সাকিল আহমেদ: ছড়ালোকে চলে গেলেন প্রিয় ভবানী দাদা।দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস রোগে ভুগছিলেন।একে একে নিভে যাচ্ছে শিশু সাহিত্যের দেউলটি। কলেজ স্ট্রিট মার্কেটে শুক্রবার সন্ধ্যায় কত আড্ডা হত।খুব খেতে ভালবাসতেন। প্রায় তিন সাড়ে তিন দশক ধরে কত আড্ডা কত স্মৃতি মনে পড়ছে। সত্যজিৎ রায়ের সন্দেশ পত্রিকার সঙ্গে ছিল তাঁর নিবিড় সম্পর্ক। প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করতেন।
মধ্যরাত ২ টোর সময় কলকাতার অ্যাপলো হসপিটালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। রেখে গেছেন কন্যা ও সহধর্মিণী। আমাদের ডায়মন্ড হারবার। প্রেস1ক্লাব থেকে তাঁকে জানাই গভীর শ্রদ্ধা। তাঁর জন্ম ৯ এপ্রিল, ১৯৫৩। সাম্প্রতিক সময়ের একজন উল্লেখযোগ্য জনপ্রিয় ছড়াশিল্পী। তাঁর পিতা নারায়ণচন্দ্র মজুমদার ও মাতা নিরুপমা দেবী কবির সাহিত্যপ্রেরণা। থাকতেন হাওড়ার দাশনগরের কাছে দক্ষিণ শানপুর গ্রামে।
“আমার ছেলের বাংলাটা ঠিক আসে না ” খুব জনপ্রিয় হয়েছে ছড়া সাহিত্যে।বাচিক শিল্পীরা ধারণ করেছেন নিজেদের কণ্ঠে।
বহু মঞ্চে আবৃত্তির বিচারক হিসেবে থেকে বুঝেছি তাঁর জনপ্রিয়তা। দৈনিক ওভার ল্যান্ড পত্রিকায় তিনি ছোটদের পাতা দেখতেন।
বহু শিশু সাহিত্যিক যাদের এখন নাম শোনেন তাঁরা অনেকেই ভবানী প্রসাদ মজুমদারের আবিস্কার। একবার এক স্মৃতি মনে পড়ছে।কলকাতা দূরদর্শনের ডিরেক্টর তখন কবি পঙ্কজ সাহা। ল্যান্ড লাইনে হঠাৎ রাত সাড়ে১২টায় ফোন।
সাকিল কাল সাড়ে পাঁচটায় দূর দর্শনের লাইফ প্রোগ্রাম হবে কবি কার্তিক ঘোষ,ভবানী প্রসাদ মজুমদার অপূর্ব দত্ত দীপ মুখোপাধ্যায়, আনসার উল হক, শ্যামলকান্তি দাশ, হাননান আহসান থাকবে সঙ্গে তুমি। নাম দিয়েছি ‘বাংলা ছড়ার সপ্তরথী।’ সঞ্চালনায় ছিলেন ডাঃ নীলাদ্রি বিশ্বাস। বিশিষ্ট বাচিক শিল্পী।আমরা ছয়জন পড়লাম।। অনুষ্ঠান কলকাতা দূর দর্শনে লাইভ হচ্ছে।একটা কান্ড ঘটল।ভবানী দাদা একটা বড় ছড়া পড়তে শুরু করলেন।সময় শেষ হয়ে এলো। একজন কেউ সেবার আর ছড়া পড়তে পারলেন না। সবাই ভবানী দাদাকে দুষলেন। ভবানী দাদা নির্বিকার। স্টুডিওতে বের হয়ে সবাই একটু হাসাহাসি ডিরেক্টর পঙ্কজ সাহা দাদার ঘরে গিয়ে চা বিস্কুটে সেবার আপ্পায়িত হলাম।স্মৃতি বড় মধুর।বড় বেদনার।
পঙ্কজ দাদার দেওয়া নাম বাংলা ছড়ার সপ্তরথীর তিনজন চলে গেলেন দীপ মুখোপাধ্যায় অপূর্ব দত্ত এবং ভবানী দাদা। তাঁর ছড়ার ভাব-ভাষা-ভাবনা, মাত্রা-মিল-ছন্দ, শব্দচয়নের কুশলতা ছোটোদেরকে তো বটেই বড়োদেরকেও আকৃষ্ট করে। তাঁর বেশির ভাগ ছড়ার শরীর বেয়ে নির্মল হাস্যরস গড়িয়ে পড়ে। সু রসিক ছিলেন ব্যক্তিগত জীবনে। ছোটোরা তাঁর লেখায় হাস্যরসের ভিয়ানে লুটোপুটি খায় আর বড়ো মজা পায়, নির্ভেজাল মজা। তাঁর ছড়া-কবিতায় থাকে সমাজমনস্কতার ছাপ। কখনও কখনও তাঁর কবিতা প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে ওঠে।
তিনি প্রচুর লিখেছেন। তাঁর প্রকাশিত ছড়াগ্রন্থের সংখ্যাও কম নয়। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল: মজার ছড়া (শিশুসাহিত্য সংসদ), ছন্দ গাঁথা এ কলকাতা (ঐ), যাদের বলে সমাজ চলে (ঐ), যাচাই করা বাছাই ছড়া (কথা ও কাহিনী), জীবন সূর্য বাজায় তুর্য (ঐ), সদ্য গড়া পদ্য ছড়া (নাথ পাবলিশার্স), মিঠে কড়া পশুর ছড়া ইত্যাদি। তাঁর প্রয়াণে বাংলা শিশু সাহিত্যের বিরাট ক্ষতি হল।কলেজ স্ট্রিট মার্কেট বর্ণ পরিচয় একজন সাহিত্যিককে হারালো। গতবছর আমরা দীপ মুখোপাধ্যায়কে হারিয়েছি।এখন হারালাম ভবানী প্রসাদ মজুমদারকে।