৩১ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানি হ্রাস, পেট্রাপোলে কাজ হারাচ্ছে শ্রমিকরা

আফিয়া‌‌ নৌশিন
  • আপডেট : ৫ জুলাই ২০২৫, শনিবার
  • / 115

এম এ হাকিম, বনগাঁ: বাংলাদেশ থেকে ক্রমশ কমে আসছে আমদানিকৃত পণ্যবাহী ট্রাকের সংখ্যা। এর ফলে গভীর সংকটে পড়েছেন উত্তর ২৪ পরগনার পেট্রাপোল স্থলবন্দরে কর্মরত ১ হাজারের বেশি শ্রমিক। ভারত-বাংলাদেশ রাজনৈতিক টানাপড়েন, একাধিক নিষেধাজ্ঞা এবং কেন্দ্রীয় নীতিগত সিদ্ধান্তের কারণে শ্রমিকদের কাজ হারানোর আশঙ্কা ক্রমেই প্রবল হয়ে উঠছে। ইতিমধ্যে অনেক শ্রমিক বাধ্য হয়ে অন্য পেশায় চলে যেতে শুরু করেছে।

সাধারণ পরিস্থিতিতে প্রতিদিন পেট্রাপোলে বাংলাদেশ থেকে ১৫০-২০০টি ট্রাক ঢুকত। কোনও দিন সেই সংখ্যা আরও বেড়ে যেত ২৫০-র কাছাকাছি, অথচ এখন তা নেমে এসেছে মাত্র ৫০-৫৫টিতে। গত শনিবার বাংলাদেশ বেনাপোল বন্দর থেকে মাত্র ৫৫টি ট্রাক এসেছে, যা শ্রমিকদের রোজগারে বড়সড় প্রভাব ফেলছে। বর্তমানে কেউ কেউ দৈনিক ১০০ টাকাও উপার্জন করতে পারছেন না।

পেট্রাপোল স্থলবন্দরের শ্রমিক সুজয় সরকার জানান, ‘যে হারে আমদানি কমছে, তাতে আমাদের লোড-আনলোডের কাজও বন্ধ হতে বসেছে। অনেকেই রাজমিস্ত্রির জোগালি কিংবা মাঠের কাজ করছেন। তবে বর্ষার কারণে তাও জোটে না। পরিবারের মুখে দু’বেলা খাবার তুলে দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।’
বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে সুপারি, পাবদা মাছ, জুতো, ট্রাভেল ব্যাগ ইত্যাদি কিছু পণ্য এলেও বহু গুরুত্বপূর্ণ আইটেম নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়ায় ট্রাক আসা কার্যত অর্ধেকে নেমে এসেছে। গত ৯ এপ্রিল বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা প্রত্যাহার করে কেন্দ্রীয় সরকার।

আরও পড়ুন: নির্বাচন ভণ্ডুলের চেষ্টা করছে পতিত শক্তি, অভিযোগ মুহাম্মদ ইউনুসের

এরপর ১৭ মে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক, ফলের পানীয়-সহ বেশ কয়েকটি পণ্যে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। প্রসঙ্গত, গত এপ্রিল, মে এবং জুন মাসে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন বিধিনিষেধের জেরে বাংলাদেশ থেকে ভারতের পেট্রাপোল স্থলবন্দরে আসা পণ্যবাহী আমদানির ট্রাকের সংখ্যা তলানিতে চলে এসেছে। সর্বশেষ নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে গত ২৭ জুন। এর ফলে বাংলাদেশের কোনও পাট বা পাটজাত পণ্য স্থলপথে ভারতে ঢুকতে পারবে না। পাটজাত ৯ ধরণের পণ্যের উপরে এই বিধিনিষেধ কার্যকর হয়েছে। তবে কেবলমাত্র মহারাষ্ট্রের নভোসেবা সমুদ্রবন্দর দিয়ে এ ধরণের পণ্য প্রবেশের অনুমতি রয়েছে।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে আটক করল ঢাকা পুলিশ

এই পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের জীবন, ভবিষ্যৎ ও উপার্জন ঘিরে ঘনাচ্ছে অনিশ্চয়তার মেঘ। অনেকে আশাবাদী, বাংলাদেশের একটি স্থায়ী সরকার ক্ষমতায় এলে হয়তো আবার আগের মতো দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে এবং আমদানি পুনরায় শুরু হবে, কিন্তু আপাতত পেট্রাপোলের শ্রমজীবীদের চোখে শুধুই আতঙ্ক, অনিশ্চয়তা আর অপেক্ষা।

আরও পড়ুন: এবার বাংলাদেশের পাশে ভারত, চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে পূর্ণ সহায়তা

