এলন মাস্ককে পিছনে ফেলে ধনীশ্রেষ্ঠের তালিকায় বার্নার্ড আর্নল্ট

- আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২২, বৃহস্পতিবার
- / 18
পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: বিশ্বের ধনীশ্রেষ্ঠের আসনটি দখল করেছেন সত্তরোর্ধ্ব বার্নার্ড আর্নল্ট। বিলাসদ্রব্যের ব্যবসায়ী বার্নার্ড। ব্যবসার জন্য কোনও আবেগকে প্রশয় দিতে নারাজ তিনি। ধনীর তালিকায় থালা এলন মাস্কের সঙ্গে আর্নল্টের তুলনা করা হয়। কিন্তু মাস্কের খামখেয়ালিপনা কারুর অজানা নয়।
আন্তর্জাতিক মানের বিলাসবহুল এবং ফ্যাশন-দ্রব্যের সবচেয়ে বড় ব্র্যান্ড ‘মোয়েত এনেসি লুই ভিতোঁ’(এলভিএমএইচ)-এর চেয়ারম্যান এবং সিইও বার্নার্ড। শৌখিনী মহলে জনপ্রিয়তা শীর্ষে। ব্যাগ, পোশাক-আশাক, রূপটান সামগ্রী, ঘড়ি, অলঙ্কার, সুগন্ধি প্রস্তুত করে এই ব্র্যান্ড। এ ছাড়াও ওয়াইন এবং বিভিন্ন রকম সুরা তৈরির ব্যবসাও রয়েছে লুই ভিতোঁর।
প্যারিসে আয়োজিত ফ্যাশন সপ্তাহের রেড কার্পেটে বলিউডের অভিনেত্রী দীপিকা পাড়ুকোন হাজির হয়েছিলেন ‘লুই ভিতোঁ’ নিয়ে। পোশাক পরেছিলেন ধূসর বর্ণের। অলঙ্কারের বাহুল্যতা ছিল না। হাতে ছিল একটি লুই ভিতোঁ ব্যাগ। ব্রিটিশ রাজপরিবারের বধূ ডায়নার হাতেও শোভা পেয়েছিল এই ব্র্যান্ডের ব্যাগ। ব্রিটেনের রাজপরিবারের দুই ফ্যাশনদুরস্ত বৌমা কেট মিডলটন এবং মেগান মর্কেলকেও প্রায়ই ব্যবহার করতে দেখা যায় বার্নার্ডের সংস্থার তৈরি বিলাসদ্রব্য। কিছু দিন আগে ভারতীয় লোকসভা এমপি মহুয়া মৈত্রের হাতেও দেখা গিয়েছিল এই সংস্থার ব্যাগ।
বার্নার্ডের নেতৃত্বে লুই ভিতোঁর সাম্রাজ্যও বহু দূর বিস্তার করেছে। আন্তর্জাতিক স্তরের নামীদামি বহু ফ্যাশন ব্র্যান্ডের দখল নিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে ক্রিশ্চিয়ান ডায়র, ফেন্দি, জিঁভসি, মার্ক জেকবস, স্টেলা, ম্যাককার্টনি, ট্যাগ হোইয়র, বুলগরি, টিফনি অ্যান্ড কো-র মতো সংস্থা রয়েছে। এমন মোট ৭৫টি সংস্থার মালিকানা এখন বার্নার্ডের হাতে। তবে কোনোটিই বার্নার্ড নিজের হাতে গড়ে তোলেননি। শুধুই দখল করেছেন।
১৯৪৯ সালের ৫ মার্চ ফ্রান্সের রুবঁ-এ জন্ম বার্নার্ডের। এলনের মতোই তিনিও ধনী পরিবারেরই সন্তান। মা ছিলেন ব্যবসায়ী পরিবারের কন্যা এবং শৌখিনী। বাবা ওই ব্যবসাই পেয়েছিলেন বিবাহসূত্রে যৌতুক হিসেবে। ফেরেট স্যাভিনেল নামে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থাই ছিল বার্নার্ডের পারিবারিক ব্যবসা। ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করে ব্যবসায় আসেন। প্রথমে পারিবারিক ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যবসাকে রিয়েল এস্টেটের ব্যবসায় বদলে নেন তিনি। তার পর আচমকাই কিনে নেন প্যারিসের একটি বিলাসদ্রব্যের ব্র্যান্ড।
