০৭ অক্টোবর ২০২৫, মঙ্গলবার, ২০ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়

আদিবাসী নারীদের পৈতৃক সম্পত্তিতে সমান অধিকার

মারুফা খাতুন
  • আপডেট : ১৪ অগাস্ট ২০২৫, বৃহস্পতিবার
  • / 167

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক : এক ঐতিহাসিক রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট, আদিবাসী নারীদের তাদের পিতার সম্পত্তিতে সমান অংশ পাওয়ার অধিকার স্বীকৃত হয়েছে। এই রায়কে ভারতের আদিবাসী নারীদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ আদিবাসী সমাজে দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত পুরুষতান্ত্রিক প্রথা নারীদের উত্তরাধিকার ও সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে। যদিও আদিবাসী সমাজ তুলনামূলকভাবে সমতাভিত্তিক বলে পরিচিত, তবুও নারীর সমঅধিকার সংক্রান্ত বহু সাংবিধানিক বিধান কার্যত উপেক্ষিত হয়েছে।

লিখিত আইন ছাড়াও প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী ভূমি ও সম্পত্তি সাধারণত পিতা থেকে পুত্রে যায়, ফলে নারীরা মালিকানার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। নারীদের ভূমি ব্যবহারের সীমিত সুযোগ থাকলেও মালিকানা অধিকার সাধারণত দেওয়া হয়নি। কিছু ক্ষেত্রে, যেমন সাঁওতাল সম্প্রদায়ের তাবেন জোম প্রথায় বা অন্যত্র খোরপোষ নামে পরিচিত প্রথায়, বিবাহিত নারীকে জীবিকা নির্বাহের জন্য জমি ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হয়, কিন্তু মালিকানা নয়।

আরও পড়ুন: Supreme Court on VC Appointment: ১২ বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগে সায় ললিত কমিটির

জমির মালিকানা থেকে নারীদের বঞ্চনার পেছনে অনেক সময় ভ্রান্ত ধারণা কাজ করে যেমন, তারা নাকি জমি রক্ষার ক্ষেত্রে দুর্বল বা সহজে বাইরের পুরুষদের প্রভাবিত হয়। এই মানসিকতা নারীকে আরও প্রান্তিক করে এবং অধিকার লঙ্ঘনের সুযোগ বাড়ায়। তবুও জল-জঙ্গল-জমি রক্ষার আন্দোলনে আদিবাসী নারীদের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুন: Pendency in Supreme Court সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে

রামচরণ বনাম সুখরাম মামলায় সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট জানিয়েছে, নারীদের উত্তরাধিকার ও মালিকানার অধিকার কোনো বৈষম্যমূলক প্রথা দ্বারা খর্ব করা যাবে না। আদালত বলেছে, বৈধ প্রথা হতে হলে তা অবশ্যই ধারাবাহিক, নিশ্চিত, যুক্তিসঙ্গত হতে হবে এবং সমতা ও ন্যায়ের সাংবিধানিক মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। রায়ে বলা হয়েছে, যখন কোনো প্রথা সাংবিধানিক অধিকার বা মানবাধিকারের বিরোধী হয়, তখন তা বাতিল করতে হবে।

আরও পড়ুন: গাফিলতি দেখলে যত বড় পদেই থাকুন রেহাই নেই : সুপ্রিম কোর্ট

সংস্কৃতি বা প্রথা কখনো বৈষম্যের ঢাল হতে পারে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রায় শুধু ভারতের জন্য নয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও তাৎপর্যপূর্ণ। তবে আদালতের রায় কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের জন্য আইন সংশোধন, প্রথাগত নেতৃত্বের সঙ্গে সংলাপ এবং সামাজিক সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। আইনের পরিবর্তন যতই গুরুত্বপূর্ণ হোক, সামাজিক মানসিকতার পরিবর্তন ছাড়া নারীদের প্রকৃত সমতা অর্জন সম্ভব নয়।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়

আদিবাসী নারীদের পৈতৃক সম্পত্তিতে সমান অধিকার

আপডেট : ১৪ অগাস্ট ২০২৫, বৃহস্পতিবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক : এক ঐতিহাসিক রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট, আদিবাসী নারীদের তাদের পিতার সম্পত্তিতে সমান অংশ পাওয়ার অধিকার স্বীকৃত হয়েছে। এই রায়কে ভারতের আদিবাসী নারীদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ আদিবাসী সমাজে দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত পুরুষতান্ত্রিক প্রথা নারীদের উত্তরাধিকার ও সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে। যদিও আদিবাসী সমাজ তুলনামূলকভাবে সমতাভিত্তিক বলে পরিচিত, তবুও নারীর সমঅধিকার সংক্রান্ত বহু সাংবিধানিক বিধান কার্যত উপেক্ষিত হয়েছে।

লিখিত আইন ছাড়াও প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী ভূমি ও সম্পত্তি সাধারণত পিতা থেকে পুত্রে যায়, ফলে নারীরা মালিকানার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। নারীদের ভূমি ব্যবহারের সীমিত সুযোগ থাকলেও মালিকানা অধিকার সাধারণত দেওয়া হয়নি। কিছু ক্ষেত্রে, যেমন সাঁওতাল সম্প্রদায়ের তাবেন জোম প্রথায় বা অন্যত্র খোরপোষ নামে পরিচিত প্রথায়, বিবাহিত নারীকে জীবিকা নির্বাহের জন্য জমি ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হয়, কিন্তু মালিকানা নয়।

আরও পড়ুন: Supreme Court on VC Appointment: ১২ বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগে সায় ললিত কমিটির

জমির মালিকানা থেকে নারীদের বঞ্চনার পেছনে অনেক সময় ভ্রান্ত ধারণা কাজ করে যেমন, তারা নাকি জমি রক্ষার ক্ষেত্রে দুর্বল বা সহজে বাইরের পুরুষদের প্রভাবিত হয়। এই মানসিকতা নারীকে আরও প্রান্তিক করে এবং অধিকার লঙ্ঘনের সুযোগ বাড়ায়। তবুও জল-জঙ্গল-জমি রক্ষার আন্দোলনে আদিবাসী নারীদের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুন: Pendency in Supreme Court সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে

রামচরণ বনাম সুখরাম মামলায় সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট জানিয়েছে, নারীদের উত্তরাধিকার ও মালিকানার অধিকার কোনো বৈষম্যমূলক প্রথা দ্বারা খর্ব করা যাবে না। আদালত বলেছে, বৈধ প্রথা হতে হলে তা অবশ্যই ধারাবাহিক, নিশ্চিত, যুক্তিসঙ্গত হতে হবে এবং সমতা ও ন্যায়ের সাংবিধানিক মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। রায়ে বলা হয়েছে, যখন কোনো প্রথা সাংবিধানিক অধিকার বা মানবাধিকারের বিরোধী হয়, তখন তা বাতিল করতে হবে।

আরও পড়ুন: গাফিলতি দেখলে যত বড় পদেই থাকুন রেহাই নেই : সুপ্রিম কোর্ট

সংস্কৃতি বা প্রথা কখনো বৈষম্যের ঢাল হতে পারে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রায় শুধু ভারতের জন্য নয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও তাৎপর্যপূর্ণ। তবে আদালতের রায় কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের জন্য আইন সংশোধন, প্রথাগত নেতৃত্বের সঙ্গে সংলাপ এবং সামাজিক সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। আইনের পরিবর্তন যতই গুরুত্বপূর্ণ হোক, সামাজিক মানসিকতার পরিবর্তন ছাড়া নারীদের প্রকৃত সমতা অর্জন সম্ভব নয়।