০৫ নভেম্বর ২০২৫, বুধবার, ১৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গুজরাতের সেতু দুর্ঘটনা: একটি হুঁশিয়ারি….. কেমন আছে দেশের ৮টি বিখ্যাত ঝুলন্ত ব্রিজ

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ৭ নভেম্বর ২০২২, সোমবার
  • / 50

 গুজরাতের মাচ্ছু নদীর উপর দেড়শো বছরের পুরনো ঝুলন্ত সেতু দুর্ঘটনার পর উঠে আসছে দেশের উল্লেখযোগ্য কিছু সেতুর নিরাপত্তার কথা। ভারতের খ্যাতনামা ৮টি বড় সেতুর কথা এখানে তুলে ধরা হল।

 

আরও পড়ুন: উচ্চবর্ণের মতো পোশাক পরায় দলিতকে মারধর, অপমানে আত্মহত্যা যুবকের

 

আরও পড়ুন: মন্দিরের পাশে মিলল শিশুর গলা কাটা দেহ, ভয়ঙ্কর ‘নরবলি’ গুজরাটে!

বিপাশা চক্রবর্তী: গুজরাতের মোরাবি সেতু দুর্ঘটনা এক অভিশপ্ত, কালিমালিপ্ত দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে ইতিহাসের পাতায়। এই ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা কেড়ে নিল ১৪১ জনের প্রাণ। আহত হলেন বহু মানুষ।

আরও পড়ুন: অপারেশন ডেভিল হান্ট: বাংলাদেশে গ্রেফতার ১৩০৮

দীপাবলির পর আনন্দে মাতোয়ারা প্রায় শতাধিক মানুষের জীবন শেষ হয়ে গেল এক লহমায়। গুজরাতের মেচ্ছু নদীর উপরে তৈরি হওয়া এই ঝুলন্ত সেতুটি ‘কেবল তারের’ ওপর নির্মিত ছিল। প্রায় ১৫০ বছরের এই পুরনো সেতুটি ছিল পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ। রক্ষণাবেক্ষণের পর এই সেতুটি সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু সেই সেতু যে মৃত্যুফাঁদ সেটা বোঝা গেল মানুষের জীবন দিয়ে।

বিস্তর তরজা, রাজনৈতিক বিতর্ক দানা বাঁধলেও এতগুলো মানুষের মৃত্যু ফের চোখে আঙুল দেখিয়ে দিয়ে গেল গাফিলতির চিহ্ন। কাঠগড়ায় রক্ষণাবেক্ষণকারী বেসরকারি সংস্থা ওরেভা কোম্পানিটির নাম রয়েছে। যে সংস্থার ম্যানেজার এতগুলো মানুষের মৃত্যুকে ‘ঈশ্বরের ইচ্ছে’ বলে দায় সেরেছেন।
বর্তমান সময় সেতু হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ার ঘটনায় মানুষের মধ্যে এক আতঙ্ক তৈরি করছে। উঠছে রক্ষণাবেক্ষণ থেকে পরিকাঠামোর প্রশ্ন।
ভারতে এই রকমই ৮টি ঝুলন্ত সেতু রয়েছে, যেগুলি এই রকম দড়ি দিয়ে বা স্টিল দিয়ে দীর্ঘ বছর ধরে ব্রিজের ভার ক্ষমতা ধরে রেখেছে।

গুজরাতের সেতু দুর্ঘটনা: একটি হুঁশিয়ারি..... কেমন আছে দেশের ৮টি বিখ্যাত ঝুলন্ত ব্রিজ

হাওড়া ব্রিজ: পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম সেতু হল হাওড়া ব্রিজ। যা যমজ শহর হাওড়া ও কলকাতার মধ্যস্থলে অবস্থিত। হাওড়া ব্রিজ হল একটি কান্টিলিভার বা বহির্বাহু সেতু। হুগলি নদীর উপর অবস্থিত বড় খিলানযুক্ত এই ঝুলন্ত সেতু এই শহরের ঐতিহ্য বহন করে চলেছে। প্রধান টাওয়ার থেকে মধ্যবর্তী জায়গার দূরত্ব ১৫ হাজার ফুট। জনপ্রিয়তার সঙ্গে সঙ্গে এই ব্রিজটি অন্যতম ব্যস্ততম একটি সেতু হিসেবেই পরিচিত। হাওড়া ব্রিজ এক কথায় শহরের প্রাণকেন্দ্র।

 

