পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: দরজায় কড়া নাড়ছে মুসলিমদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-ফিতর (Eid ul-Fitr)। ইতিমধ্যেই ঘরে ঘরে শুরু হয়ে গেছে ঈদের আনন্দ। শুধু ঈদ নেই গাজার মানুষদের। আর সব দেশের মতো ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে পারে না ফিলিস্তিন। তাদের আছে শুধুই আর্তনাদ, রক্ত, ক্ষুধা। বোমার অব্যাহত আঘাত। ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টের (আইসিসি) আদেশে যুদ্ধাপরাধী নেতানিয়াহু অব্যাহতভাবে সেখানে গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। এই পবিত্র রমযান ও ঈদের আনন্দকেও তারা রক্তের নদীতে মিশিয়ে দিয়েছে। এবারও দেশটির নাগরিকরা স্বজনদের লাশ কাঁধে বয়েই ঈদ উদযাপন করবে। গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভেঙে গাজায় দখলদার ইসরাইল নির্বিচারে বোমাবর্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনিদের মনে ঈদের আনন্দ কতটুকু রেখেছে, সেই প্রশ্ন তোলাও বাড়াবাড়ি।
ইসরাইল এবং যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে যে, ঈদের (Eid ul-Fitr) জন্য কোনও যুদ্ধবিরতি নেই। বলা বাহুল্য,মুক্তিকামী যোদ্ধা হামাসের সঙ্গে প্রথম দফা যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভাঙে ১৮ই মার্চ। তারপর থেকে অব্যাহতভাবে নির্বিচারে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। এ পর্যন্ত প্রায় ৯০০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইল। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৯৮৪ জন। সারা বিশ্বের চোখের সামনে ঘটে যাচ্ছে এ ঘটনা। কিন্তু কারও মুখে কোনও ‘রা’ নেই। যেন ইসরাইলকে লাইসেন্স দিয়ে দেওয়া হয়েছে গাজার মানুষদের মেরে রক্তের গঙ্গা বইয়ে দেওয়ার। হাত-পা হারানো, পিতা-মাতা, ভাইবোন হারানো ছোট্ট ছোট্ট শিশুর যে বীভৎস ছবি, ভিডিয়ো প্রকাশ পাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, টেলিভিশনের পর্দায়- তাতে কারও বিবেক সামান্য পরিমাণে আন্দোলিত হচ্ছে কিনা তা সন্দেহ রাখে! পাশাপাশি নভেম্বরে হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়ার পর প্রথমবারের মতো লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ভয়াবহ বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। দক্ষিণ লেবাননেও তারা অব্যাহত হামলা চালাচ্ছিল। গাজায় সব রকম মানবিক সহায়তা ও খাদ্য সরবরাহ কমপক্ষে তিন সপ্তাহ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরাইল।
আরও পড়ুন: এক্স বিক্রি করলেন ইলন মাস্ক!
রাষ্ট্রসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি সতর্ক করেছে, আর মাত্র ২ সপ্তাহের খাবার তাদের কাছে অবশিষ্ট আছে। যার কারণে ফিলিস্তিনে হাজার হাজার মানুষ ভয়াবহ অনাহারে, পুষ্টিহীনতায় ভুগছেন। বিশ্বজুড়ে যখন মুসলিমের ঘরে ঘরে আনন্দের হাওয়া, তখন ফিলিস্তিনিরা কোনওমতে উদোরপুর্তি করার জন্য খাবার পাচ্ছে না। এরই মধ্যে ইসরাইলের হামলায় শহিদের সংখ্যা ৫০,২০৮ ছাড়িয়ে গেছে। আহত হয়েছেন ১,১৩,৯১০ জন। তবে গাজার মিডিয়া অফিসের হিসাবে শহিদের সংখ্যা ৬১,৭০০। এই সংখ্যা কয়েকগুন বাড়তে পারে। কারণ, ধ্বংসস্তূপের নিচে যে অসংখ্য গাজাবাসী আটকা পড়ে আছেন তাদেরকে এই সংখ্যার মধ্যে ধরা হয়নি। মুসলিম বিশ্বে না হলেও ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে পালিত হয়েছে আল কুদস দিবস। পবিত্র রমযান মাষের শেষ শুক্রবারকে জুমাতুল বিদা ও আল কুদস দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এটি হল যায়নবাদী ইভেন্টের বিরুদ্ধে এবং ফিলিস্তিনপন্থি একটি ইভেন্ট। শিকাগোর বিক্ষোভ থেকে স্লোগান দেওয়া হচ্ছিল- ‘বর্ণবাদ: দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য খারাপ, ফিলিস্তিনের জন্যও খারাপ’। বিক্ষোভের আশপাশে অনেক মানুষ ছিলেন। তারা বলেছেন, ভয়ে তারা অংশ নিতে পারেননি। কারণ যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প অভিবাসন বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। তার প্রশাসন এই বিক্ষোভ থেকে বহু মানুষকে গ্রেফতার করে দেশ থেকে বের করে দিতে পারে। এরই মধ্যে মাহমুদ খলিল নামে একজন সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে প্রশাসন। তাদেরকে দেশে ফেরত পাঠানো হবে। তবু যারা বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন তারা গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গের জন্য ইসরাইলকে দায়ী করছিলেন।
ওদিকে মিশিগানের কংগ্রেসওমেন রাশিদা তায়েব সহ মিশিগান রাজ্যের মন্ত্রী এবং অন্য নির্বাচিত কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটির কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন অভিবাসন বন্দিশিবির থেকে মাহমুদ খলিলকে মুক্তি দিতে। এ মাসের শুরুর দিকে খলিলকে আটক করা হয়। কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে ফিলিস্তিনপন্থি শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদে যোগ দেওয়ার অপরাধে তাকে আটক করা হয়। রাশিদা তায়েব সহ অন্যরা যৌথ স্বাক্ষরে লেখা এক চিঠিতে বলেছেন, খলিলকে আটক একই সঙ্গে তার অধিকার ও আত্মমর্যাদার জন্য অপমানজনক। অন্যায়ের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে চাইলে এটা তার বিরুদ্ধে হুমকি। আইনকে লঙ্ঘন করে মাহমুদ খলিলকে টার্গেট করার জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওকে দায়ী করা হয়েছে।চিঠিতে আরও বলা হয়, গাজায় ইসরাইলি সরকার সব রকম শাস্তি আরোপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার কারণে খলিলকে টার্গেট করা হয়েছে এটা পরিষ্কার। তাকে টার্গেট করা হয়েছে কারণ, তিনি একজন ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত মার্কিনি। তাকে টার্গেট করা হয়েছে তার জাতীয়তার জন্য।ওদিকে ইসরাইলের অব্যাহত হামলায় গাজায় স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। অবরোধ দেওয়ার ফলে কোনও চিকিৎসা সরঞ্জাম পৌঁছাতে পারছে না সেখানে। হাসপাতালগুলো ভরে যাচ্ছে হতাহত মানুষে। নেই ওষুধ। জীবন বাঁচাতে রক্তের ভীষণ প্রয়োজন। আহতদেরকে কোনোমতে বাঁচিয়ে রাখার জন্য প্রাণপণ লড়াই করছেন চিকিৎসকরা। ওদিকে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর মিডল ইস্টার্ন স্টাডিজ ইসরাইল বিরোধী অবস্থান নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এর প্রেক্ষিতে, ওই সেন্টারটির একাডেমিক লিডারশিপ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।