১৯৮৪ সালে ফ্রান্সের সরকার তখন বুজ্যাঁক সঁ ফ্রেরেস নামে একটি বহুজাতিক বস্ত্র সংস্থাকে বিক্রি করার তোড়জোড় করছে। ঠিক তখনই বার্নার্ডের মস্তিষ্ক অন্য পরিকল্পনা শুরু করে। বিলাসদ্রব্যের ব্র্যান্ড কিনে সেই ব্র্যান্ডের হয়েই ওই সংস্থাটি নিলামে কিনে নেন বার্নার্ড।
বহুজাতিক বস্ত্র প্রতিষ্ঠান হলেও তখন বুজ্যাঁকের মালিকানায় ছিল জনপ্রিয় ফ্যাশন ব্র্যান্ড ‘ক্রিশ্চিয়ান ডায়র’। বার্নার্ড-ঘনিষ্ঠরা বলেন, ডায়রের জন্যই বুজ্যাঁক কিনেছিলেন বার্নার্ড। কারণ বার্নার্ডের মায়ের পছন্দের ব্র্যান্ড ছিল ডায়র। কারণ বুজ্যাঁক তার হাতে আসার পরই তিনি একসঙ্গে প্রায় ৯০০০ কর্মীকে কাজ থেকে বিদায় দেন। ডায়র এবং একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ছাড়া বুজ্যাঁকের যাবতীয় সম্পত্তি বিক্রি করে দেন। ওই সময়েই শিল্পমহলে টার্মিনেটর শিরোপা পান বার্নার্ড। তবে দু’বছরের মধ্যেই লাভের মুখ দেখতে শুরু করে ডায়র।
এর পর কোম্পানির দখল করাটা এক রকম নেশার মতোই হয়ে দাঁড়ায় বার্নার্ডের। এখন যে লুই ভিতোঁর প্রধান তিনি, সেই সংস্থাটিকেও তার চতুর বুদ্ধিতে দখল করেছিলেন বার্নার্ড। মোয়েথ এনেসি লুই ভিতোঁ এখন একটি সংস্থা হলেও তখন ছিল আদতে দু’টি সংস্থা- লুই ভিতোঁ এবং মোয়েথ এনেসি। দুই সংস্থার প্রধানের সঙ্গে কথা বলে একটি বিলাসদ্রব্যের বড় ব্র্যান্ড তৈরির করার পরিকল্পনা করেন বার্নার্ড। তখন লুই ভিতোঁর প্রধান ছিলেন হেনরি রিক্যামিয়ার। মোয়েথ এনেসি এবং লুই ভিতোঁ একসঙ্গে একটি ব্র্যান্ড হওয়ার পর বার্নার্ড অতি সন্তর্পণে শেয়ার কিনতে শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত পুরনো প্রধান রিক্যামিয়ারকে সরিয়ে নিজে বসেন তার জায়গায়।
এ ভাবে একের পর এক ব্র্যান্ডের দখল নেওয়া বার্নার্ড ধাক্কা খান জনপ্রিয় আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড ‘গুচি’ কিনতে গিয়ে। শুরুতেই সতর্ক হয়ে বার্নার্ডকে রুখে দেয় গুচি। যদিও সহজে ছাড়েননি বার্নার্ডও। ফলে আইনি লড়াই শুরু হয়। শেষে কোর্টের নির্দেশে হাল ছাড়তে হয় বার্নার্ডকেই।
ধনীতালিকায় বার্নাড এবং তার পরিবারের মোট সম্পত্তিকেই প্রথম স্থানে রাখা হয়েছে। বার্নার্ড এবং তার পরিবারের মোট সম্পত্তির পরিমাণ এখন ১৮ হাজার ৮৬০ কোটি ডলার। যার মধ্যে শুধু বার্নার্ডের সম্পত্তি ১৭ হাজার ১০০ কোটি ডলার।
২০২১ সালে কিছু দিনের জন্য বিশ্বের ধনীদের মধ্যে শীর্ষ আসন দখল করেছিলেন বার্নার্ড। তার এবং তার পরিবারের মোট সম্পত্তির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ১৯ হাজার ৮০০ কোটি ডলারে। পরে সেখান থেকে আবার পিছিয়ে পড়েন তিনি।
সেবার তিনি টেক্কা দিয়েছিলেন অ্যামাজন প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসকে। আর এ বার টেসলা এবং টুইটারের প্রধান এলনকে পিছনে ফেলে এগিয়ে এলেন এই প্রখর ব্যবসায়িক বুদ্ধিধারী বার্নার্ড আর্নল্ট।