প্রতিদিন প্রায় ১০০,০০০ যানবাহন ও ১৫০,০০০ পথচারী চলাচল করে। অ্যাঙ্কর ও কান্টিলিভার বাহুগুলি যথাক্রমে ৩২৫ ফুট ও ৪৬৮ ফুট দীর্ঘ। হুগলি নদীর ওপরে ৭০৫ মিটার দীর্ঘ এবং ৩০ মিটার প্রশস্ত সেতুটি নির্মিত হয়েছিল ১৯৪৩ সালে। ১৯৬৫ সালের ১৪ জুন সেতুটির নাম পরিবর্তন করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে রবীন্দ্র সেতু নাম রাখা হয়। এই জাতীয় সেতুগুলির মধ্যে রবীন্দ্র সেতু বা হাওড়া ব্রিজ বিশ্বে ষষ্ঠ বৃহত্তম। লোকমুখে এটি হাওড়া ব্রিজ নামেই অধিক জনপ্রিয়। হাওড়া ব্রিজটি ১৯৪৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে আনুমানিক আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছিল।

 

গুজরাতের সেতু দুর্ঘটনা: একটি হুঁশিয়ারি..... কেমন আছে দেশের ৮টি বিখ্যাত ঝুলন্ত ব্রিজ

বিদ্যাসাগর সেতু: পশ্চিমবঙ্গের অপর একটি ব্রিজ হল বিদ্যাসাগর সেতু। এই ঝুলন্ত সেতু লোকমুখে অধিক জনপ্রিয় হুগলি সেতু নামে। এই সেতুটি হাওড়া ও কলকাতা শহর দুটির মাঝখানে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। সেতুর দৈর্ঘ্য ৮২২.৯৬ মিটার, ২৭০০ ফুট। বিদ্যাসাগর সেতু একটি কেবল-স্টেইড বা ঝুলন্ত সেতু। এই সেতুর প্রধান বিস্তার ৪৫৭ মিটারের সামান্য বেশি, ডেকের প্রস্থ ৩৫ মিটার।

এটি ভারতের দীর্ঘতম ঝুলন্ত সেতু।  সেতুটি নির্মাণ করতে মোট ৩৮৮ কোটি খরচ হয়েছে। ১৯৯২ সালের ১০ অক্টোবর এই সেতুটির উদ্বোধন করা হয়। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নামানুসারে সেতুটির নামকরণ করা হয়। হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশনের অধীনে সরকারি ও বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে এই সেতু নির্মিত হয়েছিল।

১৯৭২ সালের ২০ মে এই সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপণ করা হয়। দীর্ঘ ২২ বছর ধরে এই সেতু তৈরির কাজ চলে।  ভারতীয় টাকায় এই সেতু নির্মাণে খরচ পড়ে তিনকোটি ৮০ লক্ষ টাকা। ১৯৭৯ সালের ৩ জুলাই এই সেতুর নির্মাণের কাজ শুরু হয়, ১৯৯২ সালের ১০ অক্টোবর এই সেতু সাধারণের উদ্দেশে চালু হয়।

 

গুজরাতের সেতু দুর্ঘটনা: একটি হুঁশিয়ারি..... কেমন আছে দেশের ৮টি বিখ্যাত ঝুলন্ত ব্রিজ

বান্দ্রা ওরলি সি লিঙ্ক: বান্দ্রা-ওরলি সি লিঙ্ক ভারতের প্রথম সমুদ্র সেতু। ৫ কিলোমিটার বিস্তৃত সেতুটি উদ্বোধন করেন সোনিয়া গান্ধি। আগে মুম্বইয়ের শহরতলি বান্দ্রা থেকে মাহিম, দাদার, প্রভাবতী হয়ে ওরলি পৌঁছতে প্রায় ১ ঘন্টা সময় লাগত। মানুষের সুবিধার কথা বিবেচনা করে তৈরি হয় বান্দ্রা-ওরলি সি লিঙ্ক। বান্দ্রা-ওরলি সি লিঙ্কটি খুলে যেতেই মাত্র ৭ মিনিটেই পৌঁছে যাওয়া সম্ভব বান্দ্রা থেকে ওরলি। মহারাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, এই সমুদ্রসেতুটি হওয়ায় পরিবেশ, জ্বালানি এবং সময় বাঁচবে।

বান্দ্রা-ওরলি সি লিঙ্ক ‘রাজীব গান্ধী সি লিঙ্ক’ নামেও পরিচিত। এই সেতুটি ৫.৬ সেতুটি কিলোমিটার দীর্ঘ, ৮ লেন বিশিষ্ট, ভারতের বিশিষ্ট সেতুর মধ্যে অন্যতম। এটি প্রথম ঝুলন্ত ব্রিজ যেটি ভারতের মুম্বইতে সমুদ্রের ওপরে নির্মিত।

