নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সিবিআই অনুসন্ধানের নির্দেশ বহাল ডিভিশন বেঞ্চে

- আপডেট : ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার
- / 0
মোল্লা জসিমউদ্দিন: শুক্রবার পাহাড়ে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সিবিআই অনুসন্ধানের নির্দেশ বহাল রাখল কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। এদিন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি হরিশ টন্ডন এবং বিচারপতি মধুরেশ প্রসাদের ডিভিশন বেঞ্চ বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর নির্দেশ বহাল রাখল। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই অনুসন্ধানে রাজ্যের স্থগিতাদেশের আবেদন খারিজ করলো ডিভিশন বেঞ্চ ।
সম্প্রতি বেনামি চিঠিতে পাহাড়ে নিয়োগ নিয়ে বিস্ফোরক অভিযোগ উঠে।গত ৯ এপ্রিল সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখতে সিবিআই-কে অনুসন্ধানের নির্দেশ দেন কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু। তারই বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে যায় রাজ্য সরকার। কিন্তু এদিন সেই আর্জি খারিজ হয়ে গেল।জিটিএ-তে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিনয় তামাং, অনীত থাপাদের আমলেই দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দার্জিলিং এলাকার বিজেপি বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মার অভিযোগ, -‘বিনয়-অনীতদের সুপারিশেই চাকরি পেয়েছেন শিক্ষক, শিক্ষিকারা’। উল্লেখ্য, ওই সময়কালে জিটিএ এলাকায় প্রাথমিক স্কুলে ১২১ জন, আপার প্রাইমারি স্কুলে ৩১৩ জন এবং হাইস্কুলে ৫৯ জনকে অন্যায়ভাবে চাকরি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন এই বিজেপি বিধায়ক।পাহাড়ের স্কুলগুলিতে বড়সড় দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসতেই তাতে রাজ্যের শাসক দলের অনেকের নাম জড়িয়েছে।
এ সংক্রান্ত একটি বেনামি চিঠি সামনে আসার পরেই সিবিআই অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চ। তবে সিবিআই অনুসন্ধানে আপত্তি জানিয়ে ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছিল রাজ্য সরকার। তাতে অবশ্য লাভ হল না। এ বিষয়ে রাজ্য সরকারকে রিপোর্ট জমা দিতে বলেছিল ডিভিশন বেঞ্চ। অবশেষে তাতে সিবিআই তদন্তই বহাল রইল।জানা গেছে , কলকাতা হাইকোর্ট সিবিআই অনুসন্ধানের নির্দেশ দিতেই জিটিএ-র নিয়োগ দুর্নীতিতে বিধাননগর উত্তর থানায় এফআইআর দায়ের করে রাজ্য স্কুল শিক্ষা দফতর।
সেই এফআইআরে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সহ একাধিক তৃণমূল নেতার নাম রয়েছে। এর ভিত্তিতে সিবিআই অনুসন্ধান বন্ধের আর্জি জানায় রাজ্য সরকার। আদালত এই আবেদনের ভিত্তিতে রাজ্য সরকারকে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু এদিন শেষমেশ তাতে সিবিআই তদন্তেরই নির্দেশ বহাল রাখল কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ।এই মামলায় গত ৯ এপ্রিল সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট এর সিঙ্গেল বেঞ্চ। হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর ওই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ডিভিশন বেঞ্চে মামলা করেছিল রাজ্য।সিঙ্গল বেঞ্চের ওই নির্দেশ বহাল রেখে ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, পাহাড়ে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করবে সিবিআই-ই।ঘটনার সূত্রপাত, দক্ষিণবঙ্গের মুর্শিদাবাদের গোঠা হাইস্কুলে অবৈধভাবে শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগে মামলা হয় কলকাতা হাইকোর্টে। সেই সূত্রেই আদালতের কাছে এসে পৌঁছয় কিছু বেনামী চিঠি।
চিঠির সূত্র ধরে সামনে আসে জিটিএর অন্তর্গত স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ। এ বিষয়ে আগে সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি। কিন্তু তাতে বিশেষ অগ্রগতি না হওয়ায় গত ৯ এপ্রিল বিচারপতি সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন। চিঠিতে দাবি করা হয়েছে, ওই নিয়োগ দুর্নীতি তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং বিনয় তামাং-এর ষড়যন্ত্র । এমনকী এই দুর্নীতি সংগঠিত করার পিছনে একজন ডিআই এবং তৃণমূল ছাত্রনেতা তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্যের নামও উঠে আসছে বলে অভিযোগ। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতার হাত আছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে জিটিএ এলাকায় শিক্ষক নিয়োগ শুরু হয়। দুর্নীতির বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই সেই বছর মার্চ মাসে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের হয়।
কলকাতা হাইকোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার পরই গত ১১ এপ্রিল ওই মামলায় রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী, জেলবন্দি পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সহ ৮জনের নামে এফআইআর দায়ের করে রাজ্য পুলিশ।এফআইআরে পার্থ ছাড়াও নাম রয়েছে অনেকেরই। প্রত্যেকের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য একাধিক ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ।কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ এদিন সিবিআই অনুসন্ধানের নির্দেশ কে বহাল রাখলো।