০২ অগাস্ট ২০২৫, শনিবার, ১৭ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মগরাহাটের পালকশিল্পকে প্রসারের উদ্যোগ প্রশাসনের

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২২, রবিবার
  • / 29

নাজির হোসেন লস্কর :  মগরাহাটের হস্তশিল্পগুলিকে সুদূর প্রসারী করতে উদ্যোগ নিল ব্লক প্রশাসন। মগরাহাট ২ ব্লক অধীনস্থ ডিহি কলস গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার প্রায় ৯০ শতাংশ জনজীবন জড়িয়ে রয়েছে পালক শিল্পের সঙ্গে। ব্রিটিশ আমল থেকে এই শিল্প রাজ্যের ঐহিত্য বহন করে চলেছে বিশ্বজুড়ে। করোনা পরিস্থিতি ও প্রচার-প্রসারের অভাবে পালক শিল্পে সংকট দেখা দিয়েছে। ঠিক এমন সময় ব্লক প্রশাসন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। রবিবার ডিহি কলস পঞ্চায়েতের দুয়ারে সরকার ক্যাম্পে পালকজাত বিভিন্ন পণ্য তুলে ধরা হয়। সেখানে পালক শিল্পের সঙ্গে জড়িত এলাকার প্রায় ১০০ জন কারিগরকে আর্টিজান ক্রেডিট কার্ড-এর ফর্ম পূরণ করে তাঁদের অর্থনৈতিক সহযোগিতার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকারের আর্টিজান ক্রেডিট কার্ড-এর প্রকল্পের মাধ্যমে হস্তশিল্পের কাজে যুক্তদের ২৫ থেকে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লোনের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। পালক শিল্পকে পুনর্জীবিত করার স্বপ্ন দেখছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পালক শিল্পীরা।

 

আরও পড়ুন: বাংলার হজ আবেদনকারীদের সংখ্যা ২০২৬-এ আরও কমে যাচ্ছে

বাপ-ঠাকুরদার আমল থেকে দেখে আসছেন পালক শিল্পের সঙ্গে যুক্ত পরিবার। পারিবারিক এই পেশা বজায় রেখেছেন উত্তর কলমের বাসিন্দা বছর পয়ষট্টির প্রবীণ আইয়ূব আলি। তাঁর কথায়, যুগ যুগ ধরে চলে আসছে পালক দিয়ে তৈরি নানা পণ্য-সামগ্রী। প্রায় ১০০ ধরনের পণ্য তৈরি হয় এলাকায়। ঘর, অনুষ্ঠান বাড়ি সাজানো থেকে শুরু পুজোর আরতিতেও ব্যবহার করা হয় পালক দিয়ে তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী। তাঁদের তৈরি পণ্য ম্যাজিসিয়নরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মনোরঞ্জনের জন্য প্রদর্শন করে থাকে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, ভারতীয় সেনারাও ব্যবহার করে থাকে তাঁদের তৈরি সামগ্রী। প্রজাতন্ত্র দিবস ও স্বাধীনতা দিবসে তেরঙা রঙের পালক বাহিনীর হ্যাকেল বা টুপিতে ব্যবহার করে থাকে। এছাড়া বিভিন্ন প্যারেড অনুষ্ঠানে এনসিসি ও বাহিনী বিভিন্ন রঙের পালকের পণ্য হ্যাকেলে ব্যবহার হয়ে থাকে। বাড়ির মহিলাও এই কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকেন। তেমনই এক কারিগর বধূ সেরিনা মোল্লা বলেন, সারা বছর এই কাজের অর্ডার থাকে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বিয়ের মরসুমে এর চাহিদা বেশি থাকে। বরের পাগড়ি-তাজ বা হিন্দিতে যাকে কলগি বলে থাকে সেখানেও ব্যবহার হয়ে থাকে পালকের নিপুন কাজ।

আরও পড়ুন: এমএসএমই-তে মহিলাদের নেতৃত্বদানে এক নম্বরে বাংলা

 