বান্দ্রা ওরলি সি লিঙ্ক মুম্বাইয়ের অন্যতম প্রধান ল্যান্ডমার্ক হয়ে উঠেছে এবং এটি পর্যটকদের কাছে প্রধান আকর্ষণ। এই সেতুটি মুম্বইয়ের শহরতলির সঙ্গে দক্ষিণ মুম্বাইয়ের সংযোগ স্থাপন করেছে। এই সেতুর রাতের ও দিনের সৌন্দর্য্য মানুষকে আলাদাভাবে মানুষকে আকর্ষণ করে। এই সেতু নির্মাণ করে হিন্দুস্তান কনস্ট্রাকশন কোম্পানি।

গুজরাতের সেতু দুর্ঘটনা: একটি হুঁশিয়ারি..... কেমন আছে দেশের ৮টি বিখ্যাত ঝুলন্ত ব্রিজ

করোনেশন ব্রিজ: রাজ্যের অন্যতম সেতু হল করোনেশন ব্রিজ। এটি সেবক ব্রিজ নামেও পরিচিত। এই সেতু তিস্তা নদীর উপর দিয়ে বিস্তৃত হয়ে দার্জিলিং শহরকে যুক্ত করেছে। এই সেতুটি সিকিম এবং উত্তর পূর্বের সংযোগস্থল। সেতুটি ব্রিটিশ আমলে তৈরি হওয়া ইঞ্জিনিয়ারদের দ্বারা বিস্ময় বলা যেতে পারে। রাজা ষষ্ঠ জর্জ এবং রানী এলিজাবেথের রাজ্যাভিষেক উদযাপনের জন্য করোনেশন ব্রিজটি নির্মিত হয়েছিল।

সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৯৩৭ সালে, ১৯৪১ সালে এই সেতুটির কাজ শেষ হয়। তৎকালীন রাজ্যপাল জন আন্ডারসন এই সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপণ করেন। সেতুটির নকশা, পরিকল্পনা এবং অঙ্কন জন চেম্বার্স দ্বারা সম্পন্ন হয়েছিল। করোনেশন ব্রিজটির নাম দেওয়া হয়েছিল ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক। এটিকে কালিম্পং, নাথুলা এবং গ্যাংটকের মধ্যে লাইফলাইন হিসাবেও বিবেচনা করা হয়। কারণ এটি যোগাযোগ সমন্বয় রক্ষা করে চলেছে।

এই সেতুর স্থাপত্য ও নির্মাণ ভারতে এক আলাদামানের নিদর্শন গড়ে তুলেছে। এই সেতুর প্রবেশপথে সিংহের মূর্তি থাকায় এটি ‘বাগ পুল’ ও ‘টাইগার ব্রিজ’ নামেও পরিচিত।

গুজরাতের সেতু দুর্ঘটনা: একটি হুঁশিয়ারি..... কেমন আছে দেশের ৮টি বিখ্যাত ঝুলন্ত ব্রিজ

লক্ষ্ণণঝুলা (ঋষিকেশ):  রাজ্য ছাড়িয়ে পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় লক্ষ্ণণঝুলা বা লক্সমন ঝুলা। যেটি অন্যতম ঝুলন্ত ব্রিজ হিসেবে মানুষের কাছে আকর্ষণীয়। ঋষিকেশে অবস্থিত পবিত্র গঙ্গা নদীর উপরে এটি একটি লোহার ঝুলন্ত সেতু। এই সেতু ৪৫০ ফুট দীর্ঘ পৌরি জেলাকে তেহরি জেলার সঙ্গে সংযুক্ত করে। ধর্মীয় স্থান ছাড়াও লক্ষ্মণ ঝুলার অন্যতম আকর্ষণ চারদিকের মনোরম পরিবেশ। যা পর্যটকদের আলাদাভাবে আকর্ষণ করে। লক্ষ্মণ ঝুলা ঋষিকেশের একটি জনপ্রিয় ফুট ব্রিজ। তবে মোটরবাইক এই সেতুর উপর দিয়ে চলাচল করে। সুদূর বিস্তৃত এই সেতুটি উত্তরাখণ্ডের ঋষিকেশ থেকে ৫ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত।

 

গুজরাতের সেতু দুর্ঘটনা: একটি হুঁশিয়ারি..... কেমন আছে দেশের ৮টি বিখ্যাত ঝুলন্ত ব্রিজ

