১৭ অক্টোবর ২০২৫, শুক্রবার, ৩০ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পবিত্র আশুরা সত্য প্রতিষ্ঠার সাহস জোগায় : ইউনূস

আফিয়া‌‌ নৌশিন
  • আপডেট : ৬ জুলাই ২০২৫, রবিবার
  • / 191

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: পবিত্র আশুরা উপলক্ষে দেওয়া এক বক্তব্যে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আশুরার শিক্ষা আমাদের অন্যায়, জুলুম ও স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে সাহস ও প্রেরণা জোগায়। সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে থাকার আদর্শ এই দিনে আমাদের আত্মিক শক্তি দেয়। শনিবার তিনি আরও বলেন, পবিত্র আশুরার শোকাবহ এই দিনে আমি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসেন (রা.) এবং কারবালার প্রান্তরে শহীদ হওয়া সকল মহামানবকে।

কারবালার যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে একটি গভীর বেদনার অধ্যায়। এই যুদ্ধের মূল কারণ ছিল অন্যায় ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে ন্যায়ের পতাকা তুলে ধরা।
হজরত আলী (রা.)-এর শাহাদতের পর ইসলামী খেলাফতের নেতৃত্বের প্রশ্নে নানা মতপার্থক্য তৈরি হয়। পরবর্তীতে মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান নিজেকে খলিফা ঘোষণা করেন এবং তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁর পুত্র ইয়াজিদ জোরপূর্বক ক্ষমতায় বসে। ইসলামী শরিয়াহ অনুযায়ী, উত্তরাধিকারসূত্রে খিলাফত ভোগ করার কোনো সুযোগ নেই। তাই ইয়াজিদের শাসনব্যবস্থাকে অনেক সাহাবি ও আলেমগণ স্বীকৃতি দেননি।

ইয়াজিদ ছিল এক অত্যাচারী, লোভী ও অনৈতিক শাসক, যার জীবনধারা ইসলামের আদর্শের পরিপন্থী ছিল। সে খেলাফতের নামে দুনিয়াবি ভোগ-বিলাস ও ক্ষমতার অপব্যবহার করত। তার চরিত্র ছিল দুর্নীতিগ্রস্ত এবং সে ইসলামকে রাজনৈতিক হাতিয়ার বানিয়ে নিজের শাসন কায়েম রাখতে চেয়েছিল।
এই অবস্থায় হজরত ইমাম হোসেন (রা.), যিনি নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র এবং ইসলামের এক নিষ্ঠাবান নেতা, ইয়াজিদের অনুগত্য স্বীকারে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, ক্ষ্মএকজন জালিমের সঙ্গে আপস করা ইসলামের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা।

আরও পড়ুন: ফেব্রুয়ারিতে রমযান শুরুর আগেই নির্বাচন – ইউনূসের ঘোষণাকে স্বাগত জানাল বিএনপি

ইমাম হোসেন (রা.) সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়িয়ে পরিবার-পরিজনসহ মক্কা থেকে কুফার পথে রওনা হন। ইয়াজিদের সৈন্যরা কারবালার প্রান্তরে তাঁদের পানি বন্ধ করে দেয় এবং ১০ মহররম ৬১ হিজরিতে নির্মমভাবে তাঁদের শহীদ করে। এই আত্মত্যাগ আজও মুসলমানদের জন্য এক অবিস্মরণীয় দৃষ্টান্ত ; যেখানে ধর্ম, ন্যায় ও মানবিকতার জন্য আত্মোৎসর্গই হয়ে ওঠে চরম প্রতিরোধের প্রতীক।

আরও পড়ুন: উত্তরা মাইলস্টোন কলেজ: বার্ন ইউনিটে ভর্তি ২৮ জনের নাম প্রকাশ

ড. ইউনূস বলেন, তইসলামের সেই সুমহান আদর্শ ; যা শান্তি, সাম্য ও ন্যায়ের ভিত্তিতে দাঁড়িয়ে আছে ; তা রক্ষার জন্য ইমাম হোসেন (রা.)-এর আত্মত্যাগ ইতিহাসে চিরভাস্বর। আজও তাঁর সে আত্মবলিদান বিশ্বমানবতাকে শিখিয়ে দেয়, কীভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হয়।

আরও পড়ুন: জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে চায় ইউনূস সরকার

কারবালার বিয়োগাত্মক ঘটনা ছাড়াও পবিত্র আশুরা ইসলামের ইতিহাসে অন্যতম ফজিলতপূর্ণ একটি দিন বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সমগ্র পৃথিবী সৃষ্টিসহ নানা তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা এদিনে সংঘটিত হয়েছে। হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসুল (সা.) পবিত্র আশুরা উপলক্ষে দুটি রোজা রাখার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন।’ শেষে তিনি বলেন, তআসুন, আমরা এই পবিত্র দিনের আদর্শ হৃদয়ে ধারণ করে সমাজে শান্তি, সংহতি ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠায় নিজ নিজ ভূমিকা রাখি। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে পথ দেখান।দ পাশাপাশি পবিত্র আশুরার এই দিনে মুসলিম উম্মার ঐক্য, সংহতি ও অব্যাহত অগ্রগতি কামনা করেন ড. ইউনূস।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