আরও পড়ুন: মুরগির মাংসের দাম নিম্নমুখী, চিন্তার ভাঁজ ব্যবসায়ীদের

জানা গেছে, রাজ্য-দেশ ছেড়ে কলসের ঐতিহ্যবাহী এই পালক শিল্প ভিনদেশেও পাড়ি দেয়। আমেরিকা, ইংল্যান্ড, জার্মান, ফ্রান্স-সহ নানা দেশে রফতানি হয় বাংলার এই হস্তশিল্প। স্থানীয় কারিগর নূরউদ্দিন লস্কর জানান, ১৯৯২ সালে বার্ড ফ্লু-তে এই শিল্প ভেঙে পড়েছিল। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির জন্য অর্থনৈতিক সমস্যার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে এলাকার কারিগররা। তাঁর দাবি, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে উদ্যোগ নিলে বাংলার মুখ আরও উজ্জ্বল করবে। তিনি আরও বলেন, রাজস্থান-সহ অন্যান্য রাজ্য থেকে পালক এলেও বাংলার পালকের পণ্য টেকসইয়ের জন্য পাইকারদের বেশি পছন্দ।

 

এদিকে, ব্লক প্রশাসনের তরফে মগরাহাট ২-এর বিডিও সেখ আবদুল্লাহ জেলা প্রশাসনের কাছে পালক শিল্পকে প্রচার ও প্রসারের জন্য জানিয়েছিলেন। রবিবার বিশেষ দুয়ারে সরকার ক্যাম্পে হাজির ছিলেন জেলা থেকে দুই দফতরের চার প্রতিনিধি। উপস্থিত ছিলেন জেলা এমএসএমই ম্যানেজার কৌশিক মজুমদার। তিনি ডকুমেন্টরি করার জন্য কারিগরদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কথা বলেছেন। অন্যদিকে, এই শিল্পকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য জেলা আইএসজিডিপিপি থেকে প্রতিনিধিদল কারিগরদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁদের সাহায্যের আশ্বাস দিয়ে গিয়েছেন কো-অর্ডিনেটর অনির্বাণ রায়, সহ কো-অর্ডিনেটর মৌসুমী দাস, প্ল্যানিং কোঅর্ডিনেটর মাহমুদা প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন ডিহি কলসের প্রধান সেলিমা লস্করও।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

মগরাহাটের পালকশিল্পকে প্রসারের উদ্যোগ প্রশাসনের

আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২২, রবিবার

নাজির হোসেন লস্কর :  মগরাহাটের হস্তশিল্পগুলিকে সুদূর প্রসারী করতে উদ্যোগ নিল ব্লক প্রশাসন। মগরাহাট ২ ব্লক অধীনস্থ ডিহি কলস গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার প্রায় ৯০ শতাংশ জনজীবন জড়িয়ে রয়েছে পালক শিল্পের সঙ্গে। ব্রিটিশ আমল থেকে এই শিল্প রাজ্যের ঐহিত্য বহন করে চলেছে বিশ্বজুড়ে। করোনা পরিস্থিতি ও প্রচার-প্রসারের অভাবে পালক শিল্পে সংকট দেখা দিয়েছে। ঠিক এমন সময় ব্লক প্রশাসন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। রবিবার ডিহি কলস পঞ্চায়েতের দুয়ারে সরকার ক্যাম্পে পালকজাত বিভিন্ন পণ্য তুলে ধরা হয়। সেখানে পালক শিল্পের সঙ্গে জড়িত এলাকার প্রায় ১০০ জন কারিগরকে আর্টিজান ক্রেডিট কার্ড-এর ফর্ম পূরণ করে তাঁদের অর্থনৈতিক সহযোগিতার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকারের আর্টিজান ক্রেডিট কার্ড-এর প্রকল্পের মাধ্যমে হস্তশিল্পের কাজে যুক্তদের ২৫ থেকে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লোনের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। পালক শিল্পকে পুনর্জীবিত করার স্বপ্ন দেখছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পালক শিল্পীরা।

 

আরও পড়ুন: বাংলার হজ আবেদনকারীদের সংখ্যা ২০২৬-এ আরও কমে যাচ্ছে

বাপ-ঠাকুরদার আমল থেকে দেখে আসছেন পালক শিল্পের সঙ্গে যুক্ত পরিবার। পারিবারিক এই পেশা বজায় রেখেছেন উত্তর কলমের বাসিন্দা বছর পয়ষট্টির প্রবীণ আইয়ূব আলি। তাঁর কথায়, যুগ যুগ ধরে চলে আসছে পালক দিয়ে তৈরি নানা পণ্য-সামগ্রী। প্রায় ১০০ ধরনের পণ্য তৈরি হয় এলাকায়। ঘর, অনুষ্ঠান বাড়ি সাজানো থেকে শুরু পুজোর আরতিতেও ব্যবহার করা হয় পালক দিয়ে তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী। তাঁদের তৈরি পণ্য ম্যাজিসিয়নরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মনোরঞ্জনের জন্য প্রদর্শন করে থাকে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, ভারতীয় সেনারাও ব্যবহার করে থাকে তাঁদের তৈরি সামগ্রী। প্রজাতন্ত্র দিবস ও স্বাধীনতা দিবসে তেরঙা রঙের পালক বাহিনীর হ্যাকেল বা টুপিতে ব্যবহার করে থাকে। এছাড়া বিভিন্ন প্যারেড অনুষ্ঠানে এনসিসি ও বাহিনী বিভিন্ন রঙের পালকের পণ্য হ্যাকেলে ব্যবহার হয়ে থাকে। বাড়ির মহিলাও এই কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকেন। তেমনই এক কারিগর বধূ সেরিনা মোল্লা বলেন, সারা বছর এই কাজের অর্ডার থাকে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বিয়ের মরসুমে এর চাহিদা বেশি থাকে। বরের পাগড়ি-তাজ বা হিন্দিতে যাকে কলগি বলে থাকে সেখানেও ব্যবহার হয়ে থাকে পালকের নিপুন কাজ।

আরও পড়ুন: এমএসএমই-তে মহিলাদের নেতৃত্বদানে এক নম্বরে বাংলা

 

আরও পড়ুন: মুরগির মাংসের দাম নিম্নমুখী, চিন্তার ভাঁজ ব্যবসায়ীদের

জানা গেছে, রাজ্য-দেশ ছেড়ে কলসের ঐতিহ্যবাহী এই পালক শিল্প ভিনদেশেও পাড়ি দেয়। আমেরিকা, ইংল্যান্ড, জার্মান, ফ্রান্স-সহ নানা দেশে রফতানি হয় বাংলার এই হস্তশিল্প। স্থানীয় কারিগর নূরউদ্দিন লস্কর জানান, ১৯৯২ সালে বার্ড ফ্লু-তে এই শিল্প ভেঙে পড়েছিল। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির জন্য অর্থনৈতিক সমস্যার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে এলাকার কারিগররা। তাঁর দাবি, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে উদ্যোগ নিলে বাংলার মুখ আরও উজ্জ্বল করবে। তিনি আরও বলেন, রাজস্থান-সহ অন্যান্য রাজ্য থেকে পালক এলেও বাংলার পালকের পণ্য টেকসইয়ের জন্য পাইকারদের বেশি পছন্দ।

 

এদিকে, ব্লক প্রশাসনের তরফে মগরাহাট ২-এর বিডিও সেখ আবদুল্লাহ জেলা প্রশাসনের কাছে পালক শিল্পকে প্রচার ও প্রসারের জন্য জানিয়েছিলেন। রবিবার বিশেষ দুয়ারে সরকার ক্যাম্পে হাজির ছিলেন জেলা থেকে দুই দফতরের চার প্রতিনিধি। উপস্থিত ছিলেন জেলা এমএসএমই ম্যানেজার কৌশিক মজুমদার। তিনি ডকুমেন্টরি করার জন্য কারিগরদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কথা বলেছেন। অন্যদিকে, এই শিল্পকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য জেলা আইএসজিডিপিপি থেকে প্রতিনিধিদল কারিগরদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁদের সাহায্যের আশ্বাস দিয়ে গিয়েছেন কো-অর্ডিনেটর অনির্বাণ রায়, সহ কো-অর্ডিনেটর মৌসুমী দাস, প্ল্যানিং কোঅর্ডিনেটর মাহমুদা প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন ডিহি কলসের প্রধান সেলিমা লস্করও।