গোদাবরী খিলান সেতু: গোদাবরী খিলান সেতু এটি একটি বাউস্ট্রিং-গার্ডার ব্রিজ। রাজমুন্দ্রিতে গোদাবরী নদীর উপর বিস্তৃত তিনটি সেতুর মধ্যে এটি সর্বশেষ নির্মাণ। কারণ হ্যাভলক সেতুটি ১৮৯৭ সালে নির্মিত হয়েছিল, পরে সর্বসাধারণের ব্যবহারের উপযোগী হওয়ার পর এটি ১৯৯৭ সালে বাতিল করা হয়। গোদাবরী সেতু নামে পরিচিত দ্বিতীয় সেতুটি একটি ট্রাস ব্রিজ এবং এটি ভারতের তৃতীয় দীর্ঘতম সড়ক-কাম-রেল সেতু। গোদাবরী খিলান সেতু এশিয়ার দীর্ঘতম ব্রিজ।

যা লোহার মোটা বিম দিয়ে বাধা রয়েছে। ভারতীয় রেলওয়ে যারা এই সেতুটি তৈরি করেছে। তাদের বক্তব্য, ‘এটি সম্ভবত বিশ্বের প্রথমবারের মতো কংক্রিট ব্যবহার করে একটি ধনুকের আর্চ গার্ডারের রূপ দেওয়া হয়েছে’। ৯৭.৫৫ মিটার বা ৩২০ ফুট দৈর্ঘ্য এই ব্রিজ তৈরি করা হয় ট্রেন চলাচলের জন্য।

 

গুজরাতের সেতু দুর্ঘটনা: একটি হুঁশিয়ারি..... কেমন আছে দেশের ৮টি বিখ্যাত ঝুলন্ত ব্রিজ

মহাত্মা গান্ধি সেতু (বিহার): বিহারে গঙ্গা নদীর উপরে নির্মিত হয়েছে এই মহাত্মা গান্ধি সেতু। এই সেতুটি গঙ্গার দক্ষিণে পটনা ও গঙ্গার উত্তরে হাজিপুরের সঙ্গে সংযোগ ঘটিয়েছে। এই সেতুটি মোট ৫,৭৫০ মিটার (১৮,৮৬০ ফুট) দীর্ঘ। এটি ভারতের দীর্ঘতম ইস্পাত সেতুর মধ্যে একটি। এই সেতুটির দৈর্ঘ্য ৫.৭৫ কিমি এবং প্রস্থ ২৫ মিটার। ১৯৭২ সালে এই সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ১৯৮২ সালে নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ১৯৮২ সালের মে মাসেই এই সেতুটি উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি।

এই সেতু গঙ্গা সেতু নামেও পরিচিত। এই সেতুটি জাতীয় সড়ক ২২ ও ৩১’কে সংযোগ করছে। বিহারে প্রধানমন্ত্রী যোজনার অধীনে ১৭৪২ কোটি টাকায় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক মন্ত্রক সেতুটি পুননির্মাণ করেছে। চার লেনের এই সেতুটি পুননির্মাণে অনুমোদন দেওয়ার আগে ৫.৫৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুটি যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে জরাজীর্ণ অবস্থায় ছিল। পরে আবার চলতি বছরের ৭ জুন সেটি চালু হয়।

 

গুজরাতের সেতু দুর্ঘটনা: একটি হুঁশিয়ারি..... কেমন আছে দেশের ৮টি বিখ্যাত ঝুলন্ত ব্রিজ

বগীবিল সেতু: অসমের ব্রহ্মপুত্র নদের উপরে নির্মিত বগীবিল সেতু। এটি ভারতের দীর্ঘতম দ্বিতল সেতু হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। ৪.৯ কিলোমিটার বিস্তৃত এই সেতুটি ৬০ টন ওজনের যুদ্ধ ট্যাঙ্ক চলাচল সহ যুদ্ধবিমানও বহনকারী। সেতুর উপরের তলায় রয়েছে তিন লেনের সড়কপথ। সেই পথে চলছে বাস, ট্রাক, লরিসহ যাবতীয় যানবাহন। আর নীচে ডবল লাইন দিয়ে চলছে ট্রেন।

ভারতের উত্তরপূর্ব রাজ্যগুলোতে বা প্রতিবেশী চিনের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ সীমান্তে দেশটির সবচেয়ে শক্তিশালী ট্যাঙ্ক স্বল্প সময়ের মধ্যে এই সেতু দিয়ে পাঠানো সম্ভব।
১৯৯৭ সালে সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়া। ২০০২ সালে নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ি। পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রয়াত বাজপেয়ির জন্মদিনে দেশটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই সেতুটি উদ্বোধন করেন। দেশটির সবচেয়ে দীর্ঘ এই দ্বিতল সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে ৫ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।

বগীবিল সেতুর দেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সেতুটি ভারতের কাছে কৌশলগত গুরুত্বের কারণ সহ অরুণাচল প্রদেশের তিব্বত সীমান্তে সৈন্য ও যুদ্ধসামগ্রী সরবরাহের ক্ষেত্রে ভারতের ক্ষমতাকে আরও সহজ করেছে।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

