৩১ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘জয় শ্রীরাম’ না বলায় মারধর ও টাকার দাবি – দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগে তোলপাড়

আফিয়া‌‌ নৌশিন
  • আপডেট : ৩০ জুলাই ২০২৫, বুধবার
  • / 43

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে মালদহের বাঙালি মুসলিম পরিযায়ী শ্রমিক পরিবার-এর উপর ধর্মীয় নিপীড়ন ও আর্থিক ব্ল্যাকমেলিং-এর অভিযোগ উঠল। বুধবার তৃণমূল কংগ্রেস কলকাতায় সাংবাদিক সম্মেলন করে ‘নির্যাতিত’ সাজনু পারভিন ও তাঁর পরিবারকে সামনে এনে গোটা ঘটনার বিশদ তুলে ধরে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি ছিল, দিল্লি পুলিশের এই আচরণ শুধুমাত্র ভাষাগত ও ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে। পাল্টা দিল্লি পুলিশ দাবি করেছিল, মমতার অভিযোগ ভিত্তিহীন। তবে বুধবার তৃণমূলের সাংবাদিক বৈঠক জানিয়ে দিল—এই ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক সংঘাত এখন তুঙ্গে উঠবে।

ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা সাজনু পারভিনের অভিযোগ, তাঁকে দিল্লি পুলিশ ‘জয় শ্রীরাম’ বলতে বাধ্য করতে চেয়েছিল। মুসলিম হওয়ায় তিনি অস্বীকার করলে তাঁর কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা তোলা চাওয়া হয়, এমনকি তাঁকে ও তাঁর শিশুসন্তানকে মারধর করা হয়। সাজনু বলেন, দিল্লি পুলিশের লোকজন নিজেদের ‘পুলিশ’ পরিচয় দিয়ে তাঁদের বাড়িতে হানা দেয়, আধার কার্ড দেখতে চায়, এবং তাঁর স্বামী মোক্তার খানের খোঁজ নেয়। সব কাগজপত্র দেখানোর পরও, তাঁকে ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে হুমকি দেওয়া হয় এলাকা না ছাড়ার।

পরদিন আরও চার জন ব্যক্তি দুই মহিলাকে সঙ্গে নিয়ে আসেন এবং সাজনুকে কোথাও নিয়ে যান। সেখানেই তাঁকে ধর্মীয় স্লোগান দিতে বলা হয়, এবং অপমানজনকভাবে টাকার দাবি করা হয়। সাজনু দাবি করেন, যে CCTV ফুটেজ দিল্লি পুলিশ প্রকাশ করেছে, তা আংশিক। যেখান থেকে তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেই অংশের কোনও ফুটেজ নেই।

আরও পড়ুন: ভিন রাজ্যে ‘অত্যাচার’-এর শিকার? হরিয়ানা থেকে ফিরে এলেন ২০০ বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিক

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত রবিবার নিজের X হ্যান্ডলে একটি শিশুর ভিডিয়ো পোস্ট করে দাবি করেন, ওই পরিবারকে শুধুমাত্র বাংলা ভাষাভাষী ও মুসলিম হওয়ায় দিল্লি পুলিশ মারধর করেছে। শিশুটিকেও আঘাত করা হয়েছে বলে তাঁর দাবি। সোমবারই দিল্লি পুলিশ সেই ভিডিয়োকে ‘ভুয়ো’ বলে দাবি করে। তারা জানায়, মালদহের চাঁচলের স্থানীয় এক নেতার কথায় পরিবারটি ‘পাণ্ডবনগরে’ বসবাসকারী এবং নিজেরাই ভিডিয়ো তৈরি করেছে।

আরও পড়ুন: রাজ্যের ২২ লক্ষ পরিযায়ীকে ফেরানোর নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রী মমতার

তবে বুধবার সাংবাদিক বৈঠকে সাজনু সরাসরি বলেন, ভিডিয়োটি একেবারে সত্যি। কোনওভাবেই তা সাজানো নয়। তৃণমূল সাংসদ সামিরুল ইসলাম ও মৌসম বেনজির নূরের উদ্যোগে পরিবারটিকে দিল্লি থেকে কলকাতায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

আরও পড়ুন: ভিন রাজ্যে বাঙালিদের উপর হামলার প্রতিবাদে ভাঙড়ে তৃণমূল মিছিল

সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। কুণাল বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী প্রতিবাদ করার পরেই পরিবারকে ভয় দেখিয়ে মুখ বন্ধ করার চেষ্টা চলছে। ওই জায়গার ভিডিয়ো যেখানে শিশুটি ও তাঁর মাকে মারধর করা হয়েছিল, তা প্রকাশ করা হয়নি। উল্টে বাংলা মানেই বাংলাদেশি বলে তাঁদের ব্ল্যাকমেল করে টাকা আদায় করা হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, এই নির্যাতিত পরিবার দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে কলকাতা পুলিশে অভিযোগ দায়ের করছে।

অন্যদিকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভুয়ো তথ্য ছড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ করে দিল্লির মন্দির মার্গ থানায় মামলা করেন বিজেপি সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর ভাই সৌমেন্দু অধিকারী। মঙ্গলবার পাল্টা মমতা জানান, “আমি যা বলেছি, দিল্লিতে ঠিক সেটাই ঘটেছে।”

এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলের পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত স্পষ্ট। রাজনৈতিক মহলের মতে, এই ঘটনায় কেন্দ্র-বিরোধী রাজনীতি আরও চাঙ্গা হতে চলেছে এবং ধর্ম, ভাষা ও পরিচয় ঘিরে রাজনৈতিক বিতর্ক তীব্র আকার নিতে চলেছে।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

