০৩ নভেম্বর ২০২৫, সোমবার, ১৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

করোনা আতঙ্ককে জয় করে ঘুরে আসুন ঘরের কাছের আর্শিনগর টাকি

অর্পিতা লাহিড়ী
  • আপডেট : ১০ অগাস্ট ২০২১, মঙ্গলবার
  • / 80

অর্পিতা লাহিড়ীঃ ”দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হতে দুই পা ফেলিয়া একটি ধানের শিষের ওপরে একটি শিশিরবিন্দু”। এই রকম অনেক আর্শিনগর আমাদের হাতের মুঠোয় রয়েছে যেখানে করোনা সংক্রমণের ভয়কে জয় করেই ঘুরে আসতে পারেন।

করোনা আতঙ্ককে জয় করে ঘুরে আসুন ঘরের কাছের আর্শিনগর টাকি

ঘরের কাছে আর্শিনগর সেথা পড়শি বসত করে হাত বাড়ালেই সাপ্তাহিক ছুটি কাটাতে।সেই পড়শির বাড়ি যাওয়া যায়। মন ভরে উপভোগ করা যায়। নিসর্গ। এমন একটা গন্তব্য হল টাকি। ওপারে বাংলাদেশ, এপারে উত্তর ২৪ পরগণা জেলার টাকি। ২০২০ সালের সাতই মার্চ দোলের ঠিক আগে তখন করোনা মহামারি হানা দেয়নি ইছামতীর পাড়ে  দুদিন প্রাণভরে নিশ্বাস নেওয়ার জন্য শিয়ালদহ স্টেশন থেকে রওনা দিলাম। ৫০ জনের একটা লম্বা চওড়া দল। চার থেকে ৭০ যার বয়সসীমা। শিয়ালদহ হাসনাবাদ লোকালে সকাল সাতটা ৪০ মিনিটে যাত্রা শুরু।

করোনা আতঙ্ককে জয় করে ঘুরে আসুন ঘরের কাছের আর্শিনগর টাকি

পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগণা জেলায় টাকি অবস্হিত। কলিকাতা থেকে টাকির দুরত্ব ৮০ কিলোমিটার। অবশ্য বাসন্তী হাইওয়ে ধরে গেলে দুরত্ব কমে হয়ে যায় ৭০ কিলোমিটার। সপ্তাহান্তে ছুটি কাটিয়ে আসার জন্য টাকি একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। একদিকে ইছামতি নদী আর ওপারে বাংলাদেশ টাকির বৈচিত্র অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে। পর্যটকরা এখানে এসে ইছামতি নদীতে নৌকা বিহার করে এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে উপভোগ করেন। অসাধারণ অভিজ্ঞতা হবে। যেতে যেতে ভগ্নপ্রাপ্ত জমিদার বাড়ি চোখে পড়বে। টাকি একটি প্রাচীন নগর। অনেক সাহিত্যিকের লেখায় টাকির উল্লেখ আছে। চারিদিকের সমৃদ্ধ, সাংস্কৃতিক পরিবেশে একটি গ্রামীন চালচিত্রের মাঝে টাকির অবস্হান। সপ্তাহ শেষের দুটি দিন নিরিবিলিতে ভলোভাবে কাটিয়ে আসতে পারেন। দশমীতে দুদেশের দুর্গাঠাকুর বিসর্জনের ঢল নামে। তখন যেন কোনো সীমানা থাকে না। মিলে মিশে একাকার হয়ে যায দুই বাংলা।

টাকির দ্রষ্টব্য স্থানগুলি

ইছামতি নদী

এানে ঘুরতে আসা পর্যটকদের কাছে ইছামতি নদী প্রধান ও একমাত্র আকর্ষণ। ইছামতি নদীর ওপর সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত চমৎকার লাগে দেখতে। পর্যটকেরা নৌকায় যেতে দুদিকের সৌন্দর্য্যকে প্রাণভরে উপভোগ করেন। নদীর অপর পাড়ে রয়েছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক সীমানার ধার ঘেষে চলেছি ভাবতেই অন্য রকম রোমাঞ্চ লাগে।

