২৭ জুলাই ২০২৫, রবিবার, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

৩০ বছর পর আদালতের মুক্তি: স্ত্রীর আত্মহত্যায় অভিযুক্ত স্বামীকে অব্যাহতি বম্বে হাই কোর্টের

আফিয়া‌‌ নৌশিন
  • আপডেট : ২৬ জুলাই ২০২৫, শনিবার
  • / 37

 পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: স্ত্রী আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় ৩০ বছর পর স্বামীকে মুক্তি দিল বম্বে হাই কোর্ট। আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, ‘‘স্ত্রীকে গায়ের রং নিয়ে কটাক্ষ ও দ্বিতীয় বিয়ের হুমকি ঘরোয়া কলহের মধ্যেই পড়ে, ফৌজদারি অপরাধের আওতায় নয়।’’ তাই এই ঘটনাকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা হিসেবে গণ্য করা যাবে না।

 

ঘটনাটি ঘটে ১৯৯৫ সালের জানুয়ারি মাসে, মহারাষ্ট্রের সাতারা জেলায়। অভিযোগ, শ্বশুরবাড়ির অব্যাহত হেনস্থা ও অত্যাচারে এক তরুণী আত্মহত্যা করেন। কুয়োয় ঝাঁপ দিয়ে তিনি প্রাণ দেন। মৃত্যুর আগে বাবা-মাকে স্পষ্ট জানান, স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁর উপর নিয়মিত মানসিক নির্যাতন চালাতেন।

আরও পড়ুন: সেন্ট্রাল মেট্রো স্টেশনে আত্মহত্যার চেষ্টা

 

আরও পড়ুন: নাসির-জুনেইদ খুনের অন্যতম ঘাতকের আত্মহত্যা রাজস্থানে

তদন্তে উঠে আসে, স্বামী বারবার স্ত্রীর গায়ের রং নিয়ে খোঁটা দিতেন। বলতেন, তিনি স্ত্রীকে পছন্দ করেন না এবং অন্যত্র বিয়ে করবেন। রান্না নিয়ে পুত্রবধূকে অপমান করতেন শ্বশুরও। এই সবের জেরে বধূ মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন।

আরও পড়ুন: নিজের রাইফেলের গুলিতে মৃত জওয়ান, আত্মহত্যা নাকি অন্যকিছু…

 

ঘটনার তিন বছর পর, ১৯৯৮ সালে ওই যুবকের বিরুদ্ধে মামলা হয়। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ২৩। সাতারার একটি আদালত তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়। অভিযোগ ছিল, স্ত্রীর উপর মানসিক নির্যাতন করে তাঁকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করেছেন তিনি।

 

তবে এই রায়ের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আবেদন করেন অভিযুক্ত। বম্বে হাই কোর্টের বিচারপতি এসএম মোদক সম্প্রতি সেই মামলার শুনানিতে বলেন, ‘‘বৈবাহিক জীবনে বহু সময়েই বিরোধ দেখা দেয়। কিন্তু প্রত্যেকটি ঘটনা ফৌজদারি অপরাধ নয়। যতক্ষণ না তা এতটাই চরম হয় যে, মৃত্যু ছাড়া স্ত্রীর সামনে আর কোনও পথ থাকে না, ততক্ষণ আইনের দৃষ্টিতে তা অপরাধ বলে বিবেচিত হবে না।’’

 

বিচারপতির বক্তব্য, এই মামলায় নির্যাতনের অভিযোগ থাকলেও তা এমন স্তরে পৌঁছায়নি, যা আত্মহত্যায় প্ররোচনা হিসেবে ধরা যায়। অভিযোগগুলির সঙ্গে আত্মহত্যার সরাসরি যোগও প্রমাণ হয়নি। তাই হাই কোর্টের সিদ্ধান্ত— অভিযুক্তকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হোক।

 

আদালতের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, সাতারার নিম্ন আদালত ফৌজদারি আইনের মৌলিক দিকগুলি সঠিক ভাবে প্রয়োগ করেনি। এর ফলে দীর্ঘদিন ধরে এক ব্যক্তি অপরাধী হিসেবে কারাবাস করেছেন। শেষমেশ ন্যায়ের স্বীকৃতি মিলল উচ্চ আদালতে।

 

এই রায় ঘিরে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে— মানসিক নির্যাতনের পরিধি ঠিক কতটা হলে তা ফৌজদারি আইনের আওতায় আসবে? পাশাপাশি, সমাজে বধূ নির্যাতন সংক্রান্ত মামলাগুলির বিচার ও ব্যাখ্যা নিয়েও তৈরি হচ্ছে বিতর্ক।

 

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

৩০ বছর পর আদালতের মুক্তি: স্ত্রীর আত্মহত্যায় অভিযুক্ত স্বামীকে অব্যাহতি বম্বে হাই কোর্টের

আপডেট : ২৬ জুলাই ২০২৫, শনিবার

 পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: স্ত্রী আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় ৩০ বছর পর স্বামীকে মুক্তি দিল বম্বে হাই কোর্ট। আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, ‘‘স্ত্রীকে গায়ের রং নিয়ে কটাক্ষ ও দ্বিতীয় বিয়ের হুমকি ঘরোয়া কলহের মধ্যেই পড়ে, ফৌজদারি অপরাধের আওতায় নয়।’’ তাই এই ঘটনাকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা হিসেবে গণ্য করা যাবে না।

 

ঘটনাটি ঘটে ১৯৯৫ সালের জানুয়ারি মাসে, মহারাষ্ট্রের সাতারা জেলায়। অভিযোগ, শ্বশুরবাড়ির অব্যাহত হেনস্থা ও অত্যাচারে এক তরুণী আত্মহত্যা করেন। কুয়োয় ঝাঁপ দিয়ে তিনি প্রাণ দেন। মৃত্যুর আগে বাবা-মাকে স্পষ্ট জানান, স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁর উপর নিয়মিত মানসিক নির্যাতন চালাতেন।

আরও পড়ুন: সেন্ট্রাল মেট্রো স্টেশনে আত্মহত্যার চেষ্টা

 

আরও পড়ুন: নাসির-জুনেইদ খুনের অন্যতম ঘাতকের আত্মহত্যা রাজস্থানে

তদন্তে উঠে আসে, স্বামী বারবার স্ত্রীর গায়ের রং নিয়ে খোঁটা দিতেন। বলতেন, তিনি স্ত্রীকে পছন্দ করেন না এবং অন্যত্র বিয়ে করবেন। রান্না নিয়ে পুত্রবধূকে অপমান করতেন শ্বশুরও। এই সবের জেরে বধূ মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন।

আরও পড়ুন: নিজের রাইফেলের গুলিতে মৃত জওয়ান, আত্মহত্যা নাকি অন্যকিছু…

 

ঘটনার তিন বছর পর, ১৯৯৮ সালে ওই যুবকের বিরুদ্ধে মামলা হয়। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ২৩। সাতারার একটি আদালত তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়। অভিযোগ ছিল, স্ত্রীর উপর মানসিক নির্যাতন করে তাঁকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করেছেন তিনি।

 

তবে এই রায়ের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আবেদন করেন অভিযুক্ত। বম্বে হাই কোর্টের বিচারপতি এসএম মোদক সম্প্রতি সেই মামলার শুনানিতে বলেন, ‘‘বৈবাহিক জীবনে বহু সময়েই বিরোধ দেখা দেয়। কিন্তু প্রত্যেকটি ঘটনা ফৌজদারি অপরাধ নয়। যতক্ষণ না তা এতটাই চরম হয় যে, মৃত্যু ছাড়া স্ত্রীর সামনে আর কোনও পথ থাকে না, ততক্ষণ আইনের দৃষ্টিতে তা অপরাধ বলে বিবেচিত হবে না।’’

 

বিচারপতির বক্তব্য, এই মামলায় নির্যাতনের অভিযোগ থাকলেও তা এমন স্তরে পৌঁছায়নি, যা আত্মহত্যায় প্ররোচনা হিসেবে ধরা যায়। অভিযোগগুলির সঙ্গে আত্মহত্যার সরাসরি যোগও প্রমাণ হয়নি। তাই হাই কোর্টের সিদ্ধান্ত— অভিযুক্তকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হোক।

 

আদালতের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, সাতারার নিম্ন আদালত ফৌজদারি আইনের মৌলিক দিকগুলি সঠিক ভাবে প্রয়োগ করেনি। এর ফলে দীর্ঘদিন ধরে এক ব্যক্তি অপরাধী হিসেবে কারাবাস করেছেন। শেষমেশ ন্যায়ের স্বীকৃতি মিলল উচ্চ আদালতে।

 

এই রায় ঘিরে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে— মানসিক নির্যাতনের পরিধি ঠিক কতটা হলে তা ফৌজদারি আইনের আওতায় আসবে? পাশাপাশি, সমাজে বধূ নির্যাতন সংক্রান্ত মামলাগুলির বিচার ও ব্যাখ্যা নিয়েও তৈরি হচ্ছে বিতর্ক।