গুজরাতের সেতু দুর্ঘটনা: একটি হুঁশিয়ারি….. কেমন আছে দেশের ৮টি বিখ্যাত ঝুলন্ত ব্রিজ

আপডেট : ৭ নভেম্বর ২০২২, সোমবার

 গুজরাতের মাচ্ছু নদীর উপর দেড়শো বছরের পুরনো ঝুলন্ত সেতু দুর্ঘটনার পর উঠে আসছে দেশের উল্লেখযোগ্য কিছু সেতুর নিরাপত্তার কথা। ভারতের খ্যাতনামা ৮টি বড় সেতুর কথা এখানে তুলে ধরা হল।

 

আরও পড়ুন: উচ্চবর্ণের মতো পোশাক পরায় দলিতকে মারধর, অপমানে আত্মহত্যা যুবকের

 

আরও পড়ুন: মন্দিরের পাশে মিলল শিশুর গলা কাটা দেহ, ভয়ঙ্কর ‘নরবলি’ গুজরাটে!

বিপাশা চক্রবর্তী: গুজরাতের মোরাবি সেতু দুর্ঘটনা এক অভিশপ্ত, কালিমালিপ্ত দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে ইতিহাসের পাতায়। এই ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা কেড়ে নিল ১৪১ জনের প্রাণ। আহত হলেন বহু মানুষ।

আরও পড়ুন: অপারেশন ডেভিল হান্ট: বাংলাদেশে গ্রেফতার ১৩০৮

দীপাবলির পর আনন্দে মাতোয়ারা প্রায় শতাধিক মানুষের জীবন শেষ হয়ে গেল এক লহমায়। গুজরাতের মেচ্ছু নদীর উপরে তৈরি হওয়া এই ঝুলন্ত সেতুটি ‘কেবল তারের’ ওপর নির্মিত ছিল। প্রায় ১৫০ বছরের এই পুরনো সেতুটি ছিল পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ। রক্ষণাবেক্ষণের পর এই সেতুটি সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু সেই সেতু যে মৃত্যুফাঁদ সেটা বোঝা গেল মানুষের জীবন দিয়ে।

বিস্তর তরজা, রাজনৈতিক বিতর্ক দানা বাঁধলেও এতগুলো মানুষের মৃত্যু ফের চোখে আঙুল দেখিয়ে দিয়ে গেল গাফিলতির চিহ্ন। কাঠগড়ায় রক্ষণাবেক্ষণকারী বেসরকারি সংস্থা ওরেভা কোম্পানিটির নাম রয়েছে। যে সংস্থার ম্যানেজার এতগুলো মানুষের মৃত্যুকে ‘ঈশ্বরের ইচ্ছে’ বলে দায় সেরেছেন।
বর্তমান সময় সেতু হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ার ঘটনায় মানুষের মধ্যে এক আতঙ্ক তৈরি করছে। উঠছে রক্ষণাবেক্ষণ থেকে পরিকাঠামোর প্রশ্ন।
ভারতে এই রকমই ৮টি ঝুলন্ত সেতু রয়েছে, যেগুলি এই রকম দড়ি দিয়ে বা স্টিল দিয়ে দীর্ঘ বছর ধরে ব্রিজের ভার ক্ষমতা ধরে রেখেছে।

গুজরাতের সেতু দুর্ঘটনা: একটি হুঁশিয়ারি..... কেমন আছে দেশের ৮টি বিখ্যাত ঝুলন্ত ব্রিজ

হাওড়া ব্রিজ: পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম সেতু হল হাওড়া ব্রিজ। যা যমজ শহর হাওড়া ও কলকাতার মধ্যস্থলে অবস্থিত। হাওড়া ব্রিজ হল একটি কান্টিলিভার বা বহির্বাহু সেতু। হুগলি নদীর উপর অবস্থিত বড় খিলানযুক্ত এই ঝুলন্ত সেতু এই শহরের ঐতিহ্য বহন করে চলেছে। প্রধান টাওয়ার থেকে মধ্যবর্তী জায়গার দূরত্ব ১৫ হাজার ফুট। জনপ্রিয়তার সঙ্গে সঙ্গে এই ব্রিজটি অন্যতম ব্যস্ততম একটি সেতু হিসেবেই পরিচিত। হাওড়া ব্রিজ এক কথায় শহরের প্রাণকেন্দ্র।

 