গোলপাতার জঙ্গল

টাকির অদূরে গোল পাতার জঙ্গল অবস্থিত। এখানে গাছের ওপরে গাছগাছালির মাঝে বাঁধানো সিড়ি দিয়ে হেঁটে যেতে ভালই লাগে। আর ঠিক ওপাড়েই বাংলাদেশ। একটু অন্য ধরনের অনুভূতি হবে। স্থানীয়রা গোলপাতার জঙ্গল বললেও।এটি মিনি সুন্দরবন নামেই পরিচিত। রয়েছে শ্বাসমূল উদ্ভিদ ম্যানগ্রোভ এর অরণ্য।

এছাড়া রয়েছে টাকি রামকৃষ্ণ মিশন, তিননদীর মোহনা, যেখানে মিশেছে কালিন্দী, বিদ্যাধরী এবং ইছামতী। রয়েছে ত্রিশক্তি মন্দির, কুলেশ্বরী কালী মন্দির।

ভোরবেলা ইছামতীর পাড় ধরে বেরিয়ে পড়ুন হাঁটতে, নানা জানা – অজানা পাখির ডাক আপনাকে মুগ্ধ করবে। এরই মাঝে দেখবেন বিএফ জওয়ানদের অতন্দ্র প্রহরা। দিব্যি কেটে যাবে দুটি দিন।

খাওয়া দাওয়া, নির্ভেজাল বাঙালি খাওয়া আপনার রসনা তৃপ্তি করবে।

টাকি গড় আবহাওয়া

শীত ও শীতের আগের মুহুর্তে এখানে গেলে ভাল লাগবে। তবে বর্ষায় অনেকে এখানে ঘুরতে আসে। প্রকৃতিকে উপভোগ করতে আসে।

কিভাবে  যাবেন টাকি?

ট্রেন

শিয়ালদহ থেকে টাকি যেতে হলে হাসনাবাদ লোকালে যাবেন। সময় লাগবে ২.০০ ঘন্টার মতো।

বাস ও গাড়ি: এছাড়া কলিকাতা থেকে বাসে সরাসরি টাকিতে যেতে পারেন। ঘন ঘন বাস রয়েছে। এছাড়া গাড়ী তো রয়েছেই। গাড়ী নিয়ে গেলে বারাসাত হয়ে বারাসাত টাকি রোড ধরতে হবে এছাড়া বাসন্তী হাইওয়ে ধরে গেলে প্রথমে মালঞ্চ। তারপর ব্রীজ টপকে সোজা টাকি। এই রাস্তায় অনেকটা কম সময় লাগে।

থাকার জায়গা

টাকিতে হোটেলের সংখ্যা নেহাৎ কম নয়। স্বল্প মূল্য থেকে শুরু করে বেশী বাজেটের হোটেল সবই পাওয়া যায়। হোটেল, কটেজ ছাড়াও মিউনিসিপ্যালিটির গেস্ট হাউস আছে। রূপসী বাংলা, সানরাইজ গেস্ট হাউস সহ একাধিক হোটেল রয়েছে যা থেকে ঘরে বসেই উপভোগ করবেন ইছামতীর সৌন্দর্য।

টাকিতে যানবাহন

ক) মোটর ভ্যান

খ) টোটো

গ) অটো

ঘ) বাস

ঙ) রিক্সা ভ্যান

তবে টাকি যেহেতু একেবারে সীমান্তবর্তী।এলাকা তাই সঙ্গে রাখতেই হবে সরকারি সচিত্র পরিচয়পত্র। মিনি সুন্দরবন যেতে গেলেও চেকপোস্টে পরিচয় পত্র জমা রেখে যেতে হবে। তাহলে আর কেন সব তথ্য রইলো হাতের মুঠোয় ছোট্টো অবসরে ঘুরে আসুন টাকি।