পবিত্র আশুরা সত্য প্রতিষ্ঠার সাহস জোগায় : ইউনূস

আপডেট : ৬ জুলাই ২০২৫, রবিবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: পবিত্র আশুরা উপলক্ষে দেওয়া এক বক্তব্যে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আশুরার শিক্ষা আমাদের অন্যায়, জুলুম ও স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে সাহস ও প্রেরণা জোগায়। সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে থাকার আদর্শ এই দিনে আমাদের আত্মিক শক্তি দেয়। শনিবার তিনি আরও বলেন, পবিত্র আশুরার শোকাবহ এই দিনে আমি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসেন (রা.) এবং কারবালার প্রান্তরে শহীদ হওয়া সকল মহামানবকে।

কারবালার যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে একটি গভীর বেদনার অধ্যায়। এই যুদ্ধের মূল কারণ ছিল অন্যায় ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে ন্যায়ের পতাকা তুলে ধরা।
হজরত আলী (রা.)-এর শাহাদতের পর ইসলামী খেলাফতের নেতৃত্বের প্রশ্নে নানা মতপার্থক্য তৈরি হয়। পরবর্তীতে মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান নিজেকে খলিফা ঘোষণা করেন এবং তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁর পুত্র ইয়াজিদ জোরপূর্বক ক্ষমতায় বসে। ইসলামী শরিয়াহ অনুযায়ী, উত্তরাধিকারসূত্রে খিলাফত ভোগ করার কোনো সুযোগ নেই। তাই ইয়াজিদের শাসনব্যবস্থাকে অনেক সাহাবি ও আলেমগণ স্বীকৃতি দেননি।

ইয়াজিদ ছিল এক অত্যাচারী, লোভী ও অনৈতিক শাসক, যার জীবনধারা ইসলামের আদর্শের পরিপন্থী ছিল। সে খেলাফতের নামে দুনিয়াবি ভোগ-বিলাস ও ক্ষমতার অপব্যবহার করত। তার চরিত্র ছিল দুর্নীতিগ্রস্ত এবং সে ইসলামকে রাজনৈতিক হাতিয়ার বানিয়ে নিজের শাসন কায়েম রাখতে চেয়েছিল।
এই অবস্থায় হজরত ইমাম হোসেন (রা.), যিনি নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র এবং ইসলামের এক নিষ্ঠাবান নেতা, ইয়াজিদের অনুগত্য স্বীকারে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, ক্ষ্মএকজন জালিমের সঙ্গে আপস করা ইসলামের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা।

আরও পড়ুন: ফেব্রুয়ারিতে রমযান শুরুর আগেই নির্বাচন – ইউনূসের ঘোষণাকে স্বাগত জানাল বিএনপি

ইমাম হোসেন (রা.) সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়িয়ে পরিবার-পরিজনসহ মক্কা থেকে কুফার পথে রওনা হন। ইয়াজিদের সৈন্যরা কারবালার প্রান্তরে তাঁদের পানি বন্ধ করে দেয় এবং ১০ মহররম ৬১ হিজরিতে নির্মমভাবে তাঁদের শহীদ করে। এই আত্মত্যাগ আজও মুসলমানদের জন্য এক অবিস্মরণীয় দৃষ্টান্ত ; যেখানে ধর্ম, ন্যায় ও মানবিকতার জন্য আত্মোৎসর্গই হয়ে ওঠে চরম প্রতিরোধের প্রতীক।

আরও পড়ুন: উত্তরা মাইলস্টোন কলেজ: বার্ন ইউনিটে ভর্তি ২৮ জনের নাম প্রকাশ

ড. ইউনূস বলেন, তইসলামের সেই সুমহান আদর্শ ; যা শান্তি, সাম্য ও ন্যায়ের ভিত্তিতে দাঁড়িয়ে আছে ; তা রক্ষার জন্য ইমাম হোসেন (রা.)-এর আত্মত্যাগ ইতিহাসে চিরভাস্বর। আজও তাঁর সে আত্মবলিদান বিশ্বমানবতাকে শিখিয়ে দেয়, কীভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হয়।

আরও পড়ুন: জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে চায় ইউনূস সরকার

কারবালার বিয়োগাত্মক ঘটনা ছাড়াও পবিত্র আশুরা ইসলামের ইতিহাসে অন্যতম ফজিলতপূর্ণ একটি দিন বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সমগ্র পৃথিবী সৃষ্টিসহ নানা তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা এদিনে সংঘটিত হয়েছে। হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসুল (সা.) পবিত্র আশুরা উপলক্ষে দুটি রোজা রাখার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন।’ শেষে তিনি বলেন, তআসুন, আমরা এই পবিত্র দিনের আদর্শ হৃদয়ে ধারণ করে সমাজে শান্তি, সংহতি ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠায় নিজ নিজ ভূমিকা রাখি। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে পথ দেখান।দ পাশাপাশি পবিত্র আশুরার এই দিনে মুসলিম উম্মার ঐক্য, সংহতি ও অব্যাহত অগ্রগতি কামনা করেন ড. ইউনূস।