০২ জুলাই ২০২৫, বুধবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হরমুজ প্রণালীতে ইরানের মাইন পাতার প্রস্তুতি, চরম উদ্বেগে আমেরিকা!

চামেলি দাস
  • আপডেট : ২ জুলাই ২০২৫, বুধবার
  • / 55

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক:  হরমুজ প্রণালীতে ইরান মাইন বসানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে খবর। এই তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পর চরম উদ্বেগে বলে খবর আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র। সম্প্রতি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর গোপন রিপোর্টে জানা গেছে, ইরান তাদের সামরিক নৌযানে সামুদ্রিক মাইন তুলেছে। যদিও এখনও এগুলো ব্যবহার করা হয়নি, তবে ইসরাইলের সামরিক আক্রমণের জবাবে ইরান এভাবেই হরমুজ প্রণালীকে অবরুদ্ধ করার পরিকল্পনা করছিল বলে আশঙ্কা মার্কিন কর্তৃপক্ষের।

গত ১২ জুন ইরানে ইসরাইলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর এই প্রস্তুতি প্রথম জানা যায় বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই শীর্ষ কর্মকর্তা। হরমুজ প্রণালী বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক নৌপথ। যেখান দিয়ে বিশ্বে ব্যবহৃত মোট জ্বালানির এক-পঞ্চমাংশ পরিবাহিত হয়। প্রণালীটি যদি বন্ধ হয়, তাহলে তা শুধু ইরান-ইসরাইল উত্তেজনাই বাড়াবে না, বরং পুরো বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের অভিঘাত আনবে।

আরও পড়ুন: গাজায় ক্যাফে, স্কুল ও ত্রাণকেন্দ্রে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৯৫, আহত বহু: বাড়ছে মানবিক বিপর্যয়

আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, ঠিক কোন সময়ে ইরান মাইন তুলেছে এবং পরে তা নামিয়েছে কি না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। মার্কিন সেনা ও গোয়েন্দা সংস্থা এই তথ্য স্যাটেলাইট ছবি ও মানব গোয়েন্দার মাধ্যমে সংগ্রহ করেছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: “জাতি হিসাবে গর্ববোধই অধিক মূল্যবান”, শহিদদের জানাজায় ইরানের বিদেশমন্ত্রী আব্বাস আরাগচির মন্তব্য

উল্লেখ্য, গত ২২ জুন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক কেন্দ্রে অপারেশন ‘মিডনাইট হ্যামার’-এর মাধ্যমে হামলা চালায়। এরপরই ইরানের পার্লামেন্টে হরমুজ প্রণালী বন্ধের বিষয়ে প্রস্তাব পাস হয়। যদিও তা বাধ্যতামূলক ছিল না। সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা রয়েছে ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের হাতে। অতীতেও ইরান একাধিকবার হুমকি দিলেও কখনওই প্রণালী বন্ধ করেনি।

আরও পড়ুন: পারমাণবিক ইস্যুতে আমেরিকার সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহ নেই ইরানের: স্পষ্ট বার্তা আরাগচির

 

হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা বলেন, “প্রেসিডেন্টের সুপরিকল্পিত কৌশলের ফলেই আজ হরমুজ প্রণালী মুক্ত এবং নিরাপদ। অপারেশন ‘মিডনাইট হ্যামার’, হুতিদের বিরুদ্ধে আক্রমণ ও সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের কৌশল ইরানকে দুর্বল করে দিয়েছে।”

 

বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের এই মাইন প্রস্তুতি হয়তো একটি কৌশলগত বার্তা ছিল—তাদের সক্ষমতা ও প্রস্তুতি দেখানোর জন্য, যদিও বাস্তবে প্রণালি বন্ধ করার মতো পদক্ষেপ নেয়নি তেহরান। কারণ, এটি বন্ধ হলে ইরানের নিজের রপ্তানি ক্ষেত্রও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

 

২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, ইরানের কাছে রয়েছে পাঁচ হাজারের বেশি সামুদ্রিক মাইন, যা দ্রুতগামী ছোট নৌযানের মাধ্যমে সহজেই স্থাপন করা যায়। একই সঙ্গে, বাহরাইনে মোতায়েন যুক্তরাষ্ট্রের পঞ্চম নৌবহর, যারা সাধারণত চারটি মাইন পরিষ্কারকারী জাহাজ রাখে, এই পরিস্থিতিতে তাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলার প্রেক্ষিতে ইরানের অবস্থান ও প্রতিক্রিয়ায় নজর রেখেছে গোটা বিশ্ব। হরমুজ প্রণালিতে মাইন বসানো হলে তা মধ্যপ্রাচ্য সংঘাতের ভয়াবহ মোড় নিতে পারে, যা বিশ্ব জ্বালানি বাজারে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। মার্কিন প্রশাসন তাই ইরানের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

হরমুজ প্রণালীতে ইরানের মাইন পাতার প্রস্তুতি, চরম উদ্বেগে আমেরিকা!

আপডেট : ২ জুলাই ২০২৫, বুধবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক:  হরমুজ প্রণালীতে ইরান মাইন বসানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে খবর। এই তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পর চরম উদ্বেগে বলে খবর আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র। সম্প্রতি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর গোপন রিপোর্টে জানা গেছে, ইরান তাদের সামরিক নৌযানে সামুদ্রিক মাইন তুলেছে। যদিও এখনও এগুলো ব্যবহার করা হয়নি, তবে ইসরাইলের সামরিক আক্রমণের জবাবে ইরান এভাবেই হরমুজ প্রণালীকে অবরুদ্ধ করার পরিকল্পনা করছিল বলে আশঙ্কা মার্কিন কর্তৃপক্ষের।

গত ১২ জুন ইরানে ইসরাইলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর এই প্রস্তুতি প্রথম জানা যায় বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই শীর্ষ কর্মকর্তা। হরমুজ প্রণালী বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক নৌপথ। যেখান দিয়ে বিশ্বে ব্যবহৃত মোট জ্বালানির এক-পঞ্চমাংশ পরিবাহিত হয়। প্রণালীটি যদি বন্ধ হয়, তাহলে তা শুধু ইরান-ইসরাইল উত্তেজনাই বাড়াবে না, বরং পুরো বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের অভিঘাত আনবে।

আরও পড়ুন: গাজায় ক্যাফে, স্কুল ও ত্রাণকেন্দ্রে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৯৫, আহত বহু: বাড়ছে মানবিক বিপর্যয়

আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, ঠিক কোন সময়ে ইরান মাইন তুলেছে এবং পরে তা নামিয়েছে কি না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। মার্কিন সেনা ও গোয়েন্দা সংস্থা এই তথ্য স্যাটেলাইট ছবি ও মানব গোয়েন্দার মাধ্যমে সংগ্রহ করেছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: “জাতি হিসাবে গর্ববোধই অধিক মূল্যবান”, শহিদদের জানাজায় ইরানের বিদেশমন্ত্রী আব্বাস আরাগচির মন্তব্য

উল্লেখ্য, গত ২২ জুন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক কেন্দ্রে অপারেশন ‘মিডনাইট হ্যামার’-এর মাধ্যমে হামলা চালায়। এরপরই ইরানের পার্লামেন্টে হরমুজ প্রণালী বন্ধের বিষয়ে প্রস্তাব পাস হয়। যদিও তা বাধ্যতামূলক ছিল না। সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা রয়েছে ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের হাতে। অতীতেও ইরান একাধিকবার হুমকি দিলেও কখনওই প্রণালী বন্ধ করেনি।

আরও পড়ুন: পারমাণবিক ইস্যুতে আমেরিকার সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহ নেই ইরানের: স্পষ্ট বার্তা আরাগচির

 

হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা বলেন, “প্রেসিডেন্টের সুপরিকল্পিত কৌশলের ফলেই আজ হরমুজ প্রণালী মুক্ত এবং নিরাপদ। অপারেশন ‘মিডনাইট হ্যামার’, হুতিদের বিরুদ্ধে আক্রমণ ও সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের কৌশল ইরানকে দুর্বল করে দিয়েছে।”

 

বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের এই মাইন প্রস্তুতি হয়তো একটি কৌশলগত বার্তা ছিল—তাদের সক্ষমতা ও প্রস্তুতি দেখানোর জন্য, যদিও বাস্তবে প্রণালি বন্ধ করার মতো পদক্ষেপ নেয়নি তেহরান। কারণ, এটি বন্ধ হলে ইরানের নিজের রপ্তানি ক্ষেত্রও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

 

২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, ইরানের কাছে রয়েছে পাঁচ হাজারের বেশি সামুদ্রিক মাইন, যা দ্রুতগামী ছোট নৌযানের মাধ্যমে সহজেই স্থাপন করা যায়। একই সঙ্গে, বাহরাইনে মোতায়েন যুক্তরাষ্ট্রের পঞ্চম নৌবহর, যারা সাধারণত চারটি মাইন পরিষ্কারকারী জাহাজ রাখে, এই পরিস্থিতিতে তাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলার প্রেক্ষিতে ইরানের অবস্থান ও প্রতিক্রিয়ায় নজর রেখেছে গোটা বিশ্ব। হরমুজ প্রণালিতে মাইন বসানো হলে তা মধ্যপ্রাচ্য সংঘাতের ভয়াবহ মোড় নিতে পারে, যা বিশ্ব জ্বালানি বাজারে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। মার্কিন প্রশাসন তাই ইরানের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে।