০১ অক্টোবর ২০২৫, বুধবার, ১৪ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিশেষজ্ঞদের মতে, পেলে যেকোনো পজিশনে বিশ্বের সেরা ফুটবলার

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২২, শনিবার
  • / 158

পুবের কলম ওয়েব ডেস্কঃ বিশ্বের বেশিরভাগ ফুটবলপ্রেমীর চোখে পেলেই সর্বকালের সেরা ফুটবলার। এমনকি তার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মারাদোনাও সেটাই স্বীকার করেছিলেন। পেলেকে বিশ্ব ফুটবলের সেরা  ফুটবলার হিসেবে মেনে নেওয়ার পিছনেও অনেক কারণ রয়েছে। তিনিই একমাত্র ফুটবলার, যিনি তিনবার বিশ্বকাপ জিতেছেন। এছাড়া ১৬ বছর বয়সে খেলেছেন ব্রাজিলের জাতীয় দলে।

 

আরও পড়ুন: ১২ কোটির বেশি লোক হিংসার শিকার হয়ে ঘরছাড়া এ বিশ্বে

১৭ বছর বয়সে  ১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপে ৪ ম্যাচে ৬ গোল করে ব্রাজিলকে জিতিয়েছেন বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপের সর্বকণিষ্ঠ  খেলোয়াড় হিসেবে গোল করার নজির গড়ে বিশ্বসেরা হওয়ার যাত্রা শুরু করেছিলেন তিনি। আর যখন  তিনি পেশাদার ফুটবল কেরিয়ার শেষ করেছিলেন, ততদিনে ফুটবলবিশ্বে তাঁর মতো আর কাউকে খুঁজে  পাওয়া যায়নি। একটা সময় তিনিই বিশ্বের বাকি ফুটবলারদের কাছে আইডল হয়ে গিয়েছিলেন। আজও  সবার আইডল হয়ে রয়েছেন। আগামীদিনেও শীর্ষে থাকবেন পেলে নিজের প্রতিভার দ্যুতিতে।

আরও পড়ুন: পৃথিবীতে টিকে থাকতে গেলে চাই গতি, গতিই এদের করেছে শ্রেষ্ঠ

 

আরও পড়ুন: P. K. Banerjee বাড়িতে দেহ উদ্ধার, গ্রেফতার গাড়িচালক

সাও পাওলোর এক দারিদ্র পরিবারে বস্তিতে জন্ম পেলের। সেই বস্তির গলিতে মোজা মুড়িয়ে বল বানিয়ে ফুটবল খেলতেন ছোট্ট পেলেটি। সেই খেলার মধ্যে জাদুকরি সব মুহূর্তের জন্ম দিতেন নিজের অজান্তে। পরিবারের একটা ফুটবল কিনে দেওয়ার সামর্থ্যও ছিল না। অথচ, ১৫ বছর বয়সে সেই ছেলেটিই স্যান্তোসের মূল দলের অন্যতম ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। পরবর্তীতে জাতীয় দলে আগমন। এর পর  থেকে নিজের ফুটবল জাদুতে তিনি মুগ্ধ করেছেন নিজের অগণিত ভক্তদের ও তার পরবর্তী প্রজন্মের ফুটবলারদের।

 

১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপের আগে চোট পেয়েছিলেন পেলে। তা সত্ত্বেও তাঁর সতীর্থরাই চাপাচাপি করে পেলেকে সুইডেন বিশ্বকাপে নিয়ে যান। সেই বিশ্বকাপে ৬টি গোল করেন কালো মানিক খ্যাত পেলে। ফাইনালে জোড়া গোল করেছিলেন। ম্যাচ শেষে আনন্দে প্রায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন। ১৭ বছর বয়সী পেলের জ্ঞান ফেরার পর প্রতিপক্ষ সুইডেন দলের খেলোয়াড় সিগভার্দ পার্লিং তাকে বলেছিলেন, ‘তোমার দ্বিতীয় গোল দেখে আমার হাততালি দিতে ইচ্ছে করছিল।’

 

