১৪ অক্টোবর ২০২৫, মঙ্গলবার, ২৭ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘স্বেচ্ছায় মুসলিমকে বিয়ে করে ইসলাম কবুল করেছি’ আদালত বলল ‘হস্তক্ষেপ নয়’

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ৩১ জানুয়ারী ২০২২, সোমবার
  • / 70

পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ কেন আমাকে আটকানো হচ্ছে? আমি তো ভালোবেসে নিজের ইচ্ছেয় এক মুসলিম যুবককে বিয়ে করেছি। স্বেচ্ছায় হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম কবুল করেছি। কেউ ধর্ম পরিবর্তনে জোর করেনি। ধর্ম পরিবর্তনে কেউ বাধ্য করেনি। আমি সাবালিকা। কেন আমাকে স্বামীর সঙ্গে সংসার করতে দেওয়া হচ্ছে না? ভিডিয়ো কনফারেন্সে উচ্চ আদালতকে অকপট জানালেন তরুণী। যদিও রাজ্য সরকারের তরফের আইনজীবী আদালতকে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করলেন রাজ্যে ‘ধর্মান্তরণ বিরোধী’ আইন রয়েছে। তাই এই বিয়ে বৈধ নয়। একে মান্যতা দেওয়া যায় না। কিন্তু  হাইকোর্ট স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই প্রাপ্তবয়স্ক। তাই তাদের বিয়ে নিয়ে কোনও আপত্তি উঠতে পারে না। রাজ্যের তৈরি করা আইন এক্ষেত্রে কার্যকর হবে না। একই সঙ্গে পুলিশকেও আদালতের কড়া নির্দেশ এই ধরনের মামলায় কোনও নীতি পুলিশি (পুলিশদের অযাচিত মাতব্বরি) বরদাস্ত করা হবে না।

মামলার শুনানিতে ঠিক কি বলেছে মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্ট? সাংবিধানিক অধিকারকে উল্লেখ করে আদালত বলেছে, প্রাপ্তবয়স্ক যে কেউ বিয়ে করে একসঙ্গে থাকতেই পারেন। এটা সাংবিধানিক অধিকার। এখানে হস্তক্ষেপ করা যায় না।

আরও পড়ুন: সংখ্যালঘু নয় এমন আসনে সংরক্ষণ চালুর বিরুদ্ধে আদালতে যাচ্ছে মহারাষ্ট্রের সংখ্যালঘু সমাজ

 

আরও পড়ুন: বিচারপতি সিনহার এজলাসে ব্যালট পেপার সংক্রান্ত রিপোর্ট দিলেন জগাছার বিডিও

হাইকোর্টের বিচারপতি নন্দিতা দুবে মন্তব্য করেছেন। সম্প্রতি ইসলাম কবুল করা ওই তরুণীর স্বামীর অভিযোগ ছিল  তাঁর স্ত্রীকে জোর করে বেনারসে নিজেদের কাছে নিয়ে গিয়েছেন তাঁর বাবা-মা। সেখানে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে জোর করে তাঁর স্ত্রীকে আটকে রেখেছেন তাঁরা। তিনি আরও জানান, তাঁর স্ত্রী ভালোবেসে তাঁকে বিয়ে করেছেন। স্বেচ্ছায় ইসলাম কবুল করেছেন। ইসলাম কবুলের জন্য কোনও জোরজবরদস্তি করা হয়নি। এরপরই আদালত তাঁর স্ত্রীর মতামত জানতে চায়। এরপর ওই ব্যক্তির স্ত্রী ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে আদালতকে জানান, তাঁর এখন ১৯ বছর বয়স। তিনি স্বেচ্ছায় মুসলিম যুবককে বিয়ে করেছেন। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। তাঁকে কখনও ধর্মান্তরিত করতে বাধ্য করা হয়নি। তিনি যা করেছেন তা নিজের ইচ্ছায় করেছেন। এরপরই নিজের বাবা-মা’র বিরুদ্ধে আদালতে নালিশ জানিয়ে বলেন, তাঁর বাবা-মা এবং ঠাকুরদা-ঠাম্মা তাঁকে জোর করে বেনারসে নিয়ে গিয়েছেন তাঁকে মারধর করা হয়েছে। তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে বয়ান দেওয়ার জন্য তাঁকে লাগাতার হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। ওই তরুণী আদালতের কাছে আবেদন করেন, তিনি তাঁর স্বামীর সঙ্গে সংসার করতে চান। তাঁকে তাঁর স্বামীর সঙ্গে থাকতে দেওয়া হোক।

