বিশেষ প্রতিবেদক: মৃত্যু কি শিয়রে হাত রাখার আগে হাতছানি দেয়! ছায়া অন্ধকার গাঢ় হয় চোখের পাতায়? তা না হলে মাত্র দিনকয়েক আগেই এই শব্দগুলো সেই মানুষটার হাত থেকে ঝরে পড়বে কেন? যে মানুষটা মঙ্গলবার সকালে নিজেই চলে গেলেন না ফেরার দেশে। হয়তো এটা ছিল তাঁর নিজের জন্যই লিখে যাওয়া এপিটাফ। তিনি দৈনিক স্টেটসম্যান সংবাদপত্রের প্রাক্তন সম্পাদক শেখ সদর নঈম।
৬৭ বছর বয়সে আচমকাই চলে যেতে হল। শেষের কয়েকদিন মাত্র অসুস্থ ছিলেন। তার আগে লেখালেখি চলছিলই ‘পুবের কলম’-এর সঙ্গে যুক্ত থেকে। চলে যাওয়ার বয়স তো হয়নি মোটেও। কিন্তু তবুও চলে যেতে হল স্ত্রী-পুত্র-উত্তর প্রজন্ম দিয়ে সাজানো সংসার ছেড়ে, পুরনো ঘর ছেড়ে। আসলে সত্যিই কি মানুষের ঘর বলে কিছু হয়! আসলে মাটির ওপর মানুষ কিছুদিনের জন্য বাসা তৈরি করে কিছুদিনের জন্য। তারপর একদিন মাটিতেই মিশে যেতে হয়।
দৈনিক স্টেটসম্যান জন্ম নেওয়ার বেশ কয়েক বছর পরে, সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের উত্তাল সময়ের মধ্যেই এই সংবাদপত্রের সঙ্গে যুক্ত হন শেখ সদর নঈম। প্রথমে তিনি ‘পরবাস’ নামে একটি কলম লিখতে শুরু করেন। পরে সেই ‘পরবাস’ থেকেই ‘দৈনিক স্টেটসম্যান’ তাঁর নিজের ঘর হয়ে ওঠে। তৎকালীন সম্পাদকের একরকম ‘মানসপুত্র’ ছিলেন শেখ সদর নঈম।
ইংরেজি সাহিত্যে মানুষ শেখ সদর নঈম তার আগে বেশ কিছুদিন দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকায় লেখালেখি করতেন। উত্তর সম্পাদকীয় লিখতেন। তারপর ইংরেজি ভাষা ছেড়ে বাংলায় মন দিলেন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায় ছিলেন প্রিয় কবির তালিকায়। সাহিত্যের প্রতি যথেষ্ট অনুরাগী ছিলেন। গুলজারের উর্দু কবিতার বাংলায় অনুবাদ করেছিলেন। যা বই হয়ে প্রকাশিত হয়েছিল।
যদিও পেশার তাগিদে বিভিন্নভাবে ভাগ্যান্বেষণ করেছেন। একসময় টেলিভিশনের সিরিয়ালে অভিনয়ও করেছেন। অর্থনীতিতেও সম্যক জ্ঞান ছিল। শেয়ার বাজারের দর থেকে বাণিজ্য সংবাদের খুঁটিনাটিতে ছিল অনুপুঙ্খ জ্ঞান।
একসময় (পনেরো সালের শেষাশেষি) দৈনিক সংবাদপত্রের সম্পাদকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। কোভিড অতিমারির মধ্যে দৈনিক স্টেটসম্যান থেকে বিদায় নেন। ঘর বদলান, কিন্তু সাংবাদপত্রের ঘরানার বাইরে যাননি।
সহকর্মীদের আবদারে ঈদের সময় বাড়িতে বানানো কাবাব খাইয়েছেন। আবার বিজয়ার মিষ্টিও খেয়েছেন চেটেপুটে। সুগারের জন্য ডাক্তারের বারণ না মেনেই। কিছুদিন আগেই অসুস্থ হয়ে নার্সিংহোমে ভর্তি হয়েছিলেন। আবার সুস্থ হয়ে কাজে যোগ দিয়েছিলেন। বলেছিলেন ফাড়া কেটে গিয়েছে। মৃত্যুভয় ছিল না মোটেই। তবে প্রস্তুতি কি ছিল?
তা না হলে মাত্র ক’দিন আগে রাশিদ খানের প্রয়াণের পরে কেন লিখেছিলেন, ‘সে চলে গিয়েছে। সঙ্গে তার কে গেছে জানে না কেউ, শুধু এই অন্ধকার জানে…’।