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানি হ্রাস, পেট্রাপোলে কাজ হারাচ্ছে শ্রমিকরা

আপডেট : ৫ জুলাই ২০২৫, শনিবার

এম এ হাকিম, বনগাঁ: বাংলাদেশ থেকে ক্রমশ কমে আসছে আমদানিকৃত পণ্যবাহী ট্রাকের সংখ্যা। এর ফলে গভীর সংকটে পড়েছেন উত্তর ২৪ পরগনার পেট্রাপোল স্থলবন্দরে কর্মরত ১ হাজারের বেশি শ্রমিক। ভারত-বাংলাদেশ রাজনৈতিক টানাপড়েন, একাধিক নিষেধাজ্ঞা এবং কেন্দ্রীয় নীতিগত সিদ্ধান্তের কারণে শ্রমিকদের কাজ হারানোর আশঙ্কা ক্রমেই প্রবল হয়ে উঠছে। ইতিমধ্যে অনেক শ্রমিক বাধ্য হয়ে অন্য পেশায় চলে যেতে শুরু করেছে।

সাধারণ পরিস্থিতিতে প্রতিদিন পেট্রাপোলে বাংলাদেশ থেকে ১৫০-২০০টি ট্রাক ঢুকত। কোনও দিন সেই সংখ্যা আরও বেড়ে যেত ২৫০-র কাছাকাছি, অথচ এখন তা নেমে এসেছে মাত্র ৫০-৫৫টিতে। গত শনিবার বাংলাদেশ বেনাপোল বন্দর থেকে মাত্র ৫৫টি ট্রাক এসেছে, যা শ্রমিকদের রোজগারে বড়সড় প্রভাব ফেলছে। বর্তমানে কেউ কেউ দৈনিক ১০০ টাকাও উপার্জন করতে পারছেন না।

পেট্রাপোল স্থলবন্দরের শ্রমিক সুজয় সরকার জানান, ‘যে হারে আমদানি কমছে, তাতে আমাদের লোড-আনলোডের কাজও বন্ধ হতে বসেছে। অনেকেই রাজমিস্ত্রির জোগালি কিংবা মাঠের কাজ করছেন। তবে বর্ষার কারণে তাও জোটে না। পরিবারের মুখে দু’বেলা খাবার তুলে দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।’
বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে সুপারি, পাবদা মাছ, জুতো, ট্রাভেল ব্যাগ ইত্যাদি কিছু পণ্য এলেও বহু গুরুত্বপূর্ণ আইটেম নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়ায় ট্রাক আসা কার্যত অর্ধেকে নেমে এসেছে। গত ৯ এপ্রিল বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা প্রত্যাহার করে কেন্দ্রীয় সরকার।

আরও পড়ুন: নির্বাচন ভণ্ডুলের চেষ্টা করছে পতিত শক্তি, অভিযোগ মুহাম্মদ ইউনুসের

এরপর ১৭ মে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক, ফলের পানীয়-সহ বেশ কয়েকটি পণ্যে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। প্রসঙ্গত, গত এপ্রিল, মে এবং জুন মাসে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন বিধিনিষেধের জেরে বাংলাদেশ থেকে ভারতের পেট্রাপোল স্থলবন্দরে আসা পণ্যবাহী আমদানির ট্রাকের সংখ্যা তলানিতে চলে এসেছে। সর্বশেষ নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে গত ২৭ জুন। এর ফলে বাংলাদেশের কোনও পাট বা পাটজাত পণ্য স্থলপথে ভারতে ঢুকতে পারবে না। পাটজাত ৯ ধরণের পণ্যের উপরে এই বিধিনিষেধ কার্যকর হয়েছে। তবে কেবলমাত্র মহারাষ্ট্রের নভোসেবা সমুদ্রবন্দর দিয়ে এ ধরণের পণ্য প্রবেশের অনুমতি রয়েছে।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে আটক করল ঢাকা পুলিশ

এই পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের জীবন, ভবিষ্যৎ ও উপার্জন ঘিরে ঘনাচ্ছে অনিশ্চয়তার মেঘ। অনেকে আশাবাদী, বাংলাদেশের একটি স্থায়ী সরকার ক্ষমতায় এলে হয়তো আবার আগের মতো দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে এবং আমদানি পুনরায় শুরু হবে, কিন্তু আপাতত পেট্রাপোলের শ্রমজীবীদের চোখে শুধুই আতঙ্ক, অনিশ্চয়তা আর অপেক্ষা।

আরও পড়ুন: এবার বাংলাদেশের পাশে ভারত, চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে পূর্ণ সহায়তা