তারা কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন। আদিবাসী এলাকায় জমি অধিগ্রহণ করা যাবে না, আদিবাসীদের জীবন শৈলীতে বাধা দেওয়া যাবে না, বনবাসীদের জঙ্গলের অধিকার কায়েম রাখতে হবে, এই নিয়ে দেশে বহু আইন রয়েছে।
বহু মামলাও হয়েছে, কিন্তু ছত্তিশগড়ে আদানিদের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য বিশাল বনভূমির উপর আঘাত দেওয়া হল বিজেপি আমলে। এই সব এলাকায় এক সময় মাওবাদীরা সশস্ত্র আন্দোলন করত বনভূমি রক্ষায়। কিন্তুকয়েক বছর ধরে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে ভয়ংকর অভিযান চালিয়ে তাদের নিকেশ করে দেওয়া হয়েছে। তাই স্থানীয় বনবাসী মানুষরা প্রতিবাদ করলেও পুলিশ তাদের ঘিরে রেখেছে।
২০১৭ সাল থেকে এই বনভূমি রক্ষার জন্য আন্দোলন করে চলেছেন বনবাসী ও আদিবাসীরা। কিন্তু কেন্দ্র ও দু’টি রাজ্য সরকার আদানিদের বিদ্যুৎ কেন্দ্রের শ্রীবৃদ্ধির দিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ায় তাদের জল, জমি, জঙ্গলের দাবি গুরুত্ব পাচ্ছে না। বনবাসীদের জীবন জীবিকা রক্ষা কিংবা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা নিয়ে চিন্তিত নয় বিজেপি সরকার। সমাজকর্মী ও লেখিকা রিনচিন বলেন, বৃক্ষচ্ছেদন নিয়ে আন্দোলন চলছে। ১৪টি গ্রামের গ্রাম-পঞ্চায়েতের কেউই এনওসি দেয়নি জঙ্গল সাফ করার জন্য, তবুও জোর করে গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। ফরেস্ট রাইট অ্যাক্ট ২০০৬-কে সম্পূর্ণ অবজ্ঞা করা হল।