করোনা আতঙ্ককে জয় করে ঘুরে আসুন ঘরের কাছের আর্শিনগর টাকি

সঙ্গের ছবি প্রতিবেদক।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

করোনা আতঙ্ককে জয় করে ঘুরে আসুন ঘরের কাছের আর্শিনগর টাকি

আপডেট : ১০ অগাস্ট ২০২১, মঙ্গলবার

অর্পিতা লাহিড়ীঃ ”দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হতে দুই পা ফেলিয়া একটি ধানের শিষের ওপরে একটি শিশিরবিন্দু”। এই রকম অনেক আর্শিনগর আমাদের হাতের মুঠোয় রয়েছে যেখানে করোনা সংক্রমণের ভয়কে জয় করেই ঘুরে আসতে পারেন।

করোনা আতঙ্ককে জয় করে ঘুরে আসুন ঘরের কাছের আর্শিনগর টাকি

ঘরের কাছে আর্শিনগর সেথা পড়শি বসত করে হাত বাড়ালেই সাপ্তাহিক ছুটি কাটাতে।সেই পড়শির বাড়ি যাওয়া যায়। মন ভরে উপভোগ করা যায়। নিসর্গ। এমন একটা গন্তব্য হল টাকি। ওপারে বাংলাদেশ, এপারে উত্তর ২৪ পরগণা জেলার টাকি। ২০২০ সালের সাতই মার্চ দোলের ঠিক আগে তখন করোনা মহামারি হানা দেয়নি ইছামতীর পাড়ে  দুদিন প্রাণভরে নিশ্বাস নেওয়ার জন্য শিয়ালদহ স্টেশন থেকে রওনা দিলাম। ৫০ জনের একটা লম্বা চওড়া দল। চার থেকে ৭০ যার বয়সসীমা। শিয়ালদহ হাসনাবাদ লোকালে সকাল সাতটা ৪০ মিনিটে যাত্রা শুরু।

করোনা আতঙ্ককে জয় করে ঘুরে আসুন ঘরের কাছের আর্শিনগর টাকি

পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগণা জেলায় টাকি অবস্হিত। কলিকাতা থেকে টাকির দুরত্ব ৮০ কিলোমিটার। অবশ্য বাসন্তী হাইওয়ে ধরে গেলে দুরত্ব কমে হয়ে যায় ৭০ কিলোমিটার। সপ্তাহান্তে ছুটি কাটিয়ে আসার জন্য টাকি একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। একদিকে ইছামতি নদী আর ওপারে বাংলাদেশ টাকির বৈচিত্র অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে। পর্যটকরা এখানে এসে ইছামতি নদীতে নৌকা বিহার করে এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে উপভোগ করেন। অসাধারণ অভিজ্ঞতা হবে। যেতে যেতে ভগ্নপ্রাপ্ত জমিদার বাড়ি চোখে পড়বে। টাকি একটি প্রাচীন নগর। অনেক সাহিত্যিকের লেখায় টাকির উল্লেখ আছে। চারিদিকের সমৃদ্ধ, সাংস্কৃতিক পরিবেশে একটি গ্রামীন চালচিত্রের মাঝে টাকির অবস্হান। সপ্তাহ শেষের দুটি দিন নিরিবিলিতে ভলোভাবে কাটিয়ে আসতে পারেন। দশমীতে দুদেশের দুর্গাঠাকুর বিসর্জনের ঢল নামে। তখন যেন কোনো সীমানা থাকে না। মিলে মিশে একাকার হয়ে যায দুই বাংলা।

টাকির দ্রষ্টব্য স্থানগুলি

ইছামতি নদী

এানে ঘুরতে আসা পর্যটকদের কাছে ইছামতি নদী প্রধান ও একমাত্র আকর্ষণ। ইছামতি নদীর ওপর সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত চমৎকার লাগে দেখতে। পর্যটকেরা নৌকায় যেতে দুদিকের সৌন্দর্য্যকে প্রাণভরে উপভোগ করেন। নদীর অপর পাড়ে রয়েছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক সীমানার ধার ঘেষে চলেছি ভাবতেই অন্য রকম রোমাঞ্চ লাগে।

