লস অ্যাঞ্জেলেসে জারি কারফিউ, বিক্ষোভ থামাতে গণগ্রেফতার

- আপডেট : ১১ জুন ২০২৫, বুধবার
- / 57

Members of law enforecement stand guard after curfew, as protests against federal immigration sweeps continue, in downtown Los Angeles, California, U.S. June 10, 2025. REUTERS/Leah Millis
পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: ক্যালিফোর্নিয়ায় চলমান অভিবাসনবিরোধী অভিযানের বিরুদ্ধে কয়েক দিন ধরে বিক্ষোভে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের ডাউনটাউন এলাকা। এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার রাতে শহরের প্রশাসন কারফিউ জারি করেছে। লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র কারেন ব্যাস জানিয়েছেন, রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত এই কারফিউ বলবৎ থাকবে এবং এটি শহরের প্রায় এক বর্গমাইল এলাকা কভার করবে।
তিনি আরও জানান, পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে কারফিউ কয়েক দিন চলতে পারে। সেই সঙ্গে তিনি নাগরিকদের পরামর্শ তারা মনে করলে সাময়িক শহর ছেড়ে যেতে পারেন।কারফিউ কার্যকরের পরে শহরের বিভিন্ন রাস্তায় লোকজন জমা হতে শুরু করলে পুলিশ ‘গণগ্রেফতার’ অভিযান শুরু করে। এক্সে লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ বিভাগ জানায়, ‘কারফিউ জারি হওয়ায় অভিবাসনবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেওয়া দলগুলোর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং গণগ্রেফতার শুরু হয়েছে।’
এই ঘটনার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটও কম উত্তপ্ত নয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্যালিফোর্নিয়ার বিক্ষোভকারীদের ‘পেশাদার উসকানিদাতা’ ও ‘জন্তু’ বলে কটাক্ষ করেছেন। উত্তর ক্যারোলিনার ফোর্ট ব্র্যাগে সেনা সদস্যদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন। বক্তব্য চলাকালীন সেনাদের অনেকেই করতালি ও উল্লাসে সাড়া দেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রেসিডেন্টের এই বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক নিরপেক্ষতার নীতির পরিপন্থী। ফোর্ট ব্র্যাগের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করতে নিষেধ করা হয়েছিল।
এটা উল্লেখযোগ্য যে, তিন দশকের মধ্যে এই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা মোকাবেলায় সক্রিয় সেনা (মেরিন) মোতায়েন করা হয়েছে। একইসঙ্গে প্রায় চার হাজার ন্যাশনাল গার্ড সদস্য শহরের বিভিন্ন অংশে মোতায়েন রয়েছে।
ক্যালিফোর্নিয়ার বেশ কয়েকজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি জানিয়েছেন, ট্রাম্পের হস্তক্ষেপে বিক্ষোভ আরও তীব্র হয়েছে। মঙ্গলবার রাজ্যের কর্মকর্তারা সানফ্রান্সিসকোর এক ফেডারেল বিচারকের কাছে অনুরোধ করেছেন যাতে ন্যাশনাল গার্ড বা সেনাবাহিনীকে আইন-শৃঙ্খলার কাজে ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। গভর্নর গাভিন নিউসাম অভিযোগ করেছেন, ট্রাম্পই চলতি অশান্তির আগুনে ঘি ঢালছেন। অন্যদিকে, ট্রাম্পের দাবি, ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন না করলে লস অ্যাঞ্জেলেস ধ্বংস হয়ে যেত। নিরাপত্তা বাহিনী এখনও পর্যন্ত দু-হাজারের বেশি বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করেছে।
লস অ্যাঞ্জেলেসে চলমান পরিস্থিতি শুধু অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ নয়, বরং গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার প্রশ্নে জনগণের জোরালো অবস্থানও প্রকাশ করছে। অন্যদিকে, সেনা মোতায়েন ও প্রশাসনিক শক্তি প্রদর্শন নিয়ে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে, যা আমেরিকার গণতান্ত্রিক চর্চা ও নাগরিক স্বাধীনতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলছে।
এদিকে, বেআইনি অভিবাসনকারীদের গ্রেফতারের অভিযান ঘিরে অশান্তি ছড়াতে শুরু করেছে টেক্সাস, শিকাগোতেও। একাধিক সূত্র জানাচ্ছে, গোটা মার্কিন মুলুকে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই)-এর অফিসগুলির নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এই সরকারি বাহিনীকেই ট্রাম্প প্রশাসন দিনে অন্তত তিন হাজার বেআইনি অভিবাসী চিহ্নিত করার নির্দেশ দিয়েছে।