‘জয় শ্রীরাম’ না বলায় মারধর ও টাকার দাবি – দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগে তোলপাড়

আপডেট : ৩০ জুলাই ২০২৫, বুধবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে মালদহের বাঙালি মুসলিম পরিযায়ী শ্রমিক পরিবার-এর উপর ধর্মীয় নিপীড়ন ও আর্থিক ব্ল্যাকমেলিং-এর অভিযোগ উঠল। বুধবার তৃণমূল কংগ্রেস কলকাতায় সাংবাদিক সম্মেলন করে ‘নির্যাতিত’ সাজনু পারভিন ও তাঁর পরিবারকে সামনে এনে গোটা ঘটনার বিশদ তুলে ধরে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি ছিল, দিল্লি পুলিশের এই আচরণ শুধুমাত্র ভাষাগত ও ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে। পাল্টা দিল্লি পুলিশ দাবি করেছিল, মমতার অভিযোগ ভিত্তিহীন। তবে বুধবার তৃণমূলের সাংবাদিক বৈঠক জানিয়ে দিল—এই ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক সংঘাত এখন তুঙ্গে উঠবে।

ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা সাজনু পারভিনের অভিযোগ, তাঁকে দিল্লি পুলিশ ‘জয় শ্রীরাম’ বলতে বাধ্য করতে চেয়েছিল। মুসলিম হওয়ায় তিনি অস্বীকার করলে তাঁর কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা তোলা চাওয়া হয়, এমনকি তাঁকে ও তাঁর শিশুসন্তানকে মারধর করা হয়। সাজনু বলেন, দিল্লি পুলিশের লোকজন নিজেদের ‘পুলিশ’ পরিচয় দিয়ে তাঁদের বাড়িতে হানা দেয়, আধার কার্ড দেখতে চায়, এবং তাঁর স্বামী মোক্তার খানের খোঁজ নেয়। সব কাগজপত্র দেখানোর পরও, তাঁকে ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে হুমকি দেওয়া হয় এলাকা না ছাড়ার।

পরদিন আরও চার জন ব্যক্তি দুই মহিলাকে সঙ্গে নিয়ে আসেন এবং সাজনুকে কোথাও নিয়ে যান। সেখানেই তাঁকে ধর্মীয় স্লোগান দিতে বলা হয়, এবং অপমানজনকভাবে টাকার দাবি করা হয়। সাজনু দাবি করেন, যে CCTV ফুটেজ দিল্লি পুলিশ প্রকাশ করেছে, তা আংশিক। যেখান থেকে তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেই অংশের কোনও ফুটেজ নেই।

আরও পড়ুন: ভিন রাজ্যে ‘অত্যাচার’-এর শিকার? হরিয়ানা থেকে ফিরে এলেন ২০০ বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিক

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত রবিবার নিজের X হ্যান্ডলে একটি শিশুর ভিডিয়ো পোস্ট করে দাবি করেন, ওই পরিবারকে শুধুমাত্র বাংলা ভাষাভাষী ও মুসলিম হওয়ায় দিল্লি পুলিশ মারধর করেছে। শিশুটিকেও আঘাত করা হয়েছে বলে তাঁর দাবি। সোমবারই দিল্লি পুলিশ সেই ভিডিয়োকে ‘ভুয়ো’ বলে দাবি করে। তারা জানায়, মালদহের চাঁচলের স্থানীয় এক নেতার কথায় পরিবারটি ‘পাণ্ডবনগরে’ বসবাসকারী এবং নিজেরাই ভিডিয়ো তৈরি করেছে।

আরও পড়ুন: রাজ্যের ২২ লক্ষ পরিযায়ীকে ফেরানোর নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রী মমতার

তবে বুধবার সাংবাদিক বৈঠকে সাজনু সরাসরি বলেন, ভিডিয়োটি একেবারে সত্যি। কোনওভাবেই তা সাজানো নয়। তৃণমূল সাংসদ সামিরুল ইসলাম ও মৌসম বেনজির নূরের উদ্যোগে পরিবারটিকে দিল্লি থেকে কলকাতায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

আরও পড়ুন: ভিন রাজ্যে বাঙালিদের উপর হামলার প্রতিবাদে ভাঙড়ে তৃণমূল মিছিল

সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। কুণাল বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী প্রতিবাদ করার পরেই পরিবারকে ভয় দেখিয়ে মুখ বন্ধ করার চেষ্টা চলছে। ওই জায়গার ভিডিয়ো যেখানে শিশুটি ও তাঁর মাকে মারধর করা হয়েছিল, তা প্রকাশ করা হয়নি। উল্টে বাংলা মানেই বাংলাদেশি বলে তাঁদের ব্ল্যাকমেল করে টাকা আদায় করা হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, এই নির্যাতিত পরিবার দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে কলকাতা পুলিশে অভিযোগ দায়ের করছে।

অন্যদিকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভুয়ো তথ্য ছড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ করে দিল্লির মন্দির মার্গ থানায় মামলা করেন বিজেপি সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর ভাই সৌমেন্দু অধিকারী। মঙ্গলবার পাল্টা মমতা জানান, “আমি যা বলেছি, দিল্লিতে ঠিক সেটাই ঘটেছে।”

এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলের পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত স্পষ্ট। রাজনৈতিক মহলের মতে, এই ঘটনায় কেন্দ্র-বিরোধী রাজনীতি আরও চাঙ্গা হতে চলেছে এবং ধর্ম, ভাষা ও পরিচয় ঘিরে রাজনৈতিক বিতর্ক তীব্র আকার নিতে চলেছে।