অভিমানী ফারুখ ইঞ্জিনিয়ার, যেখানে বেশিরভাগ সময় খেলেছি, সেই ভারতে পাইনি এমন সম্মান

- আপডেট : ২৪ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার
- / 50
পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: ফারুখ ইঞ্জিনিয়ার, ছিলেন সেরা ভারতীয় ক্রিকেটারদের একজন। যিনি তার খেলোয়াড়ী জীবনে এক অসাধারণ উইকেটরক্ষক-ব্যাটার ছিলেন। প্রায় ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে আন্তর্জাতিক কেরিয়ারে, ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন ভারতীয় দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ। উইকেটের পিছনে বিরাট অবদান রাখার পাশাপাশি একজন সম্পূর্ণ স্টাইলিশ এবং আক্রমণাত্মক ব্যাটারও ছিলেন । একজন সত্যিকারের বিনোদনপ্রেমী এবং অসাধারণ ব্যক্তিত্ব।
জাতীয় দলের পাশাপাশি কাউন্টি ক্রিকেট দল ল্যাঙ্কাশায়ারের হয়ে দীর্ঘ সময় অভাবনীয় ক্রিকেট খেলেছেন। আর তারই স্বীকৃতি হিসেবে এবার ফারুক ইঞ্জিনিয়ার এবং ক্লাইভ লয়েড, দুই কিংবদন্তি ক্রিকেটারকে অনন্য সম্মান দিল তাদের প্রাক্তন কাউন্টি দল ল্যাঙ্কাশায়ার। বুধবার ম্যাঞ্চেস্টারে তাদের নামে স্ট্যান্ড উদ্বোধন হল। আর সেখানে আবেগে ভেসে গিয়ে কিছুটা হলেও অভিমানী হয়ে ফারুক বলে ফেললেন, যে দেশের হয়ে এত ক্রিকেট খেললাম, তারা আজ পর্যন্ত এমন সম্মান দিল না।
পোদ্দার কলেজে পড়াশোনা করার পর , ফারুখ ইঞ্জিনিয়ার মুম্বইয়ের হয়ে খেলার মাধ্যমে তার প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট কেরিয়ার শুরু করেন। রাজ্যের হয়ে বেশ কয়েকটি অভাবনীয় চিত্তাকর্ষক মরসুম খেলার পর, ১৯৬১ সালে ভারতের টেস্ট দলের হয়ে খেলার জন্য নির্বাচিত হন। ফারুক তার পেশাদার কেরিয়ারে ভারতের হয়ে কমপক্ষে ৪৬টি টেস্ট ম্যাচে খেলেন। ১৯৭৪ সালে অভিষেকের পর, ইঞ্জিনিয়ার মোট পাঁচটি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে খেলেন।১৯৬১ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ভারতের উইকেটরক্ষক হিসেবে তিনি ছিলেন অন্যতম সেরা খেলোয়াড়।
ফারুক তার স্টাইলিশ কিন্তু আক্রমণাত্মক ব্যাটিং স্টাইল এবং অবিশ্বাস্য উইকেটকিপিং এর জন্য বিখ্যাত ছিলেন। ব্যাটিং, কিপিং এবং লেগ ব্রেক বোলার হিসেবেও তার সুনাম ছিল। যার ফলে ১৯৬৫ সালে তিনি ভারতের বর্ষসেরা ক্রিকেটার হিসেবে নির্বাচিত হন। ইঞ্জিনিয়ার ১৯৭০ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে এবং ১৯৭১-৭২ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বিশ্ব একাদশের উইকেটরক্ষক হিসেবে সুযোগ পেয়েছিলেন। এতে তিনি ধীরে ধীরে বিশ্ব ক্রিকেট এবং ভারতীয় ক্রিকেটে একজন অত্যন্ত বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠেন।
ভারতীয় দলের হয়ে খেলার পাশাপাশি ফারুখ ১৯৬৮ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত ল্যাঙ্কাশায়ারের হয়ে ১৭৫টি ম্যাচে খেলেন। করেন ৫,৯৪২ রান। উইকেটের পেছনে দাড়িয়ে নিয়েছেন ৪২৯টি ক্যাচ। স্টাম্পিং করেছেন ৩৫টি। তাঁর আগমন ল্যাঙ্কাশায়ার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। কারণ, ফারুখ ওই কাউন্টি দলে যোগ দেওয়ার আগের ১৫ বছর শিরোপাহীন ছিল ল্যাঙ্কাশায়ার। কিন্তু ফারুখ আসার পর ১৯৭০ থেকে ১৯৭৫ সালের মধ্যে চারবার জিলেট কাপ জেতে ল্যাঙ্কাশায়ার। পাশাপাশি প্রাক্তন ক্যারিবিয়ান ক্রিকেট তারকা ক্লাইভ লয়েডও প্রায় দুই দশক কাটিয়েছেন ল্যাঙ্কাশায়ারে। ১৯৭০-এর দশকে বিদেশি কোনও ক্রিকেটার হিসেবে ইংলিশ কাউন্টি ক্লাবে তাঁর যুক্ত হওয়াটা বৈপ্লবিকও বটে।
ল্যাঙ্কাশায়ারের হয়ে দীর্ঘদিন সাফল্যের সঙ্গে খেলে অজস্র ট্রফি এনে দেওয়ায় ফারুখ ইঞ্জিনিয়ার ও ক্লাইভ লয়েডকে কিংবদন্তি ম্যাঞ্চেস্টারে ভারত – ইংল্যান্ড চতুর্থ টেস্টে অনন্য সম্মান দিল তাদের প্রাক্তন কাউন্টি দল। ম্যাঞ্চেস্টারে তাদের নামে স্ট্যান্ড উদ্বোধন করা হল। বিদেশের মাটিতে এমন সম্মান পেয়ে আবেগাপ্লুত ইঞ্জিনিয়ার কিছুটা অভিমানের সুরে বলেই দিলেন, ‘ বিদেশের মাটিতে এমন সম্মান পেয়ে আজ আমি খুব খুশি। আজকের দিনটা শুধু আমার জন্যই নয়, গোটা ভারতের জন্যও গর্বের মুহূর্ত। আমি কখনও ভাবিনি আমাদের সম্মান জানাতে এমন কিছু করা হবে। ঈশ্বর মহান। তবে একটাই আক্ষেপ, নিজের দেশে, যেখানে আমি বেশিরভাগ সময় খেলেছি, সেখানে কখনও এমন স্বীকৃতি পাইনি। যাই হোক, আমার নিজের দেশে স্বীকৃতি না পাওয়ার হতাশা আজ কিছুটা হলেও ভুলিয়ে দিল এই সম্মান।’
একই সঙ্গে জাতীয় দলের হয়ে দীর্ঘদিন খেলার সুযোগ পাওয়ার জন্য তিনি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, সারাজীবন অসাধারণ ক্রিকেট খেলার জন্য ফারুখকে ১৯৭৩ সালে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করা হয়েছিল। ২০২৪ সালে তাকে শুধু জীবনকৃতি সম্মান দেয় বিসিসিআই।