আরও পড়ুন: গরু পাচার মামলায় সায়গলের বেআইনি সম্পত্তির কথা আদালতকে জানালো সিবিআই

রাজ্যের আইনজীবী পালটা আদালতে যুক্তি দেখাতে গিয়ে বলেন, ‘মধ্যপ্রদেশ ধর্মের স্বাধীনতা আইন-২০২১ অনুযায়ী বিয়েটি অবৈধ। বাতিল। এই আইনের তিন নম্বর ধারা অনুসারে,  কোনও ব্যক্তিকে বিয়ের উদ্দেশ্যে ধর্মান্তরিত করা অপরাধ। এই বিধান লঙ্ঘন মানে বিয়ে বাতিল বলে গণ্য হয়। আইনের ৩ নম্বর ও ৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী এই বিয়ে বাতিল বলেই গণ্য হওয়া উচিত। যদিও রাজ্যের আইনজীবীর এই যুক্তি খারিজ করে দিয়ে হাইকোর্ট জানিয়েছে, যাই হোক না কেন, মামলাকারী এবং তাঁর স্ত্রী দু’জনেই প্রাপ্তবয়স্ক। এমন ক্ষেত্রে কোনও বাধাদান বরদাস্ত করা যায় না, যেখানে দুই প্রাপ্তবয়স্কই স্বেচ্ছায় বিয়ে করে একসঙ্গে থাকতে ইচ্ছুক। এখানে কাউকে জোর করা হয়নি। তাই এই বিয়েতে কোনও আপত্তি ওঠা উচিত নয়।

বিচারপতি আরও জানিয়েছে,  আদালতের সামনে স্ত্রী স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, তিনি পিটিশনকারীকে স্বেচ্ছায় বিয়ে করেছেন এবং একসঙ্গে থাকতে চান। মামলাকারীর স্ত্রী প্রাপ্তবয়স্ক। সংবিধান প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ককে অধিকার দিয়েছে নিজের ইচ্ছেমতো জীবনযাপন করার। তাই রাজ্যের আইনজীবীর আপত্তি খারিজ করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়,  আদালত মধ্যপ্রদেশ সরকার ও পুলিশ-প্রশাসনকে কড়া নির্দেশ দিয়েছে, মামলাকারী স্বামীর কাছে তাঁর স্ত্রীকে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ওই দম্পতি যাতে নিরাপদে নিজেদের বাড়িতে পৌঁছায় তা নিশ্চিত করতে হবে। তাঁদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে। ওই তরুণীর বাবা-মা যাতে কোনও হুমকি না দেন সেদিকে পুলিশকে নজর রাখতে হবে।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

‘স্বেচ্ছায় মুসলিমকে বিয়ে করে ইসলাম কবুল করেছি’ আদালত বলল ‘হস্তক্ষেপ নয়’

আপডেট : ৩১ জানুয়ারী ২০২২, সোমবার

পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ কেন আমাকে আটকানো হচ্ছে? আমি তো ভালোবেসে নিজের ইচ্ছেয় এক মুসলিম যুবককে বিয়ে করেছি। স্বেচ্ছায় হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম কবুল করেছি। কেউ ধর্ম পরিবর্তনে জোর করেনি। ধর্ম পরিবর্তনে কেউ বাধ্য করেনি। আমি সাবালিকা। কেন আমাকে স্বামীর সঙ্গে সংসার করতে দেওয়া হচ্ছে না? ভিডিয়ো কনফারেন্সে উচ্চ আদালতকে অকপট জানালেন তরুণী। যদিও রাজ্য সরকারের তরফের আইনজীবী আদালতকে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করলেন রাজ্যে ‘ধর্মান্তরণ বিরোধী’ আইন রয়েছে। তাই এই বিয়ে বৈধ নয়। একে মান্যতা দেওয়া যায় না। কিন্তু  হাইকোর্ট স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই প্রাপ্তবয়স্ক। তাই তাদের বিয়ে নিয়ে কোনও আপত্তি উঠতে পারে না। রাজ্যের তৈরি করা আইন এক্ষেত্রে কার্যকর হবে না। একই সঙ্গে পুলিশকেও আদালতের কড়া নির্দেশ এই ধরনের মামলায় কোনও নীতি পুলিশি (পুলিশদের অযাচিত মাতব্বরি) বরদাস্ত করা হবে না।

মামলার শুনানিতে ঠিক কি বলেছে মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্ট? সাংবিধানিক অধিকারকে উল্লেখ করে আদালত বলেছে, প্রাপ্তবয়স্ক যে কেউ বিয়ে করে একসঙ্গে থাকতেই পারেন। এটা সাংবিধানিক অধিকার। এখানে হস্তক্ষেপ করা যায় না।

আরও পড়ুন: সংখ্যালঘু নয় এমন আসনে সংরক্ষণ চালুর বিরুদ্ধে আদালতে যাচ্ছে মহারাষ্ট্রের সংখ্যালঘু সমাজ

