পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: ২ জুন সন্ধ্যায় বালেশ্বরে ট্রেন দুর্ঘটনা এতটাই গুরুতর যে, যাকে কোনও উপমা দিয়ে বাঁধা যায় না। লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। আহত হয়েছে গণনাতীত মানুষ। নিখোঁজ আরও অনেকে। এক কথায়, পুরীর রাজ্য পরিণত হয়েছে মৃত্যুপুরীতে! চারিদিকে শুধু লাশের স্তূপ। এ হেন পরিস্থিতিতে বাহানাগা স্কুল যেন পরিণত হয়েছে আস্ত একটি মর্গে।
খড়গপুর- চেন্নাই জাতীয় সড়কের একেবারে গা ঘেঁষে সুন্দর পরিপাটি সাজানো বাহানাগা স্কুল। সামনেই সবুজে ভরা খেলার মাঠ। দিনকয়েক আগেও পড়ুয়াদের গুঞ্জনে প্রাণ ফিরত যেই ক্লাসরুমগুলিতে, আজ সেই কক্ষগুলিতেই পড়ে রয়েছে প্রাণহীন দেহ। বাতাসে তাতাপোড়া আপেক্ষিক আর্দ্রতা বোঝার অনুভূতি নেই শ্রেণিকক্ষে পড়ে থাকা ওই নিথর-নিস্পন্দ দেহগুলির। সকলেই শাপগ্রস্ত করমণ্ডল-হামসফরের যাত্রী। মাথা অবধি সাদা চাদরে ঢেকে রাখা হয়েছে তাঁদের নিস্পন্দ দেহ।
দুর্ঘটনাস্থল থেকে এই স্কুলের দূরুত্ব হাঁটাপথে মিনিট দু’য়েক। শবদেহ রাখার জন্য প্রাথমিকভাবে এই স্কুলকেই বেছে নেওয়া হয়। কিন্তু এক ঘণ্টার মধ্যে সেখানেও লাশ রাখার জায়গার কম পড়ে। প্রিয়জনকে খুঁজতে সেখানেও ভিড় জমাচ্ছেন পরিজনেরা। মৃতদেহের মুখের চাদর সরিয়ে সরিয়ে সে খোঁজার দৃশ্যও প্রাণান্তকর। এলাকার বাসিন্দারা বিস্মিত হয়ে বিড়বিড় করে বলতে থাকেন, এটা হাই স্কুল নাকি লাশঘর! আপাতত স্কুলে গরমের ছুটি। যে শ্রেণিকক্ষকগুলি কচিকাঁচা পড়ুয়াদের গুঞ্জনে মুখরিত হয়, সেখানেই কবরস্থানের স্তব্ধতা। স্বজনহারারা ক্রমশ আনাগোনা করছেন সেখানে। স্কুলের খেলার মাঠের অবস্থাও একই। সকাল থেকে দিনভর নামছে ভিআইপিদের কপ্টার ও চপার। সারাক্ষণই কানে বাজছে অ্যাম্বুলেন্স ও শববাহী যানের সাইরেনের আওয়াজ। স্কুলের কর্মচারীরা জানিয়েছেন, স্কুল চত্বরে এমন দৃশ্য যে কখনও দেখতে হবে তা জন্মাবধি ভাবেননি তাঁরা।