১৯৬২ বিশ্বকাপে পেলে চোটের কারণে দুই ম্যাচের বেশি খেলতে পারেননি। পরের বিশ্বকাপেও কড়া ট্যাকলের শিকার হয়ে পেলে বিদায় নিলেন প্রথম রাউন্ড থেকে। এই চোটের কারণেই ১৯৭০ বিশ্বকাপে পেলের খেলার কথাই ছিল না। কিন্তু এই বিশ্বকাপেই ‘গোল অব দ্য সেঞ্চুরি’র পাসটি ছিল তাঁর পা থেকে। ‘শতাব্দীর সেরা ফুটবলার’-এর সিগনেচার পাস ছিল সেটি। ইতালির বিপক্ষে সেই ফাইনাল ৪-১  গোলে জিতেছিল ব্রাজিল। এই ম্যাচে পেলেকে মার্ক করার দায়িত্ব ছিল ইতালির ডিফেন্ডার তারচিসিও বারজিনিচের ওপর। পরে তিনি বলেছিলেন, ‘ফাইনালের আগে আমি নিজেকে বুঝিয়েছিলাম, পেলে আমাদের মতোই রক্তমাংসের মানুষ।’

 

পেলে স্যান্তোস, ব্রাজিল ও নিউইয়র্ক কসমসের হয়ে মোট ৪০ ট্রফি জিতেছিলেন। একটা সময় উয়েফার সভাপতি থাকাকালিন মিশেল প্লাতিনি বলেছিলেন, ‘ফুটবলার পেলে ও মানুষ পেলে। কিন্তু পেলে যখন ফুটবল খেলেছেন তখন তিনি ঈশ্বর হয়ে উঠেছেন।’ ১৯৭০ বিশ্বকাপের আগে রাজনৈতিক কারণে ব্রাজিলের কোচের পদ থেকে ছাঁটাই হওয়া হোয়াও সালদানাকে এক সাংবাদিক জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘ব্রাজিলের সেরা গোলকিপার কে?’ সালাদানা বলেন, ‘পেলে।’ তিনি পাল্টা জানতে চান, ‘তাহলে সেরা রাইটব্যাক?’ এবারও উত্তর এল ‘পেলে।’ দলের বেশিরভাগ পজিশনে সেরা খেলোয়াড়ের নাম পেলে বলার পর সালাদানা হেসে আবারও বলেন, ‘পেলে ফুটবলের যেকোনো পজিশনেই বিশ্বের সেরা ফুটবলার।’

প্রতিবেদক

ইমামা খাতুন

২০২২ সাল থেকে সংবাদ জগতের সঙ্গে যুক্ত। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতাতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছে। ডিজিটাল প্লাটফর্মে রিপোর্টার হিসেবে হাতেখড়ি। ২০২২ সালের শেষান্তে পুবের কলম-এর সঙ্গে যুক্ত হয়। ইমামার ভাষ্যে, The First Law of Journalism: to confirm existing prejudice, rather than contradict it.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

বিশেষজ্ঞদের মতে, পেলে যেকোনো পজিশনে বিশ্বের সেরা ফুটবলার

আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২২, শনিবার

পুবের কলম ওয়েব ডেস্কঃ বিশ্বের বেশিরভাগ ফুটবলপ্রেমীর চোখে পেলেই সর্বকালের সেরা ফুটবলার। এমনকি তার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মারাদোনাও সেটাই স্বীকার করেছিলেন। পেলেকে বিশ্ব ফুটবলের সেরা  ফুটবলার হিসেবে মেনে নেওয়ার পিছনেও অনেক কারণ রয়েছে। তিনিই একমাত্র ফুটবলার, যিনি তিনবার বিশ্বকাপ জিতেছেন। এছাড়া ১৬ বছর বয়সে খেলেছেন ব্রাজিলের জাতীয় দলে।

 

আরও পড়ুন: ১২ কোটির বেশি লোক হিংসার শিকার হয়ে ঘরছাড়া এ বিশ্বে

১৭ বছর বয়সে  ১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপে ৪ ম্যাচে ৬ গোল করে ব্রাজিলকে জিতিয়েছেন বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপের সর্বকণিষ্ঠ  খেলোয়াড় হিসেবে গোল করার নজির গড়ে বিশ্বসেরা হওয়ার যাত্রা শুরু করেছিলেন তিনি। আর যখন  তিনি পেশাদার ফুটবল কেরিয়ার শেষ করেছিলেন, ততদিনে ফুটবলবিশ্বে তাঁর মতো আর কাউকে খুঁজে  পাওয়া যায়নি। একটা সময় তিনিই বিশ্বের বাকি ফুটবলারদের কাছে আইডল হয়ে গিয়েছিলেন। আজও  সবার আইডল হয়ে রয়েছেন। আগামীদিনেও শীর্ষে থাকবেন পেলে নিজের প্রতিভার দ্যুতিতে।