 

আরও পড়ুন: বিচারপতি সিনহার এজলাসে ব্যালট পেপার সংক্রান্ত রিপোর্ট দিলেন জগাছার বিডিও

হাইকোর্টের বিচারপতি নন্দিতা দুবে মন্তব্য করেছেন। সম্প্রতি ইসলাম কবুল করা ওই তরুণীর স্বামীর অভিযোগ ছিল  তাঁর স্ত্রীকে জোর করে বেনারসে নিজেদের কাছে নিয়ে গিয়েছেন তাঁর বাবা-মা। সেখানে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে জোর করে তাঁর স্ত্রীকে আটকে রেখেছেন তাঁরা। তিনি আরও জানান, তাঁর স্ত্রী ভালোবেসে তাঁকে বিয়ে করেছেন। স্বেচ্ছায় ইসলাম কবুল করেছেন। ইসলাম কবুলের জন্য কোনও জোরজবরদস্তি করা হয়নি। এরপরই আদালত তাঁর স্ত্রীর মতামত জানতে চায়। এরপর ওই ব্যক্তির স্ত্রী ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে আদালতকে জানান, তাঁর এখন ১৯ বছর বয়স। তিনি স্বেচ্ছায় মুসলিম যুবককে বিয়ে করেছেন। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। তাঁকে কখনও ধর্মান্তরিত করতে বাধ্য করা হয়নি। তিনি যা করেছেন তা নিজের ইচ্ছায় করেছেন। এরপরই নিজের বাবা-মা’র বিরুদ্ধে আদালতে নালিশ জানিয়ে বলেন, তাঁর বাবা-মা এবং ঠাকুরদা-ঠাম্মা তাঁকে জোর করে বেনারসে নিয়ে গিয়েছেন তাঁকে মারধর করা হয়েছে। তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে বয়ান দেওয়ার জন্য তাঁকে লাগাতার হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। ওই তরুণী আদালতের কাছে আবেদন করেন, তিনি তাঁর স্বামীর সঙ্গে সংসার করতে চান। তাঁকে তাঁর স্বামীর সঙ্গে থাকতে দেওয়া হোক।

আরও পড়ুন: গরু পাচার মামলায় সায়গলের বেআইনি সম্পত্তির কথা আদালতকে জানালো সিবিআই

রাজ্যের আইনজীবী পালটা আদালতে যুক্তি দেখাতে গিয়ে বলেন, ‘মধ্যপ্রদেশ ধর্মের স্বাধীনতা আইন-২০২১ অনুযায়ী বিয়েটি অবৈধ। বাতিল। এই আইনের তিন নম্বর ধারা অনুসারে,  কোনও ব্যক্তিকে বিয়ের উদ্দেশ্যে ধর্মান্তরিত করা অপরাধ। এই বিধান লঙ্ঘন মানে বিয়ে বাতিল বলে গণ্য হয়। আইনের ৩ নম্বর ও ৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী এই বিয়ে বাতিল বলেই গণ্য হওয়া উচিত। যদিও রাজ্যের আইনজীবীর এই যুক্তি খারিজ করে দিয়ে হাইকোর্ট জানিয়েছে, যাই হোক না কেন, মামলাকারী এবং তাঁর স্ত্রী দু’জনেই প্রাপ্তবয়স্ক। এমন ক্ষেত্রে কোনও বাধাদান বরদাস্ত করা যায় না, যেখানে দুই প্রাপ্তবয়স্কই স্বেচ্ছায় বিয়ে করে একসঙ্গে থাকতে ইচ্ছুক। এখানে কাউকে জোর করা হয়নি। তাই এই বিয়েতে কোনও আপত্তি ওঠা উচিত নয়।

বিচারপতি আরও জানিয়েছে,  আদালতের সামনে স্ত্রী স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, তিনি পিটিশনকারীকে স্বেচ্ছায় বিয়ে করেছেন এবং একসঙ্গে থাকতে চান। মামলাকারীর স্ত্রী প্রাপ্তবয়স্ক। সংবিধান প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ককে অধিকার দিয়েছে নিজের ইচ্ছেমতো জীবনযাপন করার। তাই রাজ্যের আইনজীবীর আপত্তি খারিজ করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়,  আদালত মধ্যপ্রদেশ সরকার ও পুলিশ-প্রশাসনকে কড়া নির্দেশ দিয়েছে, মামলাকারী স্বামীর কাছে তাঁর স্ত্রীকে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ওই দম্পতি যাতে নিরাপদে নিজেদের বাড়িতে পৌঁছায় তা নিশ্চিত করতে হবে। তাঁদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে। ওই তরুণীর বাবা-মা যাতে কোনও হুমকি না দেন সেদিকে পুলিশকে নজর রাখতে হবে।