গোলপাতার জঙ্গল

টাকির অদূরে গোল পাতার জঙ্গল অবস্থিত। এখানে গাছের ওপরে গাছগাছালির মাঝে বাঁধানো সিড়ি দিয়ে হেঁটে যেতে ভালই লাগে। আর ঠিক ওপাড়েই বাংলাদেশ। একটু অন্য ধরনের অনুভূতি হবে। স্থানীয়রা গোলপাতার জঙ্গল বললেও।এটি মিনি সুন্দরবন নামেই পরিচিত। রয়েছে শ্বাসমূল উদ্ভিদ ম্যানগ্রোভ এর অরণ্য।

এছাড়া রয়েছে টাকি রামকৃষ্ণ মিশন, তিননদীর মোহনা, যেখানে মিশেছে কালিন্দী, বিদ্যাধরী এবং ইছামতী। রয়েছে ত্রিশক্তি মন্দির, কুলেশ্বরী কালী মন্দির।

ভোরবেলা ইছামতীর পাড় ধরে বেরিয়ে পড়ুন হাঁটতে, নানা জানা – অজানা পাখির ডাক আপনাকে মুগ্ধ করবে। এরই মাঝে দেখবেন বিএফ জওয়ানদের অতন্দ্র প্রহরা। দিব্যি কেটে যাবে দুটি দিন।

খাওয়া দাওয়া, নির্ভেজাল বাঙালি খাওয়া আপনার রসনা তৃপ্তি করবে।

টাকি গড় আবহাওয়া

শীত ও শীতের আগের মুহুর্তে এখানে গেলে ভাল লাগবে। তবে বর্ষায় অনেকে এখানে ঘুরতে আসে। প্রকৃতিকে উপভোগ করতে আসে।

কিভাবে  যাবেন টাকি?

ট্রেন

শিয়ালদহ থেকে টাকি যেতে হলে হাসনাবাদ লোকালে যাবেন। সময় লাগবে ২.০০ ঘন্টার মতো।

বাস ও গাড়ি: এছাড়া কলিকাতা থেকে বাসে সরাসরি টাকিতে যেতে পারেন। ঘন ঘন বাস রয়েছে। এছাড়া গাড়ী তো রয়েছেই। গাড়ী নিয়ে গেলে বারাসাত হয়ে বারাসাত টাকি রোড ধরতে হবে এছাড়া বাসন্তী হাইওয়ে ধরে গেলে প্রথমে মালঞ্চ। তারপর ব্রীজ টপকে সোজা টাকি। এই রাস্তায় অনেকটা কম সময় লাগে।

থাকার জায়গা

টাকিতে হোটেলের সংখ্যা নেহাৎ কম নয়। স্বল্প মূল্য থেকে শুরু করে বেশী বাজেটের হোটেল সবই পাওয়া যায়। হোটেল, কটেজ ছাড়াও মিউনিসিপ্যালিটির গেস্ট হাউস আছে। রূপসী বাংলা, সানরাইজ গেস্ট হাউস সহ একাধিক হোটেল রয়েছে যা থেকে ঘরে বসেই উপভোগ করবেন ইছামতীর সৌন্দর্য।

টাকিতে যানবাহন

ক) মোটর ভ্যান

খ) টোটো

গ) অটো

ঘ) বাস

ঙ) রিক্সা ভ্যান

তবে টাকি যেহেতু একেবারে সীমান্তবর্তী।এলাকা তাই সঙ্গে রাখতেই হবে সরকারি সচিত্র পরিচয়পত্র। মিনি সুন্দরবন যেতে গেলেও চেকপোস্টে পরিচয় পত্র জমা রেখে যেতে হবে। তাহলে আর কেন সব তথ্য রইলো হাতের মুঠোয় ছোট্টো অবসরে ঘুরে আসুন টাকি।

করোনা আতঙ্ককে জয় করে ঘুরে আসুন ঘরের কাছের আর্শিনগর টাকি

সঙ্গের ছবি প্রতিবেদক।