১৫ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ডিভিসির জল ছাড়ায় প্লাবিত বাংলা, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ মুখ্যমন্ত্রীর

আফিয়া‌‌ নৌশিন
  • আপডেট : ১৫ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার
  • / 22

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (ডিভিসি) বিপুল পরিমাণ জল ছাড়ায় বাংলার একাধিক জেলায় প্লাবন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মঙ্গলবার নবান্নে প্রশাসনিক বৈঠকের পর ডিভিসি ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ফের কড়া ভাষায় ক্ষোভ প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, এটি প্রাকৃতিক বন্যা নয়, বরং ডিভিসির জল ছাড়ার কারণেই পশ্চিম মেদিনীপুর, হুগলি, হাওড়া, পূর্ব মেদিনীপুরের মতো জেলার কিছু অংশ প্লাবিত হয়েছে, এবং সাধারণ মানুষকে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে।

নবান্নে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ভার্চুয়াল বৈঠক করেন রাজ্যের সব জেলার জেলাশাসক, পুলিশ সুপার এবং পুলিশ কমিশনারদের সঙ্গে। সেখানে তিনি বলেন, “ওরা জল ছেড়ে দিয়েই দায় সারে। বার বার বলার পরেও কর্ণপাত করছে না। আমি নিজে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছি, প্রতিনিধি দল দিল্লিতে গিয়েছে, ১৪ বছর ধরে লড়াই করছি—কিন্তু কোনও ফল নেই।”

ডিভিসি কতটা জল ছেড়েছে, তার পরিসংখ্যান দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ১৮ জুন থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত মোট ২৭ হাজার লক্ষ কিউবিক মিটার জল ছেড়েছে ডিভিসি। তার ফলেই রাজ্যের একাধিক জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জলে ডুবে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এই অবস্থাকে ‘মানবসৃষ্ট দুর্যোগ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন এবং দ্রুত ত্রাণ ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন।

আরও পড়ুন: হাসিনার মতো আম-কূটনীতি ইউনূসেরও, মোদিকে পাঠাচ্ছেন হাজার কেজি আম

প্লাবিত অঞ্চলে ত্রাণ ও উদ্ধারকাজে যাতে কোনও ঘাটতি না থাকে, তা নিশ্চিত করতে মুখ্যমন্ত্রী কাঁচা বাড়ির বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। যত দিন না পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়, তত দিন তাঁদের সেখানেই রাখার কথা বলেন তিনি। পাশাপাশি, পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রাণসামগ্রী, খাবার, এবং সাপে কাটার ওষুধ ‘অ্যান্টিভেনম’ মজুত রাখার নির্দেশও দিয়েছেন। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দলকেও প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন: বাংলাভাষীদের ‘বাংলাদেশি’ বলে অপমানের প্রতিবাদে ১৬ জুলাই রাস্তায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

এদিন কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধেও বঞ্চনার অভিযোগ তোলেন মমতা। তিনি বলেন, “অসমে বন্যা হলে কেন্দ্র টাকা দেয়, কিন্তু বাংলায় কিছুই আসে না। গঙ্গার ভাঙন হোক বা প্লাবন, সাহায্য মেলে না। আর ভোটের সময় অন্য অঙ্ক কষে কেন্দ্র।”

আরও পড়ুন: নবান্নে জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ

এই পরিস্থিতিকে কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের উদাসীনতার উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

ডিভিসির বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের লড়াই সত্ত্বেও কোনও প্রতিকার না মেলায় গভীর হতাশা প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, রাজ্য সরকার হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না। মানুষকে রক্ষা করতে যা করণীয়, তা করা হবে। পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় উদাসীনতার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক স্তরে চাপ সৃষ্টি চালিয়ে যাবে রাজ্য সরকার।

এই পরিস্থিতিতে রাজ্যবাসী ও প্রশাসনকে সমন্বয়ের মাধ্যমে বিপর্যয় মোকাবিলার প্রস্তুতি নেওয়ার বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