আরও পড়ুন: পৃথিবীতে টিকে থাকতে গেলে চাই গতি, গতিই এদের করেছে শ্রেষ্ঠ

 

আরও পড়ুন: P. K. Banerjee বাড়িতে দেহ উদ্ধার, গ্রেফতার গাড়িচালক

সাও পাওলোর এক দারিদ্র পরিবারে বস্তিতে জন্ম পেলের। সেই বস্তির গলিতে মোজা মুড়িয়ে বল বানিয়ে ফুটবল খেলতেন ছোট্ট পেলেটি। সেই খেলার মধ্যে জাদুকরি সব মুহূর্তের জন্ম দিতেন নিজের অজান্তে। পরিবারের একটা ফুটবল কিনে দেওয়ার সামর্থ্যও ছিল না। অথচ, ১৫ বছর বয়সে সেই ছেলেটিই স্যান্তোসের মূল দলের অন্যতম ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। পরবর্তীতে জাতীয় দলে আগমন। এর পর  থেকে নিজের ফুটবল জাদুতে তিনি মুগ্ধ করেছেন নিজের অগণিত ভক্তদের ও তার পরবর্তী প্রজন্মের ফুটবলারদের।

 

১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপের আগে চোট পেয়েছিলেন পেলে। তা সত্ত্বেও তাঁর সতীর্থরাই চাপাচাপি করে পেলেকে সুইডেন বিশ্বকাপে নিয়ে যান। সেই বিশ্বকাপে ৬টি গোল করেন কালো মানিক খ্যাত পেলে। ফাইনালে জোড়া গোল করেছিলেন। ম্যাচ শেষে আনন্দে প্রায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন। ১৭ বছর বয়সী পেলের জ্ঞান ফেরার পর প্রতিপক্ষ সুইডেন দলের খেলোয়াড় সিগভার্দ পার্লিং তাকে বলেছিলেন, ‘তোমার দ্বিতীয় গোল দেখে আমার হাততালি দিতে ইচ্ছে করছিল।’

 

১৯৬২ বিশ্বকাপে পেলে চোটের কারণে দুই ম্যাচের বেশি খেলতে পারেননি। পরের বিশ্বকাপেও কড়া ট্যাকলের শিকার হয়ে পেলে বিদায় নিলেন প্রথম রাউন্ড থেকে। এই চোটের কারণেই ১৯৭০ বিশ্বকাপে পেলের খেলার কথাই ছিল না। কিন্তু এই বিশ্বকাপেই ‘গোল অব দ্য সেঞ্চুরি’র পাসটি ছিল তাঁর পা থেকে। ‘শতাব্দীর সেরা ফুটবলার’-এর সিগনেচার পাস ছিল সেটি। ইতালির বিপক্ষে সেই ফাইনাল ৪-১  গোলে জিতেছিল ব্রাজিল। এই ম্যাচে পেলেকে মার্ক করার দায়িত্ব ছিল ইতালির ডিফেন্ডার তারচিসিও বারজিনিচের ওপর। পরে তিনি বলেছিলেন, ‘ফাইনালের আগে আমি নিজেকে বুঝিয়েছিলাম, পেলে আমাদের মতোই রক্তমাংসের মানুষ।’

 

পেলে স্যান্তোস, ব্রাজিল ও নিউইয়র্ক কসমসের হয়ে মোট ৪০ ট্রফি জিতেছিলেন। একটা সময় উয়েফার সভাপতি থাকাকালিন মিশেল প্লাতিনি বলেছিলেন, ‘ফুটবলার পেলে ও মানুষ পেলে। কিন্তু পেলে যখন ফুটবল খেলেছেন তখন তিনি ঈশ্বর হয়ে উঠেছেন।’ ১৯৭০ বিশ্বকাপের আগে রাজনৈতিক কারণে ব্রাজিলের কোচের পদ থেকে ছাঁটাই হওয়া হোয়াও সালদানাকে এক সাংবাদিক জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘ব্রাজিলের সেরা গোলকিপার কে?’ সালাদানা বলেন, ‘পেলে।’ তিনি পাল্টা জানতে চান, ‘তাহলে সেরা রাইটব্যাক?’ এবারও উত্তর এল ‘পেলে।’ দলের বেশিরভাগ পজিশনে সেরা খেলোয়াড়ের নাম পেলে বলার পর সালাদানা হেসে আবারও বলেন, ‘পেলে ফুটবলের যেকোনো পজিশনেই বিশ্বের সেরা ফুটবলার।’