প্রতিদিন প্রায় ১০০,০০০ যানবাহন ও ১৫০,০০০ পথচারী চলাচল করে। অ্যাঙ্কর ও কান্টিলিভার বাহুগুলি যথাক্রমে ৩২৫ ফুট ও ৪৬৮ ফুট দীর্ঘ। হুগলি নদীর ওপরে ৭০৫ মিটার দীর্ঘ এবং ৩০ মিটার প্রশস্ত সেতুটি নির্মিত হয়েছিল ১৯৪৩ সালে। ১৯৬৫ সালের ১৪ জুন সেতুটির নাম পরিবর্তন করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে রবীন্দ্র সেতু নাম রাখা হয়। এই জাতীয় সেতুগুলির মধ্যে রবীন্দ্র সেতু বা হাওড়া ব্রিজ বিশ্বে ষষ্ঠ বৃহত্তম। লোকমুখে এটি হাওড়া ব্রিজ নামেই অধিক জনপ্রিয়। হাওড়া ব্রিজটি ১৯৪৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে আনুমানিক আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছিল।

 

গুজরাতের সেতু দুর্ঘটনা: একটি হুঁশিয়ারি..... কেমন আছে দেশের ৮টি বিখ্যাত ঝুলন্ত ব্রিজ

বিদ্যাসাগর সেতু: পশ্চিমবঙ্গের অপর একটি ব্রিজ হল বিদ্যাসাগর সেতু। এই ঝুলন্ত সেতু লোকমুখে অধিক জনপ্রিয় হুগলি সেতু নামে। এই সেতুটি হাওড়া ও কলকাতা শহর দুটির মাঝখানে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। সেতুর দৈর্ঘ্য ৮২২.৯৬ মিটার, ২৭০০ ফুট। বিদ্যাসাগর সেতু একটি কেবল-স্টেইড বা ঝুলন্ত সেতু। এই সেতুর প্রধান বিস্তার ৪৫৭ মিটারের সামান্য বেশি, ডেকের প্রস্থ ৩৫ মিটার।

এটি ভারতের দীর্ঘতম ঝুলন্ত সেতু।  সেতুটি নির্মাণ করতে মোট ৩৮৮ কোটি খরচ হয়েছে। ১৯৯২ সালের ১০ অক্টোবর এই সেতুটির উদ্বোধন করা হয়। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নামানুসারে সেতুটির নামকরণ করা হয়। হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশনের অধীনে সরকারি ও বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে এই সেতু নির্মিত হয়েছিল।

১৯৭২ সালের ২০ মে এই সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপণ করা হয়। দীর্ঘ ২২ বছর ধরে এই সেতু তৈরির কাজ চলে।  ভারতীয় টাকায় এই সেতু নির্মাণে খরচ পড়ে তিনকোটি ৮০ লক্ষ টাকা। ১৯৭৯ সালের ৩ জুলাই এই সেতুর নির্মাণের কাজ শুরু হয়, ১৯৯২ সালের ১০ অক্টোবর এই সেতু সাধারণের উদ্দেশে চালু হয়।

 

গুজরাতের সেতু দুর্ঘটনা: একটি হুঁশিয়ারি..... কেমন আছে দেশের ৮টি বিখ্যাত ঝুলন্ত ব্রিজ

বান্দ্রা ওরলি সি লিঙ্ক: বান্দ্রা-ওরলি সি লিঙ্ক ভারতের প্রথম সমুদ্র সেতু। ৫ কিলোমিটার বিস্তৃত সেতুটি উদ্বোধন করেন সোনিয়া গান্ধি। আগে মুম্বইয়ের শহরতলি বান্দ্রা থেকে মাহিম, দাদার, প্রভাবতী হয়ে ওরলি পৌঁছতে প্রায় ১ ঘন্টা সময় লাগত। মানুষের সুবিধার কথা বিবেচনা করে তৈরি হয় বান্দ্রা-ওরলি সি লিঙ্ক। বান্দ্রা-ওরলি সি লিঙ্কটি খুলে যেতেই মাত্র ৭ মিনিটেই পৌঁছে যাওয়া সম্ভব বান্দ্রা থেকে ওরলি। মহারাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, এই সমুদ্রসেতুটি হওয়ায় পরিবেশ, জ্বালানি এবং সময় বাঁচবে।

বান্দ্রা-ওরলি সি লিঙ্ক ‘রাজীব গান্ধী সি লিঙ্ক’ নামেও পরিচিত। এই সেতুটি ৫.৬ সেতুটি কিলোমিটার দীর্ঘ, ৮ লেন বিশিষ্ট, ভারতের বিশিষ্ট সেতুর মধ্যে অন্যতম। এটি প্রথম ঝুলন্ত ব্রিজ যেটি ভারতের মুম্বইতে সমুদ্রের ওপরে নির্মিত।