ডিভিসির জল ছাড়ায় প্লাবিত বাংলা, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ মুখ্যমন্ত্রীর

আপডেট : ১৫ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (ডিভিসি) বিপুল পরিমাণ জল ছাড়ায় বাংলার একাধিক জেলায় প্লাবন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মঙ্গলবার নবান্নে প্রশাসনিক বৈঠকের পর ডিভিসি ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ফের কড়া ভাষায় ক্ষোভ প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, এটি প্রাকৃতিক বন্যা নয়, বরং ডিভিসির জল ছাড়ার কারণেই পশ্চিম মেদিনীপুর, হুগলি, হাওড়া, পূর্ব মেদিনীপুরের মতো জেলার কিছু অংশ প্লাবিত হয়েছে, এবং সাধারণ মানুষকে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে।

নবান্নে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ভার্চুয়াল বৈঠক করেন রাজ্যের সব জেলার জেলাশাসক, পুলিশ সুপার এবং পুলিশ কমিশনারদের সঙ্গে। সেখানে তিনি বলেন, “ওরা জল ছেড়ে দিয়েই দায় সারে। বার বার বলার পরেও কর্ণপাত করছে না। আমি নিজে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছি, প্রতিনিধি দল দিল্লিতে গিয়েছে, ১৪ বছর ধরে লড়াই করছি—কিন্তু কোনও ফল নেই।”

ডিভিসি কতটা জল ছেড়েছে, তার পরিসংখ্যান দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ১৮ জুন থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত মোট ২৭ হাজার লক্ষ কিউবিক মিটার জল ছেড়েছে ডিভিসি। তার ফলেই রাজ্যের একাধিক জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জলে ডুবে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এই অবস্থাকে ‘মানবসৃষ্ট দুর্যোগ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন এবং দ্রুত ত্রাণ ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন।

আরও পড়ুন: হাসিনার মতো আম-কূটনীতি ইউনূসেরও, মোদিকে পাঠাচ্ছেন হাজার কেজি আম

প্লাবিত অঞ্চলে ত্রাণ ও উদ্ধারকাজে যাতে কোনও ঘাটতি না থাকে, তা নিশ্চিত করতে মুখ্যমন্ত্রী কাঁচা বাড়ির বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। যত দিন না পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়, তত দিন তাঁদের সেখানেই রাখার কথা বলেন তিনি। পাশাপাশি, পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রাণসামগ্রী, খাবার, এবং সাপে কাটার ওষুধ ‘অ্যান্টিভেনম’ মজুত রাখার নির্দেশও দিয়েছেন। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দলকেও প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন: বাংলাভাষীদের ‘বাংলাদেশি’ বলে অপমানের প্রতিবাদে ১৬ জুলাই রাস্তায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

এদিন কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধেও বঞ্চনার অভিযোগ তোলেন মমতা। তিনি বলেন, “অসমে বন্যা হলে কেন্দ্র টাকা দেয়, কিন্তু বাংলায় কিছুই আসে না। গঙ্গার ভাঙন হোক বা প্লাবন, সাহায্য মেলে না। আর ভোটের সময় অন্য অঙ্ক কষে কেন্দ্র।”

আরও পড়ুন: নবান্নে জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ

এই পরিস্থিতিকে কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের উদাসীনতার উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

ডিভিসির বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের লড়াই সত্ত্বেও কোনও প্রতিকার না মেলায় গভীর হতাশা প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, রাজ্য সরকার হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না। মানুষকে রক্ষা করতে যা করণীয়, তা করা হবে। পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় উদাসীনতার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক স্তরে চাপ সৃষ্টি চালিয়ে যাবে রাজ্য সরকার।

এই পরিস্থিতিতে রাজ্যবাসী ও প্রশাসনকে সমন্বয়ের মাধ্যমে বিপর্যয় মোকাবিলার প্রস্তুতি নেওয়ার বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।