৩১ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অযোধ্যা: শঙ্করাচার্যদের উপস্থিতি নিয়ে ধোঁয়াশা

কিবরিয়া আনসারি
  • আপডেট : ১৩ জানুয়ারী ২০২৪, শনিবার
  • / 25

পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: অযোধ্যার শঙ্করাচার্যদের আপত্তি বিতর্ক কিছুতেই থামছে না। এবার জ্যোতির্মঠ শঙ্করাচার্য অভিমুক্তেশ্বরানন্দ সরস্বতীর বক্তব্যে নয়া বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তাঁর বক্তব্য, শাস্ত্র অনুযায়ী শ্রী রামের প্রাণপ্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়নি। তাই চার ধামের কোনও শঙ্করাচার্য এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন না। একইভাবে পুরীর গোবর্ধন মঠের শঙ্করাচার্য নিশ্চলান স্বামীও প্রশ্ন তুলেছেন, অযোধ্যায় রাম মন্দিরের রামের প্রাণপ্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠান ধর্মশাস্ত্র মেনে হচ্ছে না। তাই আগামী ২২ জানুয়ারি প্রাণপ্রতিষ্ঠার দিনে অযোধ্যায় যাওয়া ঠিক কাজ হবে না। তাঁর কটাক্ষ, প্রধানমন্ত্রী মোদি প্রাণপ্রতিষ্ঠা করবেন, মূর্তিকে স্পর্শ করবেন আর আমি সেখানে দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়ে ধন্য ধন্য করব? যেখানে ধর্মের নিয়ম ভাঙা হচ্ছে সেখানে যাওয়া তার পক্ষে অপমানকর। অযোধ্যার সনাতন ধর্মের অনুসারীরা জানেন, যে ব্যক্তি ভগবানের মূর্তির প্রাণপ্রতিষ্ঠার আরাধনা করবে তার পাশে থাকতে হবে তাঁর স্ত্রীকে। মা সীতা যখন বনবাসে চলে গিয়েছিলেন তখন অশ্বমেধ যজ্ঞ করতে গিয়ে মা সীতার সোনার মূর্তি স্থাপন করা হয়েছিল রামের পাশে। তখন পুজো সম্পন্ন হয়েছিল। মোদি কি তাঁর স্ত্রী যশোদাবেনকে পাশে বসিয়ে শ্রীরামের আরতি, পুজো করবেন? সনাতন ধর্ম বিরোধী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উদ্বোধন করা হচ্ছে অযোধ্যায় রাম মন্দিরের, তাই সেখানে উপস্থিত থাকছেন না হিন্দুধর্মের সর্বোচ্চ পদের অধিষ্টিত চার শঙ্করাচার্য। যাঁরা আড়াই হাজার বছর ধরে সনাতন ধর্মকে রক্ষা করে আসছে।

 

আরও পড়ুন: অযোধ্যা মদ্যপানের কেন্দ্রে পরিণত, অভিযোগ কংগ্রেস নেতার

যদিও বাকি দু’টি ধামের শঙ্করাচার্যরা অবশ্য অনুষ্ঠান বয়কট করবেন এমন কথা তাঁরা নিজমুখে জানাননি। বরং শৃঙ্গেরি মঠের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি জারি করে বলা হয়েছে যে, শঙ্করাচার্য ভারতী তীর্থের ছবির সঙ্গে একটি বার্তা পোস্ট করা হচ্ছে। ফলে মনে হতেই পারে শৃঙ্গেরি শঙ্করাচার্য প্রাণ প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করছেন। কিন্তু মোটেই তা করা হচ্ছে না। শৃঙ্গেরি মঠের শঙ্করাচার্যের তরফে এমন কোনও বার্তা দেওয়া হয়নি। তবে শঙ্করাচার্য নিজে অযোধ্যায় গিয়ে প্রাণপ্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানে হাজির হবেন কিনা তা ওই বিবৃতিতে স্পষ্ট নয়। পুরির গোবর্ধনপীঠের শঙ্করাচার্যের স্বামী নিশ্চলানন্দ সরস্বতী দু’দিন আগে মধ্যপ্রদেশের রতলামে বলেছিলেন তিনিও কোনও তথাকথিত ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন না। যেখানে ধর্মের অনুশাসন ভাঙা হচ্ছে যেমন রাম মন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।

আরও পড়ুন: অযোধ্যায় সাধুদের নিয়ে মিছিলের অনুমতি পেলেন না  যৌন নিগ্রহে অভিযুক্ত ব্রিজভূষণ সিং  

 