বান্দ্রা ওরলি সি লিঙ্ক মুম্বাইয়ের অন্যতম প্রধান ল্যান্ডমার্ক হয়ে উঠেছে এবং এটি পর্যটকদের কাছে প্রধান আকর্ষণ। এই সেতুটি মুম্বইয়ের শহরতলির সঙ্গে দক্ষিণ মুম্বাইয়ের সংযোগ স্থাপন করেছে। এই সেতুর রাতের ও দিনের সৌন্দর্য্য মানুষকে আলাদাভাবে মানুষকে আকর্ষণ করে। এই সেতু নির্মাণ করে হিন্দুস্তান কনস্ট্রাকশন কোম্পানি।

গুজরাতের সেতু দুর্ঘটনা: একটি হুঁশিয়ারি..... কেমন আছে দেশের ৮টি বিখ্যাত ঝুলন্ত ব্রিজ

করোনেশন ব্রিজ: রাজ্যের অন্যতম সেতু হল করোনেশন ব্রিজ। এটি সেবক ব্রিজ নামেও পরিচিত। এই সেতু তিস্তা নদীর উপর দিয়ে বিস্তৃত হয়ে দার্জিলিং শহরকে যুক্ত করেছে। এই সেতুটি সিকিম এবং উত্তর পূর্বের সংযোগস্থল। সেতুটি ব্রিটিশ আমলে তৈরি হওয়া ইঞ্জিনিয়ারদের দ্বারা বিস্ময় বলা যেতে পারে। রাজা ষষ্ঠ জর্জ এবং রানী এলিজাবেথের রাজ্যাভিষেক উদযাপনের জন্য করোনেশন ব্রিজটি নির্মিত হয়েছিল।

সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৯৩৭ সালে, ১৯৪১ সালে এই সেতুটির কাজ শেষ হয়। তৎকালীন রাজ্যপাল জন আন্ডারসন এই সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপণ করেন। সেতুটির নকশা, পরিকল্পনা এবং অঙ্কন জন চেম্বার্স দ্বারা সম্পন্ন হয়েছিল। করোনেশন ব্রিজটির নাম দেওয়া হয়েছিল ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক। এটিকে কালিম্পং, নাথুলা এবং গ্যাংটকের মধ্যে লাইফলাইন হিসাবেও বিবেচনা করা হয়। কারণ এটি যোগাযোগ সমন্বয় রক্ষা করে চলেছে।

এই সেতুর স্থাপত্য ও নির্মাণ ভারতে এক আলাদামানের নিদর্শন গড়ে তুলেছে। এই সেতুর প্রবেশপথে সিংহের মূর্তি থাকায় এটি ‘বাগ পুল’ ও ‘টাইগার ব্রিজ’ নামেও পরিচিত।

গুজরাতের সেতু দুর্ঘটনা: একটি হুঁশিয়ারি..... কেমন আছে দেশের ৮টি বিখ্যাত ঝুলন্ত ব্রিজ

লক্ষ্ণণঝুলা (ঋষিকেশ):  রাজ্য ছাড়িয়ে পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় লক্ষ্ণণঝুলা বা লক্সমন ঝুলা। যেটি অন্যতম ঝুলন্ত ব্রিজ হিসেবে মানুষের কাছে আকর্ষণীয়। ঋষিকেশে অবস্থিত পবিত্র গঙ্গা নদীর উপরে এটি একটি লোহার ঝুলন্ত সেতু। এই সেতু ৪৫০ ফুট দীর্ঘ পৌরি জেলাকে তেহরি জেলার সঙ্গে সংযুক্ত করে। ধর্মীয় স্থান ছাড়াও লক্ষ্মণ ঝুলার অন্যতম আকর্ষণ চারদিকের মনোরম পরিবেশ। যা পর্যটকদের আলাদাভাবে আকর্ষণ করে। লক্ষ্মণ ঝুলা ঋষিকেশের একটি জনপ্রিয় ফুট ব্রিজ। তবে মোটরবাইক এই সেতুর উপর দিয়ে চলাচল করে। সুদূর বিস্তৃত এই সেতুটি উত্তরাখণ্ডের ঋষিকেশ থেকে ৫ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত।

 

গুজরাতের সেতু দুর্ঘটনা: একটি হুঁশিয়ারি..... কেমন আছে দেশের ৮টি বিখ্যাত ঝুলন্ত ব্রিজ

