০২ ডিসেম্বর ২০২৫, মঙ্গলবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফিরলেও ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত নদিয়ার ডাক্তারি পড়ুয়ারা!

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ৮ মার্চ ২০২২, মঙ্গলবার
  • / 86

শফিকুল ইসলাম:  অবশেষে কাটল উৎকণ্ঠা। আশঙ্কার দোলাচলে থাকা যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে নানা পথ ঘুরে রবিবার ভোরে নিজেদের বাড়ি ফিরলেন নদিয়ার- রাজিবুল, সুমন, মনিজা, আলামিন সেখরা। তবে বাড়ি ফিরেও যেন স্বস্তি নেই তাদের। অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ এখন চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে মনিজাদের। ইউক্রেনে ডাক্তারি পড়তে গিয়ে এভাবে প্রাণ হাতে নিয়ে ফিরে আসতে হবে তা ভাবতে পারেনি ডাক্তারি পড়ুয়ারা।

রবিবার ভোর সাড়ে ৫টায় বাড়ি ফিরে এসেছেন নাকাশিপাড়ার শালিক গ্রামের বাসিন্দা সুমন মণ্ডল। ইউক্রেনের কিয়েভ শহরের একটি মেডিক্যাল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সুমন। সুমন জানান, ‘মাইনাস ৯ ডিগ্রি ঠান্ডায় হেঁটে যাওয়া খুব কষ্টের। যুদ্ধের মধ্যে সীমান্ত পৌঁছনোর রাস্তা ছিল আরও আতঙ্কের। ওই জায়গা থেকে ভারতীয় দূতাবাস আমাদের ফেরানোর ব্যবস্থা করলে ভাল হত কিন্তু তারা তা করেনি।’ তবুও শেষ পর্যন্ত বাড়ি ফিরে এসেছেন, তার জন্য সে মহান আল্লাহপাকের শুকরিয়া আদায় করেন। একই কথা বললেন তার আব্বা ওমর আলি মণ্ডল, কাকা মহিমুদ্দিন মণ্ডল ও স্থানীয় বাসিন্দা মাওলানা মুজিবুর রহমান। তাদের দাবি, যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে ফিরে আসা ডাক্তারি পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ যাতে নষ্ট না হয়ে যায় তার জন্য কেন্দ্রকে তৎপর হতে হবে।

আরও পড়ুন: রাশিয়াকে পেছনে ফেলে বিশ্বের তৃতীয় শক্তিশালী দেশ ভারত, রিপোর্ট এশিয়া পাওয়ার ইনডেক্সের

সুমন জানান, ‘গত ২৮ ফেব্রুয়ারি হস্টেল থেকে সকালে রওনা দেন বাড়ির উদ্দেশ্যে। হাঙ্গেরি হয়ে অনেক কষ্ট করে বাড়ি পর্যন্ত এসেছেন। একইভাবে রবিবার ভোরে বাড়ি ফিরলেন ইউক্রেনে পাঠরত তেহট্টের দুই পড়ুয়া রাজিবুল মণ্ডল ও রাজা মণ্ডল। তেহট্টের বাড়িতে এসে রাজিবুল মণ্ডল বলেন, ‘যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে ২৮ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের কিয়েভ থেকে সাহস করে বেরিয়ে পড়েন তারা। হাতে ভারতীয় পতাকা। পায়ে হেঁটে পৌঁছন ইউক্রেনের স্টেশন। এরপর নানাভাবে কষ্ট করে রবিবার ভোরে বাড়ি পৌঁছেছেন।’

আরও পড়ুন: ইতিহাস তৈরি করে ভারতের মেয়েদের বিশ্ব জয়

 

আরও পড়ুন: পাক সীমান্ত লঙ্ঘন করলে ফের হামলা চলবে: তালিবানকে হুঁশিয়ারি পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রীর

গোবিন্দপুরের রাজিবুল মণ্ডল বলেন, ‘যে পরিস্থিতির মধ্যে সেখানে ছিলাম রাতে এক দিনও ঘুম হয়নি।’ মেডিক্যাল ছাত্রী মনিজা বলেন, ‘এখন কী করব বুঝতে পারছি না। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে তারও ঠিক নেই। ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ইউক্রেন গিয়েছিলাম কিন্তু প্রথমে করোনা, পরে যুদ্ধ; একের পর এক লেগেই আছে। খুব চিন্তা হচ্ছে। রাজ্য সরকার কোনও সাহায্য করলে খুব ভাল হয়।’ থানারপাড়া থানা টোপলা গ্রামের ডাক্তারি পড়ুয়া আল-আমিন সেখ জানান, ‘এতদিন সব কিছু ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু আচমকা বিপদ ডেকে আনল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ।’ আল-আমিনের বাড়ি আসার খবর পেয়ে এলাকার বিধায়ক তাপস সাহা তার সঙ্গে দেখা করতে যান।

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কিয়েভ শহর থেকে বেরনোর সময় নিজের চোখে দেখেছিলেন মিসাইল হানা। সেই ভয়ঙ্কর দৃশ্য এখনও চোখে ভাসছে আল-আমিনের। রবিবার ভোরে যুদ্ধক্ষেত্র ইউক্রেন থেকে তিনি বাড়ি ফেরেন। রাজ্য প্রশাসনের তরফে গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সেই গাড়িতেই কলকাতা থেকে ওই মেডিক্যাল ছাত্রছাত্রীরা বাড়িতে ফেরেন। এতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন তাদের পরিবার-পরিজন ও প্রতিবেশীরা। উল্লেখ্য, প্রায় ১৮ হাজার ভারতীয় পড়ুয়া ইউক্রেনের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে পড়াশোনা করছিলেন।

প্রতিবেদক

ইমামা খাতুন

২০২২ সাল থেকে সংবাদ জগতের সঙ্গে যুক্ত। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতাতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছে। ডিজিটাল প্লাটফর্মে রিপোর্টার হিসেবে হাতেখড়ি। ২০২২ সালের শেষান্তে পুবের কলম-এর সঙ্গে যুক্ত হয়। ইমামার ভাষ্যে, The First Law of Journalism: to confirm existing prejudice, rather than contradict it.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফিরলেও ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত নদিয়ার ডাক্তারি পড়ুয়ারা!

আপডেট : ৮ মার্চ ২০২২, মঙ্গলবার

শফিকুল ইসলাম:  অবশেষে কাটল উৎকণ্ঠা। আশঙ্কার দোলাচলে থাকা যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে নানা পথ ঘুরে রবিবার ভোরে নিজেদের বাড়ি ফিরলেন নদিয়ার- রাজিবুল, সুমন, মনিজা, আলামিন সেখরা। তবে বাড়ি ফিরেও যেন স্বস্তি নেই তাদের। অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ এখন চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে মনিজাদের। ইউক্রেনে ডাক্তারি পড়তে গিয়ে এভাবে প্রাণ হাতে নিয়ে ফিরে আসতে হবে তা ভাবতে পারেনি ডাক্তারি পড়ুয়ারা।

রবিবার ভোর সাড়ে ৫টায় বাড়ি ফিরে এসেছেন নাকাশিপাড়ার শালিক গ্রামের বাসিন্দা সুমন মণ্ডল। ইউক্রেনের কিয়েভ শহরের একটি মেডিক্যাল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সুমন। সুমন জানান, ‘মাইনাস ৯ ডিগ্রি ঠান্ডায় হেঁটে যাওয়া খুব কষ্টের। যুদ্ধের মধ্যে সীমান্ত পৌঁছনোর রাস্তা ছিল আরও আতঙ্কের। ওই জায়গা থেকে ভারতীয় দূতাবাস আমাদের ফেরানোর ব্যবস্থা করলে ভাল হত কিন্তু তারা তা করেনি।’ তবুও শেষ পর্যন্ত বাড়ি ফিরে এসেছেন, তার জন্য সে মহান আল্লাহপাকের শুকরিয়া আদায় করেন। একই কথা বললেন তার আব্বা ওমর আলি মণ্ডল, কাকা মহিমুদ্দিন মণ্ডল ও স্থানীয় বাসিন্দা মাওলানা মুজিবুর রহমান। তাদের দাবি, যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে ফিরে আসা ডাক্তারি পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ যাতে নষ্ট না হয়ে যায় তার জন্য কেন্দ্রকে তৎপর হতে হবে।

আরও পড়ুন: রাশিয়াকে পেছনে ফেলে বিশ্বের তৃতীয় শক্তিশালী দেশ ভারত, রিপোর্ট এশিয়া পাওয়ার ইনডেক্সের

সুমন জানান, ‘গত ২৮ ফেব্রুয়ারি হস্টেল থেকে সকালে রওনা দেন বাড়ির উদ্দেশ্যে। হাঙ্গেরি হয়ে অনেক কষ্ট করে বাড়ি পর্যন্ত এসেছেন। একইভাবে রবিবার ভোরে বাড়ি ফিরলেন ইউক্রেনে পাঠরত তেহট্টের দুই পড়ুয়া রাজিবুল মণ্ডল ও রাজা মণ্ডল। তেহট্টের বাড়িতে এসে রাজিবুল মণ্ডল বলেন, ‘যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে ২৮ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের কিয়েভ থেকে সাহস করে বেরিয়ে পড়েন তারা। হাতে ভারতীয় পতাকা। পায়ে হেঁটে পৌঁছন ইউক্রেনের স্টেশন। এরপর নানাভাবে কষ্ট করে রবিবার ভোরে বাড়ি পৌঁছেছেন।’

আরও পড়ুন: ইতিহাস তৈরি করে ভারতের মেয়েদের বিশ্ব জয়

 

আরও পড়ুন: পাক সীমান্ত লঙ্ঘন করলে ফের হামলা চলবে: তালিবানকে হুঁশিয়ারি পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রীর

গোবিন্দপুরের রাজিবুল মণ্ডল বলেন, ‘যে পরিস্থিতির মধ্যে সেখানে ছিলাম রাতে এক দিনও ঘুম হয়নি।’ মেডিক্যাল ছাত্রী মনিজা বলেন, ‘এখন কী করব বুঝতে পারছি না। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে তারও ঠিক নেই। ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ইউক্রেন গিয়েছিলাম কিন্তু প্রথমে করোনা, পরে যুদ্ধ; একের পর এক লেগেই আছে। খুব চিন্তা হচ্ছে। রাজ্য সরকার কোনও সাহায্য করলে খুব ভাল হয়।’ থানারপাড়া থানা টোপলা গ্রামের ডাক্তারি পড়ুয়া আল-আমিন সেখ জানান, ‘এতদিন সব কিছু ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু আচমকা বিপদ ডেকে আনল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ।’ আল-আমিনের বাড়ি আসার খবর পেয়ে এলাকার বিধায়ক তাপস সাহা তার সঙ্গে দেখা করতে যান।

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কিয়েভ শহর থেকে বেরনোর সময় নিজের চোখে দেখেছিলেন মিসাইল হানা। সেই ভয়ঙ্কর দৃশ্য এখনও চোখে ভাসছে আল-আমিনের। রবিবার ভোরে যুদ্ধক্ষেত্র ইউক্রেন থেকে তিনি বাড়ি ফেরেন। রাজ্য প্রশাসনের তরফে গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সেই গাড়িতেই কলকাতা থেকে ওই মেডিক্যাল ছাত্রছাত্রীরা বাড়িতে ফেরেন। এতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন তাদের পরিবার-পরিজন ও প্রতিবেশীরা। উল্লেখ্য, প্রায় ১৮ হাজার ভারতীয় পড়ুয়া ইউক্রেনের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে পড়াশোনা করছিলেন।