আরও পড়ুন: গুজরাত, উত্তরাখণ্ড, উত্তরপ্রদেশ সফরে প্রধানমন্ত্রী,  দীপাবলির দিনই অযোধ্যায় শ্রীরামের রাজ্য অভিষেকে উপস্থিত থাকবেন মোদি

হিন্দুধর্মে শঙ্করাচার্যদের বেশ গুরুত্ব রয়েছে। বিশ্বাস অনুসারে, শঙ্করাচার্য হিন্দু ধর্মের সর্বোচ্চ ধর্মীয়গুরুর পদ। হিন্দুধর্মে শঙ্করাচার্যকে শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসের চোখে দেখা হয়েছে। আদি শঙ্করাচার্য হিন্দুধর্মের দার্শনিক ব্যাখ্যার জন্যও পরিচিত। চার ধামের মধ্যে রয়েছে শৃঙ্গেরী মঠ, রামেশ্বরম, তামিলনাড়ু। এই ধামের শঙ্করাচার্য ভারতীতীর্থ মহারাজ। গোবর্ধন মঠ, পুরী, ওড়িশা। মঠের শঙ্করাচার্য নিশ্চলানন্দ সরস্বতী মহারাজ। তৃতীয় ধাম শারদা মঠ, দ্বারকা, গুজরাত-এর শঙ্করাচার্য সদানন্দ মহারাজ। চতুর্থ ধাম জ্যোতির্মঠ, বদরিকা, উত্তরাখণ্ড-র শঙ্করাচার্য হলেন অভিমুক্তেশ্বরানন্দ মহারাজ।

 

শঙ্করাচার্য অভিমুক্তেশ্বরানন্দের একটি ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় খুবই ভাইরাল হয়েছে। অনেকেই পছন্দ করছেন এবং শেয়ারও করছেন। এই ভিডিয়োওতে শঙ্করাচার্য অভিমুক্তেশ্বরানন্দকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘এই মন্দির যদি রামানন্দ সম্প্রদায়ের মন্দির হয়, তাহলে চম্পত রাইয়ের মতো ব্যক্তি ওখানে কী করছেন।’ এদের ওখান থেকে সরে যেতে হবে। প্রাণপ্রতিষ্ঠার আগে রামানন্দ সম্প্রদায়ের হাতে মন্দির সোঁপে দেওয়া হোক। আমরা মোদি বিরোধী নই কিন্তু আমরা ধর্মতত্ত্ব বিরোধীও হতে চাই না। সম্প্রতি শ্রীরাম জন্মভূমি ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক চম্পত রাই বলেছিলেন, রাম মন্দির রামানন্দ সম্প্রদায়ের। চম্পত রাইয়ের সেই মন্তব্যের রেশ ধরেই শঙ্করাচার্য অভিমুক্তেশ্বরানন্দ এই মন্তব্য করেন। তিনি আরও বলেন, ‘চারজন শঙ্করাচার্য কোনও ক্ষোভ বা বিদ্বেষের কারণে নয়, বরং শঙ্করাচার্যরা চান, শাস্ত্র বিধি মেনে পুরো প্রাণপ্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানটি পরিচালনা হোক।’ কিন্তু দেখা যাচ্ছে এই পুরো প্রক্রিয়ায় ধর্মীয় শাস্ত্রবিধিকে অবজ্ঞা করা হচ্ছে। মন্দিরটি এখনও সম্পূর্ণ হয়নি কিন্তু প্রাণপ্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। এমন কোনও বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি হয়নি যে হঠাৎ করে প্রাণপ্রতিষ্ঠা নিয়ে এত হুড়োহুড়ি করতে হবে। ১৯৪৯-এ যখন বাবরি মসজিদে রামলালার মূর্তি স্থাপন করা হয়েছিল পরিস্থিতি তখন আলাদা ছিল। কিন্তু ১৯৯২ সালে যখন বারবি মসজিদের কাঠামোটি ভেঙে ফেলা হয়েছিল, তখন কি কোনও শুভ মুহূর্তেরর জন্য অপেক্ষা করা হয়েছিল? সেই সময়ে কোনও শঙ্করাচার্যই পুরো প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি, কারণ তখনকার পরিস্থিতি অন্যরকম ছিল।

 