গোদাবরী খিলান সেতু: গোদাবরী খিলান সেতু এটি একটি বাউস্ট্রিং-গার্ডার ব্রিজ। রাজমুন্দ্রিতে গোদাবরী নদীর উপর বিস্তৃত তিনটি সেতুর মধ্যে এটি সর্বশেষ নির্মাণ। কারণ হ্যাভলক সেতুটি ১৮৯৭ সালে নির্মিত হয়েছিল, পরে সর্বসাধারণের ব্যবহারের উপযোগী হওয়ার পর এটি ১৯৯৭ সালে বাতিল করা হয়। গোদাবরী সেতু নামে পরিচিত দ্বিতীয় সেতুটি একটি ট্রাস ব্রিজ এবং এটি ভারতের তৃতীয় দীর্ঘতম সড়ক-কাম-রেল সেতু। গোদাবরী খিলান সেতু এশিয়ার দীর্ঘতম ব্রিজ।

যা লোহার মোটা বিম দিয়ে বাধা রয়েছে। ভারতীয় রেলওয়ে যারা এই সেতুটি তৈরি করেছে। তাদের বক্তব্য, ‘এটি সম্ভবত বিশ্বের প্রথমবারের মতো কংক্রিট ব্যবহার করে একটি ধনুকের আর্চ গার্ডারের রূপ দেওয়া হয়েছে’। ৯৭.৫৫ মিটার বা ৩২০ ফুট দৈর্ঘ্য এই ব্রিজ তৈরি করা হয় ট্রেন চলাচলের জন্য।

 

গুজরাতের সেতু দুর্ঘটনা: একটি হুঁশিয়ারি..... কেমন আছে দেশের ৮টি বিখ্যাত ঝুলন্ত ব্রিজ

মহাত্মা গান্ধি সেতু (বিহার): বিহারে গঙ্গা নদীর উপরে নির্মিত হয়েছে এই মহাত্মা গান্ধি সেতু। এই সেতুটি গঙ্গার দক্ষিণে পটনা ও গঙ্গার উত্তরে হাজিপুরের সঙ্গে সংযোগ ঘটিয়েছে। এই সেতুটি মোট ৫,৭৫০ মিটার (১৮,৮৬০ ফুট) দীর্ঘ। এটি ভারতের দীর্ঘতম ইস্পাত সেতুর মধ্যে একটি। এই সেতুটির দৈর্ঘ্য ৫.৭৫ কিমি এবং প্রস্থ ২৫ মিটার। ১৯৭২ সালে এই সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ১৯৮২ সালে নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ১৯৮২ সালের মে মাসেই এই সেতুটি উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি।

এই সেতু গঙ্গা সেতু নামেও পরিচিত। এই সেতুটি জাতীয় সড়ক ২২ ও ৩১’কে সংযোগ করছে। বিহারে প্রধানমন্ত্রী যোজনার অধীনে ১৭৪২ কোটি টাকায় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক মন্ত্রক সেতুটি পুননির্মাণ করেছে। চার লেনের এই সেতুটি পুননির্মাণে অনুমোদন দেওয়ার আগে ৫.৫৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুটি যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে জরাজীর্ণ অবস্থায় ছিল। পরে আবার চলতি বছরের ৭ জুন সেটি চালু হয়।

 

গুজরাতের সেতু দুর্ঘটনা: একটি হুঁশিয়ারি..... কেমন আছে দেশের ৮টি বিখ্যাত ঝুলন্ত ব্রিজ

বগীবিল সেতু: অসমের ব্রহ্মপুত্র নদের উপরে নির্মিত বগীবিল সেতু। এটি ভারতের দীর্ঘতম দ্বিতল সেতু হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। ৪.৯ কিলোমিটার বিস্তৃত এই সেতুটি ৬০ টন ওজনের যুদ্ধ ট্যাঙ্ক চলাচল সহ যুদ্ধবিমানও বহনকারী। সেতুর উপরের তলায় রয়েছে তিন লেনের সড়কপথ। সেই পথে চলছে বাস, ট্রাক, লরিসহ যাবতীয় যানবাহন। আর নীচে ডবল লাইন দিয়ে চলছে ট্রেন।

ভারতের উত্তরপূর্ব রাজ্যগুলোতে বা প্রতিবেশী চিনের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ সীমান্তে দেশটির সবচেয়ে শক্তিশালী ট্যাঙ্ক স্বল্প সময়ের মধ্যে এই সেতু দিয়ে পাঠানো সম্ভব।
১৯৯৭ সালে সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়া। ২০০২ সালে নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ি। পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রয়াত বাজপেয়ির জন্মদিনে দেশটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই সেতুটি উদ্বোধন করেন। দেশটির সবচেয়ে দীর্ঘ এই দ্বিতল সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে ৫ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।

বগীবিল সেতুর দেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সেতুটি ভারতের কাছে কৌশলগত গুরুত্বের কারণ সহ অরুণাচল প্রদেশের তিব্বত সীমান্তে সৈন্য ও যুদ্ধসামগ্রী সরবরাহের ক্ষেত্রে ভারতের ক্ষমতাকে আরও সহজ করেছে।