‘সংবিধানকে যেকোনও মূল্যে রক্ষা করতে হবে’, সংখ্যালঘু দিবসের অনুষ্ঠানে বললেন ইমরান ও ওয়ায়েজুল

- আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২২, সোমবার
- / 46

মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে সংখ্যালঘু অধিকার দিবসের অনুষ্ঠানে আহমদ হাসান ইমরান ও ওয়ায়েজুল হককে স্বাগত জানানো হচ্ছে। রয়েছেন 'মঞ্চ'-এর মুর্শিদাবাদ সভাপতি মুফতি নাজমুল হক। (ছবি-মিজানুর হক)
মুহাম্মদ মুস্তাক আলি/জিসান আলি, বহরমপুর: দেশের সংবিধান প্রদত্ত আইনি অধিকারগুলি সকল নাগরিকের জন্য সুনিশ্চিত করা রাষ্ট্র এবং বিচার ব্যবস্থার জন্য জরুরি কর্তব্য বলে মনে করি। অন্তত এমনটাই বলতে শোনা গেল রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ আহমদ হাসান ইমরানকে।
রবিবার তিনি আন্তর্জাতিক সংখ্যালঘু দিবস উপলক্ষ্যে বহরমপুরে জেলা পরিষদ হলে বঙ্গীয় সংখ্যালঘু বুদ্ধিজীবী মঞ্চের উদ্যোগে আয়োজিত একটি কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখছিলেন। বহরমপুরে অবস্থিত মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব আহমদ হাসান ইমরান এবং সংগঠনের রাজ্য সভাপতি জনাব ওয়ায়েজুল হক ছিলেন প্রধান বক্তা। বিশিষ্টদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ রাজীব হোসেন, প্রাক্তন বিধায়ক চাঁদ মুহাম্মদ, মঞ্চের কর্মকর্তা এহতেসামুল হক, দীপঙ্কর দত্ত, আলমগীর মোল্লা, সেলিম শাহী, নাজমুল হক, আবু সুফিয়ান প্রমুখ।
২০০২ সালে গুজরাত মুসলিম বিরোধী দাঙ্গার বিষয়টি তুলে ধরে বিলকিস বানুর ধর্ষকদের মুক্তির সমালোচনা করেন প্রাক্তন সাংসদ আহমদ হাসান। তিনি ঘটনা তুলে ধরে বলেন, ধর্ষকদের মুক্তির বিষয়টি বিবেচনার জন্য বিলকিস যখন আবারও সুপ্রিম কোর্টে কড়া নাড়ছে, ঠিক তখনও নির্যাতিতা মহিলাকে ইনসাফ না দিয়ে তাঁর রিভিউ পিটিশন বা পুনর্বিচারের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টে একটি বেঞ্চ।
ইমরান দিল্লি মহিলা কমিশন চেয়ারম্যানের বক্তব্য উদ্ধৃত করে প্রশ্ন রাখেন, দেশের সুপ্রিম কোর্টে ইনসাফ না মিললে নির্যাতিত মানুষরা ইনসাফ পাবে কোথা থেকে? আন্তর্জাতিক সংখ্যালঘু দিবসের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইমরান বলেন, ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলা হয়। আর ওই বছরই ১৮ ডিসেম্বরকে রাষ্ট্রসংঘ আন্তর্জাতিক সংখ্যালঘু দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রসংঘের সনদে স্বাক্ষর করা দেশ আমাদের ভারতের বর্তমান শাসক প্রতিনিয়ত নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকারকে পদদলিত করছে। দেশে এই সরকারের আমলে মুসলিম, শিখ, দলিত, আদিবাসী, তপশিলি সম্প্রদায়ের মানুষরা অত্যাচারিত হচ্ছে, তাদের অধিকার হরণ করা হচ্ছে। সিএএ ও এনআরসি-র নামে নাগরিকত্ব হরণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
আহমদ হাসান ইমরান অত্যন্ত আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, বিলকিস বানুর ধর্ষকদের সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে ফুলের মালা পরিয়ে। এই প্রবণতা অত্যন্ত লজ্জাজনক বলে তিনি অভিমত প্রকাশ করেন। ইমরান বলেন, সংখ্যালঘু ও দুর্বল শ্রেণিকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। হিন্দু ভাইদের সঙ্গে তাদের প্রীতি ও আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সব সম্প্রদায়ের উন্নতির জন্য যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন ইমরান তার প্রশংসা করেন।
ইমরান আরও বলেন, আমরা সব ধর্ম বর্ণের মজলুম মানুষের পাশে আছি। দেশের নাগরিকদের ইনসাফের সুনিশ্চিত ব্যবস্থার জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াইয়ের আহ্বান জানান তিনি। আপ পার্টির কেজরিওয়ালের মতো নেতারা আজ মুসলিমদের অস্পৃশ্য করার চেষ্টা করছে। তাদের বিভিন্ন কমিটিতে তো নই, এমনকি মুসলিম নেতাদের আজ মঞ্চেও ডাকা হয় না। সংখ্যলঘু প্রতিনিধিত্ব নগণ্য করে দেওয়া হচ্ছে।
বুদ্ধিজীবী মঞ্চের সভাপতি ও তৃণমূল কোর কমিটির সদস্য ওয়ায়েজুল হক বলেন, ভারতের সংবিধান প্রত্যেক নাগরিকের ভাষা, বাসস্থান, শিক্ষা, কর্মের অধিকার, নির্যাতিতা না হওয়ার অধিকার, স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের অধিকারের মতো একাধিক মৌলিক অধিকারকে সুনিশ্চিত করেছে। কিন্তু আজ সংবিধানের উপর হামলা হচ্ছে। সংবিধানের চেতনা ও প্রদত্ত অধিকারকে বিনষ্ট করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, সংবিধান প্রদত্ত অধিকার রক্ষায় বঙ্গীয় সংখ্যালঘু বুদ্ধিজীবী মঞ্চ আপোষহীনভাবে লড়াই অব্যাহত রাখবে। ওয়ায়েজুল হকের বলেন, আমরা পশ্চিমবঙ্গে সিএএ ও এনআরসি করতে দেব না। আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঘোষণা দিয়েছেন, আর আমিও বলছি বাংলায় এগুলি হবে না। প্রয়োজনে জান দিয়ে আমরা এই ঘৃণ্য প্রচেষ্টাকে রুখব। ওয়ায়েজুল হক বলেন, বঙ্গীয় সংখ্যালঘু বুদ্ধিজীবী মঞ্চের মতো সংগঠনের উপরে রয়েছে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশীর্বাদ।
তিনি অভিযোগ করেন,তাঁর সংগঠনের বিরুদ্ধে কেউ কেউ অপপ্রচারের চেষ্টা করছে। অপপ্রচারকারীদের লক্ষ্য করে তিনি বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আশীর্বাদ এবং সুব্রত বক্সির প্রেরণা নিয়ে বঙ্গীয় সংখ্যালঘু বুদ্ধিজীবী মঞ্চ গড়ে উঠেছে।
তিনি সেখানে উপস্থিত মহিলাদের প্রতিও আহ্বান জানান যে, তাদেরকেও সুষ্ঠু সমাজ গড়ার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। অধ্যাপক ওয়ায়েজুল হক তাঁর সংগঠনের রিপোর্ট কার্ড প্রকাশ করে জানান, এক্ষেত্রে প্রথম হয়েছে হুগলি জেলা, আর দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মুর্শিদাবাদ। জেলা পরিষদের বড় অডিটোরিয়ামটি আজ সম্পূর্ণভাবে পরিপূর্ণ ছিল।
মুর্শিদাবাদের পরিচিত মুখ রাজীব হোসেন বলেন, বিজেপির সাম্প্রদায়িক নীতির তীব্র সমালোচনা করেন। সংখ্যালঘুদের মর্যাদা এবং আইনি অধিকার রক্ষায় মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূয়সী প্রশংসা করে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন তিনি। তিনি আহ্বান জানান, ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি ও উন্নয়নের কান্ডারি হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলকে আগামী নির্বাচনগুলিতে জয়ী করতে হবে।
আন্তর্জাতিক সংখ্যালঘু দিবস উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত এদিনের এই কর্মসূচিতে মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে বহু সমর্থক উপস্থিত ছিলেন।