শঙ্করাচার্য অভিমুক্তেশ্বরানন্দ বলেছেন, ‘আজ যখন আমাদের কাছে সুযোগ আছে, তখন রাম মন্দিরকে আরও ভালো করে তৈরি করে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করব। এই কথা বলায়, আমাদেরকে মোদি বিরোধী হিসেবে দেগে দেওয়া হচ্ছে। আমরা নিজেরা ধর্মীয় শাস্ত্র মেনে চলতে চাই এবং মানুষকে নেতৃত্ব দিতে চাই। ধর্মতত্ত্ব থেকেই আমরা জেনেছি রাম আছে। যে শাস্ত্র আমাদের রামকে চিনিয়েছে। তাই শাস্ত্রমতে প্রাণপ্রতিষ্ঠা কীভাবে করতে হয় তাও আমরা জানি। তাই কোনও শঙ্করাচার্য প্রাণপ্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন না। এর আগে পুরীর গোবর্ধন মঠের শঙ্করাচার্য নিশ্চালানন্দ স্বামী একটি সংবাদমাধ্যমে বলেছিলেন, প্রাণপ্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানালে আমি গর্বিত হব এবং যদি আমন্ত্রণ না পায় তাহলে আমি রাগ করব এমনটা নয়। শাস্ত্র অনুসারে রামজিকে শ্রদ্ধা করা দরকার। বর্তমানে শাস্ত্রানুযায়ী সবকিছু সম্পন্ন হচ্ছে না, তাই সেখানে যাওয়া আমার পক্ষে উচিত কাজ হবে না। আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে বলা হয়েছে, আপনি একজনকে সঙ্গে নিয়ে আসতে পারেন।

 

নিশ্চালানন্দ স্বামী বলেছেন, ‘কে মূর্তিকে স্পর্শ করবে, আর কার স্পর্শ করা উচিত নয়। সে ব্যাপারে সদাসতর্ক থাকা খুবই জরুরি।’ পুরাণে লেখা আছে, দেবতা (মূর্তি) তখনই পবিত্র হয়, যখন ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে করা হয়। এটি সঠিকভাবে না করলে দেব-দেবীরা ত্রুদ্ধ হন। এটা কোনও রসিকতা নয়। সবকিছু ঠিকঠাকভাবে মেনে সম্পন্ন হলে দেবতার মহিমা সবার জন্য মঙ্গলজনক, অন্যথায় তা বিস্ফোরক হয়ে উঠতে পারে।

প্রতিবেদক

কিবরিয়া আনসারি

Kibria obtained a master's degree in journalism from Aliah University. He has been in journalism since 2018, gaining work experience in multiple organizations. Focused and sincere about his work, Kibria is currently employed at the desk of Purber Kalom.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

অযোধ্যা: শঙ্করাচার্যদের উপস্থিতি নিয়ে ধোঁয়াশা

আপডেট : ১৩ জানুয়ারী ২০২৪, শনিবার

পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: অযোধ্যার শঙ্করাচার্যদের আপত্তি বিতর্ক কিছুতেই থামছে না। এবার জ্যোতির্মঠ শঙ্করাচার্য অভিমুক্তেশ্বরানন্দ সরস্বতীর বক্তব্যে নয়া বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তাঁর বক্তব্য, শাস্ত্র অনুযায়ী শ্রী রামের প্রাণপ্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়নি। তাই চার ধামের কোনও শঙ্করাচার্য এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন না। একইভাবে পুরীর গোবর্ধন মঠের শঙ্করাচার্য নিশ্চলান স্বামীও প্রশ্ন তুলেছেন, অযোধ্যায় রাম মন্দিরের রামের প্রাণপ্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠান ধর্মশাস্ত্র মেনে হচ্ছে না। তাই আগামী ২২ জানুয়ারি প্রাণপ্রতিষ্ঠার দিনে অযোধ্যায় যাওয়া ঠিক কাজ হবে না। তাঁর কটাক্ষ, প্রধানমন্ত্রী মোদি প্রাণপ্রতিষ্ঠা করবেন, মূর্তিকে স্পর্শ করবেন আর আমি সেখানে দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়ে ধন্য ধন্য করব? যেখানে ধর্মের নিয়ম ভাঙা হচ্ছে সেখানে যাওয়া তার পক্ষে অপমানকর। অযোধ্যার সনাতন ধর্মের অনুসারীরা জানেন, যে ব্যক্তি ভগবানের মূর্তির প্রাণপ্রতিষ্ঠার আরাধনা করবে তার পাশে থাকতে হবে তাঁর স্ত্রীকে। মা সীতা যখন বনবাসে চলে গিয়েছিলেন তখন অশ্বমেধ যজ্ঞ করতে গিয়ে মা সীতার সোনার মূর্তি স্থাপন করা হয়েছিল রামের পাশে। তখন পুজো সম্পন্ন হয়েছিল। মোদি কি তাঁর স্ত্রী যশোদাবেনকে পাশে বসিয়ে শ্রীরামের আরতি, পুজো করবেন? সনাতন ধর্ম বিরোধী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উদ্বোধন করা হচ্ছে অযোধ্যায় রাম মন্দিরের, তাই সেখানে উপস্থিত থাকছেন না হিন্দুধর্মের সর্বোচ্চ পদের অধিষ্টিত চার শঙ্করাচার্য। যাঁরা আড়াই হাজার বছর ধরে সনাতন ধর্মকে রক্ষা করে আসছে।

 

আরও পড়ুন: অযোধ্যা মদ্যপানের কেন্দ্রে পরিণত, অভিযোগ কংগ্রেস নেতার

যদিও বাকি দু’টি ধামের শঙ্করাচার্যরা অবশ্য অনুষ্ঠান বয়কট করবেন এমন কথা তাঁরা নিজমুখে জানাননি। বরং শৃঙ্গেরি মঠের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি জারি করে বলা হয়েছে যে, শঙ্করাচার্য ভারতী তীর্থের ছবির সঙ্গে একটি বার্তা পোস্ট করা হচ্ছে। ফলে মনে হতেই পারে শৃঙ্গেরি শঙ্করাচার্য প্রাণ প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করছেন। কিন্তু মোটেই তা করা হচ্ছে না। শৃঙ্গেরি মঠের শঙ্করাচার্যের তরফে এমন কোনও বার্তা দেওয়া হয়নি। তবে শঙ্করাচার্য নিজে অযোধ্যায় গিয়ে প্রাণপ্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানে হাজির হবেন কিনা তা ওই বিবৃতিতে স্পষ্ট নয়। পুরির গোবর্ধনপীঠের শঙ্করাচার্যের স্বামী নিশ্চলানন্দ সরস্বতী দু’দিন আগে মধ্যপ্রদেশের রতলামে বলেছিলেন তিনিও কোনও তথাকথিত ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন না। যেখানে ধর্মের অনুশাসন ভাঙা হচ্ছে যেমন রাম মন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।

আরও পড়ুন: অযোধ্যায় সাধুদের নিয়ে মিছিলের অনুমতি পেলেন না  যৌন নিগ্রহে অভিযুক্ত ব্রিজভূষণ সিং  

 

আরও পড়ুন: গুজরাত, উত্তরাখণ্ড, উত্তরপ্রদেশ সফরে প্রধানমন্ত্রী,  দীপাবলির দিনই অযোধ্যায় শ্রীরামের রাজ্য অভিষেকে উপস্থিত থাকবেন মোদি

হিন্দুধর্মে শঙ্করাচার্যদের বেশ গুরুত্ব রয়েছে। বিশ্বাস অনুসারে, শঙ্করাচার্য হিন্দু ধর্মের সর্বোচ্চ ধর্মীয়গুরুর পদ। হিন্দুধর্মে শঙ্করাচার্যকে শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসের চোখে দেখা হয়েছে। আদি শঙ্করাচার্য হিন্দুধর্মের দার্শনিক ব্যাখ্যার জন্যও পরিচিত। চার ধামের মধ্যে রয়েছে শৃঙ্গেরী মঠ, রামেশ্বরম, তামিলনাড়ু। এই ধামের শঙ্করাচার্য ভারতীতীর্থ মহারাজ। গোবর্ধন মঠ, পুরী, ওড়িশা। মঠের শঙ্করাচার্য নিশ্চলানন্দ সরস্বতী মহারাজ। তৃতীয় ধাম শারদা মঠ, দ্বারকা, গুজরাত-এর শঙ্করাচার্য সদানন্দ মহারাজ। চতুর্থ ধাম জ্যোতির্মঠ, বদরিকা, উত্তরাখণ্ড-র শঙ্করাচার্য হলেন অভিমুক্তেশ্বরানন্দ মহারাজ।

 

শঙ্করাচার্য অভিমুক্তেশ্বরানন্দের একটি ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় খুবই ভাইরাল হয়েছে। অনেকেই পছন্দ করছেন এবং শেয়ারও করছেন। এই ভিডিয়োওতে শঙ্করাচার্য অভিমুক্তেশ্বরানন্দকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘এই মন্দির যদি রামানন্দ সম্প্রদায়ের মন্দির হয়, তাহলে চম্পত রাইয়ের মতো ব্যক্তি ওখানে কী করছেন।’ এদের ওখান থেকে সরে যেতে হবে। প্রাণপ্রতিষ্ঠার আগে রামানন্দ সম্প্রদায়ের হাতে মন্দির সোঁপে দেওয়া হোক। আমরা মোদি বিরোধী নই কিন্তু আমরা ধর্মতত্ত্ব বিরোধীও হতে চাই না। সম্প্রতি শ্রীরাম জন্মভূমি ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক চম্পত রাই বলেছিলেন, রাম মন্দির রামানন্দ সম্প্রদায়ের। চম্পত রাইয়ের সেই মন্তব্যের রেশ ধরেই শঙ্করাচার্য অভিমুক্তেশ্বরানন্দ এই মন্তব্য করেন। তিনি আরও বলেন, ‘চারজন শঙ্করাচার্য কোনও ক্ষোভ বা বিদ্বেষের কারণে নয়, বরং শঙ্করাচার্যরা চান, শাস্ত্র বিধি মেনে পুরো প্রাণপ্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানটি পরিচালনা হোক।’ কিন্তু দেখা যাচ্ছে এই পুরো প্রক্রিয়ায় ধর্মীয় শাস্ত্রবিধিকে অবজ্ঞা করা হচ্ছে। মন্দিরটি এখনও সম্পূর্ণ হয়নি কিন্তু প্রাণপ্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। এমন কোনও বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি হয়নি যে হঠাৎ করে প্রাণপ্রতিষ্ঠা নিয়ে এত হুড়োহুড়ি করতে হবে। ১৯৪৯-এ যখন বাবরি মসজিদে রামলালার মূর্তি স্থাপন করা হয়েছিল পরিস্থিতি তখন আলাদা ছিল। কিন্তু ১৯৯২ সালে যখন বারবি মসজিদের কাঠামোটি ভেঙে ফেলা হয়েছিল, তখন কি কোনও শুভ মুহূর্তেরর জন্য অপেক্ষা করা হয়েছিল? সেই সময়ে কোনও শঙ্করাচার্যই পুরো প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি, কারণ তখনকার পরিস্থিতি অন্যরকম ছিল।

 

শঙ্করাচার্য অভিমুক্তেশ্বরানন্দ বলেছেন, ‘আজ যখন আমাদের কাছে সুযোগ আছে, তখন রাম মন্দিরকে আরও ভালো করে তৈরি করে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করব। এই কথা বলায়, আমাদেরকে মোদি বিরোধী হিসেবে দেগে দেওয়া হচ্ছে। আমরা নিজেরা ধর্মীয় শাস্ত্র মেনে চলতে চাই এবং মানুষকে নেতৃত্ব দিতে চাই। ধর্মতত্ত্ব থেকেই আমরা জেনেছি রাম আছে। যে শাস্ত্র আমাদের রামকে চিনিয়েছে। তাই শাস্ত্রমতে প্রাণপ্রতিষ্ঠা কীভাবে করতে হয় তাও আমরা জানি। তাই কোনও শঙ্করাচার্য প্রাণপ্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন না। এর আগে পুরীর গোবর্ধন মঠের শঙ্করাচার্য নিশ্চালানন্দ স্বামী একটি সংবাদমাধ্যমে বলেছিলেন, প্রাণপ্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানালে আমি গর্বিত হব এবং যদি আমন্ত্রণ না পায় তাহলে আমি রাগ করব এমনটা নয়। শাস্ত্র অনুসারে রামজিকে শ্রদ্ধা করা দরকার। বর্তমানে শাস্ত্রানুযায়ী সবকিছু সম্পন্ন হচ্ছে না, তাই সেখানে যাওয়া আমার পক্ষে উচিত কাজ হবে না। আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে বলা হয়েছে, আপনি একজনকে সঙ্গে নিয়ে আসতে পারেন।

 

নিশ্চালানন্দ স্বামী বলেছেন, ‘কে মূর্তিকে স্পর্শ করবে, আর কার স্পর্শ করা উচিত নয়। সে ব্যাপারে সদাসতর্ক থাকা খুবই জরুরি।’ পুরাণে লেখা আছে, দেবতা (মূর্তি) তখনই পবিত্র হয়, যখন ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে করা হয়। এটি সঠিকভাবে না করলে দেব-দেবীরা ত্রুদ্ধ হন। এটা কোনও রসিকতা নয়। সবকিছু ঠিকঠাকভাবে মেনে সম্পন্ন হলে দেবতার মহিমা সবার জন্য মঙ্গলজনক, অন্যথায় তা বিস্ফোরক হয